Friday, November 25, 2022

Post # 1082 Bengali Amarchitra Katha 270

                                                  ডাউনলোড করুন

 আজ আমার প্রিয় একটি কমিকস্‌ পোস্ট করলাম , বেশ মনে আছে ছোটবেলায় আমরা ভাই রা এই গল্পের কুঁড়ে ভালুক টির সংলাপ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম। এরপর একদিন কালের নিয়মে আমিও শোলার টুপি পরে বিয়ে করলাম ... তারপর আমার স্ত্রী কে ডায়লগ দিতাম খুসি করার জন্য যে - পৃথিবীর একমাত্র একজনের রান্না থেকেই এমন চমৎকার গন্ধ বেরয় ...ইত্যাদি ইত্যাদি ।। 



গল্প শোনার যতো মজা ,গল্প বানানোর মজা তার থেকে কম নয় । আর এই বানানো গল্পটি যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে,এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় উড়ে চলে – তার মজাও কম নয় । একবার সে পোশাক বদলায়,আরেক বার তার মুখের কথায় নতুন বাতাস লাগে । তারপর আবার নতুন কেনা জামা কাপড় পরে এ যেন আরেক নতুন মানুষ .........











 

Thursday, November 24, 2022

Post # 1081 Bengali Amarchitra Katha 269

                                                                       ডাউনলোড করুন
 
 
 
 আজ আপনাদের প্রিয় ব্লগে থাকছে জাতকের আর একটি কাহিনী ।

জাতক কাহিনী: গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী নিয়ে রচিত এক অসাধারণ সাহিত্যকর্ম

পঞ্চতন্ত্র, ঈশপের গল্পের মতোই জাতকের গল্পগুলো অসাধারণ সাহিত্যরসে ভরপুর। জাতকের কাহিনীগুলো বিভিন্ন বয়সী পাঠকদের কাছে আজও সমান জনপ্রিয়। তাই গল্পগুলো এখন আর বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কমিকের বইয়ে বা কখনও অ্যানিমেশন ছবিতে জীবন্ত হয়ে আছে। জাতকের কাহিনীগুলো এখনও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। 

জাতক কী?

‘জাতক’ শব্দের অর্থ জন্মগ্রহণকারী। জাতক হলো গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন জন্মের কাহিনী রচিত গল্প সঙ্কলন। শোনা যায়, বুদ্ধদেব নিজেই জাতকের কাহিনীগুলো শুনিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের পূর্বজন্মের নানা কাহিনী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জাতকের ৫৪৭টি গল্প। বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম বুদ্ধ তার অতীত জীবনের কথা স্মরণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি শিষ্যদের সাথে ধর্মালোচনার সময় প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তার পূর্বজন্মের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করতেন। সেসব ঘটনার সঙ্কলনই জাতক সাহিত্য হিসেবে পরিচিত। 

বুদ্ধদেবের পূর্বজন্মের নানা কাহিনী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জাতকের গল্প;

পালি ভাষায় জাতকের এই কাহিনীগুলোকে বলা হয় ‘জাতকত্থ বন্ননা’।  ধারণা করা হয়, সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য যখন সিংহল পরিভ্রমণ করেন, তখন শিষ্যদের জ্ঞানদানের জন্য তার সাথে ছিল জাতকের কাহিনীগুলো। সেই মূল গ্রন্থটি এখন বিলুপ্ত। সিংহলি ভাষায় যে জাতক প্রচলিত আছে, বর্তমানের ‘জাতকমালা’ তারই অনুবাদ বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকের মতে, ‘জাতক’ হলো পৃথিবীর সমস্ত ছোট গল্পের উৎস।

জাতকের সময়

জাতক গল্পের অধিকাংশই প্রাক-বুদ্ধ যুগের। পঞ্চতন্ত্রসহ বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্কলনেও এইসব কাহিনীর কিছু ‍কিছু পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বাইরেও জাতকের বেশ কিছু কাহিনীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মানবজাতির জ্ঞান ও নৈতিকতা অর্জনের জন্য জাতক কাহিনীগুলো রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। জাতকের এই গল্পগুলো দীর্ঘকাল গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি থেকে স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল।

জাতকের বিভিন্ন কাহিনীর চিত্ররূপ স্থান পেয়েছে শ্রীলঙ্কার এক বৌদ্ধ বিহারে;

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি কালে জাতক গ্রন্থিত হয়। পালি ভাষাতেই জাতকের গল্পগুলো লিখিত হয়েছিল। বুদ্ধঘোষ রচিত জাতকত্থ বণ্ণনা নামক গ্রন্থে ৫৪৭টি জাতক কাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত জাতকের কাহিনীগুলো ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়। পরবর্তীকালে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হয়। বাংলা ভাষায় জাতকের কাহিনীগুলো অনুবাদ করেন ঈশান চন্দ্র ঘোষ।

পঞ্চতন্ত্র, ঈশপের গল্পের মতোই জাতকের কাহিনীও সবধরনের পাঠকের মাঝে সমান জনপ্রিয়;

