Friday, August 7, 2020

Post # 984 Bengali Amarchitra Katha 034

                                                                            ডাউনলোড করুন

অমর চিত্র কথা ৩২ এর পর ৩৪ পোস্ট করতে হোল ... কারন ৩৩ নং হর্ষ বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল কি না কোন তথ্য নেই ।


                                            ভীষ্ম - এক শাপগ্রস্ত বসুদেবতা


হিন্দু পুরাণে সর্বমোট ৩৩ প্রকার দেবতার অস্তিত্ব বিদ্যমান। এরা হলো : দ্বাদশ আদিত্য, একাদশ রুদ্র, অষ্টবসু এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয়। তবে শেষ দুইজনের নাম সব শাস্ত্রে নেই। শাস্ত্র ভেদে এই দু'জনকে পৃথক পৃথক দেবতাদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাদবাকিরা নির্বিবাদে সব শাস্ত্রেই বিদ্যমান আছেন। আমাদের আলোচ্য চরিত্র ভীষ্ম একজন শাপগ্রস্ত বসুদেবতা ছিলেন। ভীষ্মের চরিত্র জানার আগে চলুন জেনে নিই অষ্টবসুদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর ভীষ্মের পিতা শান্তনুর কথা।

অষ্টবসুদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
====================

আমাদের মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভীষ্ম চরিত্রটি আলোচনা করতে গেলে এদের মাঝে অষ্টবসুদের কথা জানা প্রয়োজন। এই আটজন বসুদেবতা উপদেবতা হিসেবে বিবেচিত হয়। বসুরা হলেন প্রতিনিধিত্বকারী দেবতা। কোথাও তাদের ইন্দ্রের প্রতিনিধি বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে এদেরকে বিষ্ণুর প্রতিনিধিও বলা হয়েছে। তাদের জন্মের ইতিহাস সম্পর্কে দুই প্রধান ভারতীয় পুরাণ রামায়ণ ও মহাভারতে ভিন্নতা আছে। রামায়ণে এদেরকে ঋষি কশ্যপ ও অদিতির পুত্র বলা হলেও, মহাভারতের মতে এরা প্রজাপতি মনুর সন্তান। যেখানে প্রথম কাহিনীতে এরা সরাসরি দেবতাদের ভাই হন, সেখানে মহাভারতে এরা হলেন মানুষের ক্রোড়ে জন্মের দরুন উপদেবতা। এই অষ্টবসুদের নামের ক্ষেত্রেও মহাভারতের সাথে রামায়ণের অমিল রয়েছে। তবে এখানে শুধু মহাভারতে উল্লেখিত নামগুলো দেয়া হলো :

১।। অনল (অগ্নির প্রতিনিধিত্বকারী), ২।। অনিল (বায়ুর প্রতিনিধিত্বকারী), ৩।। সোম (চন্দ্রের প্রতিনিধিত্বকারী), ৪।। অহস (অন্তরীক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী), ৫।। ধর বা পৃথু (পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বকারী), ৬।। ধ্রুব (নক্ষত্রসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী), ৭।। প্রত্যুষ (ঊষালগ্নের প্রতিনিধিত্বকারী) এবং ৮।। প্রভাষ বা দ্যু (দ্যুলোকের বা আকাশের প্রতিনিধিত্বকারী)। এদেরকে আবার আটটি দিকেরও (মানে পূর্ব, পশ্চিম ইত্যাদি দিকের) দেবত্ব আরোপ করা হয়েছে। অষ্টবসুদের মধ্যে নেতাস্থানীয় ছিলেন শেষোক্ত বসু প্রভাষ, যাকে আবার দ্যু বসু নামেও ডাকা হতো।

বসুদের কামধেনু চুরি ও ঋষি বশিষ্ঠের অভিশাপ
=====================================

একসময় অষ্টবসুরা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে সুমেরু পর্বতে অবস্থিত ঋষি বশিষ্ঠের আশ্রমে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন। ঋষি বশিষ্ঠের নন্দিনী নামক একটি কামধেনু ছিলো (কামধেনু মানে হলো জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন এক গাভী)। এটি মন্ত্রবলে যেকোনো কামনা পূরণ করতে পারতো বলে এর নাম কামধেনু। অনেকটা আলাদীনের চেরাগের দৈত্যের মতো! ঋষি বশিষ্ঠ এটার সাহায্যে অষ্টবসুদের সহজেই সমাদর করতে পেরেছিলেন।
কিন্তু প্রভাষ পত্নীর এটার উপর দারুণ লোভ হলো। রাত্রে প্রভাষকে তার পত্নী এই গাভীটি চুরি করতে রাজি করালেন। তখন আশ্রমের সকলে নিদ্রা গেলে প্রভাষ, বিশেষ করে তার ভাই পৃথুর সহায়ক ভূমিকায়, গাভীটি চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলেন। এমনি সময়ে তিনি ও তার ভাই এবং তাদের পত্নীসহ চোরাই মাল নিয়ে ঋষি বশিষ্ঠের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান। ক্রুদ্ধ বশিষ্ঠ তখন তাদের অভিশাপ দিলেন, প্রত্যেককেই উপ-দেবত্ব খুইয়ে মর্ত্যলোকে বাস করতে হবে। পরে অষ্টবসুদের অনুরোধে ঋষি বশিষ্ঠ প্রভাষ ব্যতীত সকলের শাস্তি কমিয়ে দেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে, প্রভাষ ব্যতীত সকলেই জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরই স্বর্গে ফিরে যেতে পারবেন। তবে প্রভাষকে চৌর্য কর্মের মূল হোতা হিসেবে মর্ত্যে দীর্ঘ জীবন থাকতে হবে। চিন্তিত বসুরা তখন উদ্ধারের জন্য দেবী গঙ্গার তপস্যায় মগ্ন হলেন।
ভীষ্মের পিতার কথা
================

