৪২ এর পর ৪৪ নং পোস্ট হোল... ৪৩ বান্দা বাহাদুর বাংলায় সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি ।
আফগান বংশোদ্ভূত মুইজুদ্দিন মোহাম্মদ, যিনি মোহাম্মদ ঘোরি নামে পরিচিত ১১৯২
সনে তারাই এর যুদ্ধে দিল্লির শেষ স্বাধীন রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে
পরাজিত ও হত্যা করে ভারতবর্ষে সুলতানি শাসনের সূচনা করেন। দিল্লি দখলের পর
তিনি তার বিশ্বস্ত তুর্কি বংশোদ্ভূত সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে
ভারতের দায়িত্ব ন্যস্ত করে গজনী ফিরে যান; সূচনা হয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে
সুলতানি শাসনের। মূলত এ সময়টা সুলতানের শাসন উত্তর পশ্চিম ভারতেই সীমাবদ্ধ
ছিল; দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব দিকে বাংলা তখনো ছিল অসংখ্য ছোট ছোট স্বাধীন
হিন্দু রাজ্যে বিভক্ত। রাজ্যগুলো আকারেও যেমন ছোট ছিলো, তেমন ছিলো সামরিক
শক্তিতে দুর্বল। মূলত ব্যবসা বাণিজ্য আর অভ্যন্তরীণ ঝামেলা সামলাতেই ব্যস্ত
ছিলো তারা।
দিল্লি দখলের পরে আফগান সুলতানদের লোলুপ দৃষ্টি এবার
এসে পড়লো দক্ষিণ এবং পূর্বের এই ছোট ছোট রাজ্যগুলোর উপর। কিন্তু মাঝখানে
দুর্লঙ্ঘ্য বাধা হয়ে দেখা দেয় রাজপুত শাসিত রাজস্থান। ইতিহাসে রাজপুতরা হার
না মানা দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাসে তারা কখনোই পরাভব স্বীকার
করে নেয়নি কারো। সাফল্যের সাথে মহাবীর আলেকজান্ডারকেও রুখে দিয়েছিলেন
তারা। তাদের বীরত্ব মুগ্ধ করেছিলো আলেকজান্ডার আর সেলুকাসকে। রাজপুতরা বীর
যোদ্ধার জাতি হলেও ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন রাজ্যে বিভক্ত। তাই
উন্নততর যুদ্ধ কৌশলের অধিকারী বিশাল হানাদার বাহিনীর সাথে বীরের মত লড়লেও
বারে বারেই হার মানতে হয়েছে। হার মানলেও সুলতানি আমল থেকে মোঘল আমল কোন
সময়ই তাদের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করা যায়নি, হানাদারদের গলার কাঁটা হিসেবেই
তারা রয়ে গেছিল।
তৈমুর লং এর ছেলে শাহ রুখ মির্জা ১৪শ শতাব্দীতে এক
দিনেই প্রায় এক লক্ষ রাজপুতদের হত্যা করে। পরাজয় অত্যাসন্ন জেনে রাজপুত
নারীরা ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আগুনে জীবন দিতে থাকে নিজেদের শরীরে আগুন
জ্বালিয়ে দিয়ে প্রচলন করেছিলো ‘জওহর’ বা ‘সতীদাহ’ আর! শুরু হয় ‘সতীদাহ’
প্রথা পুনঃপ্রচলন! এই রীতি পরে ছড়িয়ে পড়ে কুসংস্কার হিসেবে সারা ভারতে
ব্রাহ্মণ্যবাদীদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। যার কোনো ভিত্তি হিন্দু
শাস্ত্রে নেই। (কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় রীতিতে এটি প্রচলিত ছিলো বলে প্রমাণ
পাওয়া যায়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই ভারতবর্ষে সতীদাহ
প্রথার প্রচলন ছিল। প্রাচীন সতীদাহ প্রথার উদাহরণ পাওয়া যায় অন্তর্লিখিত
স্মারক পাথরগুলিতে। সব চেয়ে প্রাচীন স্মারক পাথর পাওয়া যায় মধ্য প্রদেশে,
কিন্তু সব থেকে বড় আকারের সংগ্রহ পাওয়া যায় রাজস্থানে। এই স্মারক
পাথরগুলিকে সতী স্মারক পাথর বলা হতো যেগুলো পূজা করার বস্তু ছিল
[Shakuntala Rao Shastri, Women in the Sacred Laws – The later law books
(1960)]। ডাইয়োডরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus) নামক গ্রিক ঐতিহাসিকের
খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের পাঞ্জাব বিষয়ক লেখায়ও সতীদাহ প্রথার বিবরণ পাওয়া
যায় [Doniger, Wendy (2009). The Hindus: An Alternative History. Penguin
Books. p. 611]। তাছাড়া, আলেকজান্ডারের সাথে ভারতে বেড়াতে আসা
ক্যাসান্ড্রিয়ার ইতিহাসবিদ এরিস্টোবুলুসও সতীদাহ প্রথার বর্ণনা লিপিবদ্ধ
করেন। খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালের দিকে একজন ভারতীয় সেনার মৃত্যুতে তার দুই
স্ত্রীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায় [Strabo 15.1.30, 62; Diodorus
Siculus 19.33; ‘Sati Was Started For Preserving Caste’ Dr. K.