বাংলা ভাষায় রচিত জাতকের গল্প সঙ্কলনেও ৫৪৭টি জাতক কাহিনী স্থান পায়। কিন্তু ত্রিপিটকের সূত্তপিটক মতে, বুদ্ধদেব ৫৫০ বার জন্ম নিয়েছিলেন। সে হিসেবে জাতক সংখ্যা ৫৫০টি হওয়া উচিত। কিন্তু জাতকের তিনটি কাহিনী সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের মতে, জাতকে যে ৫৪৭টি গল্প আছে তার অনেকগুলোই পরবর্তী সময়ে সংযোজিত হয়েছে। তাই কোন জাতকগুলো প্রাচীনতম অর্থাৎ বুদ্ধেরই বলা, তা চিহ্নিত করা খুব কঠিন। তবে গবেষকগণ কিছু কিছু গল্পের ভাব ও ভাষা বিচার করে কয়েকটি কাহিনীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।

জাতক গল্পের মূল বিষয়বস্তু

বুদ্ধদেব নির্বাণ লাভ করার অল্প কিছুদিন পর থেকেই তার অনুগামীরা জাতকের কাহিনী শোনাতেন। এসব কাহিনী তারাই চিরস্মরণীয় করার ব্যবস্থা করেন। আত্মজীবনীমূলক এই কাহিনীগুলোর নৈতিক মূল্য রয়েছে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে। গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, বৈশিষ্ট্য এবং পরিস্থিতি জাতকে বর্ণিত কাহিনীগুলো দিয়ে আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। জাতকের গল্পে তিনটি বিষয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে একটি জাতক গল্পকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়।

জাতকের প্রতিটি কাহিনীতেই পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্মের কথা বলা হয়েছে;

প্রথম অংশে, গৌতম বুদ্ধ গল্পটি কোথায়, কখন, কাকে বলেছেন, তার নির্দেশনা থাকে। গল্পের এ ধরনের ভূমিকাকে প্রত্যুৎপন্ন বস্তু বলা হয়। গল্পের দ্বিতীয় অংশে অতীত জন্ম পটভূমিকা তুলে ধরে বুদ্ধ জাতকটি তার অনুসারীদের বলে থাকেন। এটি গল্পের মূল আখ্যান। গল্পের এ অংশকে বলা হয় অতীত বস্তু বা মূল বিষয়বস্তু। গল্পের শেষ অংশে অতীত জীবনের সাথে বর্তমান জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। এ অংশকে বলা হয় সমাধান তত্ত্ব।

গল্পে জাতকের যেসব নাম পাওয়া যায়

জাতকের গল্পগুলো বুদ্ধদেব তার পূর্বের জন্মগুলোতে কখনও মানুষ, কখনও বা পশু, আবার কখনও পাখি হয়ে জন্মেছেন। পূর্বজন্মের এসব কাহিনী নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে জাতক। প্রচলিত গল্পগুলোতে আর যেসব চরিত্র পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে অগস্ত্য, অপুত্রক, অধিসহ্য, শ্রেষ্ঠী, আয়ো, ভদ্রবর্ণীয়, ব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ, বুদ্ধবোধি, চন্দ্রসূর্য, দশরথ, গঙ্গাপাল, হংস, হস্তী, কাক, কপি, ক্ষান্তি, কাল্মষ পিন্ডি, কুম্ভ, কুশ, কিন্নর, মহাবোধি, মহাকপি, মহিষ, মৈত্রীবল, মৎস্যমৃগ, মধ্যদেবীয়, পদ্মাবতী, রুরু, শত্রু, শারভ, শশ, শতপত্র, শিবি, সুভাস, সুপারগ, সূতসোম, শ্যাম, উন্মাদয়ন্তী, বানর উল্লেখযোগ্য।

নীতিবোধের অনুপ্রেরণা থেকে রচিত হয়েছে জাতক কাহিনী

জাতকের কাহিনীগুলো মানুষের মধ্যে মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতা, সৌহার্দ্যের মতো সম্পর্কগুলো গড়ে তুলেতে যেমন উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি দয়াবান, সৎ ,আদর্শবান ও নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে ওঠার মতো নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। পরমতসহিষ্ণু ও পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়।

জাতকের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিকস;

সাহিত্য হিসাবেও জাতকের গল্পগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর গল্পের গঠন এবং উপস্থাপনের ভঙ্গিমার কারণে সব বয়সী পাঠকদের কাছে জাতকের কাহিনীগুলো অবশ্যই সুখপাঠ্য। 

শোনা যাক একটি জাতক কাহিনী

জাতকের বিভিন্ন কাহিনী পুনর্জন্মের সূত্রে গ্রথিত, যে পুনর্জন্মের পরিসমাপ্তি ঘটেছে বুদ্ধদেবের নির্বাণলাভের মাধ্যমে। পুনর্জন্ম কেন, তা ব্যাখ্যা করা যায় বুদ্ধদেবের নিজের জীবন ও লক্ষ্য দিয়ে। জাতকের প্রতিটি কাহিনীতেই পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্মের কথা বলা হয়েছে। সেই সারমেয় বা কুকুরের গল্পটা ধরা যাক। এই গল্পটাও জাতকের আর পাঁচটা গল্পের মতোই নীতিকাহিনী।

কুকুরটি ছিল গৃহহীন। পথেঘাটেই ছিল তার বাস। জাতকের এই কাহিনী থেকে জানা যায়, একবার বুদ্ধদেবের এরকম জন্ম হয়েছিল। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল কুকুরটির। এই চরিত্রগুণেই সে একদিন রাস্তার সব কুকুরদের নেতা হয়ে যায়। কোনো একটি ঘটনার জন্য রাজার বিষনজর পড়েছিল রাস্তার কুকুরগুলোর ওপর। আর তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব কুকুরদের দলনেতা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল।