একদা রাজর্ষি (যিনি রাজা হয়েও ঋষি) মহাভিষ নামে এক রাজা স্বর্গলাভ করেছিলেন। একবার স্বর্গ সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বহু দেব-দেবীদের মাঝে গঙ্গাও ছিলেন। প্রবল বায়ুপ্রবাহে গঙ্গার সূক্ষ্ম বসন তখন খুলে যায়। এতে তিনি নিরাভরণা হয়ে গেলে সকলে দৃষ্টি সংযত করলেও রাজা মহাভিষ অসংকোচ দৃষ্টিতে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে রইলেন। গঙ্গাও সেসময় তার প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে এই বিষয়টা ব্রহ্মার ভালো লাগেনি। তাই তিনি মহাভিষকে স্বর্গচ্যুতির অভিশাপ দিলেন। রাজার কাতর অনুনয়ের পর ব্রহ্মদেব তাকে মর্ত্যলোকে কিছুকাল বাস করে পরে পুনরায় স্বর্গে প্রবেশের অধিকার দিলেন। রাজা মহাভিষ তখন কুরুবংশীয় রাজা "প্রতীপ"-এর পুত্র হিসেবে জন্মের জন্য সংকল্প করলেন (‘শান্তনু’ নামে)। রাজা প্রতীপ নিজেও একজন রাজর্ষি ছিলেন। তিনি তার পত্নী'র সাথে গঙ্গার তীরে তপস্যা করতেন।

এদিকে দেবী গঙ্গা তপস্যারত বসুদের কাছে গেলে তারা তাকে গঙ্গা এবং প্রতীপ পুত্র শান্তনুর সন্তান হিসেবে প্রসব করে জলে বিসর্জিত করার জন্য অনুরোধ করেন। জবাবে গঙ্গা তাদের বলেন, তাই হবে, কিন্তু তাদের যেন একটি পুত্র জীবিত থাকে। নতুবা তার সাথে শান্তনুর সঙ্গম ব্যর্থ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।

বসুরা তখন সমাধান হিসেবে তাদের প্রত্যেকের নিজ বীর্যের অষ্টাংশ দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তারা এরপর গঙ্গাকে বললেন, এতে করে সেই জন্মানো পুত্র (ভীষ্ম) বলবান হবে, তবে তার সন্তান হবে না। গঙ্গা এভাবে অষ্টবসুদের বীর্যে সন্তান ধারণ করেছিলেন বলে ভীষ্মের অপর নাম হল ‘গাঙ্গেয়’, মানে গঙ্গাপুত্র। গঙ্গা অষ্টবসুদের প্রার্থনায় সম্মতি দিয়ে মহাভিষের কথা ভাবতে ভাবতে মর্ত্যে গমন করেন। তিনি তার নদীর তীরে তপস্যারত রাজা প্রতীপের ডান উরুতে বসে রাজার কাছে সঙ্গম প্রার্থনা করলেন। কিন্তু ডান উরুতে বসায় গঙ্গাকে রাজা প্রতীপ তা পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূর স্থান স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সঙ্গম কামনা প্রত্যাখ্যান করেন। রাজা প্রতীপ গঙ্গাকে তার পুত্রবধূ হতে অনুরোধ করলে গঙ্গা তাতেই সম্মত হয়ে অন্তর্হিত হন। পরে রাজা প্রতীপের পুত্র হিসেবে রাজর্ষি মহাভিষ ‘শান্তনু’ পরিচয়ে জন্ম নেন। যৌবন লাভ করার পর প্রতীপ তাকে সিংহাসনে অভিষেক করিয়ে বললেন, "তুমি গঙ্গা তীরে যেয়ো। সেখানে এক রূপবতী কন্যা পাবে। তাকে তুমি বিবাহ করো, তবে তার পরিচয় জানতে চেয়ো না এবং তার কার্যে বাধা দিও না"। এই বলে তিনি তপস্যা করতে সপত্নীক বনে চলে যান।

