ব্লগে নিয়মিত পোস্ট পাচ্ছেন না মাণে এই না যে আমি ব্লগের কোন কাজ করছি না... ইন্দ্রজাল ১ -১০ পোস্ট করে ছিলাম পি ডি এফ করে এবার ১১ -১৬ হাই কয়ালিটি যতোটা সম্ভব করে পি ডি এফ এ করে দেওয়া হোল... আগের পোস্ট এ দিয়েছিলাম নতুন বই গুলি কোন লেবেল এ পাবেন , দয়া করে দেখে নিতে পারেন ।
আর যারা 'ফোন' বা 'ট্যাব' ব্যাবহার করছেন তাঁরা ব্লগ এ এসে আগে ''মবাইল ভিসিন'' থেকে ''ওয়েব ভিসন'' করে নিন , ও 'লেবেল' অনুসরন করুন ।
কি ভাবে করবেন ?
ব্লগের ডান দিকে একটি জায়গায় লেবেল লেখা আছে। তার নিচে পর পর নাম লেখা আছে, বাহাদুরের উপর ক্লিক করলে বাহাদুরের সব কমিকস্ খুলে যাবে । ঠিক একই রকম ভাবে বেতাল বা ফ্লাশ গর্ডন। আবার খণ্ড ২০ , ২১ বা ২৬ এর উপর ক্লিক করলে ঐ খণ্ডের সব বই খুলে যাবে। বা ১-৫০ উপর ক্লিক করলে সংখ্যা ১ থেকে ৫০ এর সব বই পাবেন। তা ছাড়া নারায়ণ দেবনাথ , ময়ূখ চৌধিরী বা তুষার চট্টপাধ্যায় দিলীপ দাস গৌতম কর্মকার সুব্রত গাঙ্গুলি তো আছেনই ।
খুব ই সহজ, শুধু লেবেল টি অনুসরন করতে হবে। আর একদম নিচে আছে হোম, হোমে এ গিয়ে Older Post এ ক্লিক করলে পর পর পেছতে থাকবেন।
প্রথম ছোট পাতা টির নিচে "ডাউনলোড করুন" লেখা লিংকে টি ক্লিক করুন । মেইন "মিডিয়া ফায়ার" লিংক খুলে যাবে.. ওখানে Down Load লেখার উপর ক্লিক করুন... ডাউনলোড সম্পন্ন হবে ।
ইন্দ্রজাল কমিকস্ আগে ১ -১০ পি ডি এফ ফাইল করে পোস্ট করে ছিলাম... গতকাল ১৭,২১,২৩,৪৯,৫২ পোস্ট করা হয়েছে... ৫২ নং নিয়ে অনেকেই 'রিপোর্ট' করছিলেন যে 'ফাইল' টিও 'কোরাপ্ট' আছে... ওটি নতুন করে পি ডি এফ করে দেওয়া হয়েছে ।
খুঁজে পেতে অসুবিধা হবে না, নতুন ফাইল গুলির লেবেল সামান্য পাল্টে দিলাম ১-৫০ এর বদলে নতুন গুলি ০০১-০৫০ মধ্যে পাবেন ও ৫১ - ১০০ যেটি ছিল সে গুলির নতুন ফাইল ০৫১ - ১০০ মধ্যে পাবেন ।
হিন্দুদের মতে গনেশ দেব সিদ্ধি বা সফলতার দেবতা ।গণেশ দেব
গণপতি ,গজানন, হেরম্ব ,বিনায়ক প্রভৃতি নামে পরিচিত ।গণেশের শরীর মানুষের
মত , তার ওপর গজ বা হাতির মাথা বসানো। এইজন্য গণেশকে গজানন বলা হয় ।তার চার
হাত তিন চোখ ।লম্বা তার উদর ।স্থুল বা মোটা তার শরীর। তিনি একটু বেঁটে
।গণেশের বাহন ইঁদুর ।দেবতা হিসেবে গণেশ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ।তিনি সকল
বাধা বিপত্তি দূর করে ।মানুষের সকল প্রচেষ্টাই সফলতা দান করেন ।এই কারণে যে
কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে দেবতা গণেশের পূজা করা হয়। হিন্দু
ধর্মাবলম্বীরা নববর্ষে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সিদ্ধিদাতা হিসেবে
গণেশের পূজা করেন গণেশের পূজা পদ্ধতি- দুর্গাপূজা ও বাসন্তী পূজার সময় এবং
ভদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থ তিথিতে বিশেষভাবে গনেশ দেবের পূজা
করা হয় ।এই ছাড়া যে কোন পূজা করার আগে গনেশ দেবের পূজা করার রীতি রয়েছে
।পূজা যথাযথভাবে সমাপ্ত করার জন্য পূজার উপকরণ সংগ্রহ করতে হয় ।পূজা করার
বিধি সমূহ অনুসরন করতে হয়।
গণেশ পূজায় তুলসী পাতা নিষিদ্ধ। গণেশ দেবেরপ্রণাম মন্ত্র- ওঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননম বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণামাম্যহম সরলার্থ—যিনি এক দাঁতবিশিষ্ট যার শরীর বিশাল লম্বা উদর যিনি গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী,সেই হেরম্বদেব গণেশকে প্রণাম জানাই।