জাতকে বিভিন্ন গল্পের চরিত্র নিয়ে তৈরি হওয়া বইয়ের প্রচ্ছদ;

রাজার রথের জন্য যে ঘোড়ার সাজ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছিল। রাতভর বৃষ্টিতে সাজ একেবারে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সাজের চামড়ার অংশটুকু হয়ে গিয়েছিল নরম আর সুসিদ্ধ। এক ঝাঁক শিকারি কুকুর ছিল রাজার। চামড়ার সাজ টুকরো-টুকরো করে সেই শিকারি কুকুরের দল ভোজনপর্ব সেরেছিল।

খবর গেল রাজার কাছে। কিন্তু প্রাসাদের ভৃত্যরা জানালো, রাস্তার কুকুরগুলো পয়ঃপ্রণালী দিয়ে প্রাঙ্গণে ঢুকে চামড়ার সাজ খেয়েছে। রাজা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, আদেশ দিলেন, শহরের সমস্ত কুকুরকে নিধন করতে হবে। ভীতসন্ত্রস্ত ক্ষুদ্ধ কুকুরের দল ছুটে এলো সেই গৃহহীন কুকুরের কাছে। সেই কুকুর তার বিক্ষুব্ধ অনুগামীদের শান্ত করলো এবং প্রাসাদের পথে রওনা হলো।

সবসময় সত্যের ওপর ভরসা রাখার সহজ পথটি অনুসরণ করতো কুকুরটি। আর সেই সত্যের জোরেই সে পৌঁছে গেল রাজার কাছে। পথে কোনো নিপীড়নের শিকার হতে হলো না তাকে। রাজাকে বুঝিয়ে বললো সে। কুকুরটি রাজাকে তার নিজের শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর পরামর্শ দিল। রাজা সেইমতো আদেশ দিলেন। রাজার শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর সাথে-সাথে বমি করলো কুকুরের দল। বেরিয়ে এলো চামড়ার সব টুকরো।

কুকুরটি প্রমাণ করলো, তার অনুগামীরা একেবারেই নির্দোষ। ভবঘুরে কুকুরটির জ্ঞানবুদ্ধির পরিচয় পেয়ে রাজা তারই খাবার থেকে কুকুরটিকে নিয়মিত ভাগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। কোনো প্রাণীকেই কখনও হত্যা করা হবে না, কুকুরটির এই অনুরোধ রাজা মঞ্জুর করলেন। এই কাহিনীর প্রধান চরিত্রটি যে স্বয়ং বুদ্ধদেব, তা আগেই বলা হয়েছে। আর রাজা হলেন তারই প্রধান শিষ্য আনন্দ।

