এই বই টি বাংলায় প্রকাশিত হয়নি , ইংরাজি দুটি ভিন্ন প্রচ্ছদের বই দুটির সংকলন পাওয়া গেছে এখন অবধি ।
পঞ্চতন্ত্র সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি প্রাচীন গ্রন্থ ৷ রচয়িতা কবি বিষ্ণু শর্মা ৷ তবে এই গ্রন্থের মূল পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় নি ৷ নানা উপদেশমূলক গল্পের সঙ্কলন এই গ্রন্থ ৷ জীবনের পথের নানা উপদেশ এই গ্রন্থের নানা গল্পের উদাহরণের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে ৷
আবার অন্য তথ্যে বলছে
ইতিহাস বলছে বহু যুগ আগে পারস্যের এক চিকিৎসকের হাত ধরে ভারতের সংস্কৃত
পঞ্চতন্ত্রের বই পাড়ি দিয়েছিল বিদেশ। তার পর নানা দেশে, নানা ভাষায় তার
অবাধ অনুবাদ। ইউরোপের নানা দেশে প্রচলিত গল্পকথার শিকড় কি তবে ভারতেই?
৫৭০ খ্রিস্টাব্দের কিছু আগের ঘটনা। পারস্যের চিকিৎসক বর্জুয়া ভারত ভ্রমণে
এসেছেন সে দেশের রাজার নির্দেশে। বর্জুয়ার সফরের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের
জল-জঙ্গল ঘুরে ইরানের গন্দেশপুরে তৈরি হওয়া হাসপাতালের জন্য মেডিসিনাল
প্ল্যান্ট বা ভেষজ ওষধি জোগাড় করে নিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ সফরে ওই অভিজ্ঞ
প্রবীণ পার্সি চিকিৎসক ভারতের উর্বর জমি থেকে বহু ভেষজ ওষধি তো নিয়ে
গেলেনই, তার সঙ্গে ওই চিকিৎসকের হাত ধরে সে দেশে পাড়ি দিল ভারতীয়
উপমহাদেশের এক অমর সৃষ্টি ‘পঞ্চতন্ত্রের’ একটি প্রাচীন কপি। সঙ্গে আরও কিছু
জ্যোতিষচর্চার বইপত্তর এবং দাবা খেলা।
পঞ্চতন্ত্রের সেই কপি ৫৭০
খ্রিস্টাব্দে বর্জুয়া পাহলভি ভাষায় অনুবাদ করলেন। প্রাচীন ওই ভাষায়
অনুবাদের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় গল্পগাথা পঞ্চতন্ত্রের প্রথম আন্তর্জাতিক হয়ে
ওঠার শুরু। বর্জুয়া ওই বইয়ের লেখক হিসেবে নাম রাখলেন বিদপাই যা কিনা ভারতীয়
ভাষায় বিদ্যাপতিরই রূপান্তরিত নাম। এর পর ভারতীয় পঞ্চতন্ত্রকে আর পিছনে
ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে ইউরোপ, ইংল্যান্ডের নানা
দেশে, নানা ভাষায় তা অনুদিত হল। সেই যাত্রাপথ নিয়েই আজকের আলোচনা। অজানা
ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
ছেলেবেলায় পঞ্চতন্ত্রের গল্প
পড়েননি এমন বাঙালি এবং ভারতীয় বোধহয় হাতে গোনা। মার্ভেল ইউনিভার্স,
ক্রনিকলস অফ নার্নিয়া, জাঙ্গলবুক হওয়ার আগে এই দেশেই তো তৈরি হয়েছিল এক
কল্পিত রূপকথার জগত। যেখানে বাঘ কেবল পশু নয়, বাঘমামাও বটে। যেখানে সিংহ
ইদুরের সঙ্গে কথা বলে, দুষ্টু, ধূর্ত শেয়াল বুদ্ধির কেরামতি দেখাতে গিয়ে
কখনও যায় ফেঁসে কখনও আবার জটিল ধাঁধাঁর সহজ সমাধান করে।
মূলত
নীতিশিক্ষার জন্যই বহু প্রাচীন কালে পঞ্চতন্ত্রের এই গল্পগুলি তৈরি হয়।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি ঠিক কবে সৃষ্টি হয়েছিল তা বলা
মুশকিল। এক নয়, সম্ভবত একাধিক লেখক রয়েছেন। লিখিত দলিলের আগেও পঞ্চতন্ত্রের
গল্প প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ছিল মূলত মৌখিক ভাবে। যদিও মোটের উপর ধরে নেওয়া
হয় খিষ্ট্রপূর্বাব্দ তৃতীয় শতকে পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি লেখা হয়। যে সময়
আবার বৌদ্ধদের জাতকের গল্প লেখার কাজও চলছিল এই ভারতভূমিতে। পঞ্চতন্ত্রের
মধ্যেই বিষ্ণু শর্মা নামে এক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। অনেকে ধরে নেন বিষ্ণু
শর্মাই এই গল্পের লেখক। তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা
পঞ্চতন্ত্রের লেখকের নাম নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে ঐতিহাসিকদের মধ্যে।
যে
সিংহ চালাক খরগোশের পাল্লায় পড়ে কুয়োতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে সেখানে
ঝাঁপ মারার বোকামি করে, সেই সিংহের গল্প অবশ্য ভারতের মানচিত্র পেরিয়ে বহু