Jamanadas]। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
তৈমুর লং ও শাহ রুখ মির্জার
কল্যাণে হিন্দু ধর্মের এই বর্বর প্রথাটি আবারো প্রচলিত হয়ে পড়ে। ১৮২৯ সালের
৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহ প্রথাকে
আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় বেঙ্গলের গভর্নর ছিলেন লর্ড
উইলিয়াম বেন্টিংক। অবশ্য এ আইনি কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলত প্রিন্স
দ্বারকানাথ (কবিগুরুর দাদু), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর রাজা রামমোহন রায়ের
সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই।)
১৩০৩ সালে দিল্লির মসনদ দখল
করেন তুর্কি বংশোদ্ভূত খিলজি বংশের দ্বিতীয় সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি; ১২৯০
সালে তিনি আপন চাচা এবং শ্বশুর সুলতান জালালুদ্দিন খিলজিকে হত্যা করে এবং
রাজন্যদের ঘুষ প্রদান করে হাত করে সিংহাসনে আসীন হন। দক্ষিণের গুজরাট এবং
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের সীমানায় রাজস্থানের মেওয়ার রাজ্যের রাজা তখন রাজপুত
বংশের রাওয়াল রতন সিং। আর তাঁর রানী পদ্মাবতী ছিলেন অতুলনীয় সৌন্দর্যের
অধিকারিণী রূপে, গুণে অনন্যা এক রাজবধূ। তাঁর রূপ গুণের কাহিনী এতটাই
বিস্তৃত হয় যে, তা দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির কানেও পৌঁছে যায়।
ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত লম্পট, মদ্যপ আর ব্যভিচারী ছিলেন এই সুলতান। নিজের
সহস্র উপপত্নী থাকা স্বত্বেও মন ভরতো না তার। যেখানে কোন সুন্দরী রমণীর
সন্ধান পেতেন, ছলে বলে কলে কৌশলে তাকে অধিকার না করা পর্যন্ত শান্তি পেতেন
না তিনি। রানীর রূপের বর্ণনা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি তিনি।
বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন মেওয়ারের রাজধানী চিতোর অভিমুখে।
৭ম শতকে নি চিতোরগড়ের কেল্লা এক দুর্ভেদ্য দুর্গ, সেটা বাইরে থেকে
আক্রমণ করে ধ্বংস করা যে সহজ নয় বুঝতে পেরে সুলতান আশ্রয় নিলেন এক কৌশলের।
দূত মারফত রতন সিং এর কাছে খবর পাঠালেন। ‘তার দুর্গ দখল কিংবা রাজ্যহরণের
কোন মতলব নেই; তিনি কেবল রানী পদ্মিনীকে বোনের মত দেখেন, তাকে এক পলক দেখেই
চলে যাবেন। অকারণে নিজের সন্তানতূল্য প্রজাদের রক্তক্ষয় এড়াতে অনিচ্ছা
সত্ত্বেও রাজী হন রতন সিং। তবে রানী শর্ত দিলেন যে রানী সরাসরি সুলতানকে
দেখা দেবেন না, সুলতান আয়নায় তার প্রতিচ্ছবি দেখবেন।
কিন্তু সেই
আয়নার প্রতিচ্ছবি দেখেই আরও উন্মত্ত হয়ে পড়ে লম্পট আলাউদ্দিন খিলজি। আশ্রয়
নেয় এক নোংরা কৌশলের। কেল্লা থেকে অতিথিদের বিদায় দিতে রাজা রতন সিং সৌজন্য
বশত সুলতানের সাথে কিছু পথ এগিয়ে দিতে এলেন। সুলতান এটাকেই সুযোগ হিসেবে
গ্রহণ করে আচমকা রতন সিংকে বন্দি করে তার শিবিরে নিয়ে গেলেন। এরপর চিতোরগড়
কেল্লায় খবর পাঠালেন কাল সকালের মধ্যে রানী পদ্মিনীকে তার শিবিরে পাঠিয়ে
দিলে তিনি রাজা রতন সিংকে মুক্তি দেবেন এবং আর কারো কোন ক্ষতি না করে
দিল্লি ফেরত যাবেন। এই মহা সংকটে এগিয়ে এলেন রাজা রতন সিং এর দুই বীর
সেনাপতি চাচা-ভাতিজা বাদল এবং গোরা। তারা একটি পরিকল্পনা ফাঁদলেন, দূত
মারফত সুলতানের শিবিরে খবর পাঠালেন যে তারা সুলতানের প্রস্তাবে রাজী, রানী
পদ্মিনী পরদিন ভোরেই সুলতানের শিবিরে হাজির হবেন, কিন্তু রাজরানী বলে কথা,
তিনি একা যেতে পারেন না, তার সাথে থাকবে আর দেড়শ সখী।
পরদিন সকালে
কেল্লা থেকে রওনা হল পালকীর বহর। আসলে সেসব পালকির ভেতর রানী বা সখী কেউই
নেই; আছে সেনাপতি গোরা ও বাদলের নেতৃত্বে বাছা বাছা সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দেড়শ
রাজপুত যোদ্ধা। শিবিরে পৌঁছেই তারা অপ্রস্তুত সুলতান বাহিনীকে চমক সামলে
ওঠার সময় দিলেন না, দ্রুততার সাথে সুলতানের দেহরক্ষীদের কচুকাটা করে
