Wednesday, November 24, 2021

Post # 1065 Bengali Amarchitra Katha 251

                                                                       ডাউনলোড করুন     


রূপকথার গল্প যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে ...তাই হয়ত এই গল্প গুলি চির সজীব, জিবন্ত হয়ে আছে এখনো, গল্প শুনতেও ভালবাসে সকলে , বিশেষ করে ছোটরা... ছোট্ট মেয়েটি থাকতে ঠাকুমা তাঁর ঠাকুমার কাছ থেকে যে গল্প শুনেছিলেন তিনি তা তাঁর নাতি নাতনিদের নিজের মতো করে বলতে ভালবাসতেন । বহু দূর দেশ ভ্রমন কালে কোন পথিক তাঁর যাত্রাপথে কোনও কাহিনী শুনে পরে যখন সেগুলি কারো কাছে বলতেন তখন দরকার মতো স্থান কাল পাত্র অদল বদল করে নেন । এই ভাবে গল্প পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে ছড়িয়ে পড়েছে অন্য প্রান্তে... বলা বাহুল্য , আর এই কারনেই ঈশপ ও পঞ্চতন্ত্র প্রনেতা বিষ্ণুশর্মার কাহিনী মধ্যে অনেক রকম মিল দেখতে পাওয়া যায় । 

এই কাহিনী টি বাংলার বহু পরিচিত লোককাহিনী ... সকলের জন্য বলাহয়েছে নতুন ভাবে । 





 

Tuesday, November 23, 2021

Post # 1064 Bengali Amarchitra Katha 249

 
 
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা কারোরই অজানা নয়।তাঁর সম্বন্ধে মহাত্মা গান্ধী একদা বলেছিলেন, সত্যিকারের ধর্মাচারন যে কি তা হলো শ্রী রামকৃষ্ণের জীবন ।তাঁর জীবন আমাদের ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে শেখায় । 
 শ্রী রামকৃষ্ণের বানী ছিল তাঁর জীবনের মতই অনাড়ম্বর । সহজ সরল গল্পের মাধম্যে অনেক সময় তিনি তাঁর কথা ব্যক্ত করেন । তাঁর গল্পে মানুষের অসঙ্গতি বা দুর্বলতা দেখে আমাদের মন কৌতুকাবহ হয়ে উঠলেও তিনি কিন্তু আমাদের মনে শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রতিই বিশ্বাস রাখতে অনুপ্রাণিত  করেছেন ।  








Monday, November 22, 2021

Post # 1063 Bengali Amarchitra Katha 247

                                                                         ডাউনলোড করুন

জাতক  গৌতম বুদ্ধের অতীত জীবনের কাহিনীমূলক গল্পসাহিত্য। এটি ত্রিপিটকের অন্তর্গত এবং এর কথক  গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং। বুদ্ধত্ব লাভের পর সিদ্ধার্থ গৌতম তাঁর অতীত জীবনের কথা স্মরণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। তখন তিনি শিষ্যদের সঙ্গে ধর্মালোচনাকালে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তাঁর অতীত জীবনের বহু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেসব ঘটনার সংকলনই জাতক সাহিত্য।

খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে বুদ্ধঘোষ রচিত জাতকত্থবণ্ণনা নামক গ্রন্থে ৫৪৭টি জাতক অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর তেরো বছর পর আঠারো শতকে অধ্যাপক ফৌজবল লন্ডন পালি বুক সোসাইটির উদ্যোগে ইংরেজি অনুবাদসহ ছয় খন্ডে যে জাতকগ্রন্থ প্রকাশ করেন তাতেও জাতকের সংখ্যা ছিল পূর্ববৎ। কিন্তু ত্রিপিটকের সূত্তপিটক মতে বুদ্ধদেব ৫৫০ বার জন্ম পরিগ্রহ করেন। সে অনুযায়ী জাতকের সংখ্যা হওয়া উচিত ৫৫০টি।

জাতকের এই গল্পগুলি দীর্ঘকাল গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি থেকে স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধমহাসঙ্গীতি (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মেলন) কালে জাতক গ্রন্থিত হয়। তখন পালি ভাষাতেই জাতকের গল্পগুলি লিখিত হয়েছিল; পরবর্তীকালে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হয়। বাংলায় জাতক অনুবাদ করেন ঈশাণচন্দ্র ঘোষ। তিনি ষোলো বছরে ছয় খন্ডে জাতকের অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন।

প্রত্যেকটি জাতকের তিনটি অংশ থাকে: প্রত্যুৎপন্নবস্ত্ত, অতীতবস্ত্ত ও সমাধান। প্রত্যুৎপন্নবস্ত্ত হচ্ছে জাতকের উপক্রমণিকা অংশ। এখানে জাতকের উপলক্ষ ও প্রাসঙ্গিকতা বর্ণিত হয়; অর্থাৎ বুদ্ধ কখন, কোথায়, কাকে উপলক্ষ করে এবং কোন প্রসঙ্গে এই জাতক কাহিনী বিবৃত করেছিলেন তার বিবরণ থাকে এ অংশে। অতীতবস্ত্ত হচ্ছে জাতকের মূল অংশ, অর্থাৎ এখানে বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনীগুলি বর্ণিত হয়। আর শেষ অংশ সমাধানে প্রত্যুৎপন্নবস্ত্তর সঙ্গে অতীতবস্ত্তর চরিত্রগুলির অভিন্নতা বা যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ জাতকে বর্ণিত চরিত্রগুলির কে কোন জন্মে কি ছিলেন সে পরিচয় এখানে তুলে ধরা হয়।

জাতকের সব কথাই উপদেশমূলক। এর বাণী কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলি সর্বজনীন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই জাতক থেকে মানবিক উপদেশাবলি গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া জাতকে পুরাকালের আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা, বিচার-আচার ইত্যাদির বিবরণ পাওয়া যায়। জাতকের রচনাকৌশলও অত্যন্ত হূদয়গ্রাহী। বাংলা সাহিত্যসহ বিশ্বের বহু সাহিত্য জাতকের নির্যাস গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। 

তথ্য https://bn.banglapedia.org







 

Saturday, November 20, 2021

Post # 1062 Bengali Amarchitra Katha 246

                                                                        ডাউনলোড করুন

  জাতক হলো ভগবান বুদ্ধের অতীত বহু জন্মের কথা ও কাহিনী। বৌদ্ধদের মতে কেবলমাত্র এক জন্মের কর্মফলে কেউ সম্যকবুদ্ধ হতে পারেন না। ভগবান বুদ্ধ কোটিকল্পকাল ধরে বোধিসত্ত্বরূপে পশু, পাখি, মানুষ, দেবতা প্রভৃতি হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই সকল জন্মে দান, মৈত্রী, অহিংসা, পরোপকারিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের দ্বারা তিনি নিজের চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করেন। বারবার জন্মগ্রহণ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে অবশেষে ‘বুদ্ধ’ বা ‘জ্ঞানী’ হন। ভগবান বুদ্ধের এই পূর্ববর্তী জন্মসমূহকে ‘বোধিসত্ত্ব-জন্ম’ বলা হয়। বৌদ্ধরা এই অবস্থাকে অভিসম্বুদ্ধ অবস্থা বলে। এই অবস্থায় বুদ্ধ জাতিস্মরতা লাভ করে তাঁর অতীত সব জন্মের কথা স্মরণ করতে পারতেন। পরে এই সব কথা শিষ্যদের শুনিয়ে তাদের ধর্মোপদেশ দান করতেন এবং তাদের চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করতেন।

জাতকের গল্পগুলি প্রাচীন ভারতের অমূল্য সম্পদ। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে রচিত জাতকের গল্পগুলি যেমন মনোগ্রাহী তেমনি শিক্ষনীয়। এছাড়া জাতকের গল্পগুলি সমসাময়িক যুগ ও সমাজের পটভূমিকায় রচিত হওয়ায় গল্পগুলি থেকে তৎকালীন সময় ও সমাজের এক সুপষ্ট প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।

জাতকের গল্পসমূহ এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, তা আমাদের প্রাচীন গল্পকাহিনী যেমন- বৃহৎকথা, কথাসরিৎসাগর, হিতোপদেশ প্রভৃতিতে এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। শুধু সংস্কৃত সাহিত্যে নয় আরব্য-রজনীর গল্পে, গ্রিক সাহিত্যে, ঈশপের গল্পে, ডেমোক্রিটাসের কুকুর ও প্রতিবিম্ব, প্লেটোর সিংহচর্মাচ্ছাদিত গর্দভ প্রভৃতি গল্পে এবং শেক্সপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’-নাটকেও জাতকের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