(১)
গৌতম বুদ্ধের সময়কাল আনুমানিক ৫৬৩ – ৪৮৩
খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। কিন্তু বৌদ্ধ কাহিনীর মতে, তিনি এর
আগেও বহু বার মানুষ অথবা জীবজন্তুর রূপে পৃথিবীতে
জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং প্রত্যেকবারই পরম জ্ঞান
অর্থাৎ বোধি লাভ করে বোধিসত্ত্ব হয়েছেন। সেই অতীত
বুদ্ধ’দের জীবনের থেকে নেওয়া শিক্ষামূলক কাহিনী-
সংগ্রহ, যেগুলো জাতিস্মর বলে গৌতম বুদ্ধ এই জীবনে
শিষ্যদের শুনিয়েছেন, তার সংকলন হল জাতক ।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের ১০০ বছর পরে, ৩৭০ খ্রী.পূ.র
আশপাশে বৈশালীতে দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে
প্রধান বৌদ্ধগ্রন্থগুলি (এবং সম্ভবত জাতকও) আলোচনা
ও সম্পাদনার মাধ্যমে বর্তমান রূপ নিয়েছিল। অতএব
বোঝা যাচ্ছে যে জাতক-কাহিনীগুলি অতি প্রাচীন
কালেই লিপিবদ্ধ হয়ে পড়ে – বুদ্ধের বলা মূল কাহিনীর
সঙ্গে পরবর্তী সময়ে কিছু যোগ-বিয়োগ হয়ে থাকলেও
তা খুব বেশিদিন পরে নয়। অবশ্য কোন জাতকগুলি
প্রাচীনতম, বুদ্ধেরই বলা, আর কোনগুলি পরবর্তী
সংযোজন, তা বলা কঠিন।
সমসাময়িক অনেক লোকগাথা, বেদ-উপনিষদ, এমনকি
মহাভারত-রামায়ণের গল্প থেকেও উপাদান নিয়ে
সেগুলিকে শিক্ষামূলক রূপ দিয়ে এই জাতকগুলি লেখা।
আবার জাতকের কাহিনী থেকে নিয়ে পরে লেখা
হয়েছে পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্যেও
এই আখ্যান ছড়িয়ে পড়েছিল – ঈশপের গল্প, রাজা
সলোমনের গল্প, আরব্য রজনীর গল্প, বাইবেলের গল্পেও।
(২)
জাতকের প্রাচীনত্বের কথা এই বিষয়ে নিশ্চিত হবার
জন্য দরকারি, যে এই কাহিনী বাস্তবিকই বুদ্ধের সময়ের
এবং তার কয়েক শতাব্দী আগে-পরের সমাজচিত্র এবং
মানসিকতা তুলে ধরে। যাঁরা নীতিনির্দেশক, তাঁদের
ধ্যানধারণারও একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এ থেকে। তা
চলুন, জাতকের দর্পণে দেখি, আজ থেকে দু-আড়াই হাজার
বছর আগে, যীশু বা মহম্মদেরও পূর্বে, ভারতে মহিলাদের
কেমন সম্মান করা হত।
সপ্তম অংশ অর্থাৎ স্ত্রীবর্গে ৬১ থেকে ৭০ এই দশখানা
জাতক আছে। এর মধ্যে কেবল প্রথম সাতটিরই মূল
উপজীব্য হল রমণী। সেগুলোই এক এক করে দেখি।
প্রথমটি হল অশাতমন্ত্র-জাতক (অশাত = অমঙ্গল)। এর শুরু
হচ্ছে এইভাবে, “শাস্তা জেতবনে জনৈক উৎকন্ঠিত
ভিক্ষুকে … বলিলেন, ‘দেখ, রমণীরা কামপরায়ণা, অসতী,
হেয়া ও নীচমনা। তুমি এইরূপ জঘন্যপ্রকৃতি নারীর জন্য
কেন উৎকণ্ঠিত হইলে?’ ” আহা, বিক্ষুব্ধ চিত্তকে সৎপথে
আনার জন্য কী চমৎকার ভাষণ!
অবাস্তব গল্পটি সংক্ষেপে এইরকম। পুরাকালে
বারাণসীতে বোধিসত্ত্ব এক বিখ্যাত গুরু হিসাবে
জন্মেছিলেন। এক ব্রাহ্মণসন্তান তাঁর থেকে শিক্ষা
নিয়ে বাড়ি ফিরে সংসারধর্ম শুরু করতে গেলে তার মা-
বাবার মনে হয়, সংসার অনর্থের মূল, ছেলেকে সন্ন্যাস
নেওয়াতে হবে। এবং তার মনে বৈরাগ্য জন্মাতে হবে
স্ত্রীচরিত্রের দোষ দেখিয়ে। তখন তার মা তাকে বলে,
‘বাছা, তুমি অনেক বিদ্যা শিখলেও অশাতমন্ত্র নিশ্চয়ই
শেখ নি। যাও, গুরুর কাছে ফিরে তা শিখে এস।’
বোধিসত্ত্ব শুনে বুঝলেন, অশাতমন্ত্র নামে বাস্তবে তো
কোনো মন্ত্র নেই, নিশ্চয়ই এর মা তাকে স্ত্রীচরিত্রের
দোষ শেখাতে চান। তা তখন তাঁর ১২০ বছর বয়সী বিধবা
মা তাঁর কুটিরেই বাস করতেন, বৃদ্ধা জরাগ্রস্তা
দৃষ্টিশক্তিহীনা মাকে তিনি নিজে হাতেই সেবাযত্ন
করতেন। তখন শিষ্যকে তাঁর সেবার ভার দিলেন, আর
বললেন, নিয়মিত তাঁকে সেবা করার সময় তাঁর রূপের
প্রশংসা করবে। মা যা বলেন, শুনে এসে আমাকে বলবে।
“স্ত্রীজাতি এতই অসতী, হেয়া ও নীচাশয়া যে এত
