Saturday, March 27, 2021

Post # 1043 Bengali Amarchitra Katha 210

                                                                            ডাউনলোড করুন

 

এই সংকলনে বীরবলের ৯ টি গল্প স্থান পেয়েছে । 

ঘোড়ায় চড়ে চৌগান(পোলো) খেলছেন মহেশ দাস। আর সেই খেলা দেখছেন তার প্রাণের বন্ধু সম্রাট আকবর। হাততালি দিয়ে উৎসাহও দিচ্ছেন খেলার।
আচমকাই ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে সাংঘাতিক জখম মহেশ। এমনই আঘাত, যে সংজ্ঞা হারালেন তিনি। ছুটে এলেন দিল্লীশ্বর। কোলের ওপর তুলে নিলেন তাঁর বন্ধুর মুখ।
কী করে জ্ঞান ফেরানো উচিত ভেবে না পেয়ে নিজেই বন্ধুর মুখে মুখ লাগিয়ে প্রাণপণে ভরে দিতে থাকলেন নিজের নিশ্বাস।
এই মহেশ দাসই হলেন বীরবল। সম্রাট আকবরের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। অথচ যাঁর পরিচয় দিতে কালমাত্র দেরি করবেন না কেউই।— ‘‘ও, বীরবল? আকবরের নবরত্ন সভার ভাঁড়?’’
আসল ঘটনা হল, এই সব কাহিনির সঙ্গে মানুষ বীররবলের কোনও যোগই ছিল না। সবটাই কল্পনাপ্রসূত। তা’ও সে গুলি আকবরের রাজ-অবসানের একশো বছর বাদে মুখে মুখে প্রচলিত হয়।
তাঁকে বিদূষক হিসেবে কোনও দিনই নিযুক্ত করেননি সম্রাট আকবর।। অ্যারিস্টটলের কাছে আলেকজান্ডার যেমন, আকবরের জন্য বীরবলও তাই— এমনও মত শোনা যায় এক বিশেষজ্ঞের।
আরেক বারের ঘটনা বলা যাক। সেবার হঠাৎই এক পাগলা হাতির সামনে পড়ে গেলেন মহেশ। পালানোর পথ নেই। সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যু। এমন সময় আবারও মুঘল সম্রাট আকবর নিজের ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁর বন্ধু এবং পাগলা হাতির মাঝখানে।
অপ্রত্যাশিত বাধায় হাতি সরে গেল। প্রাণ বাঁচল মহেশের।
এমনই অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন তাঁরা, যে দু’জন মানুষকে আলাদা করা ভার! তাদের সখ্য নিয়ে বলা হয়—‘মান তু শদম, তু মান শোদী/ মান তন শোদম তু জান শোদী’। — আমি তুমি হলাম, তুমি আমি হলে। আমি শরীর হলাম, তুমি প্রাণ।
পিছিয়ে যাওয়া যাক বেশ কয়েক বছর। ১৫২৮। মধ্যপ্রদেশের সিদ্ধি জেলার ঘোঘারা অঞ্চলের ত্রিবিক্রমপুরে এক চৌরাসিয়া ব্রাহ্মণ পরিবারে তখন জন্ম নিচ্ছেন মহেশ। বাবার নাম গঙ্গাদাস। মা অনাভা দেবী।

মহেশ তাঁদের তৃতীয় সন্তান। গঙ্গাদাস যখন মারা যান, মহেশ তখন খুবই ছোট।

আর্থিক কারণে নিজের বাড়ি ছেড়ে দাদুর বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় মহেশকে। দাদু রূপধরের কড়া তত্ত্বাবধানে শুরু হয় নতুন করে শিক্ষা।


কবিতা লেখা, গান লেখা, গান গাওয়ার পাশাপাশি হিন্দি, সংস্কৃত, পার্সি ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠলেন মহেশ। কবিতা লেখার হাত এবং গানের গলা তাঁর এমনই মিষ্টি, যে তরুণ বয়েসেই দেদার নাম করে ফেললেন

শ হরে শহরে গান গেয়ে বেড়াতেন। দু’পয়সা রোজগার হত তাতেই। এই তাঁর প্রধান জীবিকা। তাতেই নাম এত ছড়াল যে একদিন ডাক পড়ল জয়পুরের মহারাজ ভগবানদাসের দরবারে।

সেখানে নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গান গেয়ে শোনালেন মহেশ। শুনে এতটাই মোহিত হলেন রাজা, যে মহেশের নতুন নাম দিলেন ব্রহ্মকবি।

রাজার আদেশে জয়পুরেই বেশ কয়েক বছর থেকে গেলেন মহেশ। ব্রহ্মকবি নামে পরিচিতি হয়ে গেল তাঁর। ওখানে থাকতে থাকতেই মহেশের ডাক পড়ল উত্তর ভারতের বিশাল পরাক্রমী রাজা রামচন্দ্রের কাছ থেকে। রামচন্দ্রকে তখন গোটা ভারতবর্ষ এক ডাকে চেনে।

এ বার জয়পুরের পাট চুকিয়ে রামচন্দ্রের কাছে হাজির হলেন ব্রহ্মকবি। রাজসভায় গিয়ে মহেশের পরিচয় হল এমন এক গাইয়ের সঙ্গে যিনি গান গেয়ে প্রদীপে আগুন জ্বালাতে পারেন। আবার বৃষ্টি নামিয়ে সেই আগুন নিভিয়েও দিতে পারেন। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং মিঞা তানসেন।

এর পর থেকে তানসেন হলেন রামচন্দ্রের সভাগায়ক। মহেশ সভাকবি। দিব্যি চলতে থাকল জীবন। নাম তত দিনে আরও ছড়িয়েছে। শুধু গায়ক বা কবি হিসেবেই নয়, মহেশের অন্যতম গুণ ছিল তাঁর বাগ্মিতা, চাতুর্য এবং তীক্ষ্ণ রসবোধ। এই সব মিলিয়ে চারিদিকে তাঁর সুনাম।

তখনও তিনি কুমার, সুতরাং মেয়ের বাবাদের মধ্যে একপ্রকার হুলুস্থুল লেগে গেল মহেশকে জামাই হিসেবে পেতে। বিয়েতে আপত্তি নেই ব্রহ্মকবিরও। নাম যশ অর্থ সবই হয়েছে। এবার বিয়েটাও সেরে ফেললে মন্দ কি? কালিজরের এক ধনী অভিজাত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে সেরে ফেললেন মহেশ। শুরু হল সুখী দাম্পত্য জীবন।

মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ট সম্রাট আকবরের সভায় তলব পড়ল তাঁর। শুধু তাঁর একার নয়, তানসেনেরও। গেলেন দুইজনেই।

এই দুই প্রতিভার সাক্ষাৎ প্রমাণ পেয়ে আর তাঁদের দুজনকে ফিরে যেতে দিলেন না রামচন্দ্রের সভায়।

তানসেন হলেন আকবরের নবরত্ন সভার সভাগায়ক। মহেশ সভাকবি। মহেশের কবিত্বে এতটাই মুগ্ধ হলেন আকবর যে তাঁকে কবিরাজ উপাধিতে ভূষিত করলেন কিছু দিনের মধ্যেই।

এমনকী সম্রাট আকবর যে ‘দীন ইলাহি’ ধর্মের প্রচলন করেছিলেন, তার জন্য অনেকটাই অবদান ছিল শাস্ত্রজ্ঞ বীরবলের। তিনিই ছিলেন একমাত্র হিন্দু যিনি নিজে এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফলে আকবর-বীরবলের বন্ধুত্বের বা বোঝাপড়ার গভীরতা যে কতটা এটা অচিরেই বুঝতে পারছিলেন অনেকেই।

আর রাজার বেশি ঘনিষ্ঠ হলে যা হয়! শত্রুও বাড়ল কবিরাজের। এই তালিকায় প্রথম নাম ঐতিহাসিক বদায়ুনির। বারবার তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াতেন বীরবল অযোগ্য। বেজন্মা বলে গালি দিতেন তাঁকে। এমনকী গণিকালয়ে গিয়ে বীরবল নাকি নাবালিকা গণিকাদের সম্ভোগ করেন, এও রটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যাতে সম্রাট তাঁর ধর্মপ্রাণ বন্ধুটির প্রতি রুষ্ট হন। শুধু কথায় নয়, লেখাতেও এই চেষ্টাটি চালিয়েছিলেন বদায়ুনি।

কেউ বলেন, একজন হিন্দু কেন মোগল সম্রাটের এত প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন তা সহ্য করতে পারেননি আবদুল কাদের বদায়ুনি। তাই বীরবলকে হেয় করতে তাঁর ফন্দিফিকিরের শেষ ছিল না।

একজন সভাকবি, যোদ্ধার তুলনায় ভাঁড় বা বিদূষকের গুরুত্ব কিছুটা কম, তাই ঐতিহাসিক বদায়ুনি তাঁর লেখায় মহেশকে বদফ্রোস বা বিদূষক হিসেবে বর্ণনা করতেন।

তাতে অবশ্য মহেশের সঙ্গে সম্রাট আকবরের সম্পর্ক কোনও ভাবেই টাল খায়নি। বরং সম্রাট কালে কালে বুঝেছিলেন তাঁর কবিরাজের অসামান্য কাব্যপ্রতিভার সঙ্গে রয়েছে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরিসীম ক্ষমতা।

১৫৭২ সালে তাঁর এই সভাকবিকে তিনি এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে পাঠান। লক্ষ্য, শের আফগান কোয়ালি খানকে তার বড় ভাই হাকিম মির্জার আক্রমণ থেকে বাঁচানো।

ব্রহ্মকবি সফল হয়ে ফিরে এলেন। আর তার পরেই সম্রাট তার এই চোদ্দো বছরের অনুজ প্রিয় বন্ধুটিকে বীরবর উপাধি দিলেন। মহেশ দাশ থেকে ব্রহ্মকবি, তার থেকে কবিরাজ শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠলেন বীরবর, যা পরে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে বীরবল।

আকবরের সভায় বীরবলের বদায়ুনির মতো শত্রু যেমন ছিল, তেমনই আবুল ফজলের মতো বন্ধুও। আবুল ফজল তাঁর লেখায় বলেছেন, প্রায় দু’হাজার লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বীরবল। এমন এক পরাক্রমী যোদ্ধা, গায়ক-কবিকে কেন পরবর্তী কালে শুধুমাত্র একজন বিদূষক হিসেবেই চিহ্নিত করা হল?