গনেশ দেব কে সিদ্ধিদাতা বলা হয় ।এই সিদ্ধি শব্দটির অর্থ সাফল্য
পারদর্শিতা বা কৃতকার্যতা। আর সিদ্ধিদাতা শব্দটির অর্থ সফলতা দায়ক। গনেশ
দেব আমাদের সফলতা দান এর দেবতা। আমরা বিদ্যালাভ ব্যবসা সহ সকল কর্মে সফলতা
অর্জনের প্রত্যাশায় গনেশ দেবের পূজা করি ।এই পূজার শিক্ষা হলো ভক্তিতে
সাফল্য লাভ। এই ভক্তির মূলে রয়েছে শুদ্ধতা একাগ্রতা সংযম ও শৃঙ্খলা ।তাই
আমাদের জীবনের সাফল্য পারদর্শিতা বা কৃতকর্মে প্রয়োজন শুদ্ধমনে মঙ্গল
কামনা, কর্মে একাগ্রতা ধৈর্য এবং শৃঙ্খলা ।যারা গনেশ দেবের এই শিক্ষা নিজ
কর্মের প্রয়োগ করেন তারাই সাফল্য লাভ করেন। হিন্দু ধর্মালম্বী ব্যবসায়ীরা
বাংলা নববর্ষের প্রথম মাসের শুরুতেই গনেশ দেবের পূজা করেন ।এই দেবের
কৃপাতে ব্যবসা সফলতা অর্জিত হয় ।ভক্তিভরে আমরা এই দেবের পূজা করি।
বীরবলের অনেক গুলি বই অমর চিত্র কথায় প্রকাশ পেলেও ৮৭ নং বইটি বাংলায় সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি।
বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে দিলাম
গঙ্গার জন্মকাহিনি বিষয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে মতদ্বৈধ দৃষ্ট হয়। একটি কাহিনি অনুযায়ী ব্রহ্মারকমণ্ডলু এক নারীমূর্তির স্বরূপ প্রাপ্ত হয়। ইনিই গঙ্গা। বৈষ্ণব মতানুসারে, ব্রহ্মা তার কমণ্ডলুর জল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে বিষ্ণুর পদ ধৌত করেছিলেন। সেই থেকেই গঙ্গার জন্ম। তৃতীয় একটি মত অনুযায়ী, গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয় ও তার পত্নী মেনকার কন্যা এবং পার্বতীর ভগিনী। তবে প্রতিটি মতেই একথা স্বীকৃত যে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পবিত্র করে তাকে স্বর্গে উত্তীর্ণ করেন।
মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, রাজা সগর ষাট হাজার পুত্রের জনক হয়েছিলেন।
তিনি একবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করবে।দেবরাজ ইন্দ্র তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে যজ্ঞের
পবিত্র ঘোড়া অপহরণ করেন। সগর তার ষাট হাজার পুত্রকে অশ্বের অন্বষণে প্রেরণ
করেন। তারা পাতালে
ধ্যানমগ্ন মহর্ষি কপিলের কাছে ঘোড়াটিকে দেখতে পান। মহর্ষিকে চোর সন্দেহ
করে তারা তার বহু বছরের ধ্যান ভঙ্গ করলে ক্রুদ্ধ মহর্ষি দৃষ্টিপাত মাত্র
তাদের ভস্ম করে দেন। সগর রাজার ষাট হাজার সন্তানের আত্মা পারলৌকিক ক্রিয়ার
অভাবে প্রেতরূপে আবদ্ধ হয়ে থাকেন।
পরে সগরের বংশধর, রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ
তাদের আত্মার মুক্তিকামনায় গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসার মানসে ব্রহ্মার
তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মা গঙ্গাকে মর্ত্যে প্রবাহিত
হয়ে সগরপুত্রদের আত্মার সদগতিতে সহায়তা করতে নির্দেশ দেন। গঙ্গা এই
নির্দেশকে অসম্মানজনক মনে করে মর্ত্যলোক প্লাবিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন
ভগীরথ গঙ্গার গতিরোধ করার জন্য শিবের আরাধনা করেন।
গঙ্গাবতরণ, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত চিত্র
ক্রদ্ধ গঙ্গা শিবের মস্তকে পতিত হন। কিন্তু শিব শান্তভাবে নিজ জটাজালে
গঙ্গাকে আবদ্ করেন এবং ছোটো ছোটো ধারায় তাকে মুক্তি দেন। শিবের স্পর্শে
গঙ্গা আরও পবিত্র হন। স্বর্গনদী গঙ্গা পাতালে প্রবাহিত হওয়ার আগে
মর্ত্যলোকে সাধারণ জীবের মুক্তির হেতু একটি পৃথক ধারা রেখে যান। এইভাবে
স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল – তিন লোকে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা "ত্রিপথগা" নামে
পরিচিতা হন।
যেহেতু ভগীরথ গঙ্গার মর্ত্যাবতরণের প্রধান কারণ, সেই হেতু গঙ্গার
অপর নাম ভাগীরথী। সংস্কৃতে ভগীরথের এই দুঃসাধ্য সাফল্যের কথা মাথায় রেখে
"ভগীরথ প্রযত্ন" নামে একটি শব্দবন্ধ প্রচলিত আছে।
গঙ্গার অপর নাম জাহ্নবী। কথিত আছে, মর্ত্যে ভগীরথকে অনুসরণ করার সময় গঙ্গা ঋষি জহ্নুর
আশ্রম প্লাবিত করেন। উগ্রতপা জহ্নু ক্রুদ্ধ হয়ে গঙ্গার সমস্ত জল পান করে
ফেলেন। তখন দেবগণ গঙ্গার মুক্তির জন্য ঋষির কাছে প্রার্থনা করতে থাকলে
নিজের জঙ্ঘা বা জানু চিরে গঙ্গাকে মুক্তি দেন। এইরূপে গঙ্গা জহ্নু ঋষির
কন্যা রূপে পরিচিতা হন এবং তার অপর নাম হয় জাহ্নবী।
পৃথিবীর যেকোন দেশে
স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা বিকাশের সঙ্গেসেই দেশের দেশাত্মবোধক ও জাতীয়তাবাদী সাহিত্যের সম্পর্ক অতি
ঘনিষ্ঠ। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দেশাত্মবোধক
সাহিত্যের বিকাশ ভারত ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।যে সমস্ত মনীষীরা তাদের লেখার মাধ্যমে ভারতীয়দের
মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন তাদেরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায এবং তার লেখা দেশাত্মবোধক উপন্যাস ‘আনন্দমঠ'।
‘আনন্দমঠ’প্রথম
প্রকাশিত হয় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর।
আনন্দমঠ উপন্যাসের পটভূমি : আনন্দমঠ উপন্যাসের পটভূমি হল অষ্টাদশ শতকের
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। আনন্দমঠে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের
মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে। এই উপন্যাসের মূল সুর হল দেশাত্মবোধ এবং পরাধীন
মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য সন্তানদের প্রবল প্রচেষ্টা।
সন্তান দল: বাংলায় মুসলিম রাজশক্তির পতন ও ইংরেজ রাজত্বের
প্রতিষ্ঠা এক নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে। এই সংকটকালে ইংরেজ শাসনেরঅবসান ঘটিয়ে দেশমাতার মুক্তির জন্য
সন্তান দলের আবির্ভাব ঘটে।‘আনন্দমঠ’উপন্যাসের
মূল চরিত্রই সন্তান দল। তাদের আদর্শ অনুসরণকরে দেশের যুবসমাজকে দেশমাতার
পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্যএগিয়ে আসার আহ্বান জানান
বঙ্কিমচন্দ্র।
আনন্দমঠ উপন্যাসে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য
একদল আত্মত্যাগী সন্ন্যাসীর কার্যাবলির বিবরণ আছে। এই উপন্যাসে সত্যানন্দের
আহ্বানের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধ জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।আনন্দমঠ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন দেশমাতার
লাঞ্ছিত রূপ তুলে ধরেছেন। তিনি এই দেশমাতার উদ্ধারের জন্য আত্মবলিদানে প্রস্তুত
একদল মাতৃভক্ত সন্তানের কথা বলে যুবসম্প্রদায়কে দেশপ্রেম ও সংগ্রামী
জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন।আনন্দমঠের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের চরমপন্থী
ও বিপ্লবীরা দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করার কাজে
ব্রতী হন।
বন্দেমাতরম গান ও স্লোগানটি আনন্দমঠ উপন্যাসের
অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসারে বন্দেমাতরম-এর অবদান
অপরিসীম। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর বন্দেমাতরম গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন।
ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও তাঁর বন্দেমাতরম গানটির
অবদান অপরিসীম। অধ্যাপকহীরেন্দ্রনাথ
দত্ত আনন্দমঠের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ‘প্রকৃত জনক’বলে
অভিহিত করেছেন
কিছু বই বাংলায় প্রকাশিত হলেও আমি পাইনি... কিন্তু যে গুলি সংগ্রহে রাখার মতো... যেমন জাতক,পঞ্চতন্ত্র, 'কথা সরিৎ সাগর',হিতোপদেশ ইত্যাদি , সেগুলি ইংরাজি তে পেয়ে রেখে দিয়েছি... সেগুলি পোস্ট করবার ইচ্ছা ছিল... সে রকম একটি বই আজ পোস্ট করলাম... সহজ ভাষায় লেখা ,আশাকরি ছোটোদের পড়তে অসুবিধা হবে না ।
জাতক গৌতম বুদ্ধের অতীত জীবনের কাহিনীমূলক গল্পসাহিত্য। এটি ত্রিপিটকের অন্তর্গত এবং এর কথক গৌতম বুদ্ধ
স্বয়ং। বুদ্ধত্ব লাভের পর সিদ্ধার্থ গৌতম তাঁর অতীত জীবনের কথা স্মরণ
করার ক্ষমতা অর্জন করেন। তখন তিনি শিষ্যদের সঙ্গে ধর্মালোচনাকালে
প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তাঁর অতীত জীবনের বহু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
সেসব ঘটনার সংকলনই জাতক সাহিত্য।
খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে বুদ্ধঘোষ রচিত 'জাতকত্থবণ্ণনা' নামক গ্রন্থে
৫৪৭টি জাতক অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর তেরো বছর পর আঠারো শতকে অধ্যাপক ফৌজবল
লন্ডন পালি বুক সোসাইটির উদ্যোগে ইংরেজি অনুবাদসহ ছয় খন্ডে যে জাতকগ্রন্থ
প্রকাশ করেন তাতেও জাতকের সংখ্যা ছিল পূর্ববৎ। কিন্তু ত্রিপিটকের সূত্তপিটক
মতে বুদ্ধদেব ৫৫০ বার জন্ম পরিগ্রহ করেন। সে অনুযায়ী জাতকের সংখ্যা হওয়া
উচিত ৫৫০টি।
জাতকের এই গল্পগুলি দীর্ঘকাল গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি থেকে
স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের
পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধমহাসঙ্গীতি (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মেলন)
কালে জাতক গ্রন্থিত হয়। তখন পালি ভাষাতেই জাতকের গল্পগুলি লিখিত হয়েছিল;
পরবর্তীকালে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত হয়। বাংলায় জাতক
অনুবাদ করেন ঈশাণচন্দ্র ঘোষ। তিনি ষোলো বছরে ছয় খন্ডে জাতকের অনুবাদ ও
সম্পাদনা করেন।
প্রত্যেকটি জাতকের তিনটি অংশ থাকে: প্রত্যুৎপন্নবস্ত্ত, অতীতবস্ত্ত ও
সমাধান। প্রত্যুৎপন্নবস্ত্ত হচ্ছে জাতকের উপক্রমণিকা অংশ। এখানে জাতকের
উপলক্ষ ও প্রাসঙ্গিকতা বর্ণিত হয়; অর্থাৎ বুদ্ধ কখন, কোথায়, কাকে উপলক্ষ
করে এবং কোন প্রসঙ্গে এই জাতক কাহিনী বিবৃত করেছিলেন তার বিবরণ থাকে এ
অংশে। অতীতবস্ত্ত হচ্ছে জাতকের মূল অংশ, অর্থাৎ এখানে বুদ্ধের পূর্বজন্মের
কাহিনীগুলি বর্ণিত হয়। আর শেষ অংশ সমাধানে প্রত্যুৎপন্নবস্ত্তর সঙ্গে