বিষয়ের মাধুর্য্য ও সহজ-সরল রচনাশৈলীর কারণে জাতকের গল্পগুলি আজও সমান জনপ্রিয়। জাতকের গল্প অ্যাপটিতে সেই চিরদিনের গল্পগুলিকে সহজ সরল ভাষায় নতুন করে পরিবেশন করার চেষ্টা করা হয়েছে। পাঠক-পাঠিকাদের ভালো লাগলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
Version: 1.0
এই সংস্করণে যে গল্পগুলি আছে-
• ধ্রুবসত্য জাতক
• বালুকাপথ জাতক
• সেরিবান জাতক
• চুল্লশ্রেষ্ঠী জাতক
• দেবধর্ম জাতক
• কাষ্ঠহারি জাতক
• মখাদেব জাতক
• সুখবিহারি জাতক
• লক্ষ্মণ জাতক
• ন্যগ্রোধমৃগ জাতক
• কণ্ডিনমৃগ জাতক
• বাতমৃগ জাতক
• মৃগমায়া জাতক
• মারুত জাতক
• মৃতকভক্ত জাতক
• নলপান জাতক
• কুরঙ্গমৃগ জাতক
• কুক্কুর জাতক
• অশ্ব জাতক
• তীর্থ জাতক
• মহিলামুখ জাতক
• পৌনপুনিক জাতক
• নন্দিবিলাস জাতক
• কৃষ্ণ জাতক
• মুনিক জাতক
• কুলায়ক জাতক
• নৃত্য জাতক
• শকুনি জাতক-১
• মৎস্য জাতক
• শকুনি জাতক-২
• তিতির জাতক
• বক জাতক
• নন্দ জাতক
• অঙ্গার জাতক
• মিত্রবিন্দক জাতক
• কপোত জাতক
• বেণুক জাতক
• মশক জাতক
• রোহিণী জাতক
• জলে আগুন জাতক
• সুবর্ণহংস জাতক
• বভ্রু জাতক
• গোধা জাতক
• কাক জাতক
• বিরোচন জাতক
• লাঙ্গুল জাতক
• রাধা জাতক
• পুষ্পরক্ত জাতক
• একপর্ণ জাতক
• সঞ্জীব জাতক
• রাজ-উপদেশ জাতক
• শূকর জাতক
• শৃগাল জাতক
• সুপর্ণ জাতক
• যক্ষ জাতক
• অলীনচিত্ত জাতক
• গুণ জাতক
• সুহনু জাতক
• ময়ূর জাতক
• বিনীলক জাতক
• ইন্দ্রসমানগোত্র জাতক
• সুসীম জাতক
• নকুল জাতক
• উপসাঢ় জাতক
• দেবকন্যা জাতক
• বর্তক জাতক
• বধির জাতক
• সিংহ-শৃগাল জাতক
• দুষ্ট বানর জাতক
• বানরতপস্বী জাতক
• কলাইমুষ্ঠি জাতক
• তিন্দুক জাতক






 

Friday, November 19, 2021

Post # 1061 Bengali Amarchitra Katha 244

                                                                       ডাউনলোড করুন          

 

"খ্রিস্টপূর্ব নবম হতে অষ্টম শতাব্দীতে পান্ডবরা কৌরবদের চক্রান্তের শিকার হয়ে ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হন এবং মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানীর এ স্থানটিতে ছদ্ম বেশে বসবাস শুরু করেন।
        

বনপর্ব মহাভারত মহাকাব্যের আঠারোটি পর্বের মধ্যে তৃতীয় পর্ব। বনপর্বের মধ্যে ২১ টি উপপর্ব ও ৩২৪ টি অধ্যায় আছে। এটি মহাভারতের বড় পর্বগুলোর একটি। এই পর্বে পাণ্ডবদের দ্বাদশবর্শব্যাপী বনবাস কাল, তাদের বিভিন্ন ঋষির সংস্পর্শে অর্জিত শিক্ষা এবং সেসব শিক্ষা তাদের চরিত্র গঠনে কীভাবে সাহায্য করেছিল তা বর্ণিত হয়েছে। মহাভারতের এই অন্যতম দীর্ঘ পর্বে নীতি-নৈতিকতা ও পাপ-পুণ্যের বিষয়ে অনেক আলোচনা আছে। এছাড়া এই পর্বে নানা উপাখ্যান যেমন "অজগর - যুধিষ্ঠির সংবাদ", "শ্যেন - কপোত উপাখ্যান", "নল - দময়ন্তীর উপাখ্যান" ও সাবিত্রি - সত্যবানের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। 

 

গঠনশৈলী ও অধ্যায়সমূহ

১। আরণ্যকপর্ব
যুধিষ্ঠির ও অনুগামী ব্রাহ্মণগণ - সূর্যদত্ত তাম্রস্থালী
ধৃতরাষ্ট্রের অস্থিরমতি
ধৃতরাষ্ট্র সকাশে ব্যাসমৈত্রেয়
২। কির্মীরবধপর্ব
কির্মীরবধের বৃত্তান্ত
৩। অর্জুনাভিগমনপর্ব
কৃষ্ণের আগমন - দ্রৌপদীর ক্ষোভ
শাল্ববধের বৃত্তান্ত - দ্বৈতবন
দ্রৌপদী ও যুধিষ্ঠিরের বাদানুবাদ
ভীম ও যুধিষ্ঠিরের বাদানুবাদ - ব্যাসের উপদেশ
অর্জুনের দিব্যাস্ত্র সংগ্রহে গমন
৪। কৈরাতপর্ব
কিরাতবেশী মহাদেব - অর্জুনের দিব্যাস্ত্র লাভ
দময়ন্তী ও রাজহংস
দময়ন্তী ও রাজহংস
৫। ইন্দ্রলোকাভিগমনপর্ব
ইন্দ্রলোকে অর্জুন - উর্বশীর অভিসার ও অর্জুনকে অভিশাপ
৬। নলোপাখ্যানপর্ব
ভীমের অধৈর্য - মহর্ষি বৃহদশ্ব
নিষধরাজ নল - দময়ন্তীর স্বয়ম্বর ও নলকে পতিরূপে বরণ
কলির আক্রমণ - নল ও পুষ্করের দ্যূতক্রীড়া
নল - দময়ন্তীর বিচ্ছেদ - দময়ন্তীর পর্যটন
কর্কোটক নাগ - মলের রূপান্তর
প্ত্রালয়ে দময়ন্তী - নল ও ঋতুপর্ণের বিদর্ভযাত্রা
নল ও দময়ন্তীর পুনর্মিলন
নলের রাজ্যোদ্ধার
৭। তীর্থযাত্রাপর্ব
যুধিষ্ঠিরাদির তীর্থযাত্রা
ইল্বল - বাতাপি - অগস্ত্য ও লোপামুদ্রা - ভৃগুতীর্থ
দধীচি - বৃত্রবধ - সমুদ্রশোষণ
সগররাজা - ভগীরথের ভূতলে গঙ্গানায়ন
ঋষ্যশৃঙ্গের উপাখ্যান
পরশুরামের ইতিহাস - হৈহয়াধিপতি কার্তবীর্যার্জুন
প্রভাস - চ্যবন ও সুকন্যা - অশ্বিনীকুমারদ্বয়
মান্ধাতা, সোমক ও জন্তুর ইতিহাস
উশীনর, কপোত ও শ্যেন
উদ্দালক, শ্বেতকেতু, কহোড়, অষ্টাবক্র ও বন্দী
ভরদ্বাজ, যবক্রীত, রৈভ্য, অর্বাবসু ও পরাবসু
নরকাসুর - বরাহরূপী বিষ্ণু - বদরিকাশ্রম
সহস্রদলপদ্ম - ভীম - হনুমান সংবাদ
ভীমের সুবর্ণপদ্ম সংগ্রহ
৮। জটাসুরবধপর্ব
জটাসুরবধ
৯। যক্ষযুদ্ধপর্ব
ভীমের সহিত যক্ষ - রাক্ষসাদির যুদ্ধ
১০। নিবাতকবচযুদ্ধপর্ব
অর্জুনের প্রত্যাবর্তন - নিবাতকবচ ও হিরণ্যপুরের বৃত্তান্ত
১১। আজগরপর্ব
অজগর, ভীম ও যুধিষ্ঠির
১২। মার্কণ্ডেয়সমস্যাপর্ব
কৃষ্ণ ও মার্কণ্ডেয়র আগমন - অরিষ্টনেমা ও অত্রির কথা
বৈবস্বত মনু ও মৎস্য - বালক্রূপী নারায়ণ
পরীক্ষিৎ ও মণ্ডুকরাজকন্যা - শল, দল ও বামদেব
দীর্ঘায়ু বক ঋষি - শিবি ও সুহোত্র - যযাতির দান
অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমনা ও শিবি - ইন্দ্রদ্যুম্ন
ধুন্ধুমার
কৌশিক, পতিব্রতা ও ধর্মব্যাধ
দেবসেনা ও কার্তিকেয়
১৩। দ্রৌপদীসত্যভামাসংবাদপর্ব
দ্রৌপদী ও কৃষ্ণপত্নী সত্যভামার কথোপকথন
মুদ্গলের স্বর্গপ্রত্যাখ্যান
মুদ্গলের স্বর্গপ্রত্যাখ্যান
১৪। ঘোষযাত্রাপর্ব
দুর্যোধনের ঘোষযাত্রা ও গন্ধর্বহস্তে নিগ্রহ
দুর্যোধনের প্রয়োপবেশন
দুর্যোধনের বৈষ্ণবযজ্ঞ
১৫। মৃগস্বপ্নদ্ভব ও ব্রীহিদ্রৌণিকপর্ব
যুধিষ্ঠিরের স্বপ্ন - মুদ্গলের সিদ্ধিলাভ
১৬। দ্রৌপদীহরণপর্ব
দুর্বাসার পারণ
জয়দ্রথ কর্তৃক দ্রৌপদীহরণ
১৭। জয়দ্রথবিমোক্ষণপর্ব
জয়দ্রথের নিগ্রহ ও মুক্তি
সাবিত্রি ও সত্যবান
সাবিত্রি ও সত্যবান
১৮। রামোপাখ্যানপর্ব
শ্রীরামের উপাখ্যান
১৯। পতিব্রতামাহাত্ম্যপর্ব
সাবিত্রি - সত্যবান উপাখ্যান
২০। কুণ্ডলাহরণপর্ব
কর্ণের কবচ - কুণ্ডল দান
২১। আরণ্যেয়পর্ব
যক্ষ - যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর
ত্রয়োদশ বৎসরারম্ভ

                                               