আগেই আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছিল। জানেন কি আরব দুনিয়ায় আজও পঞ্চতন্ত্রের আরবি
অনুবাদ ‘কালিলা ওয়া দিমনা’ সংরক্ষিত রয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রন্থ
হিসেবে। এমনকী ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন সময়ে দেখিয়েছেন ইওরোপীয় রূপকথার গল্পে
অন্তত ১০ শতাংশ নেওয়া হয়েছে পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি থেকেই। বিখ্যাত গ্রিম
ভাইদের রূপকথার দুনিয়াতেও পঞ্চতন্ত্রের ছায়া আজও দেখা যায়।
ধরে
নেওয়া হয়, পার্সি চিকিৎসকের হাত ধরেই এই ভারতীয় রূপকথার জয়যাত্রার শুরু।
যদিও ওই ৫৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দেই আবার পঞ্চতন্ত্রকে সিরিয়ায় অনুবাদ করা
হয়েছিল। যে সময় ওই দেশে ছিল বিখ্যাত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজত্ব। যদিও
বর্জুয়ার সংগ্রহ করা সংস্কৃত ভাষায় লেখা সেই প্রাচীন পঞ্চতন্ত্রের কপিটি
হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও এই সিরিয়াক ভাষায় অনুদিত প্রাচীন গ্রন্থটি
প্যারিসে সংরক্ষিত। মোটের উপর সপ্তম শতাব্দীতে পারস্য যখন আরব সাম্রাজ্যের
অধীনে চলে এলো তখন আরবের ভাষাতেও তার অনুবাদ ঘটল বলে জানা যায়। প্রাচীন
আরব সাম্রাজ্যের দুই বিদ্বান ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবন আর মুকাফা এই অনুবাদটি
করেন। এবং সেই সময়ে রাজপরিবার ও অভিজাতদের সন্তানদের পঞ্চতন্ত্রের কাহিনী
পড়া ছিল বাধ্যতামূলক। কারণ সেখান থেকে নীতি শিক্ষা নিয়ে তবেই দেশ
পরিচালনার কাজে আসতে পারতেন রাজপুরুষ ও আমলারা। পরে আরব সাম্রাজ্য থেকেই
পঞ্চতন্ত্র স্পেন, মরোক্কো এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে।
তুর্কির অটোমান সাম্রাজ্যেও পঞ্চতন্ত্রকে পাঠ্যশিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা
হয়েছিল। ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যেও যার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
গ্রীক
পণ্ডিত সায়মন শেঠের হাত ধরে পঞ্চতন্ত্রের অনুবাদ হয় প্রায় ১০৮০
খ্রিস্টাব্দে। কনস্ট্যান্টিনোপলের সময় বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া,
রোমানিয়াতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভারতীয় পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি। পরে ইউক্রেনের
ক্যাথিড্রালদের মধ্যেও এর গ্রহণযোগ্যতা দেখা যায়।
আরও পরে
মোটামুটি দ্বাদশ শতাব্দীতে ইহুদিদের মধ্যেও পঞ্চতন্ত্র জনপ্রিয় হয়। হিব্রু
ভাষায় অনুদিত হয় পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি। আরও পরে স্পেনের প্রাচীন
ক্যাস্টিলিয়ান ভাষাতেও পঞ্চতন্ত্রের অনুবাদ করা হয়।
পশ্চিম ইউরোপের
তথাকথিত উন্নত দেশগুলি যেমন ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিতে ‘ফেবলস অফ
বিদপাই’-এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। ১২৬৩-৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দফায় দফায়
পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলিকে একাধিক অনুবাদক সম্মিলিত ভাবে লাতিন ভাষাতেও
অনুবাদ করেন।
জানলে হয়তো অবাক হবেন, যে পঞ্চতন্ত্রের গল্প পড়ে
আপনি জীবনশৈলির শিক্ষা পেয়েছেন, সেই রূপকথার গল্প গুটেনবার্গের প্রথম
ছাপাখানা থেকে ছেপে বের হয়েছিল। তাও আবার ঠিক বাইবেল প্রথম ছেপে বেরোনোর
পরপর। ফলে এত ইতিহাস জানার পর রূপকথার গল্প বলে সিরিয়াসলি না নেওয়া
পঞ্চতন্ত্রকে আর কি উপেক্ষা করতে পারবেন? মনে তো হয় না!
তথ্য https://eisamay.indiatimes.com/ থেকে পেলাম কিছুটা ।
Wonderful painting and calligraphy.
ReplyDeleteExactly.
DeleteThanxs a lot Indra Da.
ReplyDelete