অতীতবস্ত্তর চরিত্রগুলির অভিন্নতা বা যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ
জাতকে বর্ণিত চরিত্রগুলির কে কোন জন্মে কি ছিলেন সে পরিচয় এখানে তুলে ধরা
হয়।
জাতকের সব কথাই উপদেশমূলক। এর বাণী কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের
মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলি সর্বজনীন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই জাতক থেকে
মানবিক উপদেশাবলি গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া জাতকে পুরাকালের আচার-অনুষ্ঠান,
রীতি-নীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা, বিচার-আচার ইত্যাদির বিবরণ
পাওয়া যায়। জাতকের রচনাকৌশলও অত্যন্ত হূদয়গ্রাহী। বাংলা সাহিত্যসহ
বিশ্বের বহু সাহিত্য জাতকের নির্যাস গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে।
৭৬ নং সুন্দরী, বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল কি না সন্ধেহ আছে...বাংলায় প্রচুর বই ই প্রকাশিত নয় ।
নেতাজির মৃত্যু রহস্যই থেকে গেছে... তবে bbc র বাংলা সাইট থেকে ওঁদের বক্তব্য তুলে ধরলাম । ...
তবে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । ...এটাও জানা যায় যে নেতাজি সোভিয়েত দেশ এ গৃহ বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন।
https://www.bbc.com/bengali/news-46973443
ভারতের
স্বাধীনতা সংগ্রামে এক কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু। সশস্ত্র বিদ্রোহের
মাধ্যমে ভারতকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিভাবে তার
মৃত্যু হয়েছে সেটা এখনও পরিস্কার নয়। ২৩শে জানুয়ারি তার
জন্মবার্ষিকীতে বিবিসির হিন্দি বিভাগ জানতে চেষ্টা করেছে কী হয়েছিল মি.
বসুর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর পূর্ব রণাঙ্গনে জাপানি সেনাবাহিনীর মনোবল
একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। সেই সময়েই সুভাষচন্দ্র বসু সিঙ্গাপুর থেকে
ব্যাংকক হয়ে সাইগনে পৌঁছেছিলেন।
কিন্তু সেখান থেকে এগোনোর জন্য একটাও জাপানি বিমান ছিল না। অনেক চেষ্টার পরে একটা জাপানি বোমারু বিমানে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি।
বিমানঘাঁটিতে
তাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের যেসব সহকর্মী, তাদের সঙ্গে
করমর্দন করে 'জয় হিন্দ' বলে অভিবাদন জানিয়ে কিছুটা লাফিয়েই বিমানের
সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বিমানে ওঠার পরেই অন্যদের 'জয়-হিন্দ' অভিবাদন জানিয়ে তার এডিসি কর্নেল হাবিবুর রহমানও বিমানে উঠে গিয়েছিলেন।
মি.
বসুর ওপরে 'লেইড টু রেস্ট' নামের বইটির লেখক, সিনিয়র সাংবাদিক আশিস রায়
বলছিলেন, "ওই বিমানটিতে ক্রুসহ ১৪ জন ছিলেন। পাইলটের ঠিক পিছনেই নেতাজী
বসেছিলেন। তার সামনে পেট্রোলের বড় বড় জেরিক্যান রাখা ছিল। নেতাজীর পিছনেই
ছিলেন কর্নেল হাবিবুর।"
"বিমানে
চড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাপানিরা নেতাজীকে সহ-পাইলটের আসনে বসার অনুরোধ
করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধ তিনি বিনম্রভাবে ফিরিয়ে দেন। ঘটনা হল,
সহ-পাইলটের আসনটি তার মতো লম্বা মানুষের জন্যে বেশ ছোট ছিল," বলছিলেন মি.