শান্তনু ও গঙ্গার বিবাহ এবং ভীষ্মের জন্ম
=============================

শান্তনু পিতার কথামতো গঙ্গাতীরে যান। সেখানে রূপসী দেবী গঙ্গাকে সাধারণ মানবী মনে করে তাকে প্রণয় নিবেদন করলে গঙ্গা শর্ত সাপেক্ষে রাজি হলেন। যদি রাজা তার পরিচয় জানতে না চান এবং তার কার্যে বাধা না দেন, তবে তিনি তাকে বিবাহ করবেন। তবে বাধা পেলে তাকে ত্যাগ করবেন। পিতার কথা স্মরণ করে শান্তনু রাজি হন।
কিছুকাল পরে যথাক্রমে তাদের আটটি সন্তান হলো। এদের সাতজনকেই গঙ্গাদেবী জলে নিক্ষেপ করেন। শান্তনু মনে মনে ক্রুদ্ধ হলেও গঙ্গার তাকে পরিত্যাগের কথা ভেবে নীরব থাকলেন। তবে অষ্টম পুত্রের ক্ষেত্রে আর না পেরে বাদ সাধলেন। গঙ্গাও তখন বললেন, “ঠিক আছে রাজা, আমি একে জলে নিক্ষেপ করবো না। তবে তোমার সাথে আমার থাকাও শেষ হলো”। এরপর পূর্বের স্বরূপে ফিরে শান্তনুকে অষ্টবসুর কাহিনী বললেন। তারপর সদ্যজাত শিশুটিকে নিয়ে অন্তর্হিত হলেন। শান্তনু তখন বিষণ্ণ মনে রাজপ্রাসাদে ফিরে যান।
দেবব্রতের ভীষ্ম হয়ে ওঠার কাহিনী
============================

মহারাজ শান্তনু ও গঙ্গার পুত্র ‘দেবব্রত’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ঋষি বশিষ্ঠের কাছে শাস্ত্র শিক্ষা এবং পরশুরামের (বিষ্ণুর এক অবতার) কাছে অস্ত্র শিক্ষা অধ্যয়ন করলেন। পরে যুবক বয়সে উত্তীর্ণ হলে গঙ্গা তাকে তার পিতা শান্তনুর নিকট ফিরিয়ে দেন। রাজা তাকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করেন।

একসময় শান্তনু ‘সত্যবতী’ নামের এক ধীবররাজার কন্যার প্রেমে পড়েন (উনারও একটা লম্বা ইতিহাস আছে! মহাভারতের রচয়িতা নামে খ্যাত মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস এরই ঔরসজাত সন্তান, পরাশর মুনির সাথে কুমারী অবস্থায় নদীতে নৌকা মাঝে মিলিত হয়ে এই সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন)। সত্যবতীকে বিয়ে করতে চাইলে সত্যবতীর পিতা রাজা শান্তনুর কাছে রাণী এবং শুধু তার কন্যার পুত্রদেরই রাজ্যাধিকার চান। শান্তনু তাতে সম্মত না হয়ে বিষণ্ণ মনে প্রাসাদে ফেরত আসেন। নিজের পিতাকে বিষণ্ণ দেখে এবং অমাত্যদের কাছে এর কারণ শুনে তিনি ধীবররাজের কাছে ছুটে গিয়ে ধীবরকন্যা সত্যবতীকে তার পিতার জন্য চাইলেন। নিজে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তিনি রাজ্যভোগ ও বিবাহ করবেন না এবং নিঃসন্তান থাকবেন। এছাড়াও নিঃস্বার্থ এবং নিরাসক্ত হয়ে কুরুরাজ্যের আমৃত্যু সেবা করবেন। তার এরূপ দৃঢ় সংকল্পের কারণে তার পিতা শান্তনু খুশি হলেন এবং তাকে ভীষ্ম নাম ও ইচ্ছামৃত্যুর বর দিলেন। সেই থেকেই দেবব্রতের নাম পাল্টে গিয়ে তিনি ভীষ্ম নামে পরিচিত হলেন। ভীষ্ম নিজেকে কুরুবংশের অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