পঞ্চ-পান্ডবদের অজ্ঞাত বাসের সময় তাঁদের ছদ্মনাম

মহাভারতের বিরাট পর্ব্বে পঞ্চ-পাণ্ডবের ও দ্রৌপদীর অজ্ঞাত বাসের সময় তাঁরা প্রকাশ্যভাবে নিজের নিজের একটা করে নাম রেখেছিলেন । সেগুলি হল , যথাক্রমে -
যুধিষ্ঠির - কঙ্ক
ভীম - বল্লব
অর্জুন - বৃহন্নলা
নকুল - গ্রন্থিক
সহদেব - তন্তিপাল
দ্রৌপদী - সৈরন্ধ্রী
যুধিষ্ঠির নিজেদের মধ্যে আহ্বান বা সম্বোধনের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের একটি করে গুপ্ত নাম রেখেছিলেন । সেগুলি হল , যথাক্রমে -
যুধিষ্ঠির - জয়
ভীম - জয়ন্ত
অর্জুন - বিজয়
নকুল - জয়ৎসেন
সহদেব - জয়দ্বল
দ্রৌপদী - মালিনী
পঞ্চ-পাণ্ডব ও দ্রৌপদী এক বৎসর অজ্ঞাত বাসের সময় এই ছদ্মনাম ও গুপ্তনামগুলি নিজেদের পরিচয়ের জন্য ব্যবহার করেছিলেন । 
 