সে কথায় যাওয়ার আগে বীরবলের বাকি জীবনটুকুও একটু জেনে নেওয়া যাক।

সভায় মান সিংহ টোডরমল ভগবানদাসের মতো গুণী জনরা থাকলেও নবরত্নের মধ্যে বীরবলই যে সম্রাটের সবথেকে প্রিয়পাত্র তা জানতেন সকলেই। সেই ঘনিষ্ঠতা কতখানি, তার প্রমাণ হিসেবে হুবহু তুলে দেওয়া যাক বাংলা ১৩৩৫ সালের শ্রাবণ সংখ্যায় বিচিত্রা পত্রিকায় লেখা মুহম্মদ মনসুরুদ্দিনের লেখা ‘বীরবল’ নামের নিবন্ধের খানিকটা অংশ (বানান অপরিবর্তিত)—

‘‘দরবার হইতে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সমস্ত স্থানে তাঁহার যাতায়াত ছিল। কোন পদবীর আমীর ওমরাহই তাঁহার মত স্বাধীনভাবে সম্রাট আকবরের নিকট যাতায়াত করিতে পারিতেন না। নিজের বুদ্ধিমত্তা বলে ও সম্রাটের মন অধ্যয়ণ দ্বারা প্রায় সময়েই সম্রাটের নিকট হইতে ভাল ভাল ফরমান পাইতেন। এইজন্য রাজা, মহারাজা, আমির ওমরাহ ও সেনাপতি সকলেই তাঁহাকে লক্ষাধিক টাকার উপহার প্রেরণ করিতেন। এবং সম্রাটও তাঁহাকে অধিকাংশ রাজাদের নিকট দৌত্যকার্য্যে নিযুক্ত করিতেন। কতকটা তাঁহার বংশীয়গুণে, কতকটা দৌত্য পদবীর জন্য, কতকটা হাস্য পরিহাস জন্য অতি সহজেই তিনি রাজাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাব করিয়া ফেলিতেন, এবং এমনভাবে তাঁহার কার্য্য উদ্ধার করিয়া লইতেন যে সৈন্য সামন্ত দ্বারাও উহা সম্ভব হইত না।’’

আমৃত্যু বীরবলের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা আকবরের ছিল। অথচ, মজার কথা কী, সম্রাট যতই বন্ধু হন, তিনি ভুল কিংবা অন্যায় করলে বীরবল কিন্তু তাঁকে ছেড়ে কথা বলতেন না।

এই প্রসঙ্গে একটি ছোট ঘটনা বলা যেতে পারে। তানসেন ছিলেন বীরবলের অভিন্নহৃদয় বন্ধু। একবার সেই তানসেনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠল, তিনি নাকি তাঁর সমসাময়িক এক গায়ককে শত্রুতাবশে বিষ খাইয়ে খুন করেছেন। তা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সম্রাট। তানসেনকে কঠোর শাস্তির আদেশ দিলেন। কিন্তু বীরবল বুঝেছিলেন কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তানসেনের মতো গায়ক এমন কাজ করতেই পারেন না।

তিনি কৌশলে নিজের বাগ্মিতায় সম্রাটকে এমনই প্যাঁচে ফেললেন যে সম্রাট বাধ্য হলেন আবার সেই বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করতে, এবং যথারীতি দেখা গেল তানসেন সেই গায়কের মৃত্যুর জন্য আদৌ দায়ী ছিলেন না। প্রাণে বাঁচলেন বিশ্বের সেরা গায়ক, আর ভবিষ্যতের কলঙ্কের বোঝা থেকে মুক্ত হলেন শ্রেষ্ঠ মুঘল সম্রাট আকবর। বলা বাহুল্য, তা তাঁর সভাসদ বীরবলের কারণেই।

বীরবলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলেছিল আজীবন। এবং শেষ পর্যন্ত সেই চক্রান্তকারীদের মুখে হাসিও ফুটেছিল বীরবলের নির্মম মৃত্যুতে।

কী ভাবে মারা গেলেন আকবরের প্রিয় বন্ধু? যুদ্ধবাজ আফগানদের শায়েস্তা করার জন্য আকবর সিদ্ধান্ত নিলেন সেখানে বিপুল সেনাবাহিনী পাঠাবেন।

আফগানিস্তানের মতো দুর্গম জায়গা, সেখানে একজন অভিজ্ঞ সেনাপতিকেই তিনি পাঠাবেন ভেবেছিলেন। এ দিকে বীরবল জানালেন, তিনি সেখানে যেতে চান।

বীরবলের এই প্রস্তাবে আকবরের মনে ‘কু’ ডেকেছিল। কিন্তু বন্ধুর প্রার্থনাকেও ফেলে দিতে পারছিলেন না। অতয়েব করেয়া (লটারি) করলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস, তাতেও বীরবলেরই নাম উঠল! সুতরাং অনুমতি দিতেই হল।

যুদ্ধে যাওয়ার আগে সম্রাট বীরবলের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন ‘‘বন্ধু খুব শিগগিরি ফিরে এসো। তোমাকে ছাড়া আমার জীবনধারণ অসহনীয়।’’ বীরবল কথা দিলেন।

কিন্তু জীবনে সেই প্রথম আর সেই শেষবারের মতো কথার খেলাপ করলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এক বিশাল সেনাবাহিনী পৌঁছল আফগানিস্থনের কাটলং অঞ্চলে।

ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মোট আট হাজার সৈন্য সহ নিহত হলেন মুগল সম্রাট আকবরের পরমপ্রিয় বন্ধু বীরবল। আর এতই দুর্ভাগ্য যে, মৃতদেহের স্তূপ থেকে বীরবলের প্রাণহীন শরীরটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

বীরবলের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পিছনেও তার প্রতি ঈর্ষাকাতরদের চক্রান্ত ছিল বলে মনে করা হয়। শোনা যায়, বীরবল যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর আগেই সেখানে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন আকবরের অন্য এক সভাসদ জৈন খান। তিনিও দু’চোক্ষে দেখতে পারতেন না বীরবলকে। সেবার মওকা পেয়ে তিনিই নাকি আফগানদের খবর পাঠান বীরবল ও তাঁর সৈন্যরা কোথায় আছেন। চক্রান্ত করে বীরবল ও তাঁর সৈন্যদের এমন একটি গিরিবর্ত্মে মধ্যে এনে ফেলেন যেখান থেকে আর পালানোর পথ ছিল না।

বীরবলের মৃত্যুর পরে একেবারে ভেঙে পড়েন আকবর। কয়েক দিন আহার নিদ্রা, সভায় বসা সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। বারবার আফশোস করতেন অন্তত বীরবলের মৃতদেহটুকুও যদি খুঁজে পাওয়া যেত তাহলে অন্তত সৎকারটুকু করা যেত তাঁর। পরে নিজেই নিজেকে স্বান্ত্বনা দিয়েছেন এই বলে, বীরবলের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষকে অগ্নিতে দাহ করার প্রয়োজন হয় না, সূর্যদেব স্বয়ং নিজের তেজে বীরবলের সৎকার করবেন।

বীরবলের মৃত্যুর পরেও তাঁর প্রতি ঘৃণা এতটুকু কমেনি বদায়ুনির। বদায়ুনি তখনও লিখে চলেছেন, ‘‘বীরবলের মৃত্যুর পর কিছু মানুষ রটালেন বীরবল নাকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কাপুরুষের মতো পালিয়ে উত্তরভারতের নগরাকোটে সাধুসন্ন্যাসীদের সঙ্গে মিশে গেছেন।’’ কিন্তু আকবর সেই কথা বিশ্বাস তো করেনইনি, বরং অনুসন্ধান করে দেখেছিলেন আসলে পুরো ব্যাপারটাই ডাহা মিথ্যে।

এমনই মিথ্যে গল্প দিয়ে, কখনও ঠগ, কখনও পলাতক, ভীরু বলে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে অসীম প্রতিভাধর মহেশ দাশ বীরবলকে। আর তাঁর মৃত্যুর এত এত বছর পরেও তাঁকে ‘বিদূষক’ হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে বহু বহু মানুষের কাছে— এত বড় তামাশা আর হয় নাকি!

