Monday, August 31, 2020

Post # 994 Bengali Amarchitra Katha 051

                                                                        ডাউনলোড করুন




দীপিকার নাক কাটার হুমকি যারা দিয়েছিল, মনে হচ্ছে, নাকের বদলে নরুন পেয়ে টাক ডুমাডুম বাদ্যি বাজিয়ে তাদের হয়তো সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা, সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে কাটা যাবে ‘পদ্মাবতী’র দীর্ঘ ই-কার। ‘পদ্মাবতী’র রূপান্তর ঘটে প্রকাশ পাবে ‘পদ্মাবত’। সূর্পণখা হতে হবে না দীপিকাকে।

সেন্সর বোর্ডের এই সমঝোতা সূত্র অবশ্য রাজস্থানের করণি সেনার না-পছন্দ। তারা সিনেমাটা নিষিদ্ধ করার দাবিতে এখনো অনড়।

ঝাঁসিবাসীর মধ্যে অবশ্য এ নিয়ে কোনো হেলদোল নেই। তাদের ভাবনাজুড়ে শুধু তাদের হৃদয়ের রানির সম্মান। প্রার্থনা একটাই, রানির কোনো রকম সম্মানহানি যেন না হয়।

উত্তর প্রদেশের যে অংশটা মধ্যপ্রদেশের ঘাড় বেয়ে নেমে এসেছে, ঝাঁসি জায়গাটা ঠিক সেখানে। সেখানকার লোকজনের মনে রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের আসন কতটা পরিপাটি করে পাতা, ঝাঁসি না গেলে তা বোঝা যেত না। পদ্মাবতী অথবা পদ্মিনীর সঙ্গে লক্ষ্মীবাঈয়ের তুলনাতেও শহরবাসী আগ্রহী নয়। রানি পদ্মিনী বা পদ্মাবতী কতটা বাস্তব ও কতটাই বা কল্পনা, তা নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। লক্ষ্মীবাঈয়ের অস্তিত্ব, বীরত্ব ও নাতিদীর্ঘ জীবনের ইতিহাস নিয়ে কিন্তু বিতর্কের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

দীপিকা পাড়ুকোন যেমন ‘পদ্মাবতী’, কঙ্গনা রানাবত তেমনই ঝাঁসির রানি। কিন্তু লক্ষ্মীবাঈয়ের আদি নাম যে ‘মণিকর্ণিকা’, আগে তা জানা ছিল না। গাইডের ব্যাখ্যা এই রকম, লক্ষ্মীবাঈয়ের জন্ম বারানসিতে। বারানসির বিখ্যাত মণিকর্ণিকা ঘাটে বাবা কাজ করতেন। সেই ঘাটের নামেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন। ‘মণিকর্ণিকা’ ক্রমে ছোট হয়ে হলো ‘মনু’। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল মনুর। সেই থেকে ‘মণিকর্ণিকা’ অস্তে গেল। উদয় হলেন রানি লক্ষ্মীবাঈ।

ঝাঁসির গাইডদের মুখে রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের মাহাত্ম্য ও মনে বাসা বেঁধেছে ‘মণিকর্ণিকা’র প্রতীক্ষা। হবে নাইবা কেন? ৩০ বছর পূর্ণ না-হওয়া কোনো রমণী শিশুসন্তানকে পিঠে বেঁধে ঘোড়ার লাগাম দাঁতে চেপে দুহাতে খোলা তলোয়ার নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সতী-সাবিত্রীর দেশ ভারতে এমন ছবি যে বিরল। সেই ছবি যদি জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ইতিহাস তাহলে কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে নেমে আসে। সিপাহি বিদ্রোহ যদি হয়ে থাকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম সংগ্রাম, অনন্যা বীরাঙ্গনা লক্ষ্মীবাঈ তাহলে দেশের প্রথম নারী স্বাধীনতাযোদ্ধা। বইয়ের পাতা থেকে সিনেমার পর্দায় ইতিহাসের সেই নেমে আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনছে গোটা ঝাঁসি। শুধু ঝাঁসিই বা বলি কী করে, প্রতীক্ষায় রয়েছে দেশের স্বাধীনতাকামী তামাম নারীসমাজ।

তাঁকে নিয়ে ঝাঁসিবাসীর গর্বের কারণ বহু। স্বামীর মৃত্যুর পর রাজপাট সামলেছেন। প্রজাদের মঙ্গলের চেষ্টা করে গেছেন আমৃত্যু। আরও অনেকের মতো আত্মহননের পথে এগোননি। জহরব্রত পালন করেননি। ভীরু মনে দুবেলা মরার অপেক্ষা করেননি। বরং ঝাঁসিকে স্বাধীন রাখতে হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। গড়ে তুলেছেন প্রমীলা বাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতির ভূমিকা নিয়েছেন। এবং লড়তে লড়তে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গোয়ালিয়রের এক প্রান্তে পৌঁছে নদীর কিনারে এক সাধুকে অনুরোধ করেছেন তাঁর জন্য চিতা সাজাতে। লক্ষ্মীবাঈ চাননি ইংরেজরা তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করুক। করতেও পারেনি।

মাত্র দেড় শ বছর আগের ঘটনা। ১৮২৮ সালের ১৯ নভেম্বর জন্ম, মৃত্যু ১৮৫৮ সালের ১৮ জুন। ক্ষণজন্মা নারীর ক্ষণিকের জীবন!

সাহস ও বীরত্ব তো বটেই, রানি লক্ষ্মীবাঈ আজকের দিনে আরও প্রাসঙ্গিক তাঁর অত্যাধুনিক মন ও ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার জন্য। হিন্দু ও মুসলমানে কোনো বিভেদ কোনো দিন তিনি করেননি। তাঁর রাজত্বে মন্দির-মসজিদ পাশাপাশি তৈরি যেমন হয়েছে, তেমনই পূর্ণ দায়িত্বে বহাল রেখেছিলেন মুসলমান সেনাপতিদের। দুর্গ রক্ষার যুদ্ধে নিহত মুসলমান ও হিন্দু যোদ্ধাদের যে অশ্বত্থগাছের তলায় কবর ও দাহ করা হয়েছিল, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের মেলায় দুই ধর্মের মানুষ সেখানে জড়ো হন শ্রদ্ধা জানাতে। আজ পর্যন্ত কোনো তিক্ততা দেখা যায়নি।

দুর্গে প্রতিদিন সন্ধেয় আলো ও ধ্বনির মূর্ছনায় জীবন্ত হয়ে ওঠে দেড় শ বছর আগের ঝাঁসির ইতিহাস ও রানির জীবন-আলেখ্য। ভাষ্যপাঠে দিকপাল অভিনেতা ওমপুরী ও অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন। গাইড বললেন, রানির ভূমিকায় কণ্ঠদানের জন্য সুস্মিতা একটা টাকাও গ্রহণ করেননি। কেন বলুন তো?

উত্তরটাও গাইডই দিলেন। ‘রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের মতো সুস্মিতা সেনেরও জন্ম ১৯ নভেম্বর। তাই। এত সম্মান ও ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে তৈরি সিনেমা যেন ‘পদ্মাবতী’র মতো অনাবশ্যক কোনো বিতর্ক ও বিড়ম্বনা সৃষ্টি না করে। আমাদের প্রার্থনা ও কামনা এটুকুই।’

তথ্য সূত্র   www.prothomalo.com




 

Thursday, August 27, 2020

Post # 993 Bengali Amarchitra Katha 050

                                                                    ডাউনলোড করুন

 

 

 

 

অমর চিত্র কথা ৪৫ নং এর পর ৫০ পোস্ট করলাম, কারন এই চারটির মধ্যে দুটি মাত্র বাংলায় প্রকাশিত হয়ে ছিল... এই দুটি বাংলা এখনো আমার সংগ্রহে নেই... পরে পেলে হয়তো পোস্ট করে দেবো । 

বাল্মীকি ও তাঁরাবাঈ বাংলায় সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি ।

 

 

 


 

 

 

 

রাম শাস্ত্রী ছিলেন এক আদর্শ মানুষ । পেশোয়ারের দরবারে তিনি দীর্ঘকাল প্রধান বিচারপতির কাজ কঠিন হাতে পালন করে গেছেন...। শাস্ত্রীজীর বাল্য কাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়না ... এই বই তে ঐতিহাসিকেরা শোনা কথার উপর অনেক খানি নির্ভর করে লিখেছেন...। 

বিচারপতির কাজ তাঁর জীবনে খুব একটি মসৃণ ছিল না, মাঝে মধ্যেই তাঁকে কঠিন অগ্নি পরিক্ষার  মুখো মুখি হতে হয়েছে... অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ে তিনি বার বার সেই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন.........