হতবিহবল রাজা রতং সিংকে দ্রুত মুক্ত করে সেনাপতি গোরা দ্রুত রাজা রতন সিংকে
একটি ঘোড়ায় চড়িয়ে কেল্লার দিকে রওনা করিয়ে দিলেন।
গোরা সুলতানের
শিবিরে ঢুকে সুলতানকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাপুরুষ সুলতান সে
সময় তার রক্ষিতাকে সামনে বর্মের মত ঠেকে দেন। বীর রাজপুত গোরা তাঁর ধর্মীয়
নিয়মের কারণেই একজন মহিলাকে আঘাত করতে পারবেন না সেটা সুলতানও জানতেন। এই
অবস্থায় সুলতানের দেহরক্ষীদের হাতে গোরার প্রাণ যায়। বাদল নিরাপদেই রাজা
রতন সিংকে উদ্ধার করে কেল্লায় পৌঁছে গেলেন।
ক্রুদ্ধ আলাউদ্দিন এরপর
সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেল্লার ওপর। কিন্তু দুর্ভেদ্য কেল্লাটির
কিছুই করতে না পেরে কৌশল নেন চারপাশ থেকে অবরোধ করে রাখার। সুলতানের কৌশল
কাজ দেয় ভালোমতোই। কিছুদিনের মধ্যেই খাদ্যের অভাবে হাহাকার ওঠে চিতোরে। এই
অবস্থায় মহিলারা শত্রুর হাতে বেইজ্জত হবার চাইতে আত্মহনন করা শ্রেয় মনে করে
বেছে নেন জওহরের বা সতীদাহের পথ। দুর্গের ভেতর তৈরি এক বিশাল অগ্নিকুণ্ডে
রাজপরিবারের সব মহিলারা রানী পদ্মিনীর নেতৃত্বে তাদের বিয়ের পোশাক গয়না পরে
সেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে আত্মাহুতি দিলেন। ‘সতী’ হয়েই নিলেন চিরবিদায়
স্বেচ্ছায়।
আর স্বজনহারা রাজপুত সৈনিকরা বেছে নিলেন ‘সাকা’ বা
‘সংশপ্তক’ প্রথা (যুদ্ধ করতে করতে জীবন দেয়া), রণসাজে সজ্জিত হয়ে তারা
দুর্গ থেকে বের হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আকারে তাঁদের প্রায় ১০ গুণ বিশাল
সুলতানের বাহিনীর উপরে ‘হর হর মহাদেব’ শঙ্খনিনাদে। বীরের মতো জীবন দিলেন
রণক্ষেত্রে। সুলতান বাহিনী কেল্লার ভেতর প্রবেশের পর তখনো জ্বলন্ত
অগ্নিকুণ্ডে মহিলাদের পোড়া হাড়গোড় দেখতে পায়। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কেল্লায়
আশ্রয় নেওয়া ৩০ হাজার রাজপুতকে হত্যা করেন সুলতান।
তথ্য সূত্র www.sylhettoday24.news
Khub sundor ghotona.
ReplyDeleteKintu; je edition gulo ACK banglay publish kore ni; bangali pathak der sathe khub injustice koreche.
Because the characters are so interesting.
Don't you think, that the Bengali readers are deprived.
"১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় বেঙ্গলের গভর্নর ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। অবশ্য এ আইনি কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলত প্রিন্স দ্বারকানাথ (কবিগুরুর দাদু), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই।)"
ReplyDeleteদাদা, এটা কি করে সম্ভব? ১৮২৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বয়স ছিলো মাত্র ৯। বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তনের স্বপক্ষে আন্দোলন করেছিলেন।
Bidyasagor Sotidaho protha noy, Bidhoba-Bibaho procholon niye aandolon korechilen
ReplyDeleteDada akta request ,jadi paren to tenida ,kakababu,bomkesh,parshuram,shibram eder hasir comics gulo doar chesta karben,asha kari kotha rakhben,ami indrajal comics er ak andhabhakta ,er age kono comment karini etai pratham comment,asha kari comics gulo pabo
ReplyDelete১৩০৩ সালে আলাউদ্দিন খিলজির চিতোর আক্রমণ ঐতিহাসিক ঘটনা হলেও পদ্মিনী চরিত্রের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানের অধিকাংশ ইতিহাসবিদ তার বাস্তব অস্তিত্বের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। মূলত পদ্মাবতী বা পদ্মিনী ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে মালিক মুহম্মদ জায়সী কর্তৃক লিখিত একটি মহাকাব্য। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
ReplyDeletewelcome.
ReplyDelete