কাশীরাজের তিন কন্যা অপহরণ
=========================

বিয়ের পর শান্তনু ও সত্যবতী দম্পতির দুই পুত্র হলো, চিত্রাঙ্গদ এবং বিচিত্রবীর্য। এদের যৌবন লাভের পূর্বেই শান্তনুর মৃত্যু হয়। চিত্রাঙ্গদ যুবক বয়সে চিত্রাঙ্গদ নামেরই এক গন্ধর্বের সাথে যুদ্ধে নিহত হলে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিচিত্রবীর্যকে ক্ষমতায় বসানো হয়। বিচিত্রবীর্য বড় হলে তার বিয়ের পাত্রীর জন্যে ভীষ্ম কাশীরাজের কন্যাদের স্বয়ংবর সভায় যান। কিছুটা বৃদ্ধ ভীষ্মকে দেখে উপস্থিত অন্য রাজা আর সভাসদরা উপহাস করলে ক্রোধান্বিত ভীষ্ম তাদের সামনে কাশীরাজের তিন কন্যা অম্বা, অম্বিকা এবং অম্বালিকাকে বলপূর্বক অপহরণ করেন। এই সময়ে অম্বার প্রেমিক শাল্বরাজ বাধা দিতে গেলে ভীষ্ম তাকে হত্যা করেন (মতান্তরে তাকে আহত করে ছেড়ে দেন)। পরে অম্বা তার প্রেমের কথা ভীষ্মকে জানালে তাকে সসম্মানে যেতে দেন।
অনেকে মনে করেন, এই সময়ে ভীষ্ম ও অম্বা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ভীষ্ম আর অম্বার এই কল্পিত প্রেম কাহিনী নিয়ে আলাদা বহু ভারতীয় সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে মূল মহাভারতে অম্বার প্রেমিক শাল্বরাজ অম্বাকে পরপুরুষ ছুঁয়েছে অভিযোগে পরিত্যাগ করে। আবার আরেক সংস্করণে প্রেমিককে অযথা হত্যার জন্য ভীষ্মের উপর অম্বা তীব্র রকমের ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, যেটি পরে দ্বন্দ্বে গিয়ে গড়ায়। বাকি দু'জন, অম্বিকা ও অম্বালিকার সাথে ভীষ্ম রাজা বিচিত্রবীর্যের বিয়ে দেন। বিচিত্রবীর্য দুই সুন্দরী পত্নী পেয়েই কামাসক্ত হয়ে পড়েন। এর সাত বছর পর কোনো উত্তরাধিকারী না রেখেই যক্ষ্মারোগে বিচিত্রবীর্য মারা যান।
অম্বা ও ভীষ্মের দ্বন্দ্ব
=================

এদিকে সর্বদিকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অম্বা ভীষ্মকে তাকে বিবাহ করতে বললে ভীষ্ম তা করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অম্বা ভগবান পরশুরামকে ভীষ্মের বিরুদ্ধে যথাবিহিত করার আহ্বান করলে পরশুরাম তাকে নিয়ে ভীষ্মের কাছে উপস্থিত হয়ে দু'টি বিহিত করার আদেশ দিলেন: ১. অম্বাকে বিবাহ, কিংবা ২. যুদ্ধের আহ্বান। ভীষ্ম তার চিরকুমার থাকার প্রতিজ্ঞার জন্য বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিলেন না। সেজন্য গুরু-শিষ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘদিনের যুদ্ধে কেউই কাউকে হারাতে পারলেন না। পরে দেবতারা উপস্থিত হয়ে তাদের যুদ্ধে নিরস্ত করলেন।

তখন অম্বা দেবতাদের কাছে পরজন্মে ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হতে চেয়ে বর চাইলে দেবতারা তা পূরণ করেন। অম্বা তখনি নিজেই নিজের চিতা সাজিয়ে তাতে দেহত্যাগ করেন। অম্বা পরবর্তীতে পাঞ্চালরাজা দ্রুপদের প্রথম কন্যা সন্তান হিসেবে জন্ম নেন। দ্রুপদ প্রথমে তার নারী পরিচয় গোপন রাখতে নাম রাখেন শিখণ্ডী। ঘটনাক্রমে তার সাথে দর্শানরাজ হিরণ্যবর্মার কন্যার সাথে বিয়ে হয় এবং সেই কন্যার কাছ থেকে শিখণ্ডীর আসল রূপ সর্বত্র প্রকাশ পেয়ে যায়। লোকে শিখণ্ডীকে “শিখণ্ডিনী” নামে ডাকতে আরম্ভ করে। এসব কথা দর্শানরাজের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। ক্রুদ্ধ হিরন্যবর্মা পাঞ্চালের রাজা দ্রুপদকে যুদ্ধের আহ্বান করেন।

দ্রুপদের বিপত্তিতে কষ্ট পেয়ে তাদের পুত্র রূপী কন্যা শিখণ্ডিনী গভীর বনে আত্মহননের উদ্দেশ্যে চলে যান। সেখানে স্বর্গের কোষাধ্যক্ষ কুবের দেবতার সঙ্গী এক যক্ষের সাথে শিখণ্ডিনীর সাক্ষাৎ হয়। সেই যক্ষই তার পুরুষত্ব শিখণ্ডিনীর সাথে অদলবদল করে শিখণ্ডিনীকে পুরুষ বানিয়ে দেয়। এসব তথ্য ভীষ্ম গুপ্তচর মারফৎ বিভিন্ন সময়ে জানতে পারেন এবং মনে মনে শিখণ্ডীকে বধের সংকল্প ত্যাগ করেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ভীষ্ম রূপান্তরকামী, নারী ও দুর্বলের ওপর প্রহার না করার এবং তাদের সামনে অস্ত্র পরিত্যাগ করার শপথ করেছিলেন। এভাবেই দেবতাদের কথা সফল হয়েছিলো।

কুরুবংশ রক্ষা
==============

বিচিত্রবীর্য ও চিত্রাঙ্গদের কোন উত্তরাধিকারী না রেখে যাওয়ায় কুরুবংশ সংকটে পড়ে। এদিকে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞার দরুন তিনিও সন্তান উৎপাদন করতে পারবেন না। এই সময়ে তিনি তার সৎ মাতা সত্যবতীর সাথে শলা-পরামর্শপূর্বক তার পুত্র কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মুনিকে বিচিত্রবীর্যের দুই স্ত্রীর গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য ডেকে আনেন। তিনি ধীবরকন্যার সন্তান হওয়ায় তার শরীরে মাছের মতো গন্ধ ছিলো। আর সন্ন্যাসীর সাজপোশাকে থাকতেন বিধায় বিচিত্রবীর্যের দুই রাণী তাকে পছন্দ করলেন না। তবে ভীষ্ম আর সত্যবতীর জোরাজুরিতে তারা উভয়েই একবার একবার করে বেদব্যাসের সাথে মিলিত হন।

অম্বিকা অপছন্দের মিলনের সময়ে ঘৃণাবশত চোখ মুদে ছিলেন, তাই বেদব্যাস তাকে অন্ধ পুত্র জন্ম দেয়ার অভিশাপ দেন। আর অম্বালিকা বেদব্যাসের সন্ন্যাসীর সাজ দেখে ভয়ে পাংশুটে চেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বেদব্যাসের অভিশাপে তার পাণ্ডুবর্ণ পুত্র জন্ম হবে বলে জানলেন। এভাবেই বেদব্যাসের ঔরসে এক রাণীর গর্ভে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র, অপর রাণীর গর্ভে পাণ্ডুর জন্ম হয়। অন্ধ পুত্র জন্মের কারণে অম্বিকার শাশুড়ি সত্যবতী রজঃস্বলা হলে পুনর্বার তাকে বেদব্যাসের কাছে যেতে বলেন। তখন রাণী তার এক শূদ্র দাসীকে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই দাসীর গর্ভে মহামতি বিদুরের জন্ম হয়। এমনভাবেই ভীষ্ম কুরুবংশকে এক অনিবার্য পতনের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের অভিভাবক এবং তাদের বিয়ের ঘটকালি
=============================================

ভীষ্ম পিতৃহীন, অভিভাবকহীন সন্তানদের পিতৃসম অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার জন্যই ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু, বিদুর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। বিদুর এদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ধর্মবেত্তা, পাণ্ডু অতুলনীয় ধনুর্ধর, আর ধৃতরাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা অধিক বলশালী ছিলেন। প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হলে ভীষ্ম পাণ্ডুকে রাজা নির্বাচিত করেন। বাকি দুইজনকে না করার কারণ ছিলো, ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ আর বিদুর শূদ্রা গর্ভজাত। এতে ধৃতরাষ্ট্র মনে মনে পাণ্ডুর সৌভাগ্যের জন্য কিছুটা নাখোশ হয়েছিলেন। বিদুর অবশ্য মহামন্ত্রীর পদ নিয়েই তুষ্ট থাকেন।

ভীষ্ম পাণ্ডুকে যাদব বংশের কুন্তি ভোজের পালিতা কন্যা কুন্তি এবং মদ্রদেশের রাজা শল্যের ভগিনী মাদ্রীর সাথে বিয়ে দেন। আর ধৃতরাষ্ট্রকে গান্ধার রাজ্যের রাজা সুবলের সাথে ভাতৃত্ব গড়তে তার কন্যা গান্ধারীর সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর গান্ধারী তার স্বামী দৃষ্টিহীন হওয়ায় চোখে এক টুকরো কাপড় বেঁধে রেখে নিজেও দৃষ্টিহীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
ভীষ্মের সাথে কর্ণ, পঞ্চপাণ্ডব এবং ধৃতরাষ্ট্রদের সম্পর্ক
======================================

কুন্তির বড় সন্তান কর্ণের জন্ম রহস্যের ব্যাপারে ভীষ্ম জ্ঞাত ছিলেন। কর্ণ দুর্যোধনের মতো অধার্মিকদের সাথে জোটবদ্ধ হলে ভীষ্ম রুষ্ট হন। এজন্য তিনি প্রায়ই কর্ণকে নানাভাবে কটাক্ষ করে অপমানকর মন্তব্য করতেন। কর্ণের অহংকারী আচরণেরও তীব্র সমালোচনা করতে ছাড়তেন না। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কর্ণকে অপমানিত করে তিনি নিজে নিহত না হওয়া পর্যন্ত কর্ণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছিলেন। পরে একাদশ তম দিনে কর্ণ যুদ্ধ করতে নামেন। পিতৃহীন পঞ্চপাণ্ডবরাই ভীষ্মের বিশেষ প্রিয় ছিলো। তন্মধ্যে অর্জুনের প্রতি তিনি বিশেষ পক্ষপাত করতেন। দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রদের হাত থেকে তাদের রক্ষার জন্য তিনি বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ও। তিনি ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রদের শাসন করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইতেন।

ভীষ্মের উদ্যোগে কৌরব ও পাণ্ডবদের বিখ্যাত অস্ত্র গুরু দ্রোণের কাছে পাঠানো হয়। তাদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারটাও যথাযথ ভাবে প্রতিপালন করেন। ভীষ্মের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিলো, দুর্যোধন কর্তৃক আয়োজিত অক্ষক্রীড়ায় বাজি জিতে কৌরব পক্ষ দ্বারা পাণ্ডবদের ও তাদের মহিষী দ্রৌপদির অপমান ও রাজ্যহারা করা ঠেকাতে তার অক্ষমতা প্রকাশ করা। যদিও তিনি দুর্যোধনের মতিগতির ব্যাপারে পাণ্ডবদের সতর্ক করেছিলেন, তবুও অক্ষক্রীড়া প্রিয় যুধিষ্ঠির তা কানে তোলেননি। এই ঘটনাই বিখ্যাত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়।

ভীষ্মের যুদ্ধসমূহ
=============

মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ব্যতীত ভীষ্ম তার জীবনে অনেক যুদ্ধ করে কুরু সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। মহাবীর কর্ণকে দুর্যোধন যে অঙ্গ দেশ দেন, তা ভীষ্মেরই জয় করা অঞ্চল। এছাড়া এক বছর অজ্ঞাত বাসকালে পাণ্ডবরা যে বিরাটনগর রাজ্যে ছদ্মবেশে আশ্রিত ছিলেন; সে দেশ দখলে দ্রোণ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন, সুশর্মা প্রমুখ বীর যোদ্ধাদের নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেন। কিন্তু একা বৃহন্নলা রূপী অর্জুনের নিকটে তারা সকলেই পরাস্ত হন। তবে যাই হোক, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরব পক্ষকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যই ভীষ্ম অধিক স্মরণীয়। ভীষ্ম সর্বমোট দশদিন কুরুক্ষেত্রে কৌরব পক্ষকে বীরত্বের সাথে পরিচালনা করেছিলেন। তবে পাণ্ডবদের বিপক্ষে তিনি স্নেহ বশত দুর্বল ছিলেন। এই দশদিনের বিশাল যুদ্ধের প্রথম নয় দিনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নরূপঃ
১ম দিন-- ভীষ্মের নেতৃত্বে কৌরব পক্ষ সর্বতোমুখ ভয়ংকর ব্যূহ নামে একটি ব্যূহ রচনা করে পাণ্ডবদের আক্রমণ করে। জবাবে পাণ্ডবদের শ্যালক ও সর্বাধিনায়ক ‘ধৃষ্টদ্যুম্ন’ বজ্র ও অচল নামক দু'টো ব্যূহ রচনা করে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। এইসময় অর্জুন ও তার পুত্র অভিমন্যুর সাথে ভীষ্ম ঘোর যুদ্ধে লিপ্ত হন। এদিন ভীষ্ম পাণ্ডবদের এক সেনাপতি বিরাটরাজের ছেলে শ্বেতকে হত্যা করেন। ভীষ্মের বীরত্বে এদিন কৌরব পক্ষ বিজয়ী হয়।

২য় দিন-- দ্বিতীয় দিনে পাণ্ডবরা ক্রৌঞ্চারুণ নামক ব্যূহ রচনা করে। এদিনও ভীষ্মের সাথে অর্জুনের তীব্র যুদ্ধ হয়। এরপর ভীমকে ব্যাপক কৌরব সৈন্য বধ করতে দেখে তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেন। ভীমের রথ ধ্বংস করে তাকে ভূপাতিত করেন। ভীমও এসময় ভীষ্মের সারথিকে বধ করলে ভীষ্ম দ্রুত বেগে নিজেই রথ চালিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। এদিন অর্জুনের বীরোচিত ভূমিকায় পাণ্ডবদের জয় হয়।