 

 





 

Wednesday, August 26, 2020

Post # 992 Bengali Amarchitra Katha 045

                                                                       

ডাউনলোড করুন

             

 পি ডি এফ আপডেট

০৮. ০৪. ২০২৪

এই বইটি ৩ প্রকার ভাবে প্রকাশিত হয়ে ছিল প্রচ্ছদের ছবি গুলি দিলাম ।

জাতক হল ভগবান শাক্যমুনি বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনির সঙ্কলন। বুদ্ধ মহাধম্মপাল জাকত (৪৪৭) তার পিতাকে শুনিয়ে স্বদ্ধর্মে দীক্ষা দিয়েছিলেন। স্পন্দন জাতক (৪৭৫), দদ্দভ জাতক (৩২২), লটুকিক জাতক (৩৫৭), বৃক্ষধর্ম জাতক (৭৪) ও সম্মোদমন জাতক ( ৩৩) এই পাঁচটি জাতক শুনিয়ে শাক্য ও কোলিয়দের বিরোধ নিবারণ করেছিলেন। চন্দকিন্নর জাতক (৪৮৫) যশোধরাকে শুনিয়ে পাতিব্রত ধর্ম যে পূর্বজন্ম সংস্কারজ তা বুঝিয়েছিলেন। জাতক বৌদ্ধধর্মের নবাঙ্গের এক অঙ্গ এবং সুত্তপিটক এর অন্তর্গত খুদ্দকনিকায় এর অন্যতম একটি শাখা। ত্রিপিটকের অন্যান্য গ্রন্থেও জাতকের অনেক রেফারেন্স পাওয়া যায়।

 


পঞ্চতন্ত্র, ঈশপের গল্পের মতোই জাতকের গল্পগুলো অসাধারণ সাহিত্যরসে ভরপুর। জাতকের কাহিনীগুলো বিভিন্ন বয়সী পাঠকদের কাছে আজও সমান জনপ্রিয়। তাই গল্পগুলো এখন আর বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কমিকের বইয়ে বা কখনও অ্যানিমেশন ছবিতে জীবন্ত হয়ে আছে। জাতকের কাহিনীগুলো এখনও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। 

জাতক কী?

‘জাতক’ শব্দের অর্থ জন্মগ্রহণকারী। জাতক হলো গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন জন্মের কাহিনী রচিত গল্প সঙ্কলন। শোনা যায়, বুদ্ধদেব নিজেই জাতকের কাহিনীগুলো শুনিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের পূর্বজন্মের নানা কাহিনী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জাতকের ৫৪৭টি গল্প। বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম বুদ্ধ তার অতীত জীবনের কথা স্মরণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি শিষ্যদের সাথে ধর্মালোচনার সময় প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তার পূর্বজন্মের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করতেন। সেসব ঘটনার সঙ্কলনই জাতক সাহিত্য হিসেবে পরিচিত। 


পালি ভাষায় জাতকের এই কাহিনীগুলোকে বলা হয় 'জাতকত্থ বন্ননা'।  ধারণা করা হয়, সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য যখন সিংহল পরিভ্রমণ করেন, তখন শিষ্যদের জ্ঞানদানের জন্য তার সাথে ছিল জাতকের কাহিনীগুলো। সেই মূল গ্রন্থটি এখন বিলুপ্ত। সিংহলি ভাষায় যে জাতক প্রচলিত আছে, বর্তমানের 'জাতকমালা' তারই অনুবাদ বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকের মতে, 'জাতক' হলো পৃথিবীর সমস্ত ছোট গল্পের উৎস।

জাতকের সময়

জাতক গল্পের অধিকাংশই প্রাক-বুদ্ধ যুগের। পঞ্চতন্ত্রসহ বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্কলনেও এইসব কাহিনীর কিছু ‍কিছু পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বাইরেও জাতকের বেশ কিছু কাহিনীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মানবজাতির জ্ঞান ও নৈতিকতা অর্জনের জন্য জাতক কাহিনীগুলো রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। জাতকের এই গল্পগুলো দীর্ঘকাল গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি থেকে স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল।

জাতকের বিভিন্ন কাহিনীর চিত্ররূপ স্থান পেয়েছে শ্রীলঙ্কার এক বৌদ্ধ বিহারে

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি কালে জাতক গ্রন্থিত হয়। পালি ভাষাতেই জাতকের গল্পগুলো লিখিত হয়েছিল। বুদ্ধঘোষ রচিত জাতকত্থ বণ্ণনা নামক গ্রন্থে ৫৪৭টি জাতক কাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত জাতকের কাহিনীগুলো ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। পরবর্তীকালে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হয়। বাংলা ভাষায় জাতকের কাহিনীগুলো অনুবাদ করেন ঈশান চন্দ্র ঘোষ।

পঞ্চতন্ত্র, ঈশপের গল্পের মতোই জাতকের কাহিনীও সবধরনের পাঠকের মাঝে সমান জনপ্রিয়;

বাংলা ভাষায় রচিত জাতকের গল্প সঙ্কলনেও ৫৪৭টি জাতক কাহিনী স্থান পায়। কিন্তু ত্রিপিটকের সূত্তপিটক মতে, বুদ্ধদেব ৫৫০ বার জন্ম নিয়েছিলেন। সে হিসেবে জাতক সংখ্যা ৫৫০টি হওয়া উচিত। কিন্তু জাতকের তিনটি কাহিনী সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের মতে, জাতকে যে ৫৪৭টি গল্প আছে তার অনেকগুলোই পরবর্তী সময়ে সংযোজিত হয়েছে। তাই কোন জাতকগুলো প্রাচীনতম অর্থাৎ বুদ্ধেরই বলা, তা চিহ্নিত করা খুব কঠিন। তবে গবেষকগণ কিছু কিছু গল্পের ভাব ও ভাষা বিচার করে কয়েকটি কাহিনীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।

জাতক গল্পের মূল বিষয়বস্তু

বুদ্ধদেব নির্বাণ লাভ করার অল্প কিছুদিন পর থেকেই তার অনুগামীরা জাতকের কাহিনী শোনাতেন। এসব কাহিনী তারাই চিরস্মরণীয় করার ব্যবস্থা করেন। আত্মজীবনীমূলক এই কাহিনীগুলোর নৈতিক মূল্য রয়েছে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে। গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, বৈশিষ্ট্য এবং পরিস্থিতি জাতকে বর্ণিত কাহিনীগুলো দিয়ে আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। জাতকের গল্পে তিনটি বিষয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে একটি জাতক গল্পকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়।

জাতকের প্রতিটি কাহিনীতেই পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্মের কথা বলা হয়েছে;

প্রথম অংশে, গৌতম বুদ্ধ গল্পটি কোথায়, কখন, কাকে বলেছেন, তার নির্দেশনা থাকে। গল্পের এ ধরনের ভূমিকাকে প্রত্যুৎপন্ন বস্তু বলা হয়। গল্পের দ্বিতীয় অংশে অতীত জন্ম পটভূমিকা তুলে ধরে বুদ্ধ জাতকটি তার অনুসারীদের বলে থাকেন। এটি গল্পের মূল আখ্যান। গল্পের এ অংশকে বলা হয় অতীত বস্তু বা মূল বিষয়বস্তু। গল্পের শেষ অংশে অতীত জীবনের সাথে বর্তমান জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। এ অংশকে বলা হয় সমাধান তত্ত্ব।

গল্পে জাতকের যেসব নাম পাওয়া যায়

জাতকের গল্পগুলো বুদ্ধদেব তার পূর্বের জন্মগুলোতে কখনও মানুষ, কখনও বা পশু, আবার কখনও পাখি হয়ে জন্মেছেন। পূর্বজন্মের এসব কাহিনী নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে জাতক। প্রচলিত গল্পগুলোতে আর যেসব চরিত্র পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে অগস্ত্য, অপুত্রক, অধিসহ্য, শ্রেষ্ঠী, আয়ো, ভদ্রবর্ণীয়, ব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ, বুদ্ধবোধি, চন্দ্রসূর্য, দশরথ, গঙ্গাপাল, হংস, হস্তী, কাক, কপি, ক্ষান্তি, কাল্মষ পিন্ডি, কুম্ভ, কুশ, কিন্নর, মহাবোধি, মহাকপি, মহিষ, মৈত্রীবল, মৎস্যমৃগ, মধ্যদেবীয়, পদ্মাবতী, রুরু, শত্রু, শারভ, শশ, শতপত্র, শিবি, সুভাস, সুপারগ, সূতসোম, শ্যাম, উন্মাদয়ন্তী, বানর উল্লেখযোগ্য।

নীতিবোধের অনুপ্রেরণা থেকে রচিত হয়েছে জাতক কাহিনী

জাতকের কাহিনীগুলো মানুষের মধ্যে মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতা, সৌহার্দ্যের মতো সম্পর্কগুলো গড়ে তুলেতে যেমন উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি দয়াবান, সৎ ,আদর্শবান ও নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে ওঠার মতো নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। পরমতসহিষ্ণু ও পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়।

জাতকের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিকস

সাহিত্য হিসাবেও জাতকের গল্পগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর গল্পের গঠন এবং উপস্থাপনের ভঙ্গিমার কারণে সব বয়সী পাঠকদের কাছে জাতকের কাহিনীগুলো অবশ্যই সুখপাঠ্য। 

শোনা যাক একটি জাতক কাহিনী

জাতকের বিভিন্ন কাহিনী পুনর্জন্মের সূত্রে গ্রথিত, যে পুনর্জন্মের পরিসমাপ্তি ঘটেছে বুদ্ধদেবের নির্বাণলাভের মাধ্যমে। পুনর্জন্ম কেন, তা ব্যাখ্যা করা যায় বুদ্ধদেবের নিজের জীবন ও লক্ষ্য দিয়ে। জাতকের প্রতিটি কাহিনীতেই পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্মের কথা বলা হয়েছে। সেই সারমেয় বা কুকুরের গল্পটা ধরা যাক। এই গল্পটাও জাতকের আর পাঁচটা গল্পের মতোই নীতিকাহিনী।