তথ্য সূত্র  https://www.wikiwand.com
               






Wednesday, November 17, 2021

Post # 1060 Bengali Amarchitra Katha 243

                                                                        ডাউনলোড করুন

 
আচার্য শঙ্করের ন্যায় রামানুজও ব্রহ্ম কেই চরম ও পরম সত্তা বা সত্যরূপে গ্রহণ করেছেন। তবে তাঁর মতে ঈশ্বরই সর্বোচ্চ তত্ত্ব, কিন্তু একমাত্র তত্ত্ব নন। ঈশ্বরের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ- চিৎ এবং অচিৎ। জগৎ ব্রহ্মের অচিৎ অংশ এবং জীবাত্মা ব্রহ্মের চিৎ অংশ। চিৎ এবং অচিৎ ঈশ্বরের মতোই সত্য, তবে তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। শরীর যেমন আত্মার উপর নির্ভর করে, তেমনি জড় ও আত্মা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে থাকে। বিশ্বের সব কিছুই ঈশ্বরের শরীর এবং ঈশ্বর হলেন অজৈব প্রকৃতি ও সকল জীবের আত্মা। চিৎ বা অচিৎ, ব্রহ্মের কোন অংশই মিথ্যা নয়। উভয় অংশই ব্রহ্মে বিধৃত। চিৎ ও অচিৎ-এর দ্বারা বিশিষ্ট বলেই রামানুজের ব্রহ্ম বিশিষ্টব্রহ্ম। অতএব, দার্শনিক বিচারে বলতে গেলে বলতে হয়, রামানুজ তিনটি তত্ত্ব স্বীকার করেছেন। রামানুজের দর্শনে ব্রহ্ম, চিৎ ও অচিৎ এই ত্রিতত্ত্ব স্বীকৃত, তবে এই ত্রিতত্ত্ব সমন্বিত হয়ে এক পরমতত্ত্বে পর্যবসিত। এই পরমতত্ত্বই বিশিষ্ট অদ্বৈত ব্রহ্ম বা সগুণ ব্রহ্ম।
আচার্য রামানুজ তাঁর শ্রীভাষ্যের মঙ্গলাচরণেই বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের মূলতত্ত্বকে অতি সংক্ষেপে সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন-
‘অখিল জগতের সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয় যাঁহার লীলা, শরণাগত বিবিধ জীবের রক্ষাই যাঁহার একমাত্র ব্রত এবং যিনি বেদান্তশাস্ত্রে বিশেষভাবে প্রতিপাদিত, সেই পরব্রহ্ম শ্রীনিবাস নারায়ণে আমার ভক্তিরূপা বুদ্ধি উৎপন্ন হউক।’- (যতীন্দ্র রামানুজাচার্যের তর্জমায়)।
অর্থাৎ এই মঙ্গলাচরণে একথাই প্রতিপাদিত হয় যে, রামানুজের মতে ব্রহ্ম সগুণ, জগৎ-কারণ, রক্ষাকর্তা, ধ্বংসকর্তা ও ভক্তের পরমকরুণাময় ভগবান। এই পরমতত্ত্ব ভক্তির দ্বারাই বোধগম্য। তাই ভক্তিই তত্ত্বজ্ঞানলাভের উপায়।
তাহলে রামানুজের ব্রহ্মের স্বরূপ কী ?
২.১ : ব্রহ্মের স্বরূপ
রামানুজের মতে ভেদের দিক থেকে তত্ত্ব তিনটি- চিৎ, অচিৎ ও ব্রহ্ম। কিন্তু অভেদের দিক থেকে তত্ত্ব কেবলমাত্র একটি এবং তা হলো- চিৎ-অচিৎবিশিষ্ট ব্রহ্ম। ব্রহ্ম বা ঈশ্বরই পরম সত্তা এবং চিৎ ও অচিৎ হলো ব্রহ্মের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্রহ্মের চিৎ অংশ থেকে জীব এবং অচিৎ অংশ থেকে জড় বস্তুর সৃষ্টি। সুতরাং ব্রহ্ম অংশী বা বিশেষ্য এবং চিৎ ও অচিৎ ব্রহ্মের অংশ বা বিশেষণ। অংশ ও অংশী সম্পূর্ণভাবে অভিন্ন নয়, আবার সম্পূর্ণভাবে ভিন্নও নয়। তাদের মধ্যে যে অভেদ, তা হলো বিশিষ্ট অভেদ- আত্যন্তিক অভেদ নয়। এই কারণেই রামানুজের মতবাদকে বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ বলা হয়।
রামানুজের মতে ব্রহ্ম স্বগত ভেদযুক্ত কিন্তু অপৃথকসিদ্ধ, সগুণ ও সচ্চিদানন্দস্বরূপ। ব্রহ্মই জগতের কর্তা এবং পরিণামস্বরূপ। তিনি নিত্যতৃপ্ত, বিকারহীন ও অনন্ত-কল্যাণময়। ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যগ্রন্থ শ্রীভাষ্যে রামানুজ বলেন-
‘অতঃ সর্ব্বজ্ঞঃ সর্ব্বশক্তিঃ সর্ব্বেশ্বরো নিরস্ত-সমস্তদোষগন্ধো অনবধিকঃ অতিশয়াসংখ্যেয় কল্যাণগুণগণ্যেঘমহার্ণবঃ পুরুষোত্তমো নারায়ণ এব নিখিলজগদেককারণং জিজ্ঞাস্যং ব্রহ্মেতি চ স্থিতম্’। ১।- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)
অর্থাৎ :
অতএব, এটাই স্থির হলো যে, সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তি, সর্বপ্রকার দোষস্পর্শশূন্য, নিরবধি নিরতিশয় এবং অসংখ্য কল্যাণকর গুণের মহাসমুদ্রস্বরূপ সেই পুরুষোত্তম নারায়ণই সমস্ত জগতের কারণস্বরূপ জিজ্ঞাস্য (জিজ্ঞাসার বিষয়ীভূত) ব্রহ্ম (শ্রীভাষ্য-১-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)।
ব্রহ্ম স্বগত-ভেদযুক্ত
রামানুজের নিকট ব্রহ্ম কোন অভেদতত্ত্ব নন। শঙ্করাচার্যের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে একমত যে, ব্রহ্মের কোন স্বজাতীয় বা বিজাতীয় ভেদ নেই। একই জাতির অন্তর্গত দুটি ব্যক্তির ভেদকে বলা হয় স্বজাতীয়ভেদ; যেমন- দুটি মানুষের পারস্পরিক ভেদ। অপরদিকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতির অন্তর্গত ব্যক্তিদের মধ্যে যে ভেদ, তাকে বলা হয় বিজাতীয়ভেদ; যেমন- একটি গরু সঙ্গে একটি অশ্বের ভেদ। এই দু’প্রকার ভেদ ছাড়াও তৃতীয় যে ভেদ প্রসিদ্ধ তা হলো স্বগতভেদ। একই বস্তু বা ব্যক্তির বিভিন্ন অংশ বা অঙ্গের মধ্যে যে ভেদ, তাকে বলা হয় স্বগত ভেদ; যেমন- একই মানুষের হাত ও পায়ের ভেদ। একমাত্র ব্রহ্মই সত্য হওয়ায় বা ব্রহ্মের বাইরে কিছু না থাকায় ব্রহ্মের স্বজাতীয় বা বিজাতীয় ভেদ সম্ভব নয়। ব্রহ্মের স্বজাতীয় ভেদ নেই, কারণ ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। আবার ব্রহ্মের বিজাতীয় ভেদ নেই, যেহেতু ব্রহ্মের অসদৃশ কিছুই নেই। তবে রামানুজের মতে ব্রহ্মের স্বগত ভেদ বর্তমান। একই ব্রহ্মে বিধৃত চিৎ ও অচিৎ অংশের ভেদই হলো ব্রহ্মের স্বগত ভেদ। তাই ব্রহ্ম সবিশেষ বা বিশিষ্ট।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ব্রহ্মের অন্তর্গত চিৎ ও অচিৎ-এর ভেদ রামানুজ-মতে এমন দুটি অংশের ভেদ, যারা ভিন্ন হলেও তাদের সম্পূর্ণ পৃথক বা বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। রামানুজ ব্রহ্মের সঙ্গে চিৎ ও অচিৎ-এর সম্বন্ধকে অপৃথকসিদ্ধি বলে উল্লেখ করেছেন।
ব্রহ্ম অপৃথকসিদ্ধ
ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের সঙ্গে চিৎ ও অচিৎ-এর বিশেষ নির্ভরতার সম্বন্ধকে ব্যাখ্যা করার জন্য রামানুজ ‘অপৃথকসিদ্ধি’ নামে একটি পৃথক সম্বন্ধ স্বীকার করেছেন।
‘অপৃথকসিদ্ধি’ কথাটির অর্থ হলো ‘অবিচ্ছেদ্যতা’। রামানুজের মতে এই সম্বন্ধ দ্রব্য ও গুণের মধ্যে, কিংবা একটি দ্রব্য ও অন্য একটি দ্রব্যের মধ্যে থাকতে পারে। অপৃথকসিদ্ধি সম্বন্ধ ন্যায়-বৈশেষিক সম্প্রদায়-স্বীকৃত সমবায় সম্বন্ধের সদৃশ। ন্যায়-বৈশেষিক দার্শনিকেরা অবিচ্ছেদ্য বিষয়সমূহের সম্বন্ধকে ‘সমবায় সম্বন্ধ’ বলেছেন। কিন্তু বিশিষ্টাদ্বৈতবাদিরা সমবায় সম্বন্ধকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। তাঁদের মতে অবিচ্ছেদ্যতাই হলো দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়ের স্বরূপ বা প্রকৃতি। তাই অপৃথকসিদ্ধিকে ঠিক সম্বন্ধ বলা যায় না; যদিও এটি সম্বন্ধরূপে অভিহিত হয়। ন্যায়-বৈশেষিক দার্শনিকদের সমবায় সম্বন্ধ এবং রামানুজের অপৃথকসিদ্ধি সম্বন্ধ- এই দুটির মধ্যে সাদৃশ্য হলো, উভয় সম্বন্ধই স্বতন্ত্র ও বাস্তব বিষয়সমূহে সম্বন্ধযুক্ত করে। তবে অপৃথকসিদ্ধি হলো আভ্যন্তরীণ সম্বন্ধ, কিন্তু সমবায় সম্বন্ধ তা নয়।
রামানুজের মতে অপৃথকসিদ্ধি সম্বন্ধের দৃষ্টান্ত হলো- দেহ ও আত্মার সম্বন্ধ। এই সম্বন্ধ আবার দ্রব্য ও গুণের মধ্যে, কিংবা একটি দ্রব্যের ও অন্য একটি দ্রব্যের মধ্যে থাকতে পারে। রামানুজ দেহের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘যাকে আত্মা নিয়ন্ত্রণ করে, যা আত্মাকে আশ্রয় করে থাকে এবং যাকে আত্মা আপন উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য কাজে লাগায়।’ এক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্যতাই হলো দুটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়ের স্বরূপ বা প্রকৃতি। এই অপৃথকসিদ্ধির ধারণাটিকে রামানুজের দার্শনিক মতের কেন্দ্রভূমিরূপে গণ্য করা হয়।
চিৎ ও অচিৎ- উভয়ই হলো ঈশ্বরের শরীর। চিৎ ও অচিৎ ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং উভয়েই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য বিদ্যমান। চিৎ, অচিৎ এবং ঈশ্বরের সম্বন্ধ অবিচ্ছেদ্য। এই তিনটি বিষয় একই ঐক্যে আবদ্ধ। চিৎ ও অচিৎ ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রাণাধীন। রামানুজের পরমতত্ত্ব বা ব্রহ্ম হলেন এই ঈশ্বর। জীবের আত্মার সঙ্গে শরীরের যে সম্বন্ধ থাকে, ঈশ্বরের সঙ্গে চিৎ ও অচিৎ-এর সেই সম্বন্ধ আছে। একটি প্রাণীদেহে যেমন আত্মাই প্রাধান্য লাভ করে, তেমনি চিৎ ও অচিৎ-এর সঙ্গে ঈশ্বরের অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ থাকলেও ঈশ্বরই প্রাধান্য লাভ করেন এবং চিৎ ও অচিৎকে নিয়ন্ত্রিত করেন। চিৎ ও অচিৎ- এই দুটি অধীন বিষয়কে বিশেষণরূপে এবং ঈশ্বরকে বিশেষ্যরূপে গণ্য করা হয়েছে। যেহেতু কোন বিশেষণ বিশেষ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্রভাবে থাকতে পারে না, সেহেতু যে সমগ্রের তারা অন্তর্ভুক্ত সেই সমগ্রটিকে অদ্বৈত বা এক বলা হয়েছে। চিৎ ও অচিৎ- এই বিশেষণের দ্বারা ঐ এক বা অদ্বৈত বিশিষ্ট হয় বলে রামানুজের দার্শনিক মতকে বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্তদর্শন বলা হয়।
বিশিষ্টাদ্বৈতের ধারণাটিকে একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে পরিস্ফুট করা যায়। যেমন, একটি লাল গোলাপের লাল রংটি হলো গুণ, গোলাপটি দ্রব্য। দ্রব্য ও গুণ এক নয়। তাই লাল রংটি গোলাপটি থেকে স্বতন্ত্র। আবার লাল রংটি গোলাপের গুণ হবার জন্য গোলাপটি থেকে স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করতে পারে না। রংটির অস্তিত্ব গোলাপ ফুলটির উপর নির্ভর করে। সেজন্য রংটি যে গোলাপের বাইরে আছে, তা বলা যায় না। রং ও অন্যান্য বিশেষণ নিয়ে গোলাপটি একটি সমগ্র এবং গুণগুলি ঐ সমগ্রের অন্তর্ভুক্ত। রামানুজ লাল রং ও গোলাপের মধ্যে পার্থক্য স্বীকার করেছেন। তিনি দ্রব্য ও গুণের এই পার্থক্যকে বলেছেন স্বগত ভেদ। রামানুজ ‘নীলোৎপল’ বা নীলপদ্মের উদাহরণ টেনেও বিষয়টির বিশ্লেষণ করে বলেছেন-
‘যথা ‘নীলমুৎপলম্’ ইতি পদদ্বয়স্য বিশেষ্যৈকত্ব-প্রতিপাদনপরত্বেন নীলত্বোৎপলত্বরূপ-বিশেষণদ্বয়ং ন বিবক্ষ্যতে। তদ্বিবক্ষায়াং হি নীলত্ববিশিষ্টাকারেণ উৎপলত্ববিশিষ্টাকারস্যৈকত্ব প্রতিপাদনং প্রসজ্যেত; তত্তু ন সম্ভবতি, নহি নৈল্যবিশিষ্টাকারেণ তদ্বস্তু উৎপলপদেন বিশিষ্যতে, জাতি-গুণয়োরন্যোন্যসমবায়প্রসঙ্গাৎ। অতো নীলত্বোৎপলত্ব উপলক্ষিত-বস্ত্বৈক্যমাত্রং সামানাধিকরণ্যেন প্রতিপাদ্যতে।’ ১২।- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)
অর্থাৎ :
‘নীলবর্ণ উৎপল’ বললে এস্থলে বিশেষণ ও বিশেষ্য, উভয় পদেরই একমাত্র বিশেষ্য-বোধনে তাৎপর্য থাকায় ‘নীলত্ব’ ও ‘উৎপলত্ব’ এই দুটি বিশেষণ আর পৃথকভাবে বক্তার অভিপ্রেত হয় না। আর যদি নীলত্ব ও উৎপলত্বের পৃথক প্রতীতিই হতো, তাহলে নিশ্চয়ই উৎপলত্ব ধর্মবিশিষ্ট পদার্থটির (উৎপলের) নীলত্ব ধর্মবিশিষ্টরূপে অভেদ প্রতীতি অপরিহার্য হতো; অথচ তা সম্ভব হয় না; কারণ, উৎপল পদার্থটি কখনোই উৎপল পদ দ্বারা নীলত্ববিশিষ্টরূপে বিশেষিত হয় না; কেননা, তাহলে জাতি ও গুণের মধ্যে পরস্পর সমবায় সম্বন্ধের সম্ভাবনা হয়ে পড়ে। অতএব, বুঝতে হবে যে, নীলত্ব ও উৎপলত্ব ধর্মদ্বয়বিশিষ্ট বস্তুর কেবল একত্বই উক্ত সামানাধিকরণ্য দ্বারা প্রতিপাদিত হয় (শ্রীভাষ্য-১২-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)।
ব্রহ্ম সগুণ ও সচ্চিদানন্দস্বরূপ
রামানুজের মতে ব্রহ্ম সগুণ। তিনিই ঈশ্বর। ঈশ্বর নির্বিশেষ বা নির্গুণ ব্রহ্ম নন। কারণ চিৎ ও অচিৎ তাঁর বিশেষণ। চিৎ ও অচিৎ তাঁর শরীর, তিনি তাদের আত্মা। রামানুজ চিৎ ও অচিৎ-এর সত্তা স্বীকার করেছেন, তবে তিনি তাদের স্ব-নির্ভর সত্তা স্বীকার করেননি। কারণ চিৎ ও অচিৎ ব্রহ্মাধীন এবং ব্রহ্ম-নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং ব্রহ্মই পরম তত্ত্ব এবং তিনটি মাত্রাত্মক অদ্বৈতসত্তা। রামানুজের মতে উপনিষদে যে নির্গুণ ব্রহ্মের কথা বলা হয়েছে, তার প্রকৃত অর্থ হলো ব্রহ্মের অজ্ঞতা, জড়তা, ক্ষুদ্রতা প্রভৃতি হেয় গুণগুলি নেই। রামানুজ অদ্বৈতবাদী শঙ্করাচার্যের নির্গুণ বা নির্বিশেষ ব্রহ্মের অসিদ্ধি প্রতিপাদন করতে গিয়ে বলেন-
‘অত এব নির্ব্বিশেষ-চিন্মাত্রব্রহ্মবাদঃ অপি সূত্রকারেণ আভিঃ শ্রুতিভির্নিরস্তো বেদিতব্যঃ। পারমার্থিক-মুখ্যেক্ষণাদিগুণযোগি জিজ্ঞাস্যং ব্রহ্মেতি স্থাপনাৎ। নির্ব্বিশেষবাদে হি সাক্ষিত্বমপ্যপারমার্থিকম্, বেদান্ত-বেদ্যং ব্রহ্ম জিজ্ঞাস্যতয়া প্রতিজ্ঞাতম্ । তচ্চ চেতনমিতি ‘ঈক্ষতের্নাশব্দম্’ ইত্যাদিভিঃ সূত্রৈঃ প্রতিপাদ্যতে। চেতনত্বং নাম চৈতন্য-গুণযোগঃ। অত ঈক্ষণগুণবিরহিণঃ প্রধানতুল্যত্বমেব।’ ২।- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)।
অর্থাৎ :
অতএব, জিজ্ঞাস্য ব্রহ্মে পারমার্থিক (প্রকৃত সত্য) মুখ্য ঈক্ষণ (আলোচনা) প্রভৃতি গুণসম্বন্ধ স্থাপিত হওয়ায় এটাও বুঝতে হবে যে, (ব্রহ্মসূত্রের) সূত্রকার (বাদরায়ণ) কর্তৃক উক্ত শ্রুতিসমূহ দ্বারা নির্বিশেষ চিন্মাত্র ব্রহ্মবাদও (শঙ্করমতও) প্রত্যাক্ষাত হয়েছে। কেননা, নির্বিশেষবাদে ঈশ্বরের সাক্ষিত্ব ধর্মও অপারমার্থিক বা অসত্য ; (সুতরাং গৌণ)। বেদান্ত-বেদ্য ব্রহ্মই এখানে জিজ্ঞাস্যরূপে প্রতিজ্ঞাত হয়েছেন ; সেই ব্রহ্ম যে চেতন বস্তু, তা-ই ‘ঈক্ষতেঃ নাশব্দম্’ এসব শব্দ দ্বারা প্রতিপাদিত হয়েছে। চেতনত্ব অর্থই চৈতন্যগুণের যোগ বা সম্বন্ধ ; অতএব, ঈক্ষণ-গুণহীন পদার্থ (ব্রহ্ম) তো সাংখ্যোক্ত প্রধানেরই সমান (শ্রীভাষ্য-২-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)।
অতঃপর রামানুজ আরো বলেন-
‘কিঞ্চ নির্ব্বিশেষ-প্রকাশমাত্র-ব্রহ্মবাদে তস্য প্রকাশত্বমপি দুরুপপাদম্ । প্রকাশো হি নাম স্বস্য পরস্য চ ব্যবহারযোগ্যতামাপাদয়ন্ বস্তুবিশেষঃ। নির্ব্বিশেষস্য বস্তুনস্তদুভয়রূপত্বাভাবাৎ ঘটাদিবদচিত্বমেব। তদুভয়রূপত্বাভাবেহপি তৎক্ষমত্বমস্তীতি চেৎ; তন্ন, তৎক্ষমত্বং হি তৎসামর্থ্যমেব। সামর্থ্য-গুণযোগে হি নির্ব্বিশেষবাদঃ পরিত্যক্তঃ স্যাৎ।’ ৩।- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)
অর্থাৎ :
আরও এক কথা, ব্রহ্মকে নির্বিশেষ প্রকাশমাত্রস্বরূপ বললে, তাঁর ‘প্রকাশত্ব’ই উপপাদন বা সমর্থন করা যায় না; কারণ, (অন্যের নিকট) নিজের ও অপরের ব্যবহার-যোগ্যতা সম্পাদক বস্তুবিশেষই প্রকাশ পদবাচ্য; নির্বিশেষ বস্তুতে সেই উভয়ই অসম্ভব; সুতরাং ঘটাদি পদার্থের ন্যায় তার অচিদ্রূপতাই (জড়তা) সিদ্ধ হতে পারে। যদি বলো, স্ব-পর ব্যবহার্যতারূপ এই অবস্থাদ্বয় না থাকলেও নিশ্চয়ই এ-বিষয়ে তার ক্ষমতা আছে। না- তা হয় না; কারণ, এ-বিষয়ে ক্ষমতা অর্থ- এ-বিষয়ে সামর্থ্য; ব্রহ্মে এই সামর্থ্যরূপ গুণের সম্বন্ধ স্বীকার করলে তো নির্বিশেষবাদ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে (শ্রীভাষ্য-৩-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১২)।
রামানুজের মতে ব্রহ্ম সচ্চিদানন্দস্বরূপ। ব্রহ্ম অনন্ত গুণের অধিকারী। এই অনন্তগুণের মধ্যে সত্তা, চৈতন্য ও আনন্দ ব্রহ্মের একাধারে স্বরূপ ও গুণ। তাই ব্রহ্ম শুধু সৎ নন, সত্তাবানও বটে; শুধু জ্ঞান নন, জ্ঞানবান; আবার শুধু আনন্দ নন, আনন্দময়। চিৎ ও অচিৎ তাঁর অংশ। চিৎশক্তির বিক্ষেপের দ্বারা জীবের এবং অচিৎশক্তির বিক্ষেপের দ্বারা জগতের সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি জগতের নিমিত্ত ও উপাদান উভয়ই।
ব্রহ্ম সনাতন কর্তা ও পরিণামরূপ জগৎ-কারণ
রামানুজ সৎকার্যবাদী ও পরিণামবাদী। তাঁর মতে জগৎ ব্রহ্মের বিবর্ত নয়, পরিণাম। ব্রহ্মই জীব ও জগতের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ। ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে দুভাবে চিন্তা করা যায়- কারণরূপে ও কার্যরূপে। প্রলয়কালে জগৎ যখন ধ্বংস হয়, তখন জীব ও জড়, ব্রহ্মের মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করে। তখন ঈশ্বর কারণরূপে বিদ্যমান থাকেন এবং সূক্ষ্ম অচিৎ ও বিদেহ আত্মাগুলি ঈশ্বরের শরীররূপে থাকে। ব্রহ্মের এই অবস্থাকে বলা হয় কারণ-ব্রহ্ম। সমগ্র বিশ্বসংসার এই সময় ব্রহ্মে লীন হয়ে থাকে। সৃষ্টির পরে যখন ব্রহ্মের চিৎ ও অচিৎ অংশ যথাক্রমে জীবজগৎ ও জড়জগতে ব্যক্ত হয়, তখন ব্রহ্মকে বলা হয় কার্য-ব্রহ্ম। সংক্ষেপে বললে, কারণ-ব্রহ্ম হলো ব্রহ্মের অব্যক্ত অবস্থা এবং কার্য-ব্রহ্ম হলো ব্রহ্মের ব্যক্ত অবস্থা। প্রমাণস্বরূপ, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ শ্রুতিতেও বলা হয়েছে-
‘যো যোনিং যোনিম্ অধিতিষ্ঠতি একঃ যস্মিন্ ইদং সং চ বি চৈতি সর্বম্ ।
তমীশানং বরদং দেবমীড্যং নিচায্যেমাং শান্তিম্ অত্যন্তম্ এতি’।। (শ্বেতাশ্বতর-৪/১১)
অর্থাৎ :
ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তিনিই সবকিছুর মূল। জগৎ প্রকাশিত হলে সেই জগৎকে তিনিই পালন করেন। আবার প্রলয়কালে জগৎ তাঁর কাছেই ফিরে যায়। তিনি সবকিছুর নিয়ন্তা। একমাত্র তিনিই ভক্তদের বর দেন। তিনিই একমাত্র আরাধ্য। এই ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ অনুভূতি হলে শাশ্বত শান্তি লাভ করা যায় (শ্বেতাশ্বতর-৪/১১)।
রামানুজের মতে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর জগতের অন্তর্বর্তী এবং অতিবর্তী উভয়ই। তিনি জীব-জগতে উপাদান কারণ হিসেবে সংসারে অনুস্যুত থেকে জড় প্রকৃতি ও আত্মাসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কার্য-ব্রহ্ম হিসেবে এই বিশ্বসংসারের সব কিছুই ব্রহ্মাত্মক। আবার ঈশ্বর জগতের অতিবর্তীও। কারণ এই সসীম জগতে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রকাশ সম্ভব নয়। বস্তুত ঈশ্বর হলেন একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তিসত্তা। তিনি অপ্রাকৃত দেহ-বিশিষ্ট। রামানুজের মতে দেহ বন্ধনের কারণ নয়, কর্মই বন্ধনের কারণ। তাই ঈশ্বর দেহবিশিষ্ট হয়েও বদ্ধ নন। তিনি কর্মের অধ্যক্ষ ও নিয়ন্তা।
ব্রহ্ম নিত্য-তৃপ্ত ও বিকারহীন
ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কোন পরিবর্তন হয় না। পরিণামবাদী রামানুজ ব্রহ্মের কোন বিকার স্বীকার করেন নি। ঈশ্বরের চিৎ ও অচিৎ অংশ নিত্য। তাই চিৎ ও অচিৎ-এর পরিণামের জন্য ঈশ্বরের কোন প্রকার বিকার হয় না। তিনি নিজে অপরিবর্তিত দ্রব্যরূপে অবস্থান করে বিশ্বসংসারের পরিবর্তন ঘটান। অপরপক্ষে ঈশ্বরের প্রকারগুলির অর্থাৎ আত্মা ও জড় পদার্থের বিভিন্ন রূপের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে রামানুজ গুণ ও প্রকারের পার্থক্য করেননি। চিৎ ও অচিৎ ঈশ্বরের গুণ বা প্রকার। যেমন- একজন ব্যক্তির বাল্য যৌবন এভাবে দেহ ও মনের পরিবর্তন হলেও তার ব্যক্তিত্বের ঐক্য ও অভিন্নতা অক্ষুণ্ন থাকে, তেমনি চিৎ ও অচিৎ পরিবর্তিত হলেও ঈশ্বরের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই অচিৎ বা জড়ের প্রকৃতিগত সীমাতে তিনি আবদ্ধ নন এবং জীবাত্মাগুলির দুঃখযন্ত্রণা তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না। শ্রীভাষ্যে তাই রামানুজ বলেছেন-
‘এবঞ্চ সতি পরমাত্মানং প্রতি জীবস্য শরীরতয়া অন্বয়াৎ জীবগতা ধর্ম্মাঃ পরমাত্মানং ন স্পৃশন্তি যথা স্বশরীরগতা বালত্বযুবত্বাদয়ো ধর্ম্মা জীবং ন স্পৃশন্তি।’ ১৯।- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১৩)
অর্থাৎ :
এইরূপে জীবাত্মা পরমাত্মার শরীরস্থানীয় হওয়ায় স্বীয় শরীরগত বালত্ব, যুবত্ব প্রভৃতি ধর্ম যেমন জীবকে স্পর্শ করে না, তেমনি জীবগত ধর্মসমূহও পরমাত্মাকে স্পর্শ করতে পারে না (শ্রীভাষ্য-১৯-ব্রহ্মসূত্র-১/১/১৩)।
রামানুজের মতে, ব্রহ্ম নির্বিকার হলেও নিষ্ক্রিয় নন। তিনি জীবের কর্মানুসারে জীবকে পরিচালনা করেন এবং জীবের সাধনায় বা উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে মুক্তি দান করেন। তবে জগতের সৃষ্টি বা পরিচালনার মাধ্যমে তাঁর কোন প্রয়োজন সাধিত হয় না। জীবের প্রয়োজনেই তাঁর জগৎ-পরিচালনা। তিনি নিত্য-তৃপ্ত এবং তাঁর দিক থেকে জগৎসৃষ্টি লীলা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই তিনি জগতে অন্তর্লীন হয়েও জগতের অতিরিক্ত। তাই শ্রীভাষ্যে বলা হয়েছে-
‘এবং পরমাত্মচিদচিৎ-সঙ্ঘাতরূপজগদাকারপরিণামে পরমাত্ম-শরীরভূতচিদংশগতাঃ সর্ব্ব এবাপুরুষার্থঃ; তথাভূতাচিদংশগতাশ্চ সর্ব্বে বিকারাঃ; পরমাত্মনি কার্য্যত্বম্; তদবস্থয়োস্তয়োর্নিয়ন্তৃত্বেনাত্মত্বম্; পরমাত্মা তু তয়োঃ শরীরভূতয়োর্নিযন্তৃ তয়াত্মভূতস্তদ্গতাপুরুষার্থৈর্ব্বিকারৈশ্চ ন স্পৃশ্যতে; অপরিচ্ছিন্নজ্ঞানানন্দময়ঃ সর্ব্বদৈকরূপ এব জগৎপরিবর্ত্তনলীলয়াবতিষ্ঠতে। তদেতদাহ- ‘সত্যং চানৃতং চ সত্যমভবৎ’-(তৈত্তিরীয়-৬/২) ইতি। বিচিত্র চিদচিদ্রূপেণ বিক্রিয়মাণমপি ব্রহ্ম সত্যমেবাভবৎ- নিরস্তনিখিলদোষগন্ধমপরিচ্ছিন্ন-জ্ঞানানন্দমেকরূপম্ এব ভবদিত্যর্থঃ। সর্ব্বাণি চিদচিদ্বস্তূনি সূক্ষ্মাদশাপন্নানি স্থূলদশাপন্নানি চ পরস্য ব্রহ্মণো লীলোপকরণানি; সৃষ্ট্যাদয়শ্চ লীলেতি ভগবদ্দ্বৈপায়ন-পরাশরাদিভিরুক্তম্ ।’- (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/৪/২৭)।
অর্থাৎ :
পরমাত্মার যে চেতনাচেতনসমষ্টিরূপ জগদাকারে পরিণাম, তাতে পরমাত্মার শরীরস্থানীয় চেতনাংশগত সমস্তই অপুরুষার্থ, অর্থাৎ জীবের প্রকৃত মঙ্গলকর নয়; এবং পরমাত্মার শরীরভূত অচেতনপদার্থগত সমস্ত বিকার (পরিণাম), পরমাত্মগত কার্য্যত্ব এবং সেই অবস্থায় যে চেতন ও অচেতনের নিয়ামকরূপে আত্মত্ব; স্বশরীরভূত সেই চেতনাচেতনের নিয়ামকরূপে আত্মস্বরূপ পরমাত্মা কিন্তু স্বশরীরগত উক্ত অনর্থরাশি ও বিকার দ্বারা স্পৃষ্ট হন না; বরং অপরিচ্ছিন্ন জ্ঞান ও আনন্দস্বরূপ তিনি সর্বদা একরূপ থেকে জগতের পরিবর্তনরূপ লীলা সম্পাদনকারী হিসেবে অবস্থান করেন। এ কথাই ‘সেই সত্যরূপ পরমাত্মা সত্য ও অসত্যরূপ হলেন’-(তৈত্তিরীয়-৬/২) বাক্যে অভিহিত হয়েছে। (অভিপ্রায় এই যে,) ব্রহ্ম চেতনাচেতনরূপে বিকারপ্রাপ্ত হয়েও স্বয়ং সত্যই ছিলেন, অর্থাৎ সবধরনের দোষসম্বন্ধশূন্য ও অপরিচ্ছিন্ন জ্ঞান ও আনন্দস্বরূপে একরূপই ছিলেন। সূক্ষ্মাবস্থাপন্নই হোক, আর স্থূলাবস্থাপন্নই হোক, চেতনাচেতন সমস্তই পরব্রহ্মের লীলোপকরণ। সৃষ্টি প্রভৃতি কার্য যে ভগবানেরই লীলা, তা ভগবন দ্বৈপায়ন এবং পরাশর প্রভৃতি মুনি বিভিন্ন স্মৃতিতেও বলেছেন (শ্রীভাষ্য-ব্রহ্মসূত্র-১/৪/২৭)।
তাই ব্রহ্মসূত্রেও (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৩) বলা হয়েছে- ‘লোকবত্তু লীলা-কৈবল্যম্’ অর্থাৎ, ‘লোকব্যবহারের ন্যায় সৃষ্টি কেবল ঈশ্বরের লীলা মাত্র’।
ব্রহ্ম পুরুষোত্তম ও অনন্ত-কল্যাণময়
রামানুজের মতে ব্রহ্ম পুরুষোত্তম বা পুরুষশ্রেষ্ঠ, কল্যাণগুণাধার, উপাস্য ভগবান। এই মতে ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ভগবান ও জগৎকর্তা একই সত্তার নামান্তরমাত্র। যেহেতু ঈশ্বর পূর্ণাঙ্গ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই তাঁর কোন দোষ-ত্রুটি নেই। তিনি পুণ্য ও ধর্মের আশ্রয়স্থল। তাঁর জ্ঞান ও আনন্দ অনন্ত। তিনি জগতের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও ধ্বংসকর্তা। ঈশ্বরের জ্ঞান, শক্তি ও করুণা অনন্ত, নিত্য, অসীম ও অনুপম। তিনি অজ্ঞানের জ্ঞান, শক্তিহীনের শক্তি, ভক্তের ভগবান, অনাথের নাথ, অপরাধীর কাছে ক্ষমা, পীড়িতের কাছে করুণা, অশুচি ও অপবিত্র জনের কাছে স্নেহময় পিতা ও সকলের প্রতি সদয়। শ্রদ্ধা, প্রীতি ও ভক্তির মাধ্যমে এই পুরুষশ্রেষ্ঠকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তাঁর কৃপা বা করুণাতেই আমরা দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হই।
রামানুজ বলেন যে, ঈশ্বর যদিও স্বয়ং এক ও অদ্বৈত, তবুও তিনি ভক্তদের সাহায্য করার জন্য নিজেকে পঞ্চরূপে প্রকাশ করেন। তাঁর এই পাঁচটি রূপ হলো- প্রথমত, তিনি জগতের ও জীবাত্মাসমূহের আত্মা বা অন্তর্যামীরূপে নিজেকে প্রকাশ করেন। তাঁর দ্বিতীয় রূপটি হলো জগতের অতিবর্তী বৈকুণ্ঠবাসী নারায়ণ। তিনি হলেন পরম পুরুষ। ঈশ্বর তাঁর তৃতীয় রূপটি আবার চারপ্রকার ব্যূহের মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
প্রথম ব্যূহরূপটি হলো বাসুদেব, যিনি জগতের কর্তা। দ্বিতীয় ব্যূহরূপটি হলো সংকর্ষণ। এই রূপে তিনি জীবের বুদ্ধির কর্তৃত্ব করেন এবং জগতের সংহার করেন। তৃতীয় ব্যূহরূপটি হলো প্রদ্যুম্ন। এই রূপে তিনি জগৎ সৃষ্টি করেন এবং জীবসমূহের আবেগের কর্তৃত্ব করেন। চতুর্থ ব্যূহরূপটি হলো অনিরুদ্ধ। এই রূপে তিনি জগৎ পালন করেন এবং জীবদের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। চারটি ব্যূহরূপ হলো এককভাবে পরমেশ্বরের আংশিক প্রকাশ। যখন ঈশ্বর মানুষের বা পশুর শরীর ধারণ করে জগতে অবতরণ করেন, তখন তাঁকে বিভব বা অবতার বলা হয়। এটিই তাঁর চতুর্থ রূপ।
রামানুজের মতবাদের সাথে ভগবদ্গীতার শিক্ষার প্রচুর সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন, অবতার বিষয়ে শ্রীগীতায় উদ্ধৃত হয়েছে-
‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্’।। (গীতা-৪/৭)
‘পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ ।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে’।। (গীতা-৪/৮)
অর্থাৎ :
হে ভারত, যখন প্রাণিগণের অভ্যুদয় ও নিঃশ্রেয়সের কারণ বর্ণাশ্রমাদি ধর্মের অধঃপতন ও অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি স্বীয় মায়াবলে যেন দেহবান হই, যেন জাত হই (গীতা-৪/৭)। সাধুদিগের রক্ষার জন্য, দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য এবং ধর্মসংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে নবাদিরূপে অবতীর্ণ হই (গীতা-৪/৮)।
আচার্য রামানুজও যেন তারই পুনরুক্তি করে বলেন, সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতদের বিনাশের জন্য এবং ধর্মের পুনঃস্থাপনের জন্য ঈশ্বর অবতার হন। অবতার দু’প্রকারের- মুখ্য ও গৌণ অবতার। ঈশ্বর যখন স্বয়ং অবতীর্ণ হন, তখন তাঁকে মুখ্য অবতার বলা হয়। যেমন শ্রীকৃষ্ণ। কয়েকটি আত্মা যখন ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হন, তখন তাঁদের ঈশ্বরের গৌণ অবতার বলা হয়। যেমন শিব, বুদ্ধ ইত্যাদি। পরমকারুণিক ঈশ্বর তাঁর ভক্তদের সেবার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য তাঁর পঞ্চম রূপটি ধারণ করেন। এই রূপটিকে বলা হয় অর্চাবতার। রামানুজের মতে ঈশ্বর মূর্তিকে আশ্রয় করে মন্দিরে অবস্থান করেন যাতে ভক্তগণ তাঁর সেবার প্রত্যক্ষ সুযোগ পায়।
আচার্য রামানুজ তাঁর শ্রীভাষ্যের সমন্বয়-অধিকরণের আলোচনান্তে বলেছেন- ‘যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে’ প্রভৃতি বেদান্তবাক্য একথাই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, সকলপ্রকার দোষরহিত, অনন্ত কল্যাণ-গুণের আকর, নিরবধিক, নিরতিশয় ও আনন্দস্বরূপ ব্রহ্মই জগতের একমাত্র কারণ।
তথ্য সূত্র  https://www.facebook.com/prasantodasbappy