ঋণ: Raja Birbal : Life and Times (Parameswar Prasad Sinha), দরবার-ই-আকবরী (শামসুল উলামা হাসান মুহম্মদ আজাদ), আইন-ই-আকবরী (পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় অনূদিত), Akbar and Birbal (Amrita Sarin)










 

Friday, March 26, 2021

Post # 1042 Bengali Amarchitra Katha 209

                                                                           ডাউনলোড করুন

 

 

 গান্ধারী হলেন গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা। তিনি গান্ধাররাজ্যের রাজকুমারী ছিলেন বলে তার নাম গান্ধারী। সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর হতে আফগানিস্তানের অধিকাংশকে পুরাকালে গান্ধারদেশ বলা হতো। বর্তমান কান্দাহার প্রাচীন গান্ধার নগরী।গান্ধারী দুর্যোধনাদির মাতা ছিলেন। শকুনি তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা।

বিদুরের  সাথে পরামর্শ করে ভীষ্ম গান্ধাররাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর সাথে কুরুবংশের জ্যেষ্ঠপুত্র ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দেন। গান্ধারী সুন্দরী ও শিক্ষিতা হলেও মাতা পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপত্তি না করে জন্মান্ধ স্বামীর হাতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি তার অন্ধস্বামীকে অতিক্রম করবেন না এই সংকল্প করে বস্ত্র খণ্ড দিয়ে নিজের দুই চোখ বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ব্যাসদেবের সেবা করায় তিনি বর দিয়েছিলেন গান্ধারী শতপুত্রের জননী হবেন। যথাকালে গান্ধারী গর্ভবতী হলেন কিন্তু কুড়ি মাস চলে গেলেও তার প্রসব হল না।এদিকে কুন্তীর পুত্রলাভের খবর পেয়ে গান্ধারী অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে ধৃতরাষ্ট্রকে না জানিয়ে লোহার মুগুর দিয়ে নিজের গর্ভপাত করেন। এর ফলে তার গর্ভ হতে এক লৌহকঠিন মাংসপিণ্ড নির্গত হল। গান্ধারী দাসীদের তা নষ্ট করার হুকুম দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ব্যাসদেব এসে তাকে নিষেধ করলেন। তিনি ভ্রুণকে শীতল জলে ভিজিয়ে শত ভাগে ভাগ করেন এবং তা ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখেন। একবছর পর দুর্যোধন এবং একবছর এক মাসের মধ্যে দুঃশাসন, দুঃসহ, বিকর্ণ প্রভৃতি শতপুত্র ও দুঃশলা নামে একটি কন্যার জন্ম হল। জন্মমাত্রই দুর্যোধন গাধার ন্যায় চিৎকার করেছিলেন এবং নানা অমঙ্গলের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। বিদুর ও ব্রাহ্মণগন তখন দুর্যোধনকে ত্যাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু পুত্রস্নেহের জন্য ধৃতরাষ্ট্র তা করতে পারেন নি।




 

Thursday, March 25, 2021

Post # 1041 Bengali Amarchitra Katha 208

                                                                               ডাউনলোড করুন

জয়দেবের পিতার নাম ভোজদেব, মাতা বামদেবী; আর তাঁর স্ত্রী হলেন পদ্মাবতী। সংস্কৃত সাহিত্য এবং সঙ্গীত শাস্ত্রে জয়দেবের অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি ছিলেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি। আকৈশোর ভাবুক ও উদাসীন প্রকৃতির জয়দেব দয়ানিধি নামে কাশীর এক সাধুর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। যৌবনে সন্ন্যাস নেওয়ার ইচ্ছেয় নীলাচলের পথে অগ্রসর হন। কিন্তু সন্ন্যাস নেওয়া আর হয় না। পদ্মাবতীকে বিয়ে করে সংসারে বাঁধা পড়তে হয় তাঁকে। জয়দেবের স্ত্রী-ভাগ্য ভাল। পদ্মাবতীকে সাধন-সঙ্গিনী হিসেবেই পেয়েছিলেন তিনি। সংসারে থেকেও পদ্মাবতীকে নিয়েই সাধনকর্মে রত হন জয়দেব। জয়দেবের সাধনার নাম ‘পরকীয়া সাধনা’। এ পথের অধিকার কেবল নিষ্কাম ভক্তের। জয়দেবের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল কৃষ্ণপ্রেম। স্বকীয়া রমণী পদ্মাবতীকে পরকীয়া ভাবে সাধনায় চিরসময় পরমপুরুষের দিব্যানুভূতি লাভ করেন তিনি। জয়দেবের সাধনচিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যে।

‘গীতগোবিন্দ’ রচিত হয় দ্বাদশ শতাব্দীতে। এই কাব্য সম্পূর্ণ হওয়ার মূলে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কাব্যটির মানভঞ্জন পালা রচনায় কবি বেশ বিপদে পড়েছিলেন। কৃষ্ণ কী ভাবে প্রেমময়ী রাধার মান ভাঙাবেন! জয়দেব গোস্বামীর হৃদয়ে সৃষ্টি-সমস্যার এই অধ্যাত্ম-আগুন জ্বলে ওঠে। এমন অশান্ত হৃদয়ে এক দিন পুথি ছেড়ে তিনি স্নানে গিয়েছেন। কুটিরে কেবল পদ্মাবতী। তিনিও কবির এই মানসিকতার জন্য চিন্তান্বিত। এমন সময় দেখেন—অন্য দিনের তুলনায় অনেক আগেই কবি স্নান সেরে ফিরে এসেছেন। তারপর মধ্যাহ্ন-ভোজন শেষ করে আবার পুথি নিয়ে বসেন। নিত্যদিনের ন্যায় পদ্মাবতীও স্বামীর প্রসাদী থালায় অন্ন-গ্রহণে বসেছেন। এমন সময় এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। পদ্মাবতী দেখেন, স্বামী আবার স্নান সেরে ফিরছেন। ভয়ে-বিস্ময়ে পদ্মাবতী এর রহস্য জানতে চাইলেন। এ দিকে পদ্মাবতীকে আহার করতে দেখে জয়দেবও অবাক। পূর্বাপর সমস্ত ঘটনা জানালেন পদ্মাবতী। দু’জনেরই বিস্ময়ের শেষ নেই। কথিত, রহস্য জানার জন্য তাঁরা পুথির কাছে উপস্থিত হলেন। পুথিতে যা দেখলেন, তা দেখে তাঁরা অনির্বচনীয় বিস্ময়ে রোমাঞ্চিত হলেন। কবি জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের যে পাদপূরণ নিয়ে বড় চিন্তান্বিত ছিলেন, সে জায়গায় কে যেন লিখে গেছেন—‘স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং দেহিপদপল্লবমুদারম’। কৃষ্ণপ্রেম-সাধক ও সাধিকা জয়দেব ও পদ্মাবতী দেখলেন, প্রেমময় কৃষ্ণ স্বয়ং রাধার চরণ মাথায় ধরে পরকীয়া তত্ত্বের মহিমাকে মানুষের শিরোধার্য করে গিয়েছেন। 

জয়দেব-কেঁদুলির মেলা

 

জয়দেব গোস্বামী নিজে গীতিকার এবং গায়ক ছিলেন। নৃত্যশিল্পে পারদর্শী ছিলেন পত্নী পদ্মাবতী। ‘পদ্মাবতী সুখসমাজ’ নামে জয়দেবের একটি গীতিনাট্যের দল ছিল। এই দলে কৃষ্ণের উক্তি সহ অন্যান্য গানগুলি গাইতেন জয়দেব। আর রাধা ও তার সখীদের উক্তিগুলি নৃত্যযোগে পরিবেশন করতেন পদ্মাবতী। জয়দেব-পদ্মাবতীর সঙ্গীত-শাস্ত্রে পারদর্শিতার কথা ‘সেক শুভোদয়া’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সেই কাহিনি অনুসরণেই মুক্তপদ দে তাঁর ‘তীর্থময় বীরভূম’ বইয়ে বলেছেন, প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ব্যুঢ়ন মিশ্র ওড়িশা জয় করে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় উপস্থিত হন। রাজসমীপে তিনি ‘পটমঞ্জরী’ রাগ গাইলেন। গান শেষ হলে দেখা গেল, সভার কাছে থাকা অশ্বত্থ গাছটি পত্রহীন হয়ে গিয়েছে। সকলে হতবাক। রাজা ব্যুঢ়ন মিশ্রকে জয়পত্র দিতে প্রস্তুত হয়েছেন, এমন সময় রাজসমীপে হাজির হন পদ্মাবতী। তিনি রাজসমীপে প্রস্তাব রাখেন জয়পত্র জয়ের প্রতিযোগিতা হোক—‘হয় আমার সঙ্গে না হয় জয়দেবের সঙ্গে ব্যুঢ়ন মিশ্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুন’। প্রতিযোগিতা হয়েছিল পদ্মাবতীর সঙ্গে। পদ্মাবতী তাঁর অপূর্ব কণ্ঠে ‘গান্ধার’ রাগ পরিবেশন করেন। সে রাগ শুনে রোমাঞ্চিত সভাসদ পদ্মাবতীর জয়ধ্বনি দেন। ব্যুঢ়ন মিশ্র জানান—নারীর সঙ্গে তিনি প্রতিযোগিতা করবেন না। তখন জয়দেবকে রাজসভায় আহ্বান জানানো হয়। স্থির হয় সুরের আকর্ষণে যিনি পত্রহীন বৃক্ষ হরিৎ পত্রে সজীব করতে পারবেন তিনিই জয়পত্র পাবেন। ব্যুঢ়ন মিশ্র তাঁর অক্ষমতা জানান। তখন জয়দেব ‘বসন্তরাগ’ আলাপ শুরু করেন। জয়দেব-কণ্ঠনিঃসৃত বসন্তরাগ আলাপ-ধ্বনিতে সভাসদ বিমোহিত হন এবং পত্রহীন বৃক্ষ সজীব-কিশলয়ে পূর্ণ হয়। রাজা লক্ষ্মণ সেন সেদিন সানন্দে গীতসুধাকর জয়দেবকে জয়পত্রে সম্মানিত করেন।

জয়দেব-কেঁদুলির মেলা বহু প্রাচীন। এই মেলা প্রসঙ্গে কিছু প্রমাণ, কিছু কিংবদন্তির কথা বলতে হয়। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে অজয়তীরে কেন্দুবিল্বে জয়দেব গোস্বামীর মেলার কথা রয়েছে। আমরা বলি আরও অতীতের কথা। জয়দেব গোস্বামীর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্য রচিত হয় ১১৫৯ সালে। সেই সময়েই এক পৌষ-সংক্রান্তির দিন কবি জয়দেব মকর-বাহিনি গঙ্গার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বলে কথিত। পৌষমাসের শেষ দিন কবি জয়দেব ভোরবেলা গঙ্গাস্নানে যেতেন। এক বার কোনও অসুবিধার জন্য স্নানে যেতে না পারার মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়। এর জন্য মনের মধ্যে তিনি অশান্তি অনুভব করেন। সংক্রান্তির পূর্বরাত্রে চোখের জল নিয়ে শয্যা গ্রহণ করেন। সেই রাত্রেই কবি এক অলৌকিক স্বপ্ন দেখেন। মকরবাহিনী গঙ্গা হেসে বলেছেন—‘ক্ষোভ দূর কর। তুমি যেতে পারলে না যখন, তখন আমি আসব অজয়ের স্রোত বেয়ে কদমখণ্ডীর ঘাটে। তোমার স্পর্শে ধন্য হব আমি।’