অধিকবয়স্কা বৃদ্ধাও কামভাবের বশবর্তী হইয়া” সেই
তরুণের প্রতি ঢলে পড়লেন, এবং বললেন, যে আমিও
তোমার প্রতি আসক্ত হয়েছি, কিন্তু আমার ছেলে খুব
কঠোর স্বভাবের, তাই তাকে আমার ভয় হয় – তুমি তাকে
মেরে ফেল, তাহলেই আমাদের মিলন হবে। শিষ্য গুরুকে
হত্যা করতে অস্বীকার করলে তিনি বললেন, তুমি ব্যবস্থা
কর, আমি নিজে হাতেই তাকে বধ করব।
এরপর বোধিসত্ত্ব নিজের বিছানায় নিজের এক কাঠের
মূর্তি শুইয়ে শিষ্যকে বললেন, সে বৃদ্ধাকে গিয়ে খবর
দিল। বৃদ্ধা কাঁপতে কাঁপতেই কুঠার হাতে গিয়ে তাতে
আঘাত করলেন, কিন্তু কাঠের শব্দে বুঝতে পারলেন যে
তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তখনই তাঁর মৃত্যু হল। এই ঘটনা
দেখিয়ে বোধিসত্ত্ব শিষ্যকে ব্যাখ্যা করলেন, যে
নারীজাতির অসতীত্বই অশাতমন্ত্র।
(৩)
এর পর আসে অন্ধভূত-জাতক । এর থীম হল, “রমণীরা
নিতান্ত অরক্ষণীয়া”, এবং গল্প এইরকম – প্রাচীনকালে
বোধিসত্ত্ব এক রাজা ছিলেন, এবং তাঁর পুরোহিতের
সঙ্গে নিয়মিত পাশা খেলতেন। খেলার সময় একটি গান
গেয়ে চাল দিতেন, এবং গানটির সত্যতা-বলে প্রতিবারই
জিততেন। সেটির অংশবিশেষ:
“পাপাচার পরায়ণ জানিবে রমণীগণ,
স্বভাব তাদের এই নাহিক সংশয়;
যখনই সুবিধা পায়, কুপথে ছুটিয়া যায়,
ধর্ম্মে মতি তাহাদের কভু নাহি হয়।”
তো এই শুনে পুরোহিত প্ল্যান কষে, কখনও অন্য পুরুষ দেখে
নাই এমন একটি সদ্যোজাত কন্যা এক দুঃখিনী নারীর
থেকে কিনে এনে তাকে প্রতিপালন করতে লাগলেন,
এবং বয়সে পড়তেই তাকে বিয়ে করলেন। এরপর থেকে
রাজা ওই গানটি গাইলেই পুরোহিত বলতেন, “কেবল
আমার গৃহিণী ছাড়া।” অতএব এবার থেকে তাঁরই জয় হত।
এই দেখে রাজা (তিনি কিন্তু বোধিসত্ত্ব, খেয়াল
রাখবেন, তাও প্রত্যেকবারই এই কাজ করান) এক ধূর্তকে
টাকা দিয়ে বললেন এই নারীর চরিত্রনাশ করতে। সে ওই
বাড়ির এক দাসীর মন ভিজিয়ে তার মাথার ফুলের
ঝুড়িতে লুকিয়ে (!) ওই বাসায় ঢুকে পুরোহিতের স্ত্রীর
সঙ্গে প্রমোদে লিপ্ত হল। পরে ছল করে ব্রাহ্মণের চোখ
বেঁধে দুজনে তাঁকে প্রচুর পেটাল।
এরপর তিনি প্রাসাদে পাশা খেলতে গিয়ে ওই কথা
বলেও হেরে গেলেন। তখন রাজা তাঁকে জ্ঞানদান করে
বললেন, তোমার বউয়েরও চরিত্রটি গেছে। (নিজেই
একাজ করিয়েছেন সেটা হয়ত চেপে গেলেন।)
পুরোহিত যখন বাসায় ফিরে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা
করলেন, তখন সে প্ল্যান অনুযায়ী দাবি করল, আমি সতী,
আসুন সবার সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছি। আর সেই লোক
ভিড়ে লুকিয়ে ছিল, দৌড়ে এসে মহিলার হাত ধরে বলল,
না না, এই পুরোহিতের মাথা খারাপ, আপনি এমন করবেন
না। তখন বউ এই অজুহাত দেখিয়ে বলল, এর আগে কোনো
পরপুরুষ আমায় ছোঁয় নি, কিন্তু এই যে এখন আমার হাত ধরে
ফেলল, আমি তো আর অগ্নিপরীক্ষা দিতে পারব না। তবুও
আপনার সন্দেহ মিথ্যা।
তখন এতে না ভুলে ব্রাহ্মণ তাকে বাড়ী থেকে দূর করে
দিলেন।
(৪)
এর পরের তক্ক-জাতক এর মরাল হল, “স্ত্রীজাতি অকৃতজ্ঞ
ও মিত্রদ্রোহী”। তার গল্প –
বারাণসীতে এক ব্যবসায়ীর এক বদমেজাজি মেয়ে ছিল,
নাম দুষ্টকুমারী। সে তার দাসীদের খুব অত্যাচার করত।
তাই একদিন গঙ্গায় নৌকা করে বেড়াবার সময় দারুণ ঝড়
উঠলে দাসীরা তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে ফিরে এসে
বলে, কুমারী ডুবে গেছেন।
এদিকে বোধিসত্ত্ব নদীতীরে কুটির বানিয়ে তপস্যা
করতেন, তিনি মেয়ের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে
আনলেন। মেয়েটি তাঁকে দেখে ভাবল, “প্রণয়পাশে আবদ্ধ
করিয়া এই তপস্বীর চরিত্রভ্রংশ ঘটাইতে হইবে।” তার