 

Monday, November 8, 2021

Post # 1059 Bengali Amarchitra Katha 242

                                                                            ডাউনলোড করুন                                                    
বিষ্ণুশর্মা এক রাজপুত্রদের লেখাপড়াকে সহজ করার উদ্দেশ্যে মিত্রভেদ, মিত্রপ্রাপ্তি, কাকোলুকীয়, লব্ধ-প্রণাশ ও অপরীক্ষিতকারক নামে পাঁচটি উপদেশমূলক পুস্তক রচনা করেছিলেন, যেগুলোর সম্মিলিত নাম পঞ্চতন্ত্র। .

 

ব রচিত গল্প সাহিত্য পঞ্চতন্ত্র টীকা


সূচনা:-

সংস্কৃত সাহিত্যের বিশাল রত্নভাণ্ডারে গল্প সাহিত্যের একটি বিশেষ স্থান আছে। মানুষের গল্প শুনবার সহজাত প্রবৃত্তি হতে গল্প সাহিত্যের উদ্ভব। এই সংস্কৃত সাহিত্যের মধ্যে প্রধান অগ্রগণ্য হলেন পন্ডিত বিষ্ণুশর্মা। তিনি গল্প সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ পঞ্চতন্ত্র রচনা করেন।

বিষ্ণুশর্মার পরিচয়:-

বিষ্ণুশর্মা জন্ম ও বংশ পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। সমালোচকদের মত অনুযায়ী তিনি কাশ্মীরের ব্রাহ্মণ ছিলেন। পাশ্চাত‍্য পন্ডিত কিথ- এর মতে বিষ্ণুশর্মা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী ছিলেন।

বিষ্ণুশর্মার আবির্ভাবকাল:-

বিষ্ণুশর্মার আবির্ভাব কাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে পণ্ডিতগণ মনে করেন তিনি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে বর্তমান ছিলেন।

পঞ্চতন্ত্র রচনার কারন:-

পঞ্চতন্ত্রের কথা মুখসূত্রে জানা যায় দাক্ষিণাত্যের মহিলারোপ‍্য নগরের রাজা অমরশক্তির তিন জড় বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রদের বিদ্যা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বিষ্ণুশর্মা গ্রন্থটি রচনা করেন।

পঞ্চতন্ত্রের উৎস:-

সাধারণত গল্প সাহিত্যের উৎস বেদ-পুরাণ উপনিষদ,রামায়ণমহাভারত। সুতরাং বিষ্ণুশর্মা পঞ্চতন্ত্র রচনাকালে এগুলির কাছে ঋণী। তবে গ্রন্থটির মূল উৎস বৃহৎকথা।

পঞ্চতন্ত্রের মূল‍্যায়ণ:-

পাঁচটি তন্ত্রে রচিত বলে গ্রন্থটির নাম পঞ্চতন্ত্র। পাঁচটি তন্ত্র হল-মিত্রভেদ,মিত্রপ্রাপ্তি,কাকোলূকীয়ম্,লব্ধপ্রণাশ,অপরিক্ষিতকারকম্। প্রতি তন্ত্রে একটি মূল গল্পের সাথে অনেকগুলো ছোট ছোট গল্প সংযুক্ত হয়েছে। গল্পগুলি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সহজ-সরল ভাষায় রচিত।

উপসংহার:-

বিষ্ণুশর্মা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে গ্রন্থটি রচনা করলেও তিনি একজন মহান শিল্পি। বিষ্ণুশর্মার বড়ো কৃতিত্ব হলো মানুষের মনের ভাব পশুপাখির অন্তরে স্থাপন করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এই গ্রন্থটি বাইবেলের পরে সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনুদিত। সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, নীতি শিক্ষার ক্ষেত্রে সহজ ও সরল গ্রন্থ সত্যি দুর্লভ।

তথ্য সূত্র ; https://modernsanskrit.com/

 





 

Friday, November 5, 2021

Post # 1058 Bengali Amarchitra Katha 240

                                                                     ডাউনলোড করুন

 

 

 জনসাধারনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য জৈন সন্ন্যাসীগন যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন , তাঁদের সহজ সরল ধর্মীয় মতবাদ অজ্ঞ লোকেদের কাছে বোধগম্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে তাঁরা বিভিন্নি গল্প -গাথা কেই অবলম্ভন করেছেন । আমরা সংস্কৃত ভাষায় ও প্রাকৃত ভাষায় এ ধরনের হাজার হাজার শিক্ষামূলক গল্পের সন্ধান পাই ।

''বর্ধমান- দেশন'' গ্রন্থ থেকে গৃহীত সহস্রমল্লের গল্পটি থেকে এই সিদ্ধান্তেরই উপনীত হওয়া যায় যে , মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যের নিরামক ।সে যা হতে ইচ্ছা করবে তাই হতে পারবে । সে নিজের ইচ্ছা অনুসারে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে ।

 



 

Tuesday, November 2, 2021

Post # 1057 Bengali Amarchitra Katha 214

                                                                        ডাউনলোড করুন


পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময়ে হনুমান এক অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বানরের বেশে ভীমকে দেখা দেন। ভীম ছিলেন অসম্ভব আত্মগর্বী। তাঁকে শিক্ষা দেওয়াই ছিল বজরং বলীর উদ্দেশ্য। ভীমের পথ রুদ্ধ করে অসুস্থ বৃদ্ধের ছদ্মবেশে হনুমান শুয়ে ছিলেন।

# এই বানর আর অন্য কেউ ছিলেন না, ইনি ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের সর্বোত্তম ভক্ত, মহাবলী হনুমান! নিজের যাবার পথে এরকম ভাবে একটা বানরের লেজ পড়ে থাকতে দেখে, ভীম মনে মনে ভাবলো, "আমি মহাবলবান! অথচ আমার চলার পথের উপর এই তুচ্ছ বানরের লেজ পড়ে আছে যা কিনা আমাকে পার করতে হবে!'