রায়।
তার
কথায়, "পাইলট আর লেফটেন্যান্ট জেনারেল শীদে ছাড়া বাকি সকলেই বিমানের
মেঝেতেই বসেছিলেন। নেতাজীকে একটা ছোট কুশন দেওয়া হয়েছিল। কারও কাছেই সীট
বেল্ট ছিল না।"
ওই
বোমারু বিমানের ভেতরে ভীষণ ঠাণ্ডা লাগছিল সবার। তখনকার দিনে যুদ্ধবিমানে
এয়ার কন্ডিশনার লাগানো থাকত না। প্রত্যেক হাজার মিটার ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই
বিমানের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি করে কমে যেত।
ঠাণ্ডা
আটকাতে সুভাষচন্দ্র বসু তার এডিসি কর্নেল হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে তার
জ্যাকেটটা চেয়ে নিয়েছিলেন। দুপুর দুটো ৩৫ মিনিটে বোমারু বিমানটি জমি
ছেড়ে আকাশে উড়েছিল।
তার
কথায়, "আমি যখন রক্ত দেওয়ার জন্য তার শিরায় সুচ ফোটালাম, কিছুটা রক্ত
সুচ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। রক্তের রঙটা ছিল গাঢ়। মৃত্যুর কিছুটা আগে থেকেই
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে থাকে আর রক্তের রঙ পাল্টাতে থাকে।"
"একটা
বিষয় আমাকে বেশ অবাক করেছিল। পাশের ঘরে দুর্ঘটনায় আহত জাপানি সৈনিকরা
ব্যথায় চিৎকার করছিল, কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর মুখ থেকে একটা শব্দও বের
হয়নি। অথচ আমি ডাক্তার হিসাবে বুঝতে পারছিলাম তার কতটা শারীরিক কষ্ট
হচ্ছে," জানিয়েছিলেন ডাক্তার ইশি।
১৮ অগাস্ট, ১৯৪৫, রাত প্রায় ন'টার সময়ে সুভাষ চন্দ্র বসু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আশিস
রায়ের কথায়, "জাপানে মৃতদের ছবি তোলার প্রথা নেই। কিন্তু কর্নেল রহমান
বলেছিলেন যে তিনি জেনে-শুনেই সুভাষচন্দ্রের ছবি তুলতে দেন নি। কারণ তার
শরীর তখন বেশ ফুলে গিয়েছিল।"
"জাপানি
সেনাবাহিনীর মেজর নাগাতোমোর কথা অনুযায়ী, তার গোটা শরীরেই ব্যান্ডেজ
বাঁধা ছিল। ওর পার্থিব শরীরটা ঘরের এক কোনে রেখে দেওয়া হয়েছিল। চারদিকে
একটা পর্দা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সামনে কয়েকটা মোমবাতি জ্বলছিল। ফুলও ছিল
কিছু," বলছিলেন মি. রায়।
"কয়েকজন
জাপানি সৈনিক সেখানে হাজির ছিলেন। সম্ভবত সেইদিনই, অথবা পরের দিন, ১৯
অগাস্ট নেতাজীর শরীর একটা কফিনে রাখা হয়। মেজর নাগাতোমো কফিনের ঢাকনা খুলে
নেতাজীর চেহারা একবার দেখেছিলেন।"
কোনও
বিমান না পাওয়ার ফলে তার মৃতদেহ সিঙ্গাপুর বা টোকিওতে নিয়ে যাওয়া যায়
নি। চারদিন পরে, ২২ অগাস্ট তাইপেতেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে
হাজির ছিলেন কর্নেল হাবিবুর রহমান, মেজর নাগাতোমো আর সুভাষ চন্দ্রের দোভাষী
জুইচি নাকামুরা।
মেজর
নাগাতোমো শাহনাওয়াজ কমিশনে বলেছিলেন, আমি ফার্নেসের ঢাকনাটা খুলে ভেতর
থেকে 'স্লাইডিং প্লেট'টা টেনে এনেছিলাম। ভেতরে নেতাজীর কঙ্কালটা পড়ে ছিল।
শরীরটা দাহ করা হয়ে গিয়েছিল। একটা ছোট কাঠের কৌটা ছিল আমার সঙ্গে। বৌদ্ধ
পরম্পরা অনুযায়ী দুটো চপস্টিক দিয়ে নেতাজীর ঘাড়ের কাছ থেকে একটা হাড়
তুলে এনেছিলাম। তারপর একে একে তার শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ থেকে একেকটা হাড়
সংগ্রহ করে ওই কাঠের কৌটোর ভেতরে রেখেছিলাম।"
কর্নেল
হাবিবুর রহমানও পরে জানিয়েছিলেন যে শ্মশানে এক কর্মকর্তা তাকে সুভাষ বসুর
সোনায় বাঁধানো একটা দাঁত দিয়েছিলেন। ওই দাঁতটা মৃতদেহর সঙ্গে জ্বলে যায়
নি।
আশিস
রায়ের কথায়, "আমি যখন ১৯৯০ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলাম, তখন হাবিবুর
রহমানের ছেলে নইমুর রহমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে
জানিয়েছিলেন যে তার বাবা কাগজে মোড়া সুভাষ বসুর ওই সোনা বাঁধানো দাঁতটা
অস্থি- কলসেই রেখে দিয়েছিলেন।"
২০০২
সালে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দুই অফিসার যখন রেনকোজি মন্দিরে রাখা সুভাষ
বসুর অস্থি-কলস পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন, তারাও ভেতরে ওই কাগজের মোড়কে
রাখা সোনার দাঁতটা দেখতে পেয়েছিলেন।
সেই
সময়ে জাপানে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন আফতার শেঠ। তিনি বলছেন, "ওই দুজন
অফিসার, সি রাজশেখর এবং আর্মস্ট্রং চেঙসন আমার সঙ্গেই টোকিওতে ভারতীয়
দূতাবাসে কাজ করতেন। বাজপেয়ী সরকার যখন নেতাজীর মৃত্যুর তদন্ত করতে
মুখার্জী কমিশন তৈরি করেন, তখন বিচারপতি মুখার্জীও টোকিওতে এসেছিলেন।"
আশিস
রায় জানাচ্ছেন, "কিন্তু বিচারপতি মুখার্জী নিজে রেনকোজি মন্দিরে যান নি।
তার নির্দেশ মতো দু'জন অফিসারকে পাঠানো হয়। তারা কাগজের মোড়কে রাখা ওই
দাঁতের ছবিও তুলে এনেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুখার্জী কমিশন এই
সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে নেতাজীর মৃত্যু ওই বিমান দুর্ঘটনায় হয় নি আর
রেনকোজি মন্দিরে যে অস্থি রাখা আছে, সেটাও নেতাজীর নয়।"
"এটা অন্য বিষয় যে মনমোহন সিং সরকার মুখার্জী কমিশনের রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে," বলছিলেন আশিস রায়।
সুভাষচন্দ্রের কন্যা অনিতা পাফেরও ইচ্ছা যে তার পিতার অস্থি ভারতে ফিরিয়ে আনা হোক।
মি.
রায়ের কথায়, "অনিতাই আমার বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন
যে নেতাজী একটা স্বাধীন ভারতে ফিরে এসে কাজ করতে চেয়েছিলেন। সেটা যখন
সম্ভব হয় নি, তখন অন্তত তার অস্থিটা ভারতের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া
হোক। তার মৃত্যুর ৭৩ বছর পরে হলেও অস্থিটা যদি ভারতে নিয়ে এসে গঙ্গায়
বিসর্জন দেওয়া হয়, সেটাই বোধ হয় রাষ্ট্রের তরফে তার প্রতি সবচেয়ে বড়
সম্মান জানানো হবে।"
বইটি স্ক্যান করে পাঠিয়েছেন শ্রী শুভ্রজ্যোতি শীল... শুধু এটি নয় ...'সমুদ্র পথে ভারত' বই টি ও উনি পাঠিয়েছেন...তবে পরের বই টি ক্রম অনুসারে আসতে বিলম্ব হবে ।
৫৫ নং সংখ্যা টি টপকে যেতে হয়ে ছিল তাই এবার পোস্ট করে দিলাম, প্রচ্ছদ ছিল না তাই ইংরাজি বইয়ের একটি প্রচ্ছদ করে দিলাম ।
Kovid 19 + থাকায় কিছুদিন বিশ্রাম এ ছিলাম... যদিও স্বাদ ও গন্ধ ৭ - ৮ দিনের জন্য না চলে গেলে কিছুই বুঝতে পারতাম না। 'করোনা' নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই... রোজ মাল্টি ভিটামিন খাওয়া ও রোদে ঘুরে বেড়ান , বৃষ্টি তে ভেজা সব ই করে বেড়াতাম, প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে কোন প্রবলেম হবার কথা নয়...স্থানীয় স্বাস্থ কেন্দ্রে বিনা মুল্যে এখন পরীক্ষাও হচ্ছে, আমার পাড়ার দুজন কাকু ৭০ ঊর্ধ্ব বয়স... তাঁদের জ্বর কমছিলনা না বলে হাসপাতালে ছিলেন ... এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে এসেছেন... 'কভিড' তার শক্তি হারাচ্ছে... সবাই সুস্থ থাকুন ...।
আজ ১০০০ নং পোস্টে থেকছে ১০০ পাতার একটি বিশেষ সংখ্যা ... পোস্ট কটি হোল সেটি আমার কাছে বড় কথা নয়... আমার কাজ আমি যতদিন পারবো করে যাবো।
এই বিশেষ সংখ্যায় থাকছে শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণের জীবনী ও লোক শিক্ষার জন্য তাঁর বলা অসংখ্য ছোট গল্প..................।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ, (১৮৩৬-১৮৮৬) হিন্দু সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক
মানবতাবাদী। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার
কামারপুকুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা
ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা চন্দ্রমণিদেবী দেবতা বিষ্ণুর অপর
নামানুসারে পুত্রের নাম রাখেন গদাধর। এই গদাধরই পরবর্তীকালের শ্রীরামকৃষ্ণ
পরমহংস। এটি তাঁর আশ্রমী নাম।
বাল্যশিক্ষার ব্যবস্থা হলেও শিক্ষার প্রতি গদাধরের মনোযোগ ছিল না।
তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অপরদিকে শৈশবেই তাঁর
মধ্যে প্রকাশ পায় দিব্যভাব। তাঁর ছিল অসাধারণ স্মৃতিশক্তি; কথিত আছে
রামায়ণ-মহাভারতের পালা একবার শুনেই তিনি মুখস্থ আওড়াতে পারতেন। পিতার
নিকট থেকে তিনি ধর্মীয় শ্লোক শিখেছিলেন; গ্রামের কথকদের নিকট থেকে শেখেন রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনী এবং পুরীগামী তীর্থযাত্রীদের নিকট থেকে শেখেন ধর্মগীতি।
পিতার মৃত্যুর পর অগ্রজ রামকুমার কলকাতার ঝামাপুকুরে নিজস্ব টোলে
গদাধরের পড়ার ব্যবস্থা করেন। পরে রাণী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর
মন্দিরে রামকুমার পূজার ভার পেলে গদাধর অগ্রজের সঙ্গে মন্দিরে স্থান পান।
অল্পকাল পরে রামকুমারের মৃত্যু হলে পূজার দায়িত্ব পড়ে গদাধরের ওপর। এখানে
কালীমূর্তির পূজায় ভক্তিগীতি গাওয়ার সময় তিনি প্রায়শই অচেতন হয়ে
পড়তেন। কালক্রমে এখানেই কালীসাধনায় তাঁর সিদ্ধিলাভ ঘটে। তিনি স্ত্রী
সারদা দেবীকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন, যা অচিরেই তাঁকে ‘আধ্যাত্মিক
জননী’ পদে উন্নীত করে। এভাবে গদাধর সর্বব্যাপিণী চৈতন্যরূপিণী দেবীর দর্শন
লাভ করেন।
সাধনমার্গ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে গদাধরকে
নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়, কিন্তু তাতে তেমন ফলোদয় হয়নি; সাধনমার্গ
ব