প্রেম-ছলনায় ভুলে তিনি সত্যিই সাধনা ছেড়েছুড়ে
তাকে বিয়ে করে এক গ্রামে গিয়ে বসত করলেন। কিন্তু
অচিরেই তাঁর অনুপস্থিতিতে গ্রামে ডাকাত পড়ল,
ডাকাতসর্দার মেয়েটিকে লুঠ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে
করল।
কুমারী ভাবল, আমি এখানে খুবই সুখে আছি, কিন্তু আমার
আগের স্বামী আমায় খুঁজতে এখানে চলে এলে
গণ্ডগোলের সম্ভাবনা। তাই তাঁকে এখানে আনিয়ে খুন
করাতে হবে। সে একজনকে দিয়ে খবর পাঠাল,
বোধিসত্ত্ব সেখানে এলে তাঁকে খাইয়েদাইয়ে লুকিয়ে
রাখল, বলল আমরা রাত্রে পালাব। এদিকে সন্ধ্যায়
ডাকাতসর্দার এলে সে তাঁকে ধরিয়ে দিল, অনেক
মেরেধরে সর্দার তাঁকে ঝুলিয়ে রাখল।
সারারাত তিনি “অহো! কি নিষ্ঠুরা, কি অকৃতজ্ঞা, …”
বলে আর্তনাদ করতে লাগলেন। সেই শুনে সকালে সর্দার
ভাবল, এ লোক “মাগো বাবাগো” না বলে এইসব বলে
কেন? ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি সব শোনালেন।
তাতে সেও নারীজাতির সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে
কুমারীকে দুটুকরো করে ফেলল, আর বোধিসত্ত্বের সাথে
মিলে তপস্যা করতে চলে গেল।
(৫)
পরেরটি হল দুরাজান (দুর্জ্ঞেয়)-জাতক । এই ছোট্ট
গল্পটার বক্তব্য হল, “রমণীরা যেদিন দুষ্কার্য্য করে
সেদিন স্বামীর অনুবর্ত্তন করে, দাসীর ন্যায় বিনীত
হইয়া চলে; কিন্তু যেদিন দুষ্কার্য্য করে না, সেদিন
তাহারা মদোদ্ধতা হইয়া স্বামীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।”
এর মধ্যে একটি কবিতা আছে –
“ভাল যদি বাসে নারী, হইও না হৃষ্ট তায়;
যদি ভাল নাহি বাসে, তাতেই কি আসে যায়?
নারীর চরিত্র বুঝে হেন সাধ্য আছে কার?
বারিমাঝে চলে মাছ, কে দেখিবে পথ তার?”
তার পরের ছোট গল্পটি হল অনভিরতি-জাতক । এর বক্তব্য
এর কবিতাটিতেই স্পষ্ট –
“নদী, রাজপথ, পানের আগার উৎস, সভাস্থল আর,
এই পঞ্চস্থানে অবাধে সকলে ভুঞ্জে সম অধিকার।
তেমনি রমণী ভোগ্যা সকলের, কুপথে তাহার মন;
চরিত্রস্খলন দেখিলে তাহার, রোধে না পণ্ডিত জন।”
তার পরে মৃদুলক্ষণা-জাতক । এটিতে কামভাব-সম্পর্কে
বলা হয়েছে।
বোধিসত্ত্ব তপস্বী হিসাবে এক রাজার কাছে ভিক্ষা
করতে এলে রাজা রাণীকে তাঁর পরিচর্যার ভার দেন।
কিন্তু মৃদুলক্ষণা নামের ওই রাণীকে দেখে তাঁর মধ্যে
কামভাবের উদয় হয়। এই শুনের রাজা তাঁকে রাণীকেই
দান করে দেন। কিন্তু এরপর রাণীর কথায় তিনি রাজার
থেকে পরপর বাসগৃহ, শয্যা, সজ্জা ইত্যাদি চেয়ে আনতে
লাগলেন। অবশেষে সেই বিছানার রাণীর সঙ্গে শুলে’পর
তিনি যখন বোধিসত্ত্বের দাড়ি ধরে টেনে “তুমি না
শ্রমণ?” বলে প্রশ্ন করেন, তখন তাঁর চৈতন্য হয়, তিনি
মহিলাদের অনন্ত চাহিদার কথা ভেবে রাণীকে ফিরিয়ে
দিয়ে আবার হিমালয়ে ফিরে যান।
(৬)
উৎসঙ্গ-জাতক গল্পটা বরং অন্যরকম লেগেছে। এর প্রথম
অংশে বলা হচ্ছে, “স্বামীই নারীদিগের প্রকৃত
আচ্ছাদন।” –
“নগ্না জলহীনা নদী, নগ্ন অরাজক দেশ,
বিধবা রমণী নগ্না, কি বলিব তাহার ক্লেশ?”
কিন্তু গল্পটার মরাল একটু আলাদা। বোধিসত্ত্ব যখন
কোশল রাজ্যের রাজা, তখন এই নারীর অনুপস্থিতিতে
তার স্বামী-পুত্র-ভ্রাতাকে রাজপেয়াদারা চোর ভেবে
ধরে নিয়ে আসে। তখন সেই মহিলা রাজার কাছে গিয়ে
“আমায় আচ্ছাদন দাও” বলে কান্নাকাটি করে। রাজার
আদেশে যখন লোকে তাকে একটি কাপড় দিতে যায়, তখন
সে ওই কবিতাটি বলে এবং ব্যাখ্যা করে, যা শুনে রাজা
খুব প্রসন্ন হন।
তখন তিনি বলেন, এই তিনজনের একজনের প্রাণ ভিক্ষা
দিতে পারি, কাকে তা তুমি বেছে নাও। সে তখন বলে,
স্বামী গেলে আবার স্বামী পাব, সন্তানও আবার হবে,
কিন্তু আমার বাবা-মা মারা গেছেন, তাই ভাই গেলে তো