কুকুরটি ছিল গৃহহীন। পথেঘাটেই ছিল তার বাস। জাতকের এই কাহিনী থেকে জানা যায়, একবার বুদ্ধদেবের এরকম জন্ম হয়েছিল। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল কুকুরটির। এই চরিত্রগুণেই সে একদিন রাস্তার সব কুকুরদের নেতা হয়ে যায়। কোনো একটি ঘটনার জন্য রাজার বিষনজর পড়েছিল রাস্তার কুকুরগুলোর ওপর। আর তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব কুকুরদের দলনেতা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল।

জাতকে বিভিন্ন গল্পের চরিত্র নিয়ে তৈরি হওয়া বইয়ের প্রচ্ছদ;

রাজার রথের জন্য যে ঘোড়ার সাজ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছিল। রাতভর বৃষ্টিতে সাজ একেবারে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সাজের চামড়ার অংশটুকু হয়ে গিয়েছিল নরম আর সুসিদ্ধ। এক ঝাঁক শিকারি কুকুর ছিল রাজার। চামড়ার সাজ টুকরো-টুকরো করে সেই শিকারি কুকুরের দল ভোজনপর্ব সেরেছিল।

খবর গেল রাজার কাছে। কিন্তু প্রাসাদের ভৃত্যরা জানালো, রাস্তার কুকুরগুলো পয়ঃপ্রণালী দিয়ে প্রাঙ্গণে ঢুকে চামড়ার সাজ খেয়েছে। রাজা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, আদেশ দিলেন, শহরের সমস্ত কুকুরকে নিধন করতে হবে। ভীতসন্ত্রস্ত ক্ষুদ্ধ কুকুরের দল ছুটে এলো সেই গৃহহীন কুকুরের কাছে। সেই কুকুর তার বিক্ষুব্ধ অনুগামীদের শান্ত করলো এবং প্রাসাদের পথে রওনা হলো।

সবসময় সত্যের ওপর ভরসা রাখার সহজ পথটি অনুসরণ করতো কুকুরটি। আর সেই সত্যের জোরেই সে পৌঁছে গেল রাজার কাছে। পথে কোনো নিপীড়নের শিকার হতে হলো না তাকে। রাজাকে বুঝিয়ে বললো সে। কুকুরটি রাজাকে তার নিজের শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর পরামর্শ দিল। রাজা সেইমতো আদেশ দিলেন। রাজার শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর সাথে-সাথে বমি করলো কুকুরের দল। বেরিয়ে এলো চামড়ার সব টুকরো।

কুকুরটি প্রমাণ করলো, তার অনুগামীরা একেবারেই নির্দোষ। ভবঘুরে কুকুরটির জ্ঞানবুদ্ধির পরিচয় পেয়ে রাজা তারই খাবার থেকে কুকুরটিকে নিয়মিত ভাগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। কোনো প্রাণীকেই কখনও হত্যা করা হবে না, কুকুরটির এই অনুরোধ রাজা মঞ্জুর করলেন। এই কাহিনীর প্রধান চরিত্রটি যে স্বয়ং বুদ্ধদেব, তা আগেই বলা হয়েছে। আর রাজা হলেন তারই প্রধান শিষ্য আনন্দ।

 তথ্য সূত্র  https://roar.media/bangla, ও https://bn.wikipedia.org


 

Saturday, August 22, 2020

Post # 991 Bengali Amarchitra Katha 044

                                                                  ডাউনলোড করুন

 

 

 

 

৪২ এর পর ৪৪ নং পোস্ট হোল... ৪৩ বান্দা বাহাদুর বাংলায় সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি ।

 

 আফগান বংশোদ্ভূত মুইজুদ্দিন মোহাম্মদ, যিনি মোহাম্মদ ঘোরি নামে পরিচিত ১১৯২ সনে তারাই এর যুদ্ধে দিল্লির শেষ স্বাধীন রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত ও হত্যা করে ভারতবর্ষে সুলতানি শাসনের সূচনা করেন। দিল্লি দখলের পর তিনি তার বিশ্বস্ত তুর্কি বংশোদ্ভূত সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে ভারতের দায়িত্ব ন্যস্ত করে গজনী ফিরে যান; সূচনা হয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুলতানি শাসনের। মূলত এ সময়টা সুলতানের শাসন উত্তর পশ্চিম ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল; দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব দিকে বাংলা তখনো ছিল অসংখ্য ছোট ছোট স্বাধীন হিন্দু রাজ্যে বিভক্ত। রাজ্যগুলো আকারেও যেমন ছোট ছিলো, তেমন ছিলো সামরিক শক্তিতে দুর্বল। মূলত ব্যবসা বাণিজ্য আর অভ্যন্তরীণ ঝামেলা সামলাতেই ব্যস্ত ছিলো তারা।

দিল্লি দখলের পরে আফগান সুলতানদের লোলুপ দৃষ্টি এবার এসে পড়লো দক্ষিণ এবং পূর্বের এই ছোট ছোট রাজ্যগুলোর উপর। কিন্তু মাঝখানে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা হয়ে দেখা দেয় রাজপুত শাসিত রাজস্থান। ইতিহাসে রাজপুতরা হার না মানা দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাসে তারা কখনোই পরাভব স্বীকার করে নেয়নি কারো। সাফল্যের সাথে মহাবীর আলেকজান্ডারকেও রুখে দিয়েছিলেন তারা। তাদের বীরত্ব মুগ্ধ করেছিলো আলেকজান্ডার আর সেলুকাসকে। রাজপুতরা বীর যোদ্ধার জাতি হলেও ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন রাজ্যে বিভক্ত। তাই উন্নততর যুদ্ধ কৌশলের অধিকারী বিশাল হানাদার বাহিনীর সাথে বীরের মত লড়লেও বারে বারেই হার মানতে হয়েছে। হার মানলেও সুলতানি আমল থেকে মোঘল আমল কোন সময়ই তাদের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করা যায়নি, হানাদারদের গলার কাঁটা হিসেবেই তারা রয়ে গেছিল।

তৈমুর লং এর ছেলে শাহ রুখ মির্জা ১৪শ শতাব্দীতে এক দিনেই প্রায় এক লক্ষ রাজপুতদের হত্যা করে। পরাজয় অত্যাসন্ন জেনে রাজপুত নারীরা ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আগুনে জীবন দিতে থাকে নিজেদের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে প্রচলন করেছিলো ‘জওহর’ বা ‘সতীদাহ’ আর! শুরু হয় ‘সতীদাহ’ প্রথা পুনঃপ্রচলন! এই রীতি পরে ছড়িয়ে পড়ে কুসংস্কার হিসেবে সারা ভারতে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। যার কোনো ভিত্তি হিন্দু শাস্ত্রে নেই। (কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় রীতিতে এটি প্রচলিত ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। প্রাচীন সতীদাহ প্রথার উদাহরণ পাওয়া যায় অন্তর্লিখিত স্মারক পাথরগুলিতে। সব চেয়ে প্রাচীন স্মারক পাথর পাওয়া যায় মধ্য প্রদেশে, কিন্তু সব থেকে বড় আকারের সংগ্রহ পাওয়া যায় রাজস্থানে। এই স্মারক পাথরগুলিকে সতী স্মারক পাথর বলা হতো যেগুলো পূজা করার বস্তু ছিল [Shakuntala Rao Shastri, Women in the Sacred Laws – The later law books (1960)]। ডাইয়োডরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus) নামক গ্রিক ঐতিহাসিকের খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের পাঞ্জাব বিষয়ক লেখায়ও সতীদাহ প্রথার বিবরণ পাওয়া যায় [Doniger, Wendy (2009). The Hindus: An Alternative History. Penguin Books. p. 611]। তাছাড়া, আলেকজান্ডারের সাথে ভারতে বেড়াতে আসা ক্যাসান্ড্রিয়ার ইতিহাসবিদ এরিস্টোবুলুসও সতীদাহ প্রথার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালের দিকে একজন ভারতীয় সেনার মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায় [Strabo 15.1.30, 62; Diodorus Siculus 19.33; ‘Sati Was Started For Preserving Caste’ Dr. K. Jamanadas]। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

তৈমুর লং ও শাহ রুখ মির্জার কল্যাণে হিন্দু ধর্মের এই বর্বর প্রথাটি আবারো প্রচলিত হয়ে পড়ে। ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় বেঙ্গলের গভর্নর ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। অবশ্য এ আইনি কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলত প্রিন্স দ্বারকানাথ (কবিগুরুর দাদু), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই।)