ঘুম ভেঙে কবির বিস্ময়ের সীমা ছিল না। ভোরের অন্ধকারেই কদমখণ্ডীর ঘাটে গিয়ে উপনীত হন জয়দেব। দেখেন ঘাটের সম্মুখে অজয়ের জলধারা থেকে দিব্য মণিময়—কঙ্কনপরা দু’খানি অমলধবল বর্ণাভ হাত বেরিয়ে ঊর্ধ্বে উঠেছিল। মা গঙ্গা কবিরাজ গোস্বামীকে সঙ্কেতে জানিয়েছিলেন, তাঁর আগমন বার্তা। মা-গঙ্গার দর্শনধন্য উল্লসিত কবি জয়দেব সেদিন অপার আনন্দে আপ্লুত হয়ে অনেক সাধু-সন্ন্যাসীদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে এক মহোৎসবের আয়োজন করেন। অনেকে মনে করেন, তখন থেকেই ওই দিনটি স্মরণে প্রত্যেক বছর কেঁদুলিতে বহু বৈষ্ণবের সমাগম ঘটে এবং মহোৎসব হয়। আবার দ্বাদশ শতাব্দীর কোনও এক পৌষ সংক্রান্তির দিন জয়দেবের তিরোধান ঘটে। বৃন্দাবনের নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের ছেচল্লিশতম গুরু ছিলেন তিনি। গুরুর দেবতা দর্শন ও তিরোধানের তিথিতে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের বহু সন্ন্যাসী পবিত্র কদমখণ্ডীর ঘাটে তর্পণ করতে আসতেন। তাঁদেরই এক জন ছিলেন রাধারমণ ব্রজবাসী। তাঁর উদ্যোগ ও বর্ধমান রাজবাড়ির অর্থ নিয়ে কেঁদুলিতে জয়দেবের জন্মভিটের উপরে রাধাবিনোদ মন্দির তৈরি হয়। বর্ধমানের রাজা ত্রিলোকচাঁদ বাহাদুর ১৬৯২ সালের পৌষ সংক্রান্তির দিনই নাকি ওই মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক বিশাল উৎসবের আয়োজন করেন।

আমাদের অনুমান জয়দেবের স্মৃতিরক্ষার্থে আয়োজিত সেই উৎসবই এক দিন জয়দেব মেলা নামে পরিচিত হয়। পরকীয়া সাধক ও গীত সুধাকর জয়দেব স্মরণে বাউল সমাবেশও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক জনমানসে ছড়িয়ে পড়া এই মেলায়—গোপীযন্ত্রের গাবগুবাগুব ধ্বনিতে অশ্বত্থবটের পত্রপল্লবে শিহরণ জাগে, বাঁয়া তবলায় দিদাম দিদাম রবে ঘা পড়ে, পায়ে নূপুর ঝঙ্কার দেয় আর তালে তালে শোনা যায় দেহতত্ত্বের গান।

লেখক গবেষক ও সাহিত্যকর্মী, মতামত নিজস্ব




 

Wednesday, March 24, 2021

Post # 1040 Bengali Amarchitra Katha 207

                                                                               ডাউনলোড করুন     

 
ব্লগের পুরান বন্ধুরা সকলেই জানেন যে আমি পুরান ইন্দ্রজাল কমিকস্‌ গুলি আবার ,rar থেকে  pdf করার কাজ শুরু করেছি , প্রচুর সময় সাপেক্ষ কাজ । ফোন থেকে যারা পড়েন তাঁদের খুবই অসুবিধা হয় , গুগোল প্লে ষ্টোর থেকে র‍্যার এক্সট্রাটার ডাউনলোড করে কাজ করতে হয় , তা ছাড়াও ইন্দ্রজাল প্রসেস করবো না , বা শেষ হয়ে গেছে,  সেটা ভাবতে পারিনা , তাই হয়ত নতুন করে করা। 

এখন কথা হচ্ছে এই এক মাস আমি কি কি করলাম... আপনারা জানেন  ১ -১০০ মধ্যে পুরান লেবেল ছিল ১-৫০ ও ৫১ - ১০০ আর নতুন লেবেল হোল ০০১ - ০৫০ ও ০৫১ - ১০০ । আপনাদের জানাই যে নতুন লেবেল খুল্লেই আপনারা ০০১-০৫০ লেবেলে ৩২ টি পি ডি এফ পাবেন, লিংক টেস্টেড । ও ০৫১ -১০০ লেবেল এ ১১ টি পি ডি এফ বই পাবেন , কাজ চলছে ,ব্লগ চলছে ।


Tuesday, March 23, 2021

Post # 1039 Bengali Amarchitra Katha 206

                                                                          ডাউনলোড করুন 

 

জয়প্রকাশ নারায়ণ (১১ অক্টোবর ১৯০২ - ৮ অক্টোবর ১৯৭৯) জনপ্রিয়ভাবে জে পি বা লোক নায়ক (ইংরেজি ভাষায় দি পিপলস লিডার) নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী, তাত্ত্বিক, সমাজতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক নেতা। তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর নামেও পরিচিত এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে বিরোধী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়, যার পতনের জন্য তিনি "সম্পূর্ণ বিপ্লব" করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর জীবনী জয়প্রকাশ তার জাতীয়তাবাদী বন্ধু এবং হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক রাম বৃক্ষ বেনিপুরী লিখেছিলেন। ১৯৯৯ সালে  তিনি তার সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তরভাবে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন লাভ করেন। অন্যান্য পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে ১৯৬৫ সালে পাবলিক সার্ভিসের জন্য ম্যাগসেস পুরস্কার।

আপদকালীন সময় তাঁর নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছিল তাকে জেপি মুভমেন্ট বলা হয়।





 

Saturday, March 20, 2021

Post # 1038 Bengali Amarchitra Katha 205

                                                                      ডাউনলোড করুন
 
 
 
 
রামনারায়ণ তর্করত্ন রত্নাবলী (১৮৫৮) নাটক রচনা করেন ।

রামনারায়ণ তর্করত্ন (১৮২২-১৮৮৬)  নাট্যকার। ১৮২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার হরিনাভি গ্রামে তাঁর জন্ম। গ্রামের চতুষ্পাঠীতে বাল্যশিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার  সংস্কৃত কলেজএ দশ বছর (১৮৪৩-৫৩) ব্যাকরণ, কাব্য, স্মৃতি ও ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরে দুই বছর হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে প্রধান পন্ডিতপদে চাকরি করার পর তিনি সংস্কৃত কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেন। ১৮৮২ সালে এখান থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্বগ্রামে একটি চতুষ্পাঠী খুলে অধ্যাপনার মাধ্যমে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। উলে­খ্য, তাঁর অগ্রজ প্রাণকৃষ্ণ বিদ্যাসাগরও সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বাংলা মৌলিক নাটক রচয়িতা হিসেবেই রামনারায়ণের মুখ্য পরিচয়। বাংলা ভাষায় প্রথম বিধিবদ্ধ নাটক রচনার জন্য তিনি ‘নাটুকে রামনারায়ণ’ নামে পরিচিত ছিলেন। কুলীনকুলসবর্বস্ব (১৮৫৪) তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নাটক। এতে হিন্দুসমাজে বহুবিবাহ প্রথার কুফল সম্পর্কে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। তাঁর অন্যান্য রচনা: রত্নাবলী (১৮৫৮), নব-নাটক (১৮৬৬), বেণীসংহার (১৮৫৬), মালতীমাধব (১৮৬৭), রুক্মিণীহরণ (১৮৭১), কংসবধ (১৮৭৫) ইত্যাদি। পতিব্রতোপাখ্যান (১৮৫৩) তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। এছাড়া তিনি যেমন কর্ম তেমনি ফল (১৮৬৩), উভয় সঙ্কট (১৮৬৯), চক্ষুদান প্রভৃতি প্রহসনও রচনা করেন। তাঁর অধিকাংশ নাটক ও প্রহসন বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চ, কলকাতার অভিজাত ধনিকশ্রেণীর নিজস্ব মঞ্চ এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি নাট্যশালায় বহুবার অভিনীত হয়। ‘দি বেঙ্গল ফিলহার্মোনিক আকাদেমি’ থেকে তিনি ‘কাব্যোপাধ্যায়’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৮৬ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বগ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়।



















 

Friday, March 19, 2021

Post # 1037 Bengali Amarchitra Katha 202

                                                                      ডাউনলোড করুন


মহাকবি কালিদাস ভারতবর্ষের প্রাচীন কবিদের মধ্যে বাল্মীকি ও বেদব্যাসের পরেই নাম করা হয় কবি কালিদাসের। বর্তমান কালে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পন্ডিতগণ ও এবিষয়ে একমত হয়েছেন যে পৃথিবীতে সর্ব দেশে সর্বকালে যত কবি আবির্ভূত হয়েছেন মহাকবি কালিদাস তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে স্থান পাবার যােগ্য। কালিদাসের কাব্যই তাকে এই দুর্লভ গৌরবের অধিকারী করেছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, কালিদাসের ব্যক্তিগত জীবন এবং তার কাল সম্বন্ধে খুব কমই জানা সম্ভব হয়েছে। ভারতবর্ষে কালিদাস সম্বন্ধে লােকশ্রুতিতে অনেক গল্প প্রচলিত। কিন্তু কেবল লােকশ্রুতি নির্ভর করে কোন মানুষের জীবনকাহিনী জানা যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হয় না।

কালিদাসকে নিয়ে যেসব গল্প প্রচলিত তাতে এরকম একটা ধারণা স্পষ্ট হয় যে নিতান্ত অজ্ঞ অবস্থা থেকে তিনি নিজের চেষ্টায় কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।