# এতে ভীমের খুব অহংকার হলো! একটা তুচ্ছ বানরের লেজ পড়ে থাকবে মহাবলী ভীমের পথে? এই ব্যপার তার ব্যক্তিত্তে খুব আঘাত করলো! ভীম হুংকার দিয়ে তাঁকে বললো, "ওহে বানর, আমার পথ ছেড়ে দাও! তোমার এই তুচ্ছ লেজ আমার পথের উপর থেকে সরিয়ে নাও।"

# হনুমান উত্তরে তাকে বললেন, "দেখো, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি! তাই এখানে শুয়ে বিশ্রাম করছি। লেজ আর কিভাবেই বা সরাবো তুমিই বলো? বার্ধক্যগ্রস্থ প্রাণী কি আর সেই শক্তি রাখে? তুমিই বরং লেজটা এক পাশে সরিয়ে রেখে তোমার পথে তুমি চলে যাও।"

# ভীম ভাবলো, 'এটা তো সামান্য একটা লেজ!' এই ভেবে সে এক হাত দিয়েই লেজটাকে ধরে উঠাতে গেলো। কিন্তু অবাক করার কাণ্ড! সে লেজটাকে এক চুল পর্যন্ত নাড়াতে পারলো না। তারপর সে তার দুই হাত দিয়ে, সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে সেই একটা লেজ উঠানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু লেজ সে এক বিন্দু পরিমাণও নাড়াতে পারলো না। লেজে একটু কম্পনেরও সৃষ্টি করতে পারলো না। যার দেহে সহস্র হস্তির ক্ষমতা, সে কিনা একটা ছোট্ট বানরের লেজ এদিক থেকে ওদিক সরাতে পারছে না! ভীম মনে মনে খুব চিন্তিত ও ব্যাথিত হলো।

# এভাবে অনেকক্ষণ চেষ্টা করতে করতে সে পুরপুরি ক্লান্ত হয়ে গেলো। তবুও হনুমানের লেজকে এক চুল পরিমাণও নাড়াতে পারলো না। তার পর সে ব্যর্থ হয়ে করজোড়ে বলল, "আপনি কে? আপনি নিশ্চয়ই কোনো সাধারণ বানর হতে পারেন না! আমার ধৃষ্টতার জন্যে আমাকে ক্ষমা করুন।"

# হনুমান তখন ভীমকে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজের আসল স্বরূপ দেখালেন! এবং বললেন, "তুমি সম্পর্কে আমার ভ্রাতা হও! আমি পবনপুত্র হনুমান, শ্রীরামের দাস। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে আমি তোমাদের সঙ্গে থাকবো, অর্জুনের রথের ধ্বজায়। আর তোমাদের পক্ষে স্বয়ং পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আছেন! জয় তোমাদের নিশ্চিত হবেই জেনে রেখো।"

# এই কথার পরে হনুমান অন্তর্হিত হলেন। আর মহাবলশালী দ্বিতীয় পান্ডব ভীম, বিশ্ময়, লজ্জিত আর আত্মানন্দে বিমূঢ় স্তব্ধ হয়ে রইলো। মনে মনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বারংবার প্রণতি জানাতে লাগলো।

তথ্য সূত্র https://www.facebook.com/krishnakatha.comkrishna






 

Monday, November 1, 2021

Post # 1056 Bengali Amarchitra Katha 047

                                                                        ডাউনলোড করুন


                                                               গুরু নানক

                                                          শিখ ধর্মের প্রবর্তক।

বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত লাহোরের নিকটে অবস্থিত 'রায় ভর দি তালবন্দী' গ্রামে, ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই এপ্রিল বেদী ক্ষত্রী গোত্রের এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর নামানুসারে তাঁর জন্মস্থানের নাম নানকানা সাহেব নামকরণ কর হয়েছে। তার জন্মস্থানে বর্তমানে শিখদের একটি বৃহৎ উপাসনালয় রয়েছে। উপাসনালয়টির নাম 'গুরুদুয়ারা জনম আস্থান'।

তাঁর বাবা মেহতা কল্যাণ দাস বেদী (মেহতা কালু নামে পরিচিত),  গ্রামের মুসলিম জমিদার রায় বুল্লারেরস ভূমি রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন। নানকের মায়ের নাম তৃপ্তা দেবী এবং তার এক বড় বোন ছিল যার নাম নানাকি।

তিনি অল্প কিছু লেখাপড়া শিখে প্রথমে স্থানীয় জমিদারীতে কেরানির কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি সুলক্ষ্মণী নামক এক স্থানীয় নারীকে বিয়ে করেন। তাঁর দুই পুত্রের নাম  শ্রীচান্দ ও লক্ষ্মীচান্দ। এরপর তিনি স্ত্রীপুত্র ত্যগ করে সত্যের সন্ধানে নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে থাকেন। এক সময় তিনি ঈশ্বরের স্বরূপ অনুধাবন করতে সক্ষম হন এবং তাঁর বাণী প্রচার করা শুরু করেন।  তিনি প্রচার করেন "ঈশ্বর কেবল একজনই, তিনিই সত্য, তিনিই স্রষ্টা, তাঁর ভয় নেই, তাঁর ঘৃণা নেই, তিনি কখনও বিলীন হন না, তিনি জন্ম-মৃত্যু চক্রের উর্দ্ধে, তিনি অজ-অমর স্বয়ংপ্রকাশ। সাধনার দ্বারা প্রকৃত গুরুর মাধ্যমেই তাঁকে অনুধাবন করা যায়। তিনি আদিতে সত্য ছিলেন, তিনি কালের সূচনায় সত্য ছিলেন, চিরকালব্যাপী সত্য আছেন এবং তিনি এখনও সত্য।"

এরপর থেকে নানা দেশে ঘুরে ঘুরে ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। নানক তাঁর বাণী প্রচারের জন্য, 'রাবাব' (এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র বিশেষ) বাদক মুসলমান বন্ধু মারদানাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করেছেন। তিনি ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চল ভ্রণ করেন। ভারতের বাইরে আরবের মক্কা, মদিনা, বাগদাদ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি স্থানে স্থানীয় ভাষায় রাবাব বাদনের ছন্দে তাঁর বাণী প্রচার করেছেন। এই পরিভ্রমণকালে তাঁর ধর্মমত প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রচারকেন্দ্রও (মানজিস) স্থাপন করেন।

কথিত আছে যে, ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে গুরু নানক নিজ ধর্মমত প্রচারের জন্য ঢাকা আসেন নানা পথ ঘুরে। ইনি মিথিলা থেকে দিনাজপুরে এসে কান্তজীর মন্দির পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি কামরূপ ঘুরে সিলেটে যান। এরপর সিলেট থেকে তিন ঢাকাতে আসেন নৌপথে। উত্তর ঢাকার শিবপুরে (বর্তমান রায়ের বাজার, ধানমণ্ডি এলাকার কোনো এক স্থানে) নৌকা থেকে অবতরণ করেন। পরে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যান। শিবপুরের মানুষের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য সে সময়ের শিবপুর গ্রামের জাফরাবাদ এলাকায় একটি কূপ খনন করিয়েছিলেন। পরে সেখানে বিদেশি অতিথিদের স্নানের সুবিধার্থে এক স্থানীয় শাসক পুকুর খনন করিয়েছিলেন। ১৯৫৯ অবধি সে কূপটি স্থানীয় শিখরা দেখভাল করতেন। পরে আবাসন প্রকল্পের জন্য সরকার জমি বণ্টন করে দিলে পুকুরটি ভরাট করা হয়। কথিত আছে নানক এর এই কুয়াটি বর্তমানে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ২৬ নং সড়কের ২৭৮ বাড়িতে অবস্থিত। তিনি ঢাকার নীলক্ষেত (তৎকালীন সুজাতপুর মৌজার অন্তর্গত ছিল) অঞ্চলে একটি মাঞ্জি প্রতিষ্ঠা করে ধর্মীয় উপদেশ দেন। উল্লেখ্য, পাঞ্জাবি শব্দ মাঞ্জি-র অর্থ হলো— আধ্যাত্মিক আলোচনার কেন্দ্র। পরে এটাই হয়ে ওঠে নানকশাহী গুরুদুয়ারা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

গুরু নানক তাঁর সময়ে লঙ্গরের প্রচলন করেছিলেন। সেখানে সব ধর্মের, সব গোত্রের, সব লিঙ্গের, সমাজের সর্ব স্তরের মানুষেরা পাশাপাশি বসে আহার করেন। দ্বিতীয় শিখগুরু অঙ্গদ দেবের সময় থেকে লঙ্গরে মাংসের ব্যবহার বাতিল করা হয়। তখন থেকে লঙ্গরে নিরামিষ আহার বিতরণ শুরু হয়। ঐতিহাসিকদের মতে বৈষ্ণবদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্যই এই ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি গুরদুয়ারায়ই লঙ্গরের ব্যবস্থা আছে।

১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে জি টি রোডের ধারে এক প্রকাণ্ড জলাশয়ের ধারে, গুরুনানক একটি মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এই সময় তিনি এই জলাশয়ের নাম রাখেন অমৃত সায়র। তার থেকেই শহরের নাম হয় অমৃতসর। গুরু নানক জীবদ্দশায় তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি। ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে শিখ গুরু অর্জুন সিং অমৃত সায়র-এর ধারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ধারণা করা হয়, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির বা হরিমন্দিরে প্রতিদিন ১ লক্ষ লোককে খাবার দেওয়া হয়। বিভিন্ন মানুষের দানেই এই লঙ্গর চলে। এই লঙ্গরকে বলে, 'গুরু কা লঙ্গর'। আর যাঁদের স্বেচ্ছাশ্রমে এই লঙ্গরগুলো চলে, তাঁদেরকে বলা হয় 'সেবাদার'।

মোঘল সম্রাট বাবরের রাজত্বকালে গুরু নানক ও তাঁর মুসলমান বন্ধু মারদানাকে কারাগারে অন্তরীণ করা হয়। কারা কর্মকর্তার মাধ্যমে গুরু নানক সম্পর্কে জানার পর, সম্রাট বাবর নানককে ডেকে পাঠান এবং তাঁর বাণী শুনে তাঁকে একজন বিশেষ ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মনে করে তাঁকে মুক্ত করে দেন।

১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে, বর্তমান ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের করতারপুর নামক স্থানে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। কথিত আছে, একদিন নানক তাঁর মুসলমান বন্ধু মারকানার সাথে বাইন নদীতে স্নান করতে গিয়ে ডুব দিয়ে হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নাই।

এর তিনদিন পর নানক সবার সামনে উপস্থিত হয়ে বলেন, 'আমি ঈশ্বরের দেখা পেয়েছি, তিনি আমাকে তাঁর প্রেরিত গুরু হিসাবে উল্লেখ করেছেন'। 

 সূত্র :
ভারতের ইতিহাস। অতুলচন্দ্র দাস, প্রণব কুমার।
 http://www.banglapedia.org/

http://www.gurpuri.com/gurpuri/historical-gurdwaras.html