১৩০৩ সালে দিল্লির মসনদ দখল করেন তুর্কি বংশোদ্ভূত খিলজি বংশের দ্বিতীয় সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি; ১২৯০ সালে তিনি আপন চাচা এবং শ্বশুর সুলতান জালালুদ্দিন খিলজিকে হত্যা করে এবং রাজন্যদের ঘুষ প্রদান করে হাত করে সিংহাসনে আসীন হন। দক্ষিণের গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের সীমানায় রাজস্থানের মেওয়ার রাজ্যের রাজা তখন রাজপুত বংশের রাওয়াল রতন সিং। আর তাঁর রানী পদ্মাবতী ছিলেন অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারিণী রূপে, গুণে অনন্যা এক রাজবধূ। তাঁর রূপ গুণের কাহিনী এতটাই বিস্তৃত হয় যে, তা দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির কানেও পৌঁছে যায়। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত লম্পট, মদ্যপ আর ব্যভিচারী ছিলেন এই সুলতান। নিজের সহস্র উপপত্নী থাকা স্বত্বেও মন ভরতো না তার। যেখানে কোন সুন্দরী রমণীর সন্ধান পেতেন, ছলে বলে কলে কৌশলে তাকে অধিকার না করা পর্যন্ত শান্তি পেতেন না তিনি। রানীর রূপের বর্ণনা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি তিনি। বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন মেওয়ারের রাজধানী চিতোর অভিমুখে।

৭ম শতকে নি চিতোরগড়ের কেল্লা এক দুর্ভেদ্য দুর্গ, সেটা বাইরে থেকে আক্রমণ করে ধ্বংস করা যে সহজ নয় বুঝতে পেরে সুলতান আশ্রয় নিলেন এক কৌশলের। দূত মারফত রতন সিং এর কাছে খবর পাঠালেন। ‘তার দুর্গ দখল কিংবা রাজ্যহরণের কোন মতলব নেই; তিনি কেবল রানী পদ্মিনীকে বোনের মত দেখেন, তাকে এক পলক দেখেই চলে যাবেন। অকারণে নিজের সন্তানতূল্য প্রজাদের রক্তক্ষয় এড়াতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হন রতন সিং। তবে রানী শর্ত দিলেন যে রানী সরাসরি সুলতানকে দেখা দেবেন না, সুলতান আয়নায় তার প্রতিচ্ছবি দেখবেন।

কিন্তু সেই আয়নার প্রতিচ্ছবি দেখেই আরও উন্মত্ত হয়ে পড়ে লম্পট আলাউদ্দিন খিলজি। আশ্রয় নেয় এক নোংরা কৌশলের। কেল্লা থেকে অতিথিদের বিদায় দিতে রাজা রতন সিং সৌজন্য বশত সুলতানের সাথে কিছু পথ এগিয়ে দিতে এলেন। সুলতান এটাকেই সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে আচমকা রতন সিংকে বন্দি করে তার শিবিরে নিয়ে গেলেন। এরপর চিতোরগড় কেল্লায় খবর পাঠালেন কাল সকালের মধ্যে রানী পদ্মিনীকে তার শিবিরে পাঠিয়ে দিলে তিনি রাজা রতন সিংকে মুক্তি দেবেন এবং আর কারো কোন ক্ষতি না করে দিল্লি ফেরত যাবেন। এই মহা সংকটে এগিয়ে এলেন রাজা রতন সিং এর দুই বীর সেনাপতি চাচা-ভাতিজা বাদল এবং গোরা। তারা একটি পরিকল্পনা ফাঁদলেন, দূত মারফত সুলতানের শিবিরে খবর পাঠালেন যে তারা সুলতানের প্রস্তাবে রাজী, রানী পদ্মিনী পরদিন ভোরেই সুলতানের শিবিরে হাজির হবেন, কিন্তু রাজরানী বলে কথা, তিনি একা যেতে পারেন না, তার সাথে থাকবে আর দেড়শ সখী।

পরদিন সকালে কেল্লা থেকে রওনা হল পালকীর বহর। আসলে সেসব পালকির ভেতর রানী বা সখী কেউই নেই; আছে সেনাপতি গোরা ও বাদলের নেতৃত্বে বাছা বাছা সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দেড়শ রাজপুত যোদ্ধা। শিবিরে পৌঁছেই তারা অপ্রস্তুত সুলতান বাহিনীকে চমক সামলে ওঠার সময় দিলেন না, দ্রুততার সাথে সুলতানের দেহরক্ষীদের কচুকাটা করে হতবিহবল রাজা রতং সিংকে দ্রুত মুক্ত করে সেনাপতি গোরা দ্রুত রাজা রতন সিংকে একটি ঘোড়ায় চড়িয়ে কেল্লার দিকে রওনা করিয়ে দিলেন।

গোরা সুলতানের শিবিরে ঢুকে সুলতানকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাপুরুষ সুলতান সে সময় তার রক্ষিতাকে সামনে বর্মের মত ঠেকে দেন। বীর রাজপুত গোরা তাঁর ধর্মীয় নিয়মের কারণেই একজন মহিলাকে আঘাত করতে পারবেন না সেটা সুলতানও জানতেন। এই অবস্থায় সুলতানের দেহরক্ষীদের হাতে গোরার প্রাণ যায়। বাদল নিরাপদেই রাজা রতন সিংকে উদ্ধার করে কেল্লায় পৌঁছে গেলেন।

ক্রুদ্ধ আলাউদ্দিন এরপর সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেল্লার ওপর। কিন্তু দুর্ভেদ্য কেল্লাটির কিছুই করতে না পেরে কৌশল নেন চারপাশ থেকে অবরোধ করে রাখার। সুলতানের কৌশল কাজ দেয় ভালোমতোই। কিছুদিনের মধ্যেই খাদ্যের অভাবে হাহাকার ওঠে চিতোরে। এই অবস্থায় মহিলারা শত্রুর হাতে বেইজ্জত হবার চাইতে আত্মহনন করা শ্রেয় মনে করে বেছে নেন জওহরের বা সতীদাহের পথ। দুর্গের ভেতর তৈরি এক বিশাল অগ্নিকুণ্ডে রাজপরিবারের সব মহিলারা রানী পদ্মিনীর নেতৃত্বে তাদের বিয়ের পোশাক গয়না পরে সেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে আত্মাহুতি দিলেন। ‘সতী’ হয়েই নিলেন চিরবিদায় স্বেচ্ছায়।

আর স্বজনহারা রাজপুত সৈনিকরা বেছে নিলেন ‘সাকা’ বা ‘সংশপ্তক’ প্রথা (যুদ্ধ করতে করতে জীবন দেয়া), রণসাজে সজ্জিত হয়ে তারা দুর্গ থেকে বের হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আকারে তাঁদের প্রায় ১০ গুণ বিশাল সুলতানের বাহিনীর উপরে ‘হর হর মহাদেব’ শঙ্খনিনাদে। বীরের মতো জীবন দিলেন রণক্ষেত্রে। সুলতান বাহিনী কেল্লার ভেতর প্রবেশের পর তখনো জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে মহিলাদের পোড়া হাড়গোড় দেখতে পায়। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কেল্লায় আশ্রয় নেওয়া ৩০ হাজার রাজপুতকে হত্যা করেন সুলতান।

 তথ্য সূত্র www.sylhettoday24.news

               

 




Thursday, August 20, 2020

Post # 990 Bengali Amarchitra Katha 042

                                                                          ডাউনলোড করুন




৩৯ এর পর ৪২ পোস্ট করলাম... তানাজি ও ছত্রশাল বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল কিনা জানা নেই ।



`আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার।`


কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার এ দুটি লাইন মনে পড়ে? হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী শান্তি আনতে ধরিত্রিকে ২১ বার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম।
মহর্ষি ভৃগুর (পরশুরামের প্রপিতামহ) বাক্যানুযায়ী পরশুরাম বৃত্তিতে হয়েছিলেন ক্ষত্রিয়। তাই জগতে তিনিই প্রথম যোদ্ধা ব্রাক্ষণ। পরশুরামের মা রেণুকা ছিলেন অযোধ্যার সূর্যবংশের কণ্যা। এই বংশেই রামচন্দ্রের জন্ম হয়। জমদগ্নির ঔরসে রেণুকার গর্ভে পাঁচ পুত্রের মধ্যে পরশুরাম ছিলেন কনিষ্ঠ। রেণুকা একবার চিত্ররথ নামক এক রাজাকে সস্ত্রীক জলবিহার করতে দেখে  কামার্তা হয়ে পড়েন। জমদগ্নি এই দৃশ্য দেখে পুত্রদেরকে মাতৃহত্যার আদেশ দেন। পাঁচ পুত্রের মধ্যে চারজনই এতে রাজী হয়নি। একমাত্র পরশুরাম পিতার আদেশে কুঠার দিয়ে তাঁর মায়ের শিরশ্ছেদ করেন।

 

মাতৃহত্যাজনিত পাপে, তার হাতে ওই কুঠার সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে পুত্রের কাজে  জমদগ্নি খুশি হয়ে তাকে বর প্রার্থনা করতে বলেন এবং অন্য সন্তানদের অভিশাপ দেন। পরশুরাম মায়ের পুনর্জন্ম, মাতৃহত্যাজনিত পাপ ও মাতৃহত্যা স্মৃতি বিস্মৃত হওয়া, ভাইদের জড়ত্বমুক্তি, নিজের দীর্ঘায়ু ও অজেয়ত্বের বর প্রার্থনা করেন। জমদগ্নি তাঁকে সবগুলো বরই প্রদান করেন।ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার পর হাত থেকে কুঠার বিচ্ছিন্ন হয়েছিল পরশুরামের।