শিপ্রা নদীর কুলে উজ্জয়িনী নগরের কাছে বাস করতেন কালিদাস। তার এমনই জ্ঞান বুদ্ধির বহর যে কাঠের সন্ধানে গাছে উঠে, যে ডালে বসতেন তারই গােড়া কাটতে শুরু করতেন। কাটা ডালের সঙ্গে একসময় যে তাঁকেও মাটিতে ছিটকে পড়তে হবে সেই সামান্য বােধটুকুও নাকি তার ছিল না।

যাইহােক, ঘটনাচক্রে এই কালিদাসের সঙ্গে এক বিদুষী রাজকন্যার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের রাতেই রাজকন্যা তার স্বামীর মুর্খতার পরিচয় পেয়ে গেলেন। সকালে তিনি অপমান করে কালিদাসকে তাড়িয়ে দিলেন।

মুর্খ হলেও স্ত্রীর কাছ থেকে অপমান পেয়ে কালিদাস যে খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন তা বলাই বাহুল্য। তিনি রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে নদীর ধারে গিয়ে বসলেন। নদীর পাথর বাঁধানাে ঘাটে মেয়েরা জল নিতে আসে। তখন সবে দিন শুরু হয়েছে। গ্রামের মেয়েদের আনাগােনা শুরু হয়েছে ঘাটে। কালিদাস লক্ষ্য করলেন, ঘাটের পরে একটি পাথর ক্ষয়ে গেছে। মেয়েরা জল তুলে কলসীটা কাঁখে তুলে নেবার আগে ওই পাথরে একবার রাখে। কলসীর এই সামান্য ছোঁয়াতেই পাথর ক্ষয়ে গেছে।

 

এই দৃশ্য কালিদাসের বােপােদয় ঘটাল। তার হঠাৎ মনে হল, তাহলে তাে চেষ্টা করলে তিনিও নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। বিদ্যা নেই বলেই আজ তাকে অপমানিত হয়ে বিতাড়িত হতে হয়েছে। এখন থেকে চেষ্টা করলে তার পক্ষেও বিদ্যা অর্জন করা অসম্ভব নয়।

তারপর থেকেই কালিদাস বিদ্যাশিক্ষায় ব্রতী হলেন। এবং দীর্ঘ দিনের শ্রম, একাগ্র নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় বলে তিনি রামায়ণ, মহাভারত, অন্যান্য পুরাণ, ছন্দ, অলঙ্কার প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলেন। সেই যুগে রামায়ণ এবং মহাভারতের বাইরে সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখযােগ্য কবিতা লিখিত হয়নি। কালিদাস স্থির করলেন, তিনি কাব্য রচনা করবেন। সেইভাবে চেষ্টা করতেই তাঁর ভেতরের সুপ্ত কবিত্ব প্রতিভা জেগে উঠল।

এরপরই একে একে তার কলম থেকে কবিতার মত ছন্দে সৃষ্টি হল অভিজ্ঞান শকুন্তলম, রঘুবংশম, কুমারসম্ভবম, মেঘদূতম প্রভৃতি অসাধারণ রচনা। এ সকল জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই নয়। তবে একটিমাত্র জনশ্রুতি পন্ডিতদের কাছে গ্রহণযােগ্য বিবেচিত হয়েছে। সেটি হল, কালিদাস বিক্রমাদিত্যের রাজসভার একজন বরণীয় কবি ছিলেন।

এই ক্ষীণ সূত্রটিই কালিদাসের জীবনকাল নির্ণয়ের প্রধান সহায়ক হয়ে উঠেছে। ভারতীয়গণ মনে করেন যে খ্রিঃ পূঃ ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে কালিদাস বর্তমান ছিলেন। কিন্তু সমস্যা হল, ঐতিহাসিকগণ উক্ত সময়ে কোন বিক্রমাদিত্যের সন্ধান পাননি। অথচ লােকশ্রুতি বলে, সম্রাট বিক্রমাদিত্যেরই নবরত্ন সভার অন্যতম রত্ন ছিলেন মহাকবি কালিদাস। ভারতের ইতিহাসে শকারী বিক্রমাদিত্য নামে যিনি খ্যাত হয়ে আছেন তিনি শক আক্রমণকারীদের বিতাড়ন করে শকারী নাম গ্রহণ করেছিলেন ৫৪৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিন তার ছয়শাে বছর পূর্ববর্তী কালকে আরম্ভ ধরে নিজের নামে ভারতবর্ষে বিক্রমাব্দ প্রতিষ্ঠা করেন।

কোন কোন ঐতিহাসিকের এই মত বিচারে টিকল না। কেন না, পঞ্চম শতকে পশ্চিম ভারত গুপ্তসাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাজেই ষষ্ঠ শতকে হূণ বিতাড়নের প্রশ্ন অবান্তর। এই শতকের গােড়ায় যিনি হূণদের ভারত থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, তিনি কোন বিক্রমাদিত্য নন। তার নাম যশােবর্মন বিষ্ণুবর্মন। পন্ডিতগণ মনে করেন যে, গুপ্তযুগের চরম সমৃদ্ধি যার রাজত্বকালে সম্ভব হয়েছিল, তিনি হলেন সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৮০ ৪১৩ খ্রিঃ)। ইনিই বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেছিলেন এবং রাজধানী পাটলিপুত্র থেকে উজ্জয়িনীতে স্থানান্তরিত করেছিলেন।

মহাকবি কালিদাস ছিলেন এই বিক্রমাদিত্যেরই সভাকবি। ইনি সম্ভবতঃ বিক্রমাদিত্যের পুত্র কুমারগুপ্ত (৪১৩-৮৫৫ খ্রিঃ ) এবং তার পুত্র স্কন্দগুপ্তের কালেও বর্তমান ছিলেন। প্রাচীন ভারতের সাহিত্য রচিত হয়েছে সংস্কৃত ভাষায়। মহাকবি কালিদাসের রচনা সংস্কৃত সাহিত্যের কাব্য গীতিকাব্য ও নাটক এই তিনটি ধারাকেই পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর রচিত মহাকাব্য কুমারসম্ভব এবং রঘুবংশ, গীতিকাব্য মেঘদূত এবং নাটক অভিজ্ঞান শকুন্তলম, মালবিকাগ্নিমিত্র এবং বিক্রমাের্বশী। অপর একটি গীতিকাব্য ঋতুসংহার সাধারণ ভাবে তার রচনা বলে স্বীকৃত হলেও কেউ কেউ ভিন্নমত পােষণ করেন। এছাড়াও কালিদাসের রচনা নয় অথচ তার নামে প্রচারিত এমন কিছু গ্রন্থও রয়েছে, যেমন নােদয়, পুষ্পবাণবিলাস, শৃঙ্গারতিলক, চিদ্গগনচন্দ্রিকা, ভ্রমরাষ্টক, ঞতবােধ, শৃঙ্গারসার, মঙ্গলাষ্টক প্রভৃতি।

প্রাচীন ভারতের সভ্যতা সংস্কৃতি, রাজাদের রাজ্যশাসন প্রণালী এমন কি বিভিন্ন স্থানের নিখুঁত ভৌগােলিক বিবরণ কালিদাসের বিভিন্ন রচনা থেকে পাওয়া যায়। তার রচনায় ব্যবহৃত অনুপম উপমাও তার কৃতিত্বের পরিচায়ক। তাই দেশে বিদেশে কালিদাস বিদগ্ধজনের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছেন।

তথ্য সূত্র  https://www.bengaliportal.com





 

Sunday, March 14, 2021

Post # 1036 Bengali Amarchitra Katha 201

                                                           ডাউনলোড করুন

 

এই বইয়ের তিনটি গল্প উপনিষদ থেকে নেওয়া হয়েছে । উপনিষদের আরেক নাম বেদান্ত, অর্থাৎ বেদের শেষ, কারন এগুলি হলো বৈদিক সাহিত্যের শেষ অংশ ।এগুলির মধ্যে বেদের চরম উদেশ্য, নিজেকে জানার কথা আছে ।

উপনিষদ শব্দটির আক্ষরিক মানে হলো ‘কারো পাশে বসা’। এই শব্দটি থেকেই প্রাচীন ভারতের শিক্ষা দান করার যে নিয়ম প্রচলিত ছিল, তার কথা জানা যায় । শিক্ষা-প্রার্থী  হয়ে গুরুর কাছে শিষ্য এলে গুরু তার বুঝবার ক্ষমতা বিচার করে তবে স্থির করতেন তাকে কোন শিক্ষা দেবেন ।প্রথম গল্পটিতে ‘নচিকেতাকে’ আরো জ্ঞান দেবার আগে যমরাজ তাকে পরীক্ষা করে নিয়েছিলেন ।

বৈদিক যুগে মৌখিক উপদেশের চেয়ে বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিষ্যরা শিক্ষা লাভ করতো । গুরু হলেন স্বয়ং প্রকৃতি, ‘সত্যকামের’ কাহিনীতে এর প্রমান দেখা যায় । যদি বা কিছু মৌখিক শিক্ষা দেওয়া হতো, যতটা সম্ভব কম করেই দেওয়া হতো ।

তৃতীয় গল্পে ‘প্রজাপতি’ একটি মাত্র শব্দাংশ দ্বারা শিক্ষা দান করেছেন ।  শব্দাংশটি হলো ‘’দ’’ । বোঝাই যাচ্ছে যে বৈদিক যুগের গুরুরা লম্বা লম্বা বক্তৃতায় বিশ্বাস করতেন না । গুরু যা বলতেন শিষ্যরা নিজের নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সেটিকে গ্রহন করতো এবং ব্যাখ্যা করতো ।





 

Tuesday, March 2, 2021

Post # 1035 Bengali Amarchitra Katha 200

                                            ডাউনলোড করুন

 