ভাই আর পাব না। আপনি ওকেই মুক্তি দিন। এই
থিয়োরিতে চমৎকৃত হয়ে রাজা তিনজনকেই মুক্তি দেন।
(৭)
গল্পগুলো পড়ে আমি যা বুঝলাম, তা এই স্ত্রীবর্গের
শুরুতে ঈশান ঘোষও বলছেন, “এই সকল উপাখ্যানে
নারীজাতির প্রতি উৎকট ঘৃণা প্রদর্শিত হইয়াছে।
কামিনী ও কাঞ্চনের অপকারিশক্তি সম্বন্ধে পরষ্পর
বিবদমান ধর্ম্মমতেরও ঐক্য দেখা যায় বটে, কিন্তু তাহা
বলিয়া অন্য কোন শাস্ত্রকার সমগ্র নারী সমাজকে এত
ঘৃণার্হ বলিয়া নির্দ্দেশ করেন নাই।”
এর পর খানিক অ্যাপলোজিস্ট ভাবে তিনি বলেছেন,
পরের দিকে বুদ্ধদেব কিন্তু নারীজাতির প্রতি অনেক
উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। ভিক্ষুণী সম্প্রদায়
প্রতিষ্ঠা, অনেক উপাসিকাকে বিশেষ সম্মান দেওয়া,
ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই সে নিয়েও একটু খোঁজ করা গেল।
গৌতম বুদ্ধের মাসী, বিমাতা এবং ধাত্রী,
মহাপ্রজাপতি গৌতমী যখন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে
চেয়েছিলেন, তখন বুদ্ধ প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন,
কারণ মহিলারা বিদ্যাবুদ্ধিতে পুরুষদের সমতুল্য নয়, তারা
সংঘে এসে পড়লে শৃঙ্খলার সমস্যা ঘটবে, ইত্যাদি
ইত্যাদি। কিন্তু পরে প্রিয় শিষ্য আনন্দের উপরোধে বুদ্ধ
সম্মত হন তাঁদের গ্রহণ করতে। অতএব এই সম্প্রদায়
প্রতিষ্ঠাও খুব আগ্রহের সঙ্গে করেন নি তিনি।
তাই ভিক্ষুণীদের জন্য আরো বেশি নিয়মের ব্যবস্থা করা
হয়েছে এই ধর্মে। (এ নিয়ে মতভেদ আছে, যে নিয়মগুলি
বুদ্ধেরই বানানো, নাকি পরবর্তীকালের।) ভিক্ষুদের জন্য
বিনয়পিটকে চারটি ‘বিনয়’ বা নিয়ম আছে, যাতে বলা
হয়েছে, চুরি ইত্যাদি কী কী অন্যায় কাজ করলে তাদের
সঙ্ঘ থেকে বহিষ্কার করা হবে। ভিক্ষুণীদের জন্য কিন্তু
আছে উপরি আরো চারটি; যেমন, কোনো কামাতুর পুরুষ
তাঁকে স্পর্শ করলেও তাঁদের ধর্ম থেকে পতন হবে!
অতএব কাম-সংক্রান্ত ফ্যাসাদ আসতে পারে অনুমান
করেই তাদের আরও কঠোর শাসনে বেঁধে ফেলতে হবে,
কারণ নারীই কামভাব ইত্যাদি পাপের মূলে। তাহলে
বুদ্ধের দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্মের অনুশাসন, এবং আখ্যানগ্রন্থ
থেকে সে সময়ের বৌদ্ধ ধর্মে এবং সমাজে মহিলাদের
কেমন ‘সম্মানের’ চোখে দেখা হত তা ভালই বোঝা
যাচ্ছে।
(৮)
তবে কেউ বলতেই পারেন, জাতকে কি আর ভালো
মহিলাদের কথা নেই? তা আছে, ওই উৎসঙ্গ-জাতকই যেমন।
তবে, মহিলাদের প্রধান মর্যাদা দিয়ে কোনো জাতক
লেখা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না, ঈশানচন্দ্রও এমন
কিছু উল্লেখ করতে পারেন নি। তা ছাড়া, সবচেয়ে বড়
ব্যাপার এই যে, কোনো গল্পে একজন ভালো মহিলা
থাকলেও কিন্তু সেটাকে বিস্তার/জেনারেলাইজ করে
“রমণীরা নিতান্ত দয়াশীলা, গুণবতী” এরকম কিছু কখনই
বলা হয় নি, উল্টোটা বহুবার করা হলেও।
(৯)
লেখার পর, প্রায় আফটার’থট হিসাবেই মনে হল যে,
প্রাচীন হিন্দু সমাজে (বা অন্যত্রও) স্ত্রী নেহাত
বন্ধ্যা বা অসতী না হলে তাকে পরিত্যাগ করা বড়
নিন্দনীয় কাজ। অথচ এটাই একমাত্র পরিস্থিতি
যেখানে পতিব্রতা স্ত্রী, নাবালক সন্তান, বৃদ্ধ
পিতামাতা-কে ফেলে গটগটিয়ে চলে যাওয়া বরং
প্রশংসনীয় কাজ বলে বিবেচিত হয় – যখন কেউ
পরিবার-সমাজ ত্যাগ করে ‘সত্যের’ সন্ধানে সুদূর বনে
বা আশ্রমে তপস্যা করতে যায়। কী অদ্ভুত মিম!
আর এই মিমের বশবর্তী হলে যেহেতু প্রজননের পথ
একেবারে সংযমের তালাচাবি এঁটে বন্ধ করে দিতে
হয়, তাই এটা কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনের ঠিক
বিপরীতপন্থী! অথচ কি দ্রুত এই দর্শন সারা দুনিয়ার
মানুষের মনে বসত করে নিয়েছে!