 

হৈহয়রাজ কার্তবীর্য জমদগ্নির হোমধেনুর গোবৎস হরণ করেছিলেন বলে পরশুরাম তাঁকে বধ করেছিলেন। কার্তবীর্যের পুত্ররা প্রতিশোধ নিতে আশ্রমে এসে তপস্যারত জমদগ্নিকে হত্যা করেন। ক্ষুব্ধ পরশুরাম একাই কার্তবীর্যের সব পুত্রকে বধ করেন। এরপর তিনি একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করেছিলেন। ক্ষত্রিয়দের রক্ত দিয়ে সমস্তপঞ্চক প্রদেশের পাঁচটি হ্রদ পূর্ণ করেন তিনি। [সমন্তপঞ্চকোপাখ্যান- দ্বিতীয় অধ্যায়- আদিপর্ব- মহাভারত] শেষে পিতামহ ঋচিকের অনুরোধে ক্ষত্রিয় হত্যা বন্ধ করেন পরশুরাম। এরপর তিনি যজ্ঞের মাধ্যমে কশ্যপকে পৃথিবী দান করে মহেন্দ্রপর্বতে বসবাস শুরু করেন।

 

ভীষ্ম ও দ্রোণ পরশুরামের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেছেন।  ভাই বিচিত্রবীর্যের বিয়ের জন্য, কাশীরাজের তিন কন্যা অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকাকে ভীষ্ম স্বয়ংবর সভা থেকে অপহরণ করেছিলেন। অম্বা ভীষ্মকে জানান - তিনি  আগেই শাম্বরাজকে মনে মনে পতি হিসেবে বরণ করেছেন।  অম্বাকে শাম্ববরাজের কাছে ভীষ্ম যাওয়ার অনুমতি দিলেও, অপহৃতা কন্যা বলে শাম্বরাজ তাঁকে প্রত্যাখান করেন।  অম্বা ভীষ্মের কাছে ফিরে এসে তাঁকে বিয়ে করার অনুরোধ করলে, ভীষ্ম তা প্রত্যাখ্যান করেন। ক্ষুব্ধ অম্বা শরণাপন্ন হন পরশুরামের । পরশুরাম এসেও ভীষ্মকে এই বিয়েতে রাজী করাতে ব্যর্থ হন। এর ফলে শিষ্য পরশুরামের সাথে ভীষ্মের ঘোরতর যুদ্ধ হয়।  ২৩ দিন যুদ্ধের পরও পরশুরাম ভীষ্মকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন। পরে পরশুরাম মহেন্দ্র পর্বতে ফিরে যান এবং অস্ত্রলাভের জন্য মহাদেবের তপস্যা করেন।

 

তপস্যায় খুশি হয়ে পরশুরামকে আশীর্বাদ প্রদান করেন  মহাদেব । এরপর তিনি মহাদেবের আজ্ঞায় বহু দানব হত্যা করেন।

 

রামায়ণে আছে-  পরশুরামের মৃত্যুর পূর্বেই বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামের জন্ম হয়। রামচন্দ্র হরধনু ভঙ্গের পর সীতাসহ অযোধ্যায় ফিরে আসছিলেন। হরধনু ভঙ্গের সংবাদ পেয়ে পরশুরাম ক্রোধান্বিত হয়ে রামের মুখোমুখি হন এবং অহঙ্কারের সঙ্গে বলেন ,  তাঁর কাছে বৈষ্ণবধনু আছে । এই বৈষ্ণবধনু ভঙ্গ করে প্রকৃত বীরত্ব দেখানোর জন্য তিনি রামকে আহ্বান জানান।  আর রাম যদি এতে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে বলে চ্যালেঞ্জ করেন পরশুরাম।  বৈষ্ণব ধনু নিয়ে পরশুরামের তপস্যার্জিত সমস্ত শক্তি বিনষ্ট করেন রাম। ফলে পরশুরামের তেজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এরপর ইনি নির্বীর্য হয়ে রামচন্দ্রকে পূজা ও প্রদক্ষিণ করে মহেন্দ্র পর্বতে ফিরে যান। [একোনবিংশ সর্গ- বালখণ্ড- বাল্মীকি রামায়ণ]

সূত্র  www.risingbd.com



 

Wednesday, August 19, 2020

Post # 989 Bengali Amarchitra Katha 039

                                                                       ডাউনলোড করুন


পঞ্চতন্ত্র সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি প্রাচীন গ্রন্থ ৷ রচয়িতা কবি বিষ্ণু শর্মা ৷ তবে এই গ্রন্থের মূল পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় নি ৷ নানা উপদেশমূলক গল্পের সঙ্কলন এই গ্রন্থ ৷ জীবনের পথের নানা উপদেশ এই গ্রন্থের নানা গল্পের উদাহরণের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে ৷ গ্রন্থটি ৫ টি তন্ত্রে বিভক্ত ৷ এগুলি হল :

  • মিত্রভেদ
  • মিত্রপ্রাপ্তি
  • কাকোলুকীয়
  • লব্ধপ্রনাশ
  • অপরিক্ষিতকারক 

তথ্য সূত্র ; উইকিপিডিয়া



 

Tuesday, August 18, 2020

Post # 988 Bengali Amarchitra Katha 038

                                                                 ডাউনলোড করুন                     

 

 

 



ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত ভগবানের অবতার নৃসিংহদেবের কাহিনি

 একদা ব্রহ্মানন্দন সনক আদি ব্রক্ষর্ষিগণ ত্রিভুন ভ্রমণ করতে করতে তাঁদের ইচ্ছানুসারে বিষ্ণুলোকে গমন করেছিলেন। যদিও তাঁরা মরীচি প্রভৃতি পূর্ব্বতন মুনিদেরও পূর্ব্বজ, তথাপি তাদেরকে দিগম্বর ও পঞ্চ বাঁ ষোল বর্ষ বয়স্ক বালকের তুল্য অবলোকন করাতে শিশু বোধ করে বিষ্ণুপুরীর দ্বারী ঐ দুই ব্যক্তি (শিশুপাল ও দন্তবক্র) পুরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিল। তাতে ঐ ব্রহ্মর্ষিরা রোষের বশ হয়ে ঐ দুই জনকে এই অভিশাপ দেন অরে! ভগবান্‌ মধুসূদনের পাদমূলে রজস্তমো রহিত, তোরা এখানে বাস করবারও যোগ্য পাত্র নস্‌, এখানে থেকে ভগবানের সেবা কি করবি ? অতএব, অরে মূর্খ হতভাগ্য! তোরা আশু পাপয়সী আসুরী যোনি প্রাপ্ত হ। এই প্রকার শাপ গ্রস্ত হওয়া মাত্র তৎক্ষণাৎ বৈকুণ্ঠ হতে পতিত হয়েছিল, তাতে সেই মুনিগণ কারুণিক স্বভাব হেতু পুনরায় বলেছিলেন তিন জন্মের পর তোদের স্বস্থান প্রাপ্তি হবে অর্থাৎ তাবৎ কালে এই অভিশাপ সমাপ্ত হয়ে যাবে। তারপড় ঐ দুই ব্যক্তি দিতির গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে হরিণ্যকশিপু ও হিরণ্যাক্ষ নামে বিখ্যাত এবং দৈত্য দানবদের বন্দিত হয়। ভগবান বিষ্ণু কে ধরণীর উদ্ধার নিমিত্ত যতকালে বরাহরূপ ধারণ করে হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। ভ্রাতার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন:
হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না। আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না। আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না। আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে। এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন। এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না।
ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহদেব রূপে অবতারঃ-
হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন। দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। দেবর্ষি নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।
ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই ভগবান বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র ভগবানবিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা:
“ওরে হতভাগা প্রহ্লাদ, তুই সব সময়ই আমার থেকেও মহৎ এক পরম সত্তার কথা বলিস। এমন এক সত্তা যা সর্বত্র অধিষ্ঠিত, যা সকলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং যা সর্বত্রব্যাপী। কিন্তু সে কোথায়? সে যদি সর্বত্র থাকে তবে আমার সম্মুখের এই স্তম্ভটিতে কেন নেই?”
প্রহ্লাদ সেই স্তম্ভকে প্রণাম করে বললেন, তিনি [এই স্তম্ভে] ছিলেন, আছে ও থাকবেন। তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন। হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন। তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।



 

Sunday, August 16, 2020

Post # 987 Bengali Amarchitra Katha 037

                                                                          ডাউনলোড করুন

                                       

 

 

 

 

অশোক (খ্রি.পূ ২৬৯-২৩২)  প্রথম পূর্ব ভারতীয় শাসক যিনি উপমহাদেশের বৃহত্তর অংশে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। অশোকের সময়ে পুন্ড্রবর্ধন (বর্তমান উত্তরবঙ্গের বগুড়া) মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ বা প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। সম্ভবত বিন্দুসার অথবা তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী অশোক এ অঞ্চলকে মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করেন। খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৭২ অব্দে বিন্দুসারের মৃত্যুর পর রাজ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে তাঁর পুত্রদের মধ্যে প্রায় দীর্ঘ চার বছর যুদ্ধের পর অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৬৯-৬৮ অব্দে রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। তিনি ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন। শাসনের প্রথম পর্বে অশোক উপমহাদেশের প্রায় অধিকাংশে তাঁর রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান; কিন্তু রক্তক্ষয়ী কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোকের রাজনৈতিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে আমূল পরিবর্তন আসে। অশোকের প্রস্তর ও স্তম্ভলিপির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, কী করে কলিঙ্গ যুদ্ধের রক্তবন্যা তাঁকে একজন নীতিবান ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।  ওই সময় থেকেই তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। জীবনের অবশিষ্ট সময় অহিংস  ধম্মই তাঁর পথপ্রদশ©র্কর ভূমিকা পালন করে।

অশোক পাটলীপুত্র (বর্তমান পাটনা বা এর কাছাকাছি কোনো স্থান) হতে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন। ঐতিহাসিকদের মতে, রাজকীয় তহবিল এবং ধম্ম প্রচারের ব্যয় নির্বাহের অর্থের প্রধান উৎস ছিল গঙ্গা উপত্যকা থেকে সংগৃহীত রাজস্ব।

প্রাচীন সভ্যতার বিস্তৃতি ও গভীরতার বিষয়টি প্রাচ্যবিদদের দ্বারা উন্মোচিত না হওয়া পর্যন্ত পুরাণ সাহিত্যের কয়েকটি অসম্পূর্ণ তথ্যের উপরই অশোক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিল। পুরাণ সাহিত্যে অশোককে মৌর্য রাজবংশের একজন নগণ্য শাসক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৮৩৭ সালে জেমস প্রিন্সেপ অশোকের বেশ কয়েকটি প্রস্তরলিপির পাঠোদ্ধার করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, পুরাণ সাহিত্যে বর্ণিত সম্রাট অশোককে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বড় মাপের সম্রাট ছিলেন তিনি। প্রিন্সেপই প্রথম প্রকাশ করেন যে, অশোক নিজে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি ধম্মকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। অশোকের আরো বেশ কিছু লিপি পরীক্ষা করে প্রিন্সেপ সিদ্ধান্ত দেন যে, তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধের পরেই রাজ্যজয়ের নীতি বর্জন করেন। তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর দেবনামপিয় পিয়দসি (পিয়দসি, অর্থাৎ দেবতাদের প্রিয়জন) শীর্ষক ধর্ম- রাজকীয় উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজেকে শান্তি ও মানবজাতির কল্যাণের কাজে নিবেদিত করেন। পরবর্তী সময়ে অশোকের বেশ কিছু প্রস্তরলিপি এবং স্তম্ভে উৎকীর্ণ রাজকীয় আদেশ বা ডিক্রি আবিষ্কার এবং এদের পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে অশোকের সাম্রাজ্য ও জীবনাচরণ, রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে  আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। উনিশ ও বিশ শতকে আবিষ্কৃত অশোকের অসংখ্য প্রস্তরলিপির পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে শুধু নৃপতি হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনই নয়, তাঁর রাজত্বকালের ঘটনাবলী এবং প্রশাসনের প্রকৃতি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অশোক তাঁর তেরোতম লিপিতে নিজের জীবন দর্শন, রাজনীতি ও ধর্ম সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। প্রাচীনকালের রাজকীয় চিন্তাধারা ও কর্মকান্ড সম্পর্কে এত সরল ও ব্যাপকভাবে উপস্থাপিত দলিল সম্রাট অশোকের রাজত্বের পূর্বে বা পরে আর পাওয়া যায় না। তিনি তাঁর লিপিসমূহে মানুষের শান্তি ও কল্যাণের উপর যুদ্ধ কী ধরনের প্রভাব ফেলে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কলিঙ্গ যুদ্ধই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে, মানব সংঘ, কল্যাণ ও শান্তির ক্ষেত্রে যুদ্ধ কতটা ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি যুক্তি দিয়ে প্রমানও করার প্রয়াস পেয়েছেন যে, ধর্মীয়, নৈতিক ও রাজনীতি এর কোনো প্রেক্ষিতেই যুদ্ধ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সমাজ এবং ব্যক্তি স্তরে যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব প্রত্যক্ষ করে অশোক বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে যুদ্ধের পথ পরিহার করে শান্তি ও সামাজিক সৌহার্দ্য গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নিতে পারলে মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব। তিনি তাঁর রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় নীতির নতুন ধারণার ব্যাখ্যা দেন ধম্ম -এর উপর ভিত্তি করে, যা ছিল সম্পূর্ণই ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব চিন্তা। তিনি তাঁর এ ধারণা প্রস্তরখন্ডে এবং স্তম্ভের গায়ে উৎকীর্ণ করে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা এবং সাধারণের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বর্ণনা দেন, কী করে কলিঙ্গ যুদ্ধ তাঁর চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনেছিল এবং শান্তির জগৎ ও সামাজিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল। কলিঙ্গ যুদ্ধ তাঁর মনোজগতে যে পরিবর্তন এনেছিল, তেরোতম প্রস্তরলিপিতে তার বর্ণনা নিম্নরূপ:

‘‘যখন তিনি (অশোক) ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র, রাজা পিয়দসি আট বছর অতিবাহিত করলেন, তখন কলিঙ্গ জয় হল। এতে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার  লোক গৃহহীন হয়, এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং তারও কয়েক গুণ বেশী মানুষ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর যখন কলিঙ্গ তাঁর রাজ্যভুক্ত হয়, তখন ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র ঐকান্তিকতার সঙ্গে ‘ধম্ম’ পালন করেন, তাঁর একমাত্র কাম্য হয়, ধম্ম প্রচার। কলিঙ্গ জয়ের পরে ঈশ্বরের প্রিয়জন অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকেন। কারণ, যখন একটি স্বাধীন দেশ বিজিত হয় তখন হত্যা, মৃত্যু এবং নির্বাসিত মানুষগুলি ঈশ্বরের প্রিয়পাত্রের মনকে ভারাক্রান্ত করে। আরো অনুশোচনা হয় যখন সেখানে বসবাসকারী  ব্রাহ্মণ, শ্রমন, অন্ধ যে কোনো বর্ণের লোক অথবা যারা তাদের উপরস্থদের প্রতি অনুগত, বাবা মায়ের প্রতি অনুগত, শিক্ষকের প্রতি অনুগত ও ভালো ব্যবহার করে, এবং বন্ধু, সহকারি, আত্মীয়, দাস ও ভৃত্যদের প্রতি সহনুভূতিশীল প্রত্যেকেই তাদের প্রিয়জনের প্রতি হিংস্রতা, হত্যা এবং বিচ্ছিন্নতায় কষ্ট পায়। এমনকি যে ভাগ্যবানেরা যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং যাদের ভালোবাসা কমে নি (যুদ্ধের নির্দয় প্রভাবেও) তারাও তাদের বন্ধু, সহকারি, সহকর্মী এবং আত্মীয়দের দুর্ভাগ্য দেখে কষ্ট পায়। সকল মানুষের এ ধরণের কষ্ট পাওয়ার বিষয়টি ঈশ্বরের প্রিয়পাত্রের মনের উপর ভারী বোঝা হয়ে জেঁকে বসে। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র বিশ্বাস করেন যে, যারা ভুুল কাজ করে তাদের যতদূর সম্ভব ক্ষমা করে দেয়া উচিত। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র বনবাসী অপরাপর গোত্রদের তাঁর সাম্রাজ্যে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে, প্রত্যেক মানবগোষ্ঠীকে নির্বিঘ্নে, স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে মানসিক শান্তিতে এবং ভদ্রভাবে বাস করতে দেয়া উচিত... (এশিয়া ও ইউরোপের যেসকল দেশে ‘ধম্ম’-এর প্রচারণায় তিনি বার্তাবহ পাঠিয়েছেন তাদের বর্ণনা) ধম্ম-এর এই সকল লিপি খোদাই করে রাখা হয়েছিল, যাতে কোনো পুত্র বা প্রপৌত্রদের ব্যাপারে নতুন বিজিত ভূখন্ড প্রাপ্তির বিষয়ে ভাবনার কিছু না থাকে... তারা সত্যিকার এবং স্থায়ী জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুধুমাত্র ধম্ম-এর মাধ্যমে জয় করার বিষয়টিই বিবেচনা করবে এবং ধম্ম-এর আনন্দই হবে তাদের পরিপূর্ণ আনন্দ। কারণ এ আনন্দই পার্থিব জগৎ এবং পর জগতের জন্য মূল্যবান।’’ [Ashoka and the Decline of the Mauryas, Oxford University Press 1997, paperback, pp 255-57,  থেকে রমিলা থাপার কর্তৃক অনুদিত]।