 এই বই টি স্ক্যান করতে গিয়ে দেখলাম এটির প্রচ্ছদ নেই... কিন্তু এই বইটির নতুন 'প্রিন্ট' আমি বছর খানেক আগে কিনেছিলাম... তাই বহু পুরান বইটির প্রচ্ছদটি নতুন বই থেকে দিতে বাধ্য হলাম ।

 

সম্রাট কবর -

 


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


Born: 15 October 1542, Umarkot, Pakistan
Died: 27 October 1605, Fatehpur Sikri
Reign: 11 February 1556 – 27 October 1605
Coronation: 14 February 1556
Spouse: Mariam-uz-Zamani (m. 1562–1605), MORE
Children: Jahangir, Aram Banu Begum, Murad Mirza,

 

মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুন -এর মৃত্যুর পর, তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আকবর সিংহাসনে বসেন। মায়ের নাম হামিদা বানু।

১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে শের শাহ-এর কাছে হুমায়ুন-এর পরাজয়ের পর, হুমায়ুনআশ্রয়ে জন্য নানা স্থান ঘুরে অমরকোটে এলে, সেখানে আকবরের জন্ম হয়। কথিত আছে পারশ্যের পথে হুমায়ুন পলায়নের সময় জানতে পারেন যে, তাঁর ভাই আশকরী পথে আক্রমণ করতে পারেন। তাই তিনি আকবর এবং তাঁর মা হামিদা বানুকে অমরকোটে রেখে একাই পারশ্যের পথে চলে যান। কিন্তু আশকরী এঁদের সন্ধান পাওয়ার পর সযত্নে আশ্রয় দেন। ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ুন কান্দাহার এবং কাবুল উদ্ধার করার পর, তিনি পরিবার পরিজনকে উদ্ধার করেন। ১৫৫১ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ুন-এর অপর ভাই হিন্দোলের মৃত্যুর পর, আকবরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে গজনীর শাসনকর্তা করা হয়। ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসন দখল করার পর, আকবরকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা করা হয়। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ুন-এর মৃত্যুর পর, আকবর সিংহাসনে বসেন। এই সময় আকবরের অভিভাবক হিসেবে বৈরাম খান তাঁর অভিভাবক ছিলেন।

আকবরকে দিল্লীর সিংহাসন থেকে অপসারিত করার জন্য, মহম্মদ শাহ আদিলের সেনাপতি হিমু বিশাল সেনাদল নিয়ে আগ্রা অভিমুখে রওনা দেন এবং সহজেই আগ্রা দখল করেন। এরপর তিনি দিল্লী দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে, দিল্লীর শাসনকর্তা তার্দিবেগ তাঁকে বাধা দেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন। ফলে দিল্লী হিমুর অধিকারে আসে। তিনি বিক্রমাদিত্য নাম ধারণ করে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হিমুকে শায়েস্তা করার জন্য, বৈরাম খান দিল্লীর পথে অগ্রসর হন। পাণিপথে উভয়ে মিলিত হন। ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পাণিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধে হিমুর হস্তিবাহিনী বৈরাম খানের বাহিনীকে প্রায় তছনছ করে ফেলে। মোগল বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু চোখে তীরবিদ্ধ হিমু সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, নেতৃত্বের অভাবে হিমুর বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে। এই সময় বৈরাম খান সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে হিমুকে বন্দী করেন। এই সময়, বৈরাম খান প্রায় ২৫০০ হাতি সহ বিপুল পরিমাণ যুদ্ধোপকরণ অধিকার করতে সক্ষম হন। এরপর বৈরাম খান আহত হিমুকে হত্যা করে, দিল্লীর রাজপথে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখে।

শেরশাহের বংশধরদের একজন শাসক আহমদ শাহ সুর, পাঞ্জাবে সিকন্দর শাহ নাম ধরণ করে রাজত্ব করতেন। পাণিপথের যুদ্ধের আগেই  উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে সিকন্দর সুরের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠান। সে সময় সিকন্দর শাহ পালিয়ে সিওয়ালিক পর্বতে আশ্রয় নেন। পাণিপথের যুদ্ধে জয়লাভের পর, বৈরাম খান পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠান। এই সময় সিকন্দর শাহ বশ্যতা স্বীকার করে একটি জায়গির লাভ করেন।

বৈরাম খানের শত্রুদের প্ররোচনায়, ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দে আকবর তাঁকে পদচ্যুত করেন এবং নিজের হাতে শাসনভার তুলে নেন। বৈরাম খানকে মক্কা যাওয়ার সুযোগ দেন। কিন্তু পথিমধ্যে জনৈক আফগান তাঁকে হত্যা করেন।  ১৫৬১ খ্রিষ্টাব্দে আফগান সর্দার বাজবাহাদুরকে দমন করার জন্য আদম খাঁকে পাঠান। আদম খাঁ বাজবাহাদুরকে পরাজিত করে, আকবরকে অবজ্ঞা করা শুরু করেন। ফলে আকবর নিজেই আদম খাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাঁকে দমন করেন। এরপর তিনি পীর মহম্মদকে মালবের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। প্রশাসক হিসেবেপীর মহম্মদ অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। তাই তাঁকে অচিরেই পরাজিত করে রাজবাহাদুর মালব দখল করেন।

এরপর ভারতে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে রাজপুতদের সহাযোগিতা দরকার, এই বিবেচনায় তিনি রাজুতদের সাথে আত্মীয়তা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দে জয়পুরের রাজপুত নৃপতি বিহারীমলের কন্যাকে বিবাহ করেন।

১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দে আইন করে হিন্দু যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানোর আইন বন্ধ করেন।

১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুদের উপর থেকে তীর্থকর তুলে নেন।

যোধা বাঈ

১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আকবর মধ্য-প্রদেশের গণ্ডোয়ানা রাজ্য দখলের জন্য আসফ খাঁকে পাঠান। এই সময় গণ্ডোয়ানায় রানী দুর্গাবতী তাঁর নাবলক পুত্র বীরনারায়ণের অভিভাবকরূপে রাজত্ব করতেন। এই যুদ্ধে পরাজয়ের পর রানী দুর্গাবতী আত্মহত্যা করেন। ফলে এই রাজ্য আকবরের অধিকারে আসে। এই বৎসরেই মালবের বিদ্রোহী শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ খাঁ উজবেকে দমন করার জন্য আকবর মালব-অভিযানে বের হন। পথে খান্দেশ রাজ্যের শাসক মীরন মুবারকের সাথে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ হয়। তিনি মীরন মুবারকের কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। পরে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়। এই বৎসরে (১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি হিন্দুদের উপর থেকে জিজিয়াকর তুলে নেন।

১৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেবারের রাজধানী চিতোর আক্রমণ করেন। মেবারের রাজা রাণা উদয় সিংহ আকবরকে ঘৃণার চোখে দেখতেন এবং তিনি মালবের রাজা বাজবাহাদুরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাছাড়া গুজরাটে আক্রমণ পরিচালনার জন্য চিতোর দখল করাটা জরুরি ছিল। আক্রমণের শুরুতেই উদয় সিংহ পালিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেন। কিন্তু জয়মল এবং পত্ত নামক দুই জন প্রায় চার মাস ব্যাপী মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে এই সেনাপতিদ্বয় নিহত হলে, দুর্গের ভিতরের রমণীরা অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেন। ১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দে চিতোর আকবরের দখলে আসে।আসফ খাঁকে মেবারের শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়।

১৫৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আকবর রথোম্ভর রাজ্য আক্রমণ করেন। যুদ্ধে রাজপুত রাজা সারজন্‌হারা পরাজিত হয়ে সন্ধি প্রার্থনা করেন। এবং তাঁর দুই পুত্র ভোজ ও দুদাকে মোগল দরবারে পাঠান। সারজন্‌হারাকে পরে ভবারানসী ও চুনারের জায়গির করা হয়। এরপর কালিঞ্জর দখলের জন্য আকবর সৈন্য পাঠান। কালিঞ্জরের রাজা বিনা বাধায় আত্ম সমর্পণ করেন। পরে কালিঞ্জরের রাজাকে এলাহাবাদের কাছে জায়গির দেওয়া হয় এবং কালিঞ্জরের শাসনভার দেওয়া হয় সেনাপতি মাজনুর খাঁর হাতে।

১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিকানীর রাজকন্যাকে বিবাহ করেন।

আকবরের আমলে প্রচলিত মুদ্রা

এরপর আকবর গুজরাটের দিকে দৃষ্টি দেন। সে সময়ে গুজরাটের সুলতান ছিলেন তৃতীয় মুজফফর খাঁ। আকবরের বিদ্রোহী আত্মীয় সজন তখন গুজরাটে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা নানাভাবে গুজরাটে অশান্তির সৃষ্টি করছিল। গুজরাটের শান্তির জন্য মুজফফর খাঁ'র মন্ত্রী ইমদাদ খাঁ আকবরের সাহায্য কামনা করেন। ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে আকবর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে গুজরাটে আক্রমণ চালান। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুজফফর খাঁ আত্মগোপন করেন। ১৬ই নভেম্বর মুজফফর খাঁ বন্দী হন।  ১৭ই নভেম্বর ইমদাদ খাঁ আকবরের হাতে নগরের চাবি তুলে দেন। আকবর ইমদাদ খাঁর হাতে গুজরাটের একটি অংশের শাসনভার তুলে দেন। অপর অংশের শাসন ভার দেন মীর্জা আজিজ কোকার হাতে। এরপর আকবর ক্যাম্বে গমন করেন। সেখানে তুর্কি, সিরিয়, ইরানি ও পর্তুগিজ বণিকরা তাঁর সাথে দেখা করেন। সেখানে বণিকদের সবরকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সুরাট যান। সেখানে হুমায়ুনের এক বিশ্বস্ত অনুচর হামজাবান স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। আকবর ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সুরাট অবরোধ করেন। হামজাবান আকবরকে বাধা দেওয়ার জন্য পর্তুগিজদের কাছ থেকে কামান সংগ্রহ করেন। আকবরের তীব্র আক্রমণে হামজাবান এবং পর্তুগিজ গোলান্দাজ বাহিনী পরাজিত হয়। মোগল সৈন্যরা হামজাবানকে বন্দী করে। অন্যদিকে পর্তুগিজরা প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আকবর তাঁদের ক্ষমা করে দেন। কারণ ভারতের পশ্চিম উপকূলে পর্তুগিজদের আধিপত্য ছিল। পর্তুগিজরা ভারত থেকে যে সকল মুসলমান হজ করার জন্য মক্কায় যেতেন তাঁদের উপর অত্যাচার করতো। আকবর চুক্তির দ্বারা তাঁদের চলাচলে পর্তুগিজরা যাতে বিঘ্ন না ঘটায় তার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। এরপর কুলিজ খাঁকে সুরাট দুর্গের অধিপতি করেন। খান-ই আজম-কে গুজরাটের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। আর মুজফফর খাঁকে মালবের শানকর্তা নিয়োগ করেন। ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে আকবর ফতেপুর সিক্রিতে চলে আসেন।