৩য় দিন-- এদিন ভীষ্ম গড়ুর ব্যূহ এবং পাণ্ডবরা অর্ধচন্দ্র ব্যূহ রচনা করেন। প্রথমে উভয়পক্ষই সমান তালে লড়াই করলেও কিছুক্ষণ পর যুদ্ধের ফলাফল পাণ্ডব পক্ষে যেতে শুরু করে। তখন ভীষ্ম আগ্রাসী ভাবে সৈন্যদল নিয়ে পাণ্ডবদের আক্রমণ করেন। এতে পাণ্ডবরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে পালাতে শুরু করে। ভীষ্মের শরাঘাতে বহু সৈন্য হতাহত হওয়ার বিপরীতে অর্জুনকে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে দেখে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মাস্টারমাইণ্ড শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে চক্র হস্তে ভীষ্ম বধে উদ্যত হন। পরে অর্জুনের কথায় নিরস্ত হন। এরপর অর্জুন মাহেন্দ্র অস্ত্র প্রয়োগ করে কৌরব সৈন্য বিধ্বস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে নেন।
৪র্থ দিন-- এদিন উভয়পক্ষেই অনেক বীর হতাহত হয়। ভীম দুর্যোধনের ১৪ ভ্রাতা হত্যা করেন। ভীমের রাক্ষস পুত্র ঘটোৎকচের সহায়তায় পাণ্ডবদের জয়লাভ হয়।

৫ম ও ৬ষ্ঠ দিন-- এই দুই দিন ভীষ্ম মকর ও ক্রৌঞ্চ ব্যূহের বিপরীতে পাণ্ডব পক্ষ শ্যেন ও মকর ব্যূহ নির্মাণ করে সৈন্য পরিচালনা করে। পঞ্চম দিনে অর্জুন পঁচিশ হাজার মহারথ (কয়েক রথের সমন্বয় গঠিত বাহিনীর নায়ক) বধ করেন। ষষ্ঠ দিনে ভীষ্ম ও দ্রোণের সাথে ভীম এবং অর্জুনের ব্যাপক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভীম দুর্যোধনের চার ভাইকে হত্যা করেন।

৭ম ও ৮ম দিন-- সপ্তম ও অষ্টম দিনে ভীষ্ম মণ্ডল, কূর্ম ব্যূহ এবং পাণ্ডবরা বজ্র ও শৃঙ্গাটক ব্যূহ তৈরি করে যুদ্ধ করেছিল। সপ্তম দিনে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ভীষ্মের যুদ্ধে পাণ্ডবদের অনেক বীর পরাজিত হয়। এদিন শিখণ্ডী ভীষ্মের সাথে দ্বৈরথে নামেন। তবে পরাজিত হন। অষ্টম দিনে বিভিন্ন বীরযোদ্ধারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হন। ঘটোৎকচের মায়াবী যুদ্ধে ও অর্জুনের বীরত্বে কৌরব পক্ষ পরাজিত হয়। ভীম দুর্যোধনের সাত ভ্রাতার প্রাণ হরন করেন।

৯ম দিন-- ভীষ্মের এদিন অমানুষিক বিক্রমে পাণ্ডবদের হতশ্রী দশা শুরু হয়। অর্জুনের ক্লীবত্ব দেখে এদিন শ্রীকৃষ্ণ ফের প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করে রথের চাকা তুলে ভীষ্মকে বধে এগিয়ে যান। এসময় ভীষ্ম ও অর্জুনের অনুরোধে কৃষ্ণ তার সংকল্প ত্যাগ করেন। সেদিনকার মতো যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
ভীষ্মের পতন
============

দশম দিনের যুদ্ধের পূর্ব রাত্রে শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ অনুযায়ী পাণ্ডবরা লুকিয়ে ভীষ্মের শিবিরে গিয়ে তাকে বধের উপায় জানতে চান। ভীষ্ম তখন তার প্রতিজ্ঞা এবং শিখণ্ডীর সামনে অস্ত্র ত্যাগের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেন। সেই অনুযায়ী পাণ্ডবরা শিখণ্ডীকে অগ্রগামী করে তার পেছনে পেছনে গিয়ে ভীষ্মের সামনে দশম দিনে রণভূমিতে উপস্থিত হন। ভীষ্ম অস্ত্রত্যাগ করলে পাণ্ডবরা তাকে তীব্র শরবর্ষণ করে রথ থেকে ভূপাতিত করেন। বাণবর্ষণে আহত ভীষ্ম তখন ভূমিতে সেই তীরের উপরই শয্যাশায়ী হন! এটিই বিখ্যাত ‘শরশয্যা’ নামে পরিচিত। তবে তাতে তিনি ইচ্ছামৃত্যুর বরে মারা গেলেন না।

যুধিষ্ঠিরকে ভীষ্মের উপদেশমূলক গল্পসমূহ
===============================

যুদ্ধে জয়ের পর ভীষ্মের কাছে বিজয়ী সম্রাট যুধিষ্ঠির সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য উপদেশ চাইতে গিয়েছিল। ভীষ্ম এসময় বিভিন্ন উপকথার (fables) মাধ্যমে রাষ্ট্র, কূটনীতি, রাজনীতি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন। এসব রূপকথা মহাভারতকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
ভীষ্ম-কর্ণ সংবাদ
==============

যুধিষ্ঠির, পাণ্ডব পক্ষ ও অমাত্যবর্গ ভীষ্মের শরশয্যার স্থান হতে সরে গেলে সেখানে ভীষ্মের সামনে কর্ণ এসে উপস্থিত হন তাকে অভিবাদন ও যুদ্ধ জয় করার আশীর্বাদ নিতে। ভীষ্ম কর্ণের মঙ্গল কামনা করলেও যুদ্ধ জয় করার আশীর্বাদ দিতে অসম্মত হন। এছাড়া এই সময় কর্ণকে তার আসল মাতার (কুন্তি) কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত থেকে বিরত থাকতে বলেন। জবাবে কর্ণ তার দুর্যোধনের কাছে করা প্রতিজ্ঞা এবং অর্জুনের সাথে দীর্ঘদিনের লালিত দ্বৈরথের কথা ভেবে তা অগ্রাহ্য করেন। ভীষ্ম তখন তাকে ভগবান পরশুরামের দেওয়া অভিশাপের ব্যাপারে মনে করিয়ে দিয়ে সাবধান করেন। তবে এসব ন্যূনতম প্রভাবই ফেলে কর্ণের সিদ্ধান্তে। কথায় আছে না, কাঙালের কথা বাসি হলেই মিষ্টি হয়! তেমনি ভীষ্মের পূর্বানুমান সঠিক প্রমাণিত হয়েছিলো। কর্ণ অর্জুনের হাতে নিহত হয়েছিলেন।

ভীষ্মের মৃত্যু
===========

ভীষ্ম একটানা আটান্ন দিন (মতান্তরে, কোথাও ছাপ্পান্ন বা সাতান্ন দিন) রণভূমিতে শরশয্যায় ছিলেন। ভীষ্ম উত্তরায়ণ তিথি নামক এক পবিত্র তিথিতে মৃত্যুবরণের সংকল্প করেছিলেন। দক্ষিণায়ন তিথি শেষ হয়ে উত্তরায়ণ তিথি এলে সেই শুভক্ষণে দীর্ঘজীবী ভীষ্ম অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

ভীষ্মের কাহিনী মহাভারতের এতো ব্যাপকভাবে জড়িয়ে আছে যে তাকে ছাড়া এই মহাকাব্যের পাঠ অসম্পূর্ণ। তিনি প্রায় প্রত্যেক চরিত্রের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছেন। দুর্যোধনের কথায় আহত হয়ে পাণ্ডবদের উপর প্রহার করলেও আদরবশতঃ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেননি। পিতার সুখের জন্যে নিজের সুখ ত্যাগ করা, কুরুবংশের অভিভাবক স্বরূপ দায়িত্ব পালন, সুন্দরী অম্বার সাথে তার বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব ইত্যাদি কাহিনী মিলিয়ে এই চরিত্রের দীর্ঘদিনের জীবনের এতো ভরপুর তথ্য আছে যে তা দিয়ে আরেকটা মহাকাব্য রচনা সম্ভব।

                                                             (সমাপ্ত)



খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে বেতালের এই সিরিজ... রিগাল পাব্লিকেশন কি বলছে দেখা যাক ...

We have immense pleasure to announce the advent of PHANTOM in India now. THE GHOST will be WALKING through every nook and cranny of India stealthily with the unstinting support of readers from all walks of life.
The first two comic books (No. 1 & No. 2) contain a total number of 4 stories. The price for each comic book (with 2 stories in it) is only Rs. 120/-. As an INAUGURAL OFFER we make both comics available for only Rs. 250/- including delivery charges for sending anywhere in India (Offer valid for bookings till September 10, 2020). For your copies, kindly contact us through our Whatsapp number 9481052592.
We warmly welcome all of you to the PHANTOM WORLD.









8 comments:

  1. ডাউনলোড লিঙ্কের সঙ্গে বিস্তৃত উপস্থাপনা দেওয়া হচ্ছে... অ.চি.ক. -এর আসর জমে গেছে ... লেখায় ব্যবহৃত আর্টপ্লেটগুলির উৎস সম্বন্ধে জানালে ভালো হতো ...

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুটি সাইটের সাহায্য নেওয়া হয়েছে । ওগুলো এডিট করে দেবো। অন্য পোস্ট গুলি তে দেওয়া আছে।

      Delete
  2. Very nice presentation and as usual so much information. Although Mahabharat er doulat e onek tai jana.
    Thanks a lot Indra da.

    ReplyDelete
  3. Anek anek dhonobad da....For everything

    ReplyDelete
  4. পৌরাণিক কাহিনীর অসাধারণ উপস্থাপনা। ভালো লাগলো দাদা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পাঠক দের ভালো লাগলে আমার ও ভালই লাগে।

      Delete