অশোকের রাজত্বকাল বেশ কয়েকটি বৌদ্ধসংঘ পুনর্গঠনের কারণে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দে সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং সহায়তায় পাটলীপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বৌদ্ধধর্মের থেরাবাদী সম্প্রদায়কে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন এবং সংঘকে ভিন্নমতাবলম্বীদের সেখান থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেন। এ সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, ধর্মান্তরের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মকে এশিয়ার প্রত্যেক অংশে এমনকি এশিয়ার বাইরেও কার্যকর করে তোলার। অশোক তাঁর লিপিতে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের নামোল্লেখ করেছেন যাদের সঙ্গে তিনি কূটনৈতিক এবং অন্যান্যদের সঙ্গে ধর্মপ্রচারক বিনিময় করেন। সাধারণত স্থানীয় ভাষায় অশোকের লিপি উৎকীর্ণ করা হতো। ব্রাহ্মী লিপিতে প্রাকৃত ভাষা অশোকের লিপির প্রধান মাধ্যম হলেও সব ভাষাভাষি মানুষের কাছে বৌদ্ধ ধর্মকে পরিচিত করে তুলতে তাঁর লিপিতে স্থানীয় মানুষের উপযোগী দক্ষিণ ভারতীয় এবং হেলেনীয় ভাষারও ব্যবহার করা হতো।

সমসাময়িক বৈদিক, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মীয় বিশ্বাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধম্ম-এর ধারণার সৃষ্টি হয়। একটি নতুন ভাবাদর্শ সৃষ্টির লক্ষ্যে অশোক প্রচলিত বিশ্বাস ও চিন্তা থেকে তাঁর মূল্যবোধ গ্রহণ করেন এবং ধম্ম-এর সঙ্গে এর সংশ্লেষ ঘটান। ফলে অশোকের বিশাল সাম্রাজ্যে বহুবিধ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটে এবং তাঁর রাজ্যে মিশ্র জনগণ প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব অবস্থানে নিরাপদ ছিলেন। ধম্ম-এর মূলনীতিই এমন ছিল যে, প্রত্যেক ধর্ম, বর্ণ এবং মতাবলম্বীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। ধম্ম-এর মূল বাণী ছিল ‘সহনশীলতা’। অশোকের মতে প্রত্যেক মানুষ এবং তাদের বিশ্বাস ও ভাবধারার মাঝে সহনশীলতার ধারণা সম্প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন। অশোকের দৃষ্টিতে সহনশীলতা হলো দাস ও ভৃত্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন, শিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখানো, বাবা-মায়ের প্রতি আনুগত্য, বন্ধু সহকর্মী এবং আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন, ব্রাহ্মণ এবং শ্রমণদের সম্মান করা এবং তাদের অর্থ সাহায্য দান এবং সকল প্রাণীর প্রতি সদয় থাকা। অশোক তাঁর দ্বাদশ প্রস্তরলিপিতে ঘোষণা করেছেন যে, কেবল নিজের জন্যই নয়, একজন মানুষের জীবনের প্রধান দায়িত্ব হলো সকল ধর্মের কল্যাণ ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা।

সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বের ত্রয়োদশ বছরে পঞ্চম প্রস্তরলিপির মাধ্যমে ধম্ম-এর আদর্শের প্রচারণা শুরু করেন। এ লিপিতে অশোক বন্দীদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য রাজকর্মচারীদের নির্দেশ দেন। যে সকল বন্দীর সন্তান-সন্ততি আছে, যারা বৃদ্ধ, দুর্বল এবং অসুস্থ তাদের তিনি মুক্ত করে দেন। তিনি তাঁর একাধিক লিপিতে মানবজাতির কল্যাণের ও সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছাবার উপায় তিনি তাঁর ষষ্ঠ প্রস্তর লিপিতে বর্ণনা করেন। তাঁর ধম্ম-এর চিন্তার মূলে ছিল প্রত্যেক ধর্ম এবং ধর্মাচরণের প্রতি সহনশীলতা ও ভালোবাসা। তিনি তাঁর দ্বিতীয় লিপির মাধ্যমে শুধু মানুষ, পশু এবং পাখির প্রতি দয়া প্রদর্শন নয়, বরং উদ্ভিদ জগতের প্রতিও সহনশীল হওয়ার নির্দেশনা দেন। তিনি ফলদায়ক বৃক্ষ, ঔষধি লতাগুল্ম, এবং জ্বালানির জন্য বৃক্ষ রোপনের এবং উদ্ভিদকূলের স্বাভাবিক বর্ধণ ব্যাহত না করার নির্দেশ দেন।

রাজুক বা সাম্রাজ্যের আঞ্চলিক কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সংঘ ছিল ধম্ম-এর প্রচারণার আরেকটি সাংগঠনিক উপায়। রাজুক ঢাক পিটিয়ে জনগণের মধ্যে সমন জারি করত এবং ঘোষণা করত যে, ‘বাবা-মাকে এবং শিক্ষককে অবশ্যই মান্য করতে হবে, জীবিত সকল প্রাণীর প্রতি সদয় হতে হবে, এবং সবসময় সত্যি কথা বলতে হবে।’ [Minor Rock Inscriptions, tr. R. Thapar, Ashoka and the Decline of the Maurya, p. 259].

রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অশোকের দর্শন কয়েক শতকব্যাপী যৌক্তিক অনুসন্ধান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ের আর্যদের যাযাবর  গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে মৌর্যদের অধীনে স্থায়ী ও নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতিতে উত্তরণ মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। জৈন ও বৌদ্ধ চিন্তাধারা ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির বিসর্জনমূলক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য থেকে মৌর্যযুগের গভীর ও বিমূর্ত চিন্তাধারা রূপায়নে গভীর  প্রভাব ফেলেছিল। এটি নিঃসন্দেহে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ধর্মীয় বিসর্জন থেকে সম্প্রীতি ও  এবং সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ মহতী উত্তরণ।

এটা সর্বজনবিদিত যে, পিতা বিন্দুসারের মৃত্যুর পর অশোক যখন উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তখন তিনি স্পষ্টত বৌদ্ধ ছিলেন না। মৌর্য সিংহাসনে আরোহনের পরই বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ইতিহাসকারদের অধিকাংশই একমত যে, উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্বে অশোক রাজসভার ব্রাহ্মণ সভাসদগণের তেমন সমর্থন পাননি এবং এ বিষয়টিই সম্ভবত তাঁকে বিকল্প হিসেবে বৌদ্ধ দর্শনের দিকে ঠেলে দেয়। তাছাড়া বণিকশ্রেণীর উত্থান এবং হেলেনীয় বিশ্বের সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান যোগাসূত্রের ফলে যে সামাজিক পরিবর্তন এসেছিল, তাও সম্ভবত সম্রাট অশোককে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণে প্রভাবিত করেছিল।

এভাবেই অশোক ধম্ম-এর ধারণা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য নতুন অর্থনৈতিক পরিবেশকে এক ধরণের সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সম্ভবত বৃহত্তর রাজ্যসীমায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক ইউনিটসমূহকে সমন্বিত করাই ছিল অশোকের ধম্ম-এর নতুন রাষ্ট্রনীতি। কলিঙ্গ যুদ্ধের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি না করে মৌর্য স্বার্বভৌমত্বের মধ্যে বিপুল সংখ্যক স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের একত্রিকরণেই হয়তো তাঁর স্বপ্ন আবর্তিত হয়েছে। শার্লামেন এবং কনস্টান্টাইন কর্তৃক খ্রিস্টধর্মের নামে ইউরোপের রাজনৈতিক একত্রীকরণের স্বপ্নের সঙ্গে তাঁর স্বপ্নের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে ব্রাহ্মণ কর্তৃক যেসকল বৌদ্ধ স্বীকৃতি লাভ করেন নি, তারাই এখন ধম্ম-এর নামে একটি শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেন।

সম্রাট অশোকের বিশ্বরাষ্ট্রের ধারণা বিশ্লেষণে পন্ডিতগণ সমসাময়িক বৌদ্ধধর্মীয় চক্রবর্তিন  বা বিশ্বজনিন সম্রাটের ধারণার উপর গুরুত্ব দেন। সম্রাট হবেন পাপমুক্ত এবং করুণার প্রতীক। সমসাময়িক জৈন ধর্মীয় দিগ্বিজয়ী ধারণার সঙ্গে এ বিশ্বজনীন রাজার ধারণার মিল রয়েছে। কিন্তু অশোক তাঁর প্রস্তরলিপিতে কখনোই নিজেকে চক্রবর্তী বা দিগ্বিজয়ী হিসেবে দাবি করেন নি।

  



 

Thursday, August 13, 2020

Post # 986 Bengali Amarchitra Katha 036

                                   

                                                                   ডাউনলোড করুন

 




সারাদিনের খেলার সাথী এই পুতুলটি ছিল মীরার কাছে শ্রীকৃষ্ণের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। ধীরে ধীরে বড় হয় মীরা। একদিন রাজস্থানের পাথুরে রাস্তা দিয়ে বাদ্য বাজিয়ে যাচ্ছে বিয়ের শোভাযাত্রা। প্রাসাদের জানালা দিয়ে তা দেখে আর চোখের পলক পড়ে না ছোট্ট মীরার। এক দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে আবদার করে বসলো, মা, আমার বর কই? সাত বছরের মেয়ের প্রশ্নের কী জবাব দেবেন ভেবে পেলেন না মা। হাত ধরে নিয়ে গেলেন গিরিধারীর (কৃষ্ণের অপর নাম হরি, গিরধর, শ্যাম) মূর্তির সামনে। বললেন, এই তো তোমার বর।

তারপর যে কী হল মীরার। কৃষ্ণ প্রেমে এতটাই বুঁদ হলেন যে, কৃষ্ণই হয়ে উঠল তার একমাত্র বন্ধু, প্রেমিক এবং স্বামী আর এই প্রতিশ্রুতিতে তিনি ছিলেন আমৃত্যু অবিচল।