১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আকবর ভাকার দুর্গ দখল করেন। এর মাধ্যমে তিনি সিন্ধুর বিশাল অংশ দখলে আনতে সক্ষম হন।

উদয় সিংহের মৃত্যুর পর (১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দ), তাঁর পুত্র রাণা প্রতাপ সিংহ পুনরায় মোগলদের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। আকবর মানসিংহ এবং আসফ খাঁর অধীনে একটি বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে হলদিঘাটে উভয় বাহিনী মুখোমুখী হয়। এই যুদ্ধে প্রতাপ সিংহ পরাজিত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করেন।

মোগল শাসনাধীনে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে কর্‌রানী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই রাজবংশের সুলতান সুলেমান আকবরের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। ফলে বাংলা তখন ছিল মোগলদের করদ রাজ্য। সুলেমানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দাউদ বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আকবর দাউদকে দমন করার জন্য, সেনাপতি টোডরমল এবং মুনিম খাঁকে পাঠান। এদের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয় ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের তুকারই সমরক্ষেত্রে। এই যুদ্ধে উভয় বাহিনীই চূড়ান্ত জয়লাভে ব্যর্থ হয়। ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজমহলে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে দাউদ পরাজিত ও নিহত হন। এরপর বাংলাতে মোগল শাসনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তখনও আফগান শাসকরাই স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। মুনিম খাঁ-এর মৃত্যুর পর মোগল শিবিরে ভাঙন ধরে। এই সময় অনেকেই মোগল শিবির ত্যাগ করে দিল্লীতে চলে যায়। এই অবসরে মীর্জা হাকিম নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। ক্রমে ক্রমে বাংলা ও বিহার মোগল সাম্রাজ্য থেকে বিচ্যুত হয়। আকবর মীর্জা হাকিম ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য টোডরমল এবং মানসিংহকে পাঠান। মূল দমনের কাজটি করেন টোডরমল। আর মীর্জা হাকিম-এর সাম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সাথে থাকেন মানিসিংহ। উভয়ের প্রচেষ্টায় বাংলা আবার মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে আকবর খান্দেশ রাজ্য আক্রমণ করেন। সে সময়ে খান্দেশের শাসক ছিলেন রাজা আলি খাঁ। মোগল বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে, তিনি প্রচুর অর্থ প্রদান করে মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন। এবং খান্দেশ মোগলদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়।

এরপর আকবর কাবুলের দিকে নজর দেন। ১৫৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাবুলে সামরিক অভিযান চালান এবং বিনা বাধায় কাবুল দখল করেন। কিন্তু মীর্জা হাকিমের আকবরের অধীনতা অস্বীকার করলে, আকবর মীর্জা হাকিমের বোনের হাতে কাবুলের শাসনভার দিয়ে দিল্লীতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিনের চিন্তা প্রসূত দীন-ই-ইলাহী নামে একটি ধর্মমত প্রচারের উদ্যোগ নেন।
১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বিহারীমলের পুত্র ভগবান দাসের কন্যার সাথে আপন পুত্র জাহাঙ্গীরের বিবাহ দেন।

 দীন-ই-ইলাহি ও ইলাহি সন
১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে  বৎসরে আকবর একটি সমন্বিত নতুন ধর্ম প্রচারের উদ্যোগ নেন। এই ধর্মের নাম দেওয়া হয়েছিল দীন-ই-ইলাহি বা তৌহিদ-ই-ইলাহি। এই ধর্মের আদর্শে তিনি মুদ্রা থেকে কালিমা তুলে দেন। মুদ্রা ও শিলালিপি থেকে আরবি ভাষা তুলে দিয়ে ফারসি ভাষার প্রবর্তন করেন। একই সাথে তিনি আরব দেশীয় চান্দ্র মাসের পরিবর্তে পারস্যের সৌর বৎসরে প্রচলন করেন। প্রাথমিকভাবে এই বৎসর-গণন পদ্ধতির নাম দেন তারিখ-ই-ইলাহি বা সন ই ইলাহি। এই ইলাহি সনকে ভারতবর্ষের আদর্শে নতুন করে সাজানোর জন্য আকবর ৯৯২ হিজরি সনে, তাঁর রাজসভার রাজ জ্যোতিষী আমির ফতেউল্লাহ শিরাজীর উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। আকবর ৯৬৩ হিজরি সনের রবিউল আখির মাসের ২ তারিখে [১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ] সিংহাসনে আরোহণ করেন। হিজরি সনের মর্যাদা দেখিয়ে, ৯৬৩ সংখ্যাকে ইলাহি সনের প্রথম বৎসরের মর্যাদা দেন। এর পরবর্তী বৎসর থেকে সৌরবৎসর হিসাবে গণনা শুরু করেন। এই সূত্রে হিজরি চান্দ্র-মাস তুলে দিয়ে সৌরমাস গণনা শুরু করেন। আকবর এই নতুন বর্ষ-গণন পদ্ধতি প্রচলনের আদেশ জারি করেন ৯৯২ সালের ৮ই রবিউল তারিখ। খ্রিষ্টাব্দের বিচারে এই তারিখ ছিল ১০ মার্চ ১৫৮৫। যদিও আকবরের সিংহাসন আরোহণের দিন থেকে ইলাহি বর্ষের শুরু হওয়ার আদেশ জারি হয়েছিল, কিন্তু কার্যত দেখা গেল, পারস্যের পঞ্জিকা অনুসারে বৎসর শেষ হতে ২৫ দিন বাকি রয়ে যায়। তাই ইলাহি সন চালু হলো– আকবরের সিংহাসন আরোহণের ২৫ দিন পর। এই নির্দেশানুসরে বিষয়টি কার্যকরী হয়– ২৮ রবিউল আখের ৯৬৩ হিজরী, ১১ মার্চ, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ।

ইলাহি সনের প্রথম দিনটিকে প্রাচীন পারস্যের রীতি অনুসারে নওরোজ (নতুন দিন) হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। এছাড়া ইলাহি সনের মাসগুলোর নাম গ্রহণ করা হয়েছিল প্রাচীন পারস্যের পঞ্জিকায় প্রাপ্ত নামগুলো থেকে। পারস্যের এই মাসগুলোর নাম ছিল- ফারওয়ারদীন (فروردین), আর্দিবিহশ্‌ত (اردیبهشت), খুরদাদ (خرداد), তীর (تیر), মুরদাদ (مرداد), শাহরীয়ার (شهریور), মেহ্‌র (مهر), আবান (آبان), আজার (آذر), দে (دی), বাহমান (بهمن) এবং ইসপন্দর (اسفند)।  এই নামগুলো বঙ্গাব্দ কেন কোনো ভারতীয় সংবৎ-এর সাথে যুক্ত হয় নি।

সম্রাট আকবর পারস্যের সৌরবৎসরের অনুকরণে যে ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন, তা ছিল সর্বভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন। কিন্তু এই সন ধরে একই সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজস্ব আদায় করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ রাজস্ব আদায়ের জন্য, সম্রাটকে কৃষকের ফসল ঘরে উঠার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ভারতবর্ষের মতো বিশাল দেশে একই সময় সকল স্থানের কৃষকরা ফসল কাটতো না। সেই কারণে ফসল কাটার সময়কে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক পৃথক সনের প্রচলন করা হয়েছিল। এই বিচারে ফসলি সন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ফসল-নির্ভর আঞ্চলিক বর্ষ গণন পদ্ধতি। এই কারণে তৎকালীন বঙ্গদেশে ফসলি সনের শুরু হতে অগ্রহায়ণ মাস থেকে। পক্ষান্তরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে ফসলি সন শুরু হতো আষাঢ় মাস থেকে। তবে এই সকল ফসলি সনগুলো ছিল সৌর-বৎসর ভিত্তিক ইলাহি সন।

এই সময় মোগলদের শত্রু উজবেক নেতা আব্দুল্লাহ খাঁ মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের উদ্যোগ নেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আব্দল্লাহ খাঁ তৈমুর বংশীয়দের শাসনাধীন বাদাখশান দখল করেন। এই সময় ওই অঞ্চলের শাসক এবং মীর্জা হাকিম আকবরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। আকবর এঁদের সাহায্য করার জন্য সিন্ধুনদের উপকুলে পৌঁছান। এই সময় মীর্জা হাকিম মৃত্যুবরণ করেন। ফলে কাবুল ও বেলুচিস্তানে আকবর একই সময়ে দুটি বাহিনী পাঠান। ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কাশ্মীর ও বেলুচিস্তানে মোগল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

