দেবতাদের গুরু ছিলেন বৃহস্পতি এবং দৈত্য দের গুরু ছিলেন শুক্রাচার্য। এই শুক্রাচার্য এর ছিল এক অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা। তিনি মন্ত্র বলে যে কোনো মৃত ব্যক্তিকে পুনর্জীবিত করতে পারতেন। একবার দেবতা ও দৈত্য দের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হল। দুই পক্ষের অনেক সৈন্য মারা গেল। দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য মন্ত্রবলে দৈত্যসেনাদের জীবিত করে তাদের আবার যুদ্ধে পাঠাতে লাগলেন। দেবগুরু বৃহস্পতি এর এই ক্ষমতা ছিলনা। ফলস্বরূপ দেবগন ক্রমশ দুর্বল হয়ে এক সময় স্বর্গ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। স্বর্গে অসুরদের রাজত্ব কায়েম হল। স্বর্গ ভ্রস্ট দেবগন সকলে পরামর্শ করতে বসলেন। দৈত্যদের পরাজিত করতে হলে অবশ্যই শুক্রাচার্য এর সঞ্জীবন বিদ্যা দেবতাদের করায়ত্ত করতে হবে। বৃহস্পতি এর পুত্র ছিলেন কচ। দেবগন কচ কে বললেন, বৎস তুমি ছদ্মবেশে শুক্রাচার্য এর আশ্রমে গিয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ কর। তার সেবা যত্ন করে কৌশলে সঞ্জীবন বিদ্যা অধ্যয়ন করে এস। সেইমত বৃষপর্বপুর এলেন কচ। শুক্রাচার্য কে প্রণাম করে বললেন, গুরুদেব, আমি অঙ্গিরা এর পুত্র, আপনার কাছে শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে চাই। গুরুদেব তাকে সাদরে গ্রহন করলেন। শুরু হল কচ এর ব্রহ্মচর্য শিক্ষা। সর্বক্ষণ তিনি গুরুর সেবায় নিয়োজিত। তারচেয়ে লক্ষ্য রাখেন শুক্রাচার্য এর কন্যা দেবযানী এর । তার কিছু প্রয়োজনের আগেই কচ সেখানে হাজির হয়ে যান। অবসর সময়ে নৃত্য গীতের মাধ্যমে তাকে আনন্দ দান করেন। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। ধীরে ধীরে পিতা ও কন্যা উভয়ের কাছেই তিনি অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন। এক সময় শুক্রাচার্য কচ কে গোশালা এর গাভী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। প্রতিদিন তিনি গাভীদের বনে নিয়ে যান ঘাস খাওয়াতে, আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। একদিন কিছু দৈত্য কচ কে দেখে চিনে ফেলে এবং তার আসার উদ্দেশ্যও জেনে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা কচ কে হত্যা করে তার মাংস বাঘকে খাইয়ে দেয়। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। গাভীগুলো কচ কে ছাড়াই গোয়ালে ফিরে এল। কচ কে দেখতে না পেয়ে দেবযানী আকুল হয়ে পিতার কাছে ছুটে গেলেন। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে পিতাকে বললেন, কচ কে নিশ্চয়ই বাঘ সিংহে খেয়ে নিয়েছে। শুক্রাচার্য বললেন কন্যা, কেঁদো না। আমি এক্ষুনি মন্ত্রের মাধ্যমে তাকে বাচিয়ে তুলছি। এরপর মন্ত্র পাঠ করে কচের নাম ধরে তিনবার ডাকতেই সে জীবিত হয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হলেন। পরে যাতে আবার এই বিপদ না হয় সেজন্য তাকে বনে যেতে নিষেধ করলেন। এর কিছুদিন পর দেবযানী কচ কে পূজার জন্য কিছু ফুল এনে দিতে বললেন। কোথাও ফুল না পেয়ে তিনি আশ্রমের বাইরে বনের মধ্যে গেলেন। সেখানে অসুর রা তাকে দেখতে পেয়ে আবার ধরে নিয়ে গেল। এবার কচ কে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে কেটে তার মাংস রান্না করা হল। তারা ভেবে দেখল এই মাংস যে খাবে তার নিস্তার নেই। গুরুদেব যখন মন্ত্রবলে একে পুনর্জীবিত করবেন তখন যার পেটে মাংস থাকবে তারই মৃত্যু ঘটবে। সবচেয়ে ভালো রাস্তা হল স্বয়ং গুরুদেব কেই এই মাংস খাইয়ে দেওয়া। পরিকল্পনা মত সুরা সহযোগে কচের মাংস শুক্রাচার্য কে পরিবেশন করা হল। মদ্যপান করে নিজের অজান্তেই তিনি শিষ্যের মাংস ভক্ষন করলেন। এদিকে দীর্ঘক্ষণ কচ কে দেখতে না পেয়ে ব্যাকুল দেবযানী আবারও পিতার চরণে পড়লেন। বললেন কচ কে যে ভাবেই হোক ফিরিয়ে আনুন, অন্যাথায় আমি আত্মহত্যা করব। শুক্রাচার্য ধ্যানযোগে দেখলেন কচ রয়েছে তার নিজের পেটের মধ্যে। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বৎস তুমি আমার পেটের মধ্যে কিভাবে এলে? কচ বললেন, গুরুদেব, দৈত্যরা আমাকে হত্যা করে আমার মাংস সুরা সহযোগে আপনাকে ভক্ষন করিয়েছে। এবার তিনি পড়লেন মহা সমস্যায়। কচ কে বাঁচাতে গেলে নিজের প্রাণ যাবে, আবার কচ কে হজম করে ফেললে শিষ্য হত্যার পাপে পড়তে হবে। অনেক ভেবে শুক্রাচার্য উদরস্থ কচ কে বললেন বৎস, আমি ধ্যানযোগে তোমাকে সঞ্জীবন বিদ্যা শিখিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাকে জিবিত করলে আমার মৃত্যু হবে। তার পর তুমি এই বিদ্যার সাহায্যে পুনরায় আমাকে পুনর্জীবিত করবে। কচ সম্মত হলেন। এরপর মন্ত্র পাঠ করে নিজের পেট চিরে কচ কে বের করলেন শুক্রাচার্য। পূর্ব পরিকল্পনা মত মন্ত্রপাঠ করে গুরুদেবকেও বাঁচিয়ে তুললেন কচ। প্রাণ ফিরে পেয়ে শুক্রাচার্য বুঝতে পারলেন মদ্যপান এর কারনেই বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে তিনি নরমাংস ভক্ষন করে ফেলেছেন। এইজন্য তিনি মদ এর উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন আজ থেকে যদি কোনো ব্রাহ্মণ মদ্যপান এমনকি তার গন্ধও যদি গ্রহণ করে তবে তার ব্রহ্মতেজ লুপ্ত হবে, তার ঠাঁই হবে নরকে। তখন থেকে ব্রাহ্মণ দের জন্য মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়।
Sunday, August 2, 2020
Post # 981 Bengali Amarchitra Katha 027
দেবতাদের গুরু ছিলেন বৃহস্পতি এবং দৈত্য দের গুরু ছিলেন শুক্রাচার্য। এই শুক্রাচার্য এর ছিল এক অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা। তিনি মন্ত্র বলে যে কোনো মৃত ব্যক্তিকে পুনর্জীবিত করতে পারতেন। একবার দেবতা ও দৈত্য দের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হল। দুই পক্ষের অনেক সৈন্য মারা গেল। দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য মন্ত্রবলে দৈত্যসেনাদের জীবিত করে তাদের আবার যুদ্ধে পাঠাতে লাগলেন। দেবগুরু বৃহস্পতি এর এই ক্ষমতা ছিলনা। ফলস্বরূপ দেবগন ক্রমশ দুর্বল হয়ে এক সময় স্বর্গ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। স্বর্গে অসুরদের রাজত্ব কায়েম হল। স্বর্গ ভ্রস্ট দেবগন সকলে পরামর্শ করতে বসলেন। দৈত্যদের পরাজিত করতে হলে অবশ্যই শুক্রাচার্য এর সঞ্জীবন বিদ্যা দেবতাদের করায়ত্ত করতে হবে। বৃহস্পতি এর পুত্র ছিলেন কচ। দেবগন কচ কে বললেন, বৎস তুমি ছদ্মবেশে শুক্রাচার্য এর আশ্রমে গিয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ কর। তার সেবা যত্ন করে কৌশলে সঞ্জীবন বিদ্যা অধ্যয়ন করে এস। সেইমত বৃষপর্বপুর এলেন কচ। শুক্রাচার্য কে প্রণাম করে বললেন, গুরুদেব, আমি অঙ্গিরা এর পুত্র, আপনার কাছে শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে চাই। গুরুদেব তাকে সাদরে গ্রহন করলেন। শুরু হল কচ এর ব্রহ্মচর্য শিক্ষা। সর্বক্ষণ তিনি গুরুর সেবায় নিয়োজিত। তারচেয়ে লক্ষ্য রাখেন শুক্রাচার্য এর কন্যা দেবযানী এর । তার কিছু প্রয়োজনের আগেই কচ সেখানে হাজির হয়ে যান। অবসর সময়ে নৃত্য গীতের মাধ্যমে তাকে আনন্দ দান করেন। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। ধীরে ধীরে পিতা ও কন্যা উভয়ের কাছেই তিনি অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন। এক সময় শুক্রাচার্য কচ কে গোশালা এর গাভী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। প্রতিদিন তিনি গাভীদের বনে নিয়ে যান ঘাস খাওয়াতে, আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। একদিন কিছু দৈত্য কচ কে দেখে চিনে ফেলে এবং তার আসার উদ্দেশ্যও জেনে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা কচ কে হত্যা করে তার মাংস বাঘকে খাইয়ে দেয়। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। গাভীগুলো কচ কে ছাড়াই গোয়ালে ফিরে এল। কচ কে দেখতে না পেয়ে দেবযানী আকুল হয়ে পিতার কাছে ছুটে গেলেন। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে পিতাকে বললেন, কচ কে নিশ্চয়ই বাঘ সিংহে খেয়ে নিয়েছে। শুক্রাচার্য বললেন কন্যা, কেঁদো না। আমি এক্ষুনি মন্ত্রের মাধ্যমে তাকে বাচিয়ে তুলছি। এরপর মন্ত্র পাঠ করে কচের নাম ধরে তিনবার ডাকতেই সে জীবিত হয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হলেন। পরে যাতে আবার এই বিপদ না হয় সেজন্য তাকে বনে যেতে নিষেধ করলেন। এর কিছুদিন পর দেবযানী কচ কে পূজার জন্য কিছু ফুল এনে দিতে বললেন। কোথাও ফুল না পেয়ে তিনি আশ্রমের বাইরে বনের মধ্যে গেলেন। সেখানে অসুর রা তাকে দেখতে পেয়ে আবার ধরে নিয়ে গেল। এবার কচ কে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে কেটে তার মাংস রান্না করা হল। তারা ভেবে দেখল এই মাংস যে খাবে তার নিস্তার নেই। গুরুদেব যখন মন্ত্রবলে একে পুনর্জীবিত করবেন তখন যার পেটে মাংস থাকবে তারই মৃত্যু ঘটবে। সবচেয়ে ভালো রাস্তা হল স্বয়ং গুরুদেব কেই এই মাংস খাইয়ে দেওয়া। পরিকল্পনা মত সুরা সহযোগে কচের মাংস শুক্রাচার্য কে পরিবেশন করা হল। মদ্যপান করে নিজের অজান্তেই তিনি শিষ্যের মাংস ভক্ষন করলেন। এদিকে দীর্ঘক্ষণ কচ কে দেখতে না পেয়ে ব্যাকুল দেবযানী আবারও পিতার চরণে পড়লেন। বললেন কচ কে যে ভাবেই হোক ফিরিয়ে আনুন, অন্যাথায় আমি আত্মহত্যা করব। শুক্রাচার্য ধ্যানযোগে দেখলেন কচ রয়েছে তার নিজের পেটের মধ্যে। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বৎস তুমি আমার পেটের মধ্যে কিভাবে এলে? কচ বললেন, গুরুদেব, দৈত্যরা আমাকে হত্যা করে আমার মাংস সুরা সহযোগে আপনাকে ভক্ষন করিয়েছে। এবার তিনি পড়লেন মহা সমস্যায়। কচ কে বাঁচাতে গেলে নিজের প্রাণ যাবে, আবার কচ কে হজম করে ফেললে শিষ্য হত্যার পাপে পড়তে হবে। অনেক ভেবে শুক্রাচার্য উদরস্থ কচ কে বললেন বৎস, আমি ধ্যানযোগে তোমাকে সঞ্জীবন বিদ্যা শিখিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাকে জিবিত করলে আমার মৃত্যু হবে। তার পর তুমি এই বিদ্যার সাহায্যে পুনরায় আমাকে পুনর্জীবিত করবে। কচ সম্মত হলেন। এরপর মন্ত্র পাঠ করে নিজের পেট চিরে কচ কে বের করলেন শুক্রাচার্য। পূর্ব পরিকল্পনা মত মন্ত্রপাঠ করে গুরুদেবকেও বাঁচিয়ে তুললেন কচ। প্রাণ ফিরে পেয়ে শুক্রাচার্য বুঝতে পারলেন মদ্যপান এর কারনেই বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে তিনি নরমাংস ভক্ষন করে ফেলেছেন। এইজন্য তিনি মদ এর উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন আজ থেকে যদি কোনো ব্রাহ্মণ মদ্যপান এমনকি তার গন্ধও যদি গ্রহণ করে তবে তার ব্রহ্মতেজ লুপ্ত হবে, তার ঠাঁই হবে নরকে। তখন থেকে ব্রাহ্মণ দের জন্য মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়।
Labels:
অমর চিত্র কথা ০০১-০৫০
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Thank you Indrada for posting another wonderful story.
ReplyDeleteAnek kichu jante parlam.
Welcome
DeleteVery rare issue.. Haven't read this in bengali before..Thank u so much for sharing
ReplyDeleteWelcome
DeleteThanxs Indra Da. Hope you are well now.
ReplyDeletewelcome.
Delete