 

Monday, November 21, 2022

Post # 1080 Bengali Amarchitra Katha 268

                                                                        ডাউনলোড করুন

           

শিবাজি ভোঁসলে, যিনি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ নামেই ছিলেন অধিক পরিচিত। বীর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতিই শুধু নয়, নেতৃত্ব ছিল তাঁর মজ্জাগত। শিবাজি সম্পর্কে কিছু তথ্য নীচে উল্লেখ করা হল।


ধর্মনিরপেক্ষ শাসক: যে সেক্যুলারিজমের কথা আজকাল বারবার বলা হয়, শিবাজি মহারাজ প্রকৃত অর্থেই ছিলেন সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। মুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলতেন। তাঁর রয়াল আর্মির দেড় লক্ষ সেনার মধ্যে ৬৬ হাজার ছিলেন মুসলিম। মানুষ হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক।

ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক: শিবাজিই প্রথম নৌবাহিনী থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। যে কারণে উপকূল অঞ্চলে দুর্গ তৈরি করে, আলাদা নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। উদ্দেশ্য ছিল, মহারাষ্ট্রের কঙ্কনের দিককে রক্ষা করা। অতীতের সাক্ষ্য বহন করে বিজয়দুর্গ, সিন্ধুদুর্গ-সহ কয়েকটি জায়গায় আজও তাঁর তৈরি সেই দুর্গগুলো রয়ে গিয়েছে।




মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান করতেন: মহিলাদের হেনস্থা বা তাঁদের ওপর কোনওরকম হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করতেন না। কঠোর হাতে তা দমনের পক্ষপাতী ছিলেন। অনেকের বিশ্বাস, মা জিজামাতার প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই তিনি মহিলাদের সম্মান করতে শিখেছিলেন। সেনাদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশ থাকত, একজন কোনও মহিলার ওপরও অত্যাচার করা চলবে না। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে, কঠোর শাস্তি হত।

অবরুদ্ধ পানহালা থেকে যেভাবে পালিয়েছিলেন: পানহালার দুর্গে শিবাজিকে আটক করে রেখেছিলেন সিদ্দি জৌহরের সেনারা। তাদের চোখে ধুলো দিতে বারবের শিবা নহভিকে তিনি কাজে লাগান। বারবেরকে দেখতে ছিল শিবাজির মতোই। এ জন্য দুটো পালকির ব্যবস্থা করেছিলেন। একটা পালকির মধ্যে ছিলেন বারবের। সিদ্দির সেনারা তাঁকেই ফলো করেন। অন্য পালকিতে চেপে দুর্গ থেকে পালিয়ে যান শিবাজি।

অনুগত আর্মির স্থপতিও শিবাজি: শিবাজির আগে তাঁর বাবা সাধারণ নাগরিক ও কৃষকদের নিয়েই যুদ্ধ করেছেন। যারা শুষ্ক মরশুমে, রাজার জন্য লড়াই করতেন। শিবাজিই প্রথম ডেডিকেটেড আর্মি তৈরি করেন। তাঁদের এ জন্য সারা বছর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাস গেলে বেতন দেওয়া হত।

আফজল খানের পরাজয়: আফজল খানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য শিবাজি নিজেই সময় চেয়েছিলেন। আদিল শাহ, খানের যিনি সেনাপতি, এ জন্য শর্ত আরোপ করেন। শর্ত অনুযায়ী একটি তরোয়াল আর ফুল ছাড়া সঙ্গে কিছু রাখা যাবে না। সেই মতো আয়োজন হয়। কিন্তু শিবাজির আশঙ্কা ছিল, তাঁর ওপর হামলা হতে পারে। যে কারণে, পোশাকের নীচে বর্ম পরেছিলেন। বাঁ-হাতের মধ্যে লুকনো ছিল বাঘনখও। আফজল খানের তরোয়াল তাঁর বিশেষ কিছু ক্ষতি করতে পারেনি। উলটো দিকে, আফজল খান বিদ্ধ হয়েছিলেন বাঘনখে।

গেরিলা যুদ্ধের প্রবক্তা: শিবাজিকে বলা হত পাহাড়ি ইঁদুর। তাঁর কারণ নিজের ভূমির ভূগোলটা তিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন। একই সঙ্গে গেরিলাযুদ্ধের প্রবক্তাও।

আগ্রা থেকে পালানো: চোখে ধুলো দিয়ে পালানোটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শিবাজি। আগ্রা থেকেও সে ভাবেই পালিয়েছিলেন শিবাজি। আগ্রায় ঔরঙ্গজেবের দরবারে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাঁকে। আফগান সেনাদের সঙ্গে লড়াই ছাড়া সেখান থেকে পালনোর রাস্তা ছিল না। এরই মধ্যে পরিকল্পনা করে আগ্রার মন্দিরে নিয়মিত মিষ্টি ও ফল পাঠানোর জন্য অনুমতি আদায় করেন শিবাজি। বড় বড় বাক্স ভরে মিষ্টি যেত। একদিন তেমনই একটি মিষ্টির বাক্সে ঢুকে, দুর্গ থেকে বেরিয়ে যান।

দয়ালু রাজা: অত্যন্ত দয়ালু হওয়ায় তাঁকে 'জনতা রাজা' বলে উল্লেখ করা হতো। এমনকী শত্রুপক্ষ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে, তিনি সেই দয়াই দখাতেন।

সর্বোপরি, রাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনেই ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে অনেক বেশি করে মনে রাখবে। তাঁর নিজের জন্য নয়, ভারতের জন্য লড়াই করতে তাঁর সাম্রাজ্যের প্রত্যটি মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন।