এই সংকলনে বীরবলের ৯ টি গল্প স্থান পেয়েছে ।
ঘোড়ায় চড়ে চৌগান(পোলো) খেলছেন মহেশ দাস। আর সেই খেলা দেখছেন তার প্রাণের বন্ধু সম্রাট আকবর। হাততালি দিয়ে উৎসাহও দিচ্ছেন খেলার।
আচমকাই ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে সাংঘাতিক জখম মহেশ। এমনই আঘাত, যে সংজ্ঞা
হারালেন তিনি। ছুটে এলেন দিল্লীশ্বর। কোলের ওপর তুলে নিলেন তাঁর বন্ধুর
মুখ।
কী করে জ্ঞান ফেরানো উচিত ভেবে না পেয়ে নিজেই বন্ধুর মুখে মুখ লাগিয়ে প্রাণপণে ভরে দিতে থাকলেন নিজের নিশ্বাস।
এই মহেশ দাসই হলেন বীরবল। সম্রাট আকবরের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। অথচ যাঁর
পরিচয় দিতে কালমাত্র দেরি করবেন না কেউই।— ‘‘ও, বীরবল? আকবরের নবরত্ন সভার
ভাঁড়?’’
আসল ঘটনা হল, এই সব কাহিনির সঙ্গে মানুষ বীররবলের কোনও যোগই ছিল না। সবটাই
কল্পনাপ্রসূত। তা’ও সে গুলি আকবরের রাজ-অবসানের একশো বছর বাদে মুখে মুখে
প্রচলিত হয়।
তাঁকে বিদূষক হিসেবে কোনও দিনই নিযুক্ত করেননি সম্রাট আকবর।। অ্যারিস্টটলের
কাছে আলেকজান্ডার যেমন, আকবরের জন্য বীরবলও তাই— এমনও মত শোনা যায় এক
বিশেষজ্ঞের।
আরেক বারের ঘটনা বলা যাক। সেবার হঠাৎই এক পাগলা হাতির সামনে পড়ে গেলেন
মহেশ। পালানোর পথ নেই। সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যু। এমন সময় আবারও মুঘল সম্রাট
আকবর নিজের ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁর বন্ধু এবং পাগলা হাতির
মাঝখানে।
অপ্রত্যাশিত বাধায় হাতি সরে গেল। প্রাণ বাঁচল মহেশের।
এমনই অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন তাঁরা, যে দু’জন মানুষকে আলাদা করা ভার! তাদের
সখ্য নিয়ে বলা হয়—‘মান তু শদম, তু মান শোদী/ মান তন শোদম তু জান শোদী’। —
আমি তুমি হলাম, তুমি আমি হলে। আমি শরীর হলাম, তুমি প্রাণ।
পিছিয়ে যাওয়া যাক বেশ কয়েক বছর। ১৫২৮। মধ্যপ্রদেশের সিদ্ধি জেলার ঘোঘারা
অঞ্চলের ত্রিবিক্রমপুরে এক চৌরাসিয়া ব্রাহ্মণ পরিবারে তখন জন্ম নিচ্ছেন
মহেশ। বাবার নাম গঙ্গাদাস। মা অনাভা দেবী।
মহেশ তাঁদের তৃতীয় সন্তান। গঙ্গাদাস যখন মারা যান, মহেশ তখন খুবই ছোট।
আর্থিক কারণে নিজের বাড়ি ছেড়ে দাদুর বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় মহেশকে। দাদু রূপধরের কড়া তত্ত্বাবধানে শুরু হয় নতুন করে শিক্ষা।
কবিতা লেখা, গান লেখা, গান গাওয়ার পাশাপাশি হিন্দি, সংস্কৃত, পার্সি ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠলেন মহেশ। কবিতা লেখার হাত এবং গানের গলা তাঁর এমনই মিষ্টি, যে তরুণ বয়েসেই দেদার নাম করে ফেললেন
শ হরে শহরে গান গেয়ে বেড়াতেন। দু’পয়সা রোজগার হত তাতেই। এই তাঁর প্রধান জীবিকা। তাতেই নাম এত ছড়াল যে একদিন ডাক পড়ল জয়পুরের মহারাজ ভগবানদাসের দরবারে।
সেখানে নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গান গেয়ে শোনালেন মহেশ। শুনে এতটাই মোহিত হলেন রাজা, যে মহেশের নতুন নাম দিলেন ব্রহ্মকবি।
রাজার আদেশে জয়পুরেই বেশ কয়েক বছর থেকে গেলেন মহেশ। ব্রহ্মকবি নামে পরিচিতি হয়ে গেল তাঁর। ওখানে থাকতে থাকতেই মহেশের ডাক পড়ল উত্তর ভারতের বিশাল পরাক্রমী রাজা রামচন্দ্রের কাছ থেকে। রামচন্দ্রকে তখন গোটা ভারতবর্ষ এক ডাকে চেনে।
এ বার জয়পুরের পাট চুকিয়ে রামচন্দ্রের কাছে হাজির হলেন ব্রহ্মকবি। রাজসভায় গিয়ে মহেশের পরিচয় হল এমন এক গাইয়ের সঙ্গে যিনি গান গেয়ে প্রদীপে আগুন জ্বালাতে পারেন। আবার বৃষ্টি নামিয়ে সেই আগুন নিভিয়েও দিতে পারেন। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং মিঞা তানসেন।
এর পর থেকে তানসেন হলেন রামচন্দ্রের সভাগায়ক। মহেশ সভাকবি। দিব্যি চলতে থাকল জীবন। নাম তত দিনে আরও ছড়িয়েছে। শুধু গায়ক বা কবি হিসেবেই নয়, মহেশের অন্যতম গুণ ছিল তাঁর বাগ্মিতা, চাতুর্য এবং তীক্ষ্ণ রসবোধ। এই সব মিলিয়ে চারিদিকে তাঁর সুনাম।
তখনও তিনি কুমার, সুতরাং মেয়ের বাবাদের মধ্যে একপ্রকার হুলুস্থুল লেগে গেল মহেশকে জামাই হিসেবে পেতে। বিয়েতে আপত্তি নেই ব্রহ্মকবিরও। নাম যশ অর্থ সবই হয়েছে। এবার বিয়েটাও সেরে ফেললে মন্দ কি? কালিজরের এক ধনী অভিজাত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে সেরে ফেললেন মহেশ। শুরু হল সুখী দাম্পত্য জীবন।
মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ট সম্রাট আকবরের সভায় তলব পড়ল তাঁর। শুধু তাঁর একার নয়, তানসেনেরও। গেলেন দুইজনেই।
এই দুই প্রতিভার সাক্ষাৎ প্রমাণ পেয়ে আর তাঁদের দুজনকে ফিরে যেতে দিলেন না রামচন্দ্রের সভায়।
তানসেন হলেন আকবরের নবরত্ন সভার সভাগায়ক। মহেশ সভাকবি। মহেশের কবিত্বে এতটাই মুগ্ধ হলেন আকবর যে তাঁকে কবিরাজ উপাধিতে ভূষিত করলেন কিছু দিনের মধ্যেই।
এমনকী সম্রাট আকবর যে ‘দীন ইলাহি’ ধর্মের প্রচলন করেছিলেন, তার জন্য অনেকটাই অবদান ছিল শাস্ত্রজ্ঞ বীরবলের। তিনিই ছিলেন একমাত্র হিন্দু যিনি নিজে এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফলে আকবর-বীরবলের বন্ধুত্বের বা বোঝাপড়ার গভীরতা যে কতটা এটা অচিরেই বুঝতে পারছিলেন অনেকেই।
আর রাজার বেশি ঘনিষ্ঠ হলে যা হয়! শত্রুও বাড়ল কবিরাজের। এই তালিকায় প্রথম নাম ঐতিহাসিক বদায়ুনির। বারবার তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াতেন বীরবল অযোগ্য। বেজন্মা বলে গালি দিতেন তাঁকে। এমনকী গণিকালয়ে গিয়ে বীরবল নাকি নাবালিকা গণিকাদের সম্ভোগ করেন, এও রটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যাতে সম্রাট তাঁর ধর্মপ্রাণ বন্ধুটির প্রতি রুষ্ট হন। শুধু কথায় নয়, লেখাতেও এই চেষ্টাটি চালিয়েছিলেন বদায়ুনি।
কেউ বলেন, একজন হিন্দু কেন মোগল সম্রাটের এত প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন তা সহ্য করতে পারেননি আবদুল কাদের বদায়ুনি। তাই বীরবলকে হেয় করতে তাঁর ফন্দিফিকিরের শেষ ছিল না।
একজন সভাকবি, যোদ্ধার তুলনায় ভাঁড় বা বিদূষকের গুরুত্ব কিছুটা কম, তাই ঐতিহাসিক বদায়ুনি তাঁর লেখায় মহেশকে বদফ্রোস বা বিদূষক হিসেবে বর্ণনা করতেন।
তাতে অবশ্য মহেশের সঙ্গে সম্রাট আকবরের সম্পর্ক কোনও ভাবেই টাল খায়নি। বরং সম্রাট কালে কালে বুঝেছিলেন তাঁর কবিরাজের অসামান্য কাব্যপ্রতিভার সঙ্গে রয়েছে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরিসীম ক্ষমতা।
১৫৭২ সালে তাঁর এই সভাকবিকে তিনি এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে পাঠান। লক্ষ্য, শের আফগান কোয়ালি খানকে তার বড় ভাই হাকিম মির্জার আক্রমণ থেকে বাঁচানো।
ব্রহ্মকবি সফল হয়ে ফিরে এলেন। আর তার পরেই সম্রাট তার এই চোদ্দো বছরের অনুজ প্রিয় বন্ধুটিকে বীরবর উপাধি দিলেন। মহেশ দাশ থেকে ব্রহ্মকবি, তার থেকে কবিরাজ শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠলেন বীরবর, যা পরে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে বীরবল।
আকবরের সভায় বীরবলের বদায়ুনির মতো শত্রু যেমন ছিল, তেমনই আবুল ফজলের মতো বন্ধুও। আবুল ফজল তাঁর লেখায় বলেছেন, প্রায় দু’হাজার লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বীরবল। এমন এক পরাক্রমী যোদ্ধা, গায়ক-কবিকে কেন পরবর্তী কালে শুধুমাত্র একজন বিদূষক হিসেবেই চিহ্নিত করা হল?
সে কথায় যাওয়ার আগে বীরবলের বাকি জীবনটুকুও একটু জেনে নেওয়া যাক।
সভায় মান সিংহ টোডরমল ভগবানদাসের মতো গুণী জনরা থাকলেও নবরত্নের মধ্যে বীরবলই যে সম্রাটের সবথেকে প্রিয়পাত্র তা জানতেন সকলেই। সেই ঘনিষ্ঠতা কতখানি, তার প্রমাণ হিসেবে হুবহু তুলে দেওয়া যাক বাংলা ১৩৩৫ সালের শ্রাবণ সংখ্যায় বিচিত্রা পত্রিকায় লেখা মুহম্মদ মনসুরুদ্দিনের লেখা ‘বীরবল’ নামের নিবন্ধের খানিকটা অংশ (বানান অপরিবর্তিত)—
‘‘দরবার হইতে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সমস্ত স্থানে তাঁহার যাতায়াত ছিল। কোন পদবীর আমীর ওমরাহই তাঁহার মত স্বাধীনভাবে সম্রাট আকবরের নিকট যাতায়াত করিতে পারিতেন না। নিজের বুদ্ধিমত্তা বলে ও সম্রাটের মন অধ্যয়ণ দ্বারা প্রায় সময়েই সম্রাটের নিকট হইতে ভাল ভাল ফরমান পাইতেন। এইজন্য রাজা, মহারাজা, আমির ওমরাহ ও সেনাপতি সকলেই তাঁহাকে লক্ষাধিক টাকার উপহার প্রেরণ করিতেন। এবং সম্রাটও তাঁহাকে অধিকাংশ রাজাদের নিকট দৌত্যকার্য্যে নিযুক্ত করিতেন। কতকটা তাঁহার বংশীয়গুণে, কতকটা দৌত্য পদবীর জন্য, কতকটা হাস্য পরিহাস জন্য অতি সহজেই তিনি রাজাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাব করিয়া ফেলিতেন, এবং এমনভাবে তাঁহার কার্য্য উদ্ধার করিয়া লইতেন যে সৈন্য সামন্ত দ্বারাও উহা সম্ভব হইত না।’’
আমৃত্যু বীরবলের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা আকবরের ছিল। অথচ, মজার কথা কী, সম্রাট যতই বন্ধু হন, তিনি ভুল কিংবা অন্যায় করলে বীরবল কিন্তু তাঁকে ছেড়ে কথা বলতেন না।
এই প্রসঙ্গে একটি ছোট ঘটনা বলা যেতে পারে। তানসেন ছিলেন বীরবলের অভিন্নহৃদয় বন্ধু। একবার সেই তানসেনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠল, তিনি নাকি তাঁর সমসাময়িক এক গায়ককে শত্রুতাবশে বিষ খাইয়ে খুন করেছেন। তা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সম্রাট। তানসেনকে কঠোর শাস্তির আদেশ দিলেন। কিন্তু বীরবল বুঝেছিলেন কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তানসেনের মতো গায়ক এমন কাজ করতেই পারেন না।
তিনি কৌশলে নিজের বাগ্মিতায় সম্রাটকে এমনই প্যাঁচে ফেললেন যে সম্রাট বাধ্য হলেন আবার সেই বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করতে, এবং যথারীতি দেখা গেল তানসেন সেই গায়কের মৃত্যুর জন্য আদৌ দায়ী ছিলেন না। প্রাণে বাঁচলেন বিশ্বের সেরা গায়ক, আর ভবিষ্যতের কলঙ্কের বোঝা থেকে মুক্ত হলেন শ্রেষ্ঠ মুঘল সম্রাট আকবর। বলা বাহুল্য, তা তাঁর সভাসদ বীরবলের কারণেই।
বীরবলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলেছিল আজীবন। এবং শেষ পর্যন্ত সেই চক্রান্তকারীদের মুখে হাসিও ফুটেছিল বীরবলের নির্মম মৃত্যুতে।
কী ভাবে মারা গেলেন আকবরের প্রিয় বন্ধু? যুদ্ধবাজ আফগানদের শায়েস্তা করার জন্য আকবর সিদ্ধান্ত নিলেন সেখানে বিপুল সেনাবাহিনী পাঠাবেন।
আফগানিস্তানের মতো দুর্গম জায়গা, সেখানে একজন অভিজ্ঞ সেনাপতিকেই তিনি পাঠাবেন ভেবেছিলেন। এ দিকে বীরবল জানালেন, তিনি সেখানে যেতে চান।
বীরবলের এই প্রস্তাবে আকবরের মনে ‘কু’ ডেকেছিল। কিন্তু বন্ধুর প্রার্থনাকেও ফেলে দিতে পারছিলেন না। অতয়েব করেয়া (লটারি) করলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস, তাতেও বীরবলেরই নাম উঠল! সুতরাং অনুমতি দিতেই হল।
যুদ্ধে যাওয়ার আগে সম্রাট বীরবলের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন ‘‘বন্ধু খুব শিগগিরি ফিরে এসো। তোমাকে ছাড়া আমার জীবনধারণ অসহনীয়।’’ বীরবল কথা দিলেন।
কিন্তু জীবনে সেই প্রথম আর সেই শেষবারের মতো কথার খেলাপ করলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এক বিশাল সেনাবাহিনী পৌঁছল আফগানিস্থনের কাটলং অঞ্চলে।
ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মোট আট হাজার সৈন্য সহ নিহত হলেন মুগল সম্রাট আকবরের পরমপ্রিয় বন্ধু বীরবল। আর এতই দুর্ভাগ্য যে, মৃতদেহের স্তূপ থেকে বীরবলের প্রাণহীন শরীরটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বীরবলের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পিছনেও তার প্রতি ঈর্ষাকাতরদের চক্রান্ত ছিল বলে মনে করা হয়। শোনা যায়, বীরবল যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছানোর আগেই সেখানে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন আকবরের অন্য এক সভাসদ জৈন খান। তিনিও দু’চোক্ষে দেখতে পারতেন না বীরবলকে। সেবার মওকা পেয়ে তিনিই নাকি আফগানদের খবর পাঠান বীরবল ও তাঁর সৈন্যরা কোথায় আছেন। চক্রান্ত করে বীরবল ও তাঁর সৈন্যদের এমন একটি গিরিবর্ত্মে মধ্যে এনে ফেলেন যেখান থেকে আর পালানোর পথ ছিল না।
বীরবলের মৃত্যুর পরে একেবারে ভেঙে পড়েন আকবর। কয়েক দিন আহার নিদ্রা, সভায় বসা সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। বারবার আফশোস করতেন অন্তত বীরবলের মৃতদেহটুকুও যদি খুঁজে পাওয়া যেত তাহলে অন্তত সৎকারটুকু করা যেত তাঁর। পরে নিজেই নিজেকে স্বান্ত্বনা দিয়েছেন এই বলে, বীরবলের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষকে অগ্নিতে দাহ করার প্রয়োজন হয় না, সূর্যদেব স্বয়ং নিজের তেজে বীরবলের সৎকার করবেন।
বীরবলের মৃত্যুর পরেও তাঁর প্রতি ঘৃণা এতটুকু কমেনি বদায়ুনির। বদায়ুনি তখনও লিখে চলেছেন, ‘‘বীরবলের মৃত্যুর পর কিছু মানুষ রটালেন বীরবল নাকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কাপুরুষের মতো পালিয়ে উত্তরভারতের নগরাকোটে সাধুসন্ন্যাসীদের সঙ্গে মিশে গেছেন।’’ কিন্তু আকবর সেই কথা বিশ্বাস তো করেনইনি, বরং অনুসন্ধান করে দেখেছিলেন আসলে পুরো ব্যাপারটাই ডাহা মিথ্যে।
এমনই মিথ্যে গল্প দিয়ে, কখনও ঠগ, কখনও পলাতক, ভীরু বলে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে অসীম প্রতিভাধর মহেশ দাশ বীরবলকে। আর তাঁর মৃত্যুর এত এত বছর পরেও তাঁকে ‘বিদূষক’ হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে বহু বহু মানুষের কাছে— এত বড় তামাশা আর হয় নাকি!
ঋণ: Raja Birbal : Life and Times (Parameswar Prasad Sinha), দরবার-ই-আকবরী (শামসুল উলামা হাসান মুহম্মদ আজাদ), আইন-ই-আকবরী (পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় অনূদিত), Akbar and Birbal (Amrita Sarin)