মীরাবাঈ এর অন্যতম পরিচয় তিনি একজন মরমী কবি। শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে লিখেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি ভজন বা ভক্তিগীতি যা আজও ভারতবর্ষের পথে প্রান্তরে কৃষ্ণপ্রেমীদের কণ্ঠে শোনা যায়। যদিও ৫ হাজারের মধ্যে প্রায় ৪০০ গান তার লেখা বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১৪৯৮ সালে মেরতায় জন্ম নেন মীরাবাঈ। অতি অল্প বয়সেই বাবা মাকে হারান তিনি। বর্ণিত আছে, বাবা রতন সিং মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান। অন্যদিকে মাত্র ৭ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মীরা প্রতিপালিত হন দাদা রাও দুদার আশ্রয়ে। রাও দুদা ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। তিনি মীরাকে ধর্ম, রাজনীতির ব্যাপারে পাঠদান করেন। পাশাপাশি গান এবং শিল্পকলায় ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন মীরা।

কিশোরী বয়সে পৌঁছানোর আগে ভারতবর্ষের মেয়েরা যেমন মথুরা-বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের উপাখ্যান সম্পর্কে জেনে যায় মীরাও হয়তো জেনেছিলেন।


মীরা এবং যুবরাজ ভোজরাজের বিয়ে

মীরা যতই বলেন যে, তার স্বামী কৃষ্ণ, তার অভিভাবকেরা এই পাগলামি মেনে নিতে কিছুতেই রাজি ছিলেন না। শুরু হল বিয়ের আয়োজন।১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে মেওয়ারের যুবরাজ ভোজরাজের সাথে বিয়ে হয় এবং বিয়ের পর তিনি চিত্তর প্রাসাদে তার স্বামী এবং নতুন পরিবারের সাথে বসবাসের জন্য চলে যান। কিন্তু তার মতে, শ্রীকৃষ্ণই তার একমাত্র স্বামী। তাই বিয়ের পরও পার্থিব সকল বিষয় থেকে নিজেকে আলাদা রাখেন মীরা। চিত্তরের যুবরাজের সাথে বিয়ে তার সামাজিক মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও প্রাসাদের আভিজাত্য কখনোই আকর্ষণ করেনি তাকে। কৃষ্ণই ছিলেন তার ধ্যান, জ্ঞান। বিভ্রান্ত ভোজরাজ বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। শুরুতে তিনি মীরাকে পার্থিব জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। শীঘ্রই তিনি মীরার এই গভীর প্রণয় বুঝতে পেরেছিলেন। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তাদের সম্পর্ক। পরবর্তীতে তিনিই মীরাকে উৎসাহিত করেন কবিতা লিখতে এবং তার উপাসনার জন্য মন্দিরও বানিয়ে দিয়েছিলেন।

মীরা এবং সম্রাট আকবর

মীরার খ্যাতির পাশাপাশি তার রচনা করা ভজনগীতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার খ্যাতি এবং আধ্যাত্মিকতা লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে মোঘল সম্রাট আকবরের কানে পৌঁছায়। সম্রাট আকবর যেহেতু বিভিন্ন ধর্মীয় পথ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন, তাই তিনি মীরাবাঈ এর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। কিন্তু সমস্যা হলো আকবর এবং মীরার পরিবার একে অপরের প্রতিপক্ষ এবং দীর্ঘদিনের চলা যুদ্ধে উভয়পক্ষের অনেকেই মারা গেছে। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতা সম্রাট আকবরকে তার উদ্দেশ্য থেকে হটাতে পারেনি। ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে তানসেনকে সাথে নিয়ে হাজির হন মীরার কাছে। আকবর তার প্রাণবন্ত সঙ্গীত এবং ভক্তিমূলক গানে এতটাই আসক্ত হয়েছিলেন যে, ফিরে যাওয়ার সময় মীরার চরণে তার পরিহিত মূল্যবান গলার মালা উৎসর্গ করে যান। যদিও তাদের সাক্ষাতের ব্যাপার নিয়ে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।

একসময় ভোজরাজের কানে আকবর এবং মীরার সাক্ষাতের ঘটনা পৌঁছালে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যে, মীরাকে পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেওয়ার নির্দেশ দেন। মীরা স্বামীর আদেশ পালন করতে যখন পানিতে ঝাঁপ দিবেন তখনই শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে এবং তিনি মীরাকে নির্দেশ দেন বৃন্দাবনে পালিয়ে যেতে। মীরা তখন তার কয়েকজন অনুগামী্দের নিয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে কৃষ্ণের উপাসনায় মগ্ন হলেন। শীঘ্রই ভোজরাজ ভুল বুঝতে পারেন এবং অনুতপ্ত হয়ে ওঠেন। বুঝতে পারেন, তার স্ত্রী প্রকৃতপক্ষে একজন সাধু এবং তাকে ফিরিয়ে আনতে বৃন্দাবন যান এবং মীরাকে ফিরে আসতে অনুরোধ করেন। মীরাবাই সম্মত হন, কিন্তু ভোজরাজের পরিবার কিছুতেই তা মেনে নিতে পারে নি।

সম্রাট আকবর

ভোজরাজের মৃত্যু

দুর্ভাগ্যবশত, ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে এক যুদ্ধে ভোজরাজ মারা যান। এই মৃত্যুর প্রভাব মীরার উপর ছিল অত্যন্ত গভীর। তিনি শুধু একজন বন্ধু নয়, হারিয়েছিলেন তার পরামর্শদাতা এবং একজন অভিভাবককে, যিনি সকল সমালোচনা নিন্দা থেকে মীরাকে রক্ষা করেছিলেন। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর মীরা আধ্যাত্মিক চর্চায় আরো বেশি নিজেকে উৎসর্গ করতে শুরু করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন্দিরে গান গাইতেন এবং সেই গান শোনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে জনসাধারণ আসতে শুরু করে। রাজবংশের হয়েও মীরার এ ধরনের আচরণ ভোজরাজের পরিবার মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু কোনো কিছুই মীরাকে কৃষ্ণের উপাসনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। কৃষ্ণ প্রেমে পাগল মীরার জন্য পার্থিব জীবন ছিল নেহায়েত মূল্যহীন।

পরিবারের সাথে সম্পর্ক আরো খারাপ হতে থাকে তখন শ্বশুর রানা সংগ্রাম সিং মীরাকে আদেশ দেন স্বামীর পাশাপাশি মীরাকেও যেন সতীদাহ করা হয়। কিন্তু মীরা উত্তর দেয় আমাকে কেউ সতীদাহে বাধ্য করতে পারবে না। আমি গেয়ে যাব গিরধরের গান আর আমার অন্তর জুড়ে আছে কেবল গিরধর। তিনিই আমার স্বামী।

এর পরিণামে যা হলো মীরার উপর অত্যাচার বহুগুণে বেড়ে যায়। কিন্তু যতই অত্যাচার করা হোক না কেন তিনি ছিলেন নির্লিপ্ত। কোনো কিছুই গিরধরের সাথে তার যে গভীর সম্পর্ক তা বিনষ্ট করতে পারেনি। সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে ভোজরাজের পরিবার মীরাকে হত্যার জন্য দুবার অপচেষ্টা চালায়। একবার বিষাক্ত সাপ এবং আরেকবার খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মারার চেষ্টা করা হলেও মীরা বলেন কৃষ্ণের কৃপায় উভয় যাত্রায় তিনি পার পেয়েছেন। তার কৃষ্ণই তাকে রক্ষা করেছেন।

শাশুড়ি আর দেবরের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মীরা প্রাসাদ ত্যাগ করলেন। ষোল শতকে ভারতবর্ষের পথে ঘাটে দেখা যায় এক পাগলিনী সন্ন্যাসীকে যার কণ্ঠে শুধুই কৃষ্ণের গান। মীরা মথুরা গেলেন, গেলেন বৃন্দাবনে। কৃষ্ণ প্রেমে রচনা করলেন হাজার হাজার গান। কৃষ্ণ প্রেমে নারী পুরুষ সেই গান শুনে হয় মুগ্ধ।

প্রেমের আগুনে জ্বলে জ্বলে আমি ব্যথা নিয়ে ঘুরে বেড়াই, আমার ব্যথা যে কমে না, আমার শ্যাম যে আসে না।


রাজকুমারী হয়ে জন্ম নিলেও মীরা আত্মার শান্তি খুঁজে পান বৃন্দাবনের রাস্তায়। সকল যন্ত্রণা সমালোচনার ঊর্ধ্বে মীরা কেবল তার শ্যামকেই ভালোবেসেছেন। তার জীবন ভক্তির এক উজ্জল নিদর্শন। মীরাবাঈ দেখিয়েছেন যে, কেবলমাত্র প্রেমের মাধ্যমেই একজন সাধক ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে পারেন। রাজপুত এই নারী বরং শিখিয়েছেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। কৃষ্ণপ্রেমে বিলীন হতে প্রাসাদের বিলাসিতা বিনা দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন তিনি। যিনি ঘোর পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মতো করে কাটিয়েছেন সারা জীবন, আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে!

সূত্র https://roar.media.com