এরই ভিতর ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদ নগরের মীর মুর্তজা এবং অন্যান্যা অভিজাত ব্যাক্তিবর্গ, প্রধানমন্ত্রী সালাবৎ খাঁ'র বিরুদ্ধে মোগল দরবারে আর্জি পেশ করেন, আক্রমণ করার অনুরোধ করেন। আকবর মালবের শাসনকর্তা খান-ই-আজম-কে আহম্মদনগর দখল করে, সেখানে বিদ্রোহী নেতাদের প্রতিষ্ঠিঁত করার আদেশ দেন্। খান্দেশের শাসক রাজা আলী খাঁ মোগলদের অনুকূলে থাকলে, আহম্মদনগর আক্রমণের ক্ষেত্রে তিনি মোগলদের বিরোধিতা করেন। এই কারণে তাঁর রাজ্যের ভিতর দিয়ে মোগল সৈন্যের চলাচলে বাধা দেন। ফলে ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়।

১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগরের শাসক মুর্তজা নিজাম শাহের বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিজাত বিদ্রোহীর হয়ে নিজাম শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে
নিজাম শাহের ভাই বারহানউদ্দিনকে সিংহাসনে বসানো ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। বারহানউদ্দিন পালিয়ে মোগল দরবারে আশ্রয় নেন। আকবর তাঁর প্রতি বিশেষ সদয় ব্যবহার করেন। এরপর আকবর বারহানউদ্দিনকে অধিনায়ক করে একটি শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। একই সাথে তিনি মালবের শাসনকর্তা খান-ই আযম এবং খান্দেশের শাসক রাজা আলী খাঁক নির্দেশ দেন, যেনো তাঁরা বারহানউদ্দিনকে সাহায্য করেন। শেষ পর্যন্ত বারহানউদ্দিন আহমমদনগর দখল করতে সক্ষম হন। পরে তিনি মোগলদের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন।

১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের আদেশে মুলতানের মোগল শাসনকর্তা আব্দুর রহমান নিম্ন সিন্ধু এলাকা আট্টা দখল করার জন্য অভিযান চালান। আট্টার অধিপতি মীর্জা জানিবেগ আত্মসমর্পণ করলে, সম্পূর্ণ সিন্ধু অঞ্চল মোগল অধিকারে আসে।

১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে আকবর খান্দেশ, আহম্মদনগর, গোলকুণ্ডা এবং বিজাপুরের শাসকদের কাছে কর দাবি করেন। প্রথমে খান্দেশের সুলতান রাজা আলী আকবরের এই দাবি মেনে নেন। কিন্তু অন্য তিন সুলতান তা অস্বীকার করেন। আকবর আপাতত দক্ষিণের এই তিন সুলতানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, বেলুচিস্তানের দিকে নজর দেন। তিনি বেলুচিস্তানের আফগান শাসকরা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি না হলে, ১৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের আদেশে মীর মাসুম বেলুচিস্তানের সিরি দুর্গ আক্রমণ করে দখল করে নেন। এর দ্বারা সমগ্র বেলুচিস্তান মোগলদের অধিকারে আসে। এই সময় কান্দাহার শাসন করতে পারশ্যের শাসনকর্তা হুসেন মীর্জা। তাঁর সাথে পারশ্যের সম্রাটের সুসম্পর্ক ছিল না। এই সুযোগে আকবর কান্দাহার আক্রমণ করেন। এই অবস্থায় পারশ্যের শাসনকর্তা কান্দাহার দুর্গ মোগলদের হাতে তুলে দেন। এই জয়ের ফলে কান্দাহার মোগলদের অধিকারে আসে।

১৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগর-এর শাসক বারহানউদ্দিন মৃত্যবরণ করেন। প্রথামতে বারহানউদ্দিনের পুত্র বাহাদুর সুলতান হওয়ার কথা। বিজাপুরের সুলতান দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহ বাহুদুরের পক্ষে ছিলেন। এই সূত্রে বিজাপুরের ভূতপূর্ব সুলতানের বিধবা পত্নী এবং বারহানউদ্দিনের ভগ্নী চাঁদবিবি। তিনি ইব্রাহিম আদিল শাহের নাবালককালে, প্রায় দশ বৎসর অভিভাবিকা হিসেবে রাজত্ব করেন। তিনি আহম্মদনগরে এসে ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুরের পক্ষালম্বন করেন। এই অবস্থায় আহম্মদনগরের বিরোধীপক্ষ মোগলদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই সুযোগে আকবর গুজরাটের শাসনকর্তা যুবরাজ মুরাদ এবং সেনাপতি আব্দুর রহিম খানের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান। মোগল বাহিনী আহম্মদনগর দুর্গ অবরোধ করেন। চার অবরোধ করে থাকার পরও মোগলরা এই দুর্গের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংশা হয়। এই মীমাংশা মতে, বাহাদুরকে আহম্মদ নগরের রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বেরার অঞ্চল মোগলদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বেরার মোগলদের হস্তগত হওয়ায়, দক্ষিণের অন্যান্য সুলতানরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে বিজাপুর, গোলকুণ্ডা এবং আহম্মদনগর মিলিতভাবে মোগলদের আক্রমণ করার উদ্যোগ নেয়। ১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে মোগলদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হলে, বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডার বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে। ফলে চাঁদ বিবি একা মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন। অবশেষে চাঁদবিবি মোগলদের সাথে আলোচনা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আহম্মনগরের অভিজাতরা চাঁদবিবিকে বিশ্বাঘাতক নামে অভিহিত করে, তাঁক হত্যা করে। এই সময় মোগল শিবিরে অভ্যন্তরীণ গোলমালের কারণে, আহম্মদনগর থেকে মোগল বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। ফলে আহম্মদনগরের সৈন্যরা আবার রাজ্যের অধিকার গ্রহণ করে।

১৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতাপ সিংহ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র অমর সিংহ মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আকবর অমর সিংহের বিরুদ্ধে মানসিংহ এবং যুবরাজ সেলিমকে পাঠান। অমর সিংহ পরাজিত হয়ে আত্মগোপন করেন। এমন সময় বাংলাদেশে উসমান বিদ্রোহ করেন। ফলে উসমানকে দমন করার জন্য আকবর মানসিংহকে বাংলাদেশে প্রেরণ করেন।

আহম্মদনগরের ঘটনায় আকবর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই অমর সিংহকে পরাজিত করে তিনি নিজেই ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগর আক্রমণ করেন। আক্রমণের শুরুতেই মোগলরা দৌলতাবাদ দখল করে। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে আহম্মদনগরের একটি অংশ মোগলদের অধিকারে আসে। কিন্তু এর ভিতর খান্দেশের রাজা আলি খাঁ মৃত্যবরণ করলে, তাঁর উত্তরাধিকারী মীরণ বাহাদুর শাহ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই কারণে আকবর আহম্মদনগর থেকে খান্দেশে চলে আসেন এবং আসীরগড় অবরোধ করেন। ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে আকবর এই দুর্গটি দখল করেন। এরপর যুবরাজ দানিয়েলের হাতে রেবার, আহম্মদনগর ও খান্দেশের শাসনভার অর্পণ করে, রাজধানীতে ফিরে আসেন।

বাংলার বার ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
১২৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উড়িষ্যার লোহানী রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা লোহানী বংশের আফগান শাসকরা আকবরের অধীনে ছিলেন। এই বছরে শ্রীপুরের শাসক বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে খাজা সুলায়মান লোহানীর সহায়তায় কেদার রায় এবং চাঁদ রায় ভূষণা দুর্গ দখল করেন। তবে যুদ্ধে চাঁদ রায় নিহত হন। এই অবস্থায় বাংলাকে দমন করার জন্য, ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ মানসিংহকে বাংলার সুবেদার হিসেবে পাঠানো হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টব্দের ২রা এপ্রিল মানসিংহের পুত্র হিম্মত সিংহের নেতৃত্বে ভূষণা দুর্গ আক্রমণ করেন এবং মোগল অধিকারে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি ঈসা খাঁ'র বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য, তাণ্ডা থেকে রাজমহলে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। তিনি নতুন এই রাজধানীর নামকরণ করেন আকবরনগর। ৭ই নভেম্বর তিনি নতুন রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মানসিংহ প্রথমে শেরপুর মোর্চায় (বগুড়া জেলায়) শিবির স্থাপন করেন এবং সেখানে একটি মাটির দুর্গ নির্মাণ করেন। তিনি এই স্থানের নামকরণ করেন সেলিমনগর এবং বর্ষাকালটা তিনি সেখানেই কাটান।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূষণা দুর্গ পুনর্দখলের জন্য মানসিংহ তাঁর পুত্র দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে এক অভিযান প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধে দুর্গের ভিতরে কামানের গোলা বিস্ফোরিত হওয়ার ফলে সুলায়মান লোহানী নিহত হন এবং কেদার রায় মারত্মকভাবে আহত হন। এরপর তিনি পালিয়ে ঈসা খাঁর কাছে আশ্রয় নেন।




 ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে মগ জলদস্যুরা বিশাল নৌবহর নিয়ে জলপথে ঢাকা আক্রমণ করে। বিশেষ করে এরা ত্রিমোহনীতে মোগল দুর্গের উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। মোগল বাহিনী তাদের তাড়া করলে সংঘর্ষে বহুসংখ্যক মগ নিহত হয়। এই সময় মগদের সহায়তায় কেদার রায় শ্রীনগরে মোগল ঘাঁটি আক্রমণ করেন। বিক্রমপুরের অনতিদূরে দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কেদার রায় আহত ও বন্দি হন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে রাজা মানসিংহের নিকট নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। কেদার রায়ের মৃত্যুর পর শ্রীপুর, বিক্রমপুরের দুর্গ মুসা খাঁ নিজ অধিকারে আনেন। শেষ পর্যন্ত মানসিংহ পুরোপুরি বাংলাকে মোগল সাম্রজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হন।

১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর মৃত্যু বরণকরেন।

অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মুরাদ এবং দানিয়েল তাঁর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অবশিষ্ট পুত্র সেলিম ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর মোগল সিংহাসনে আরোহণ করেন সেলিম। ইতিহাসে তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত।  

তথ্য সূত্র  http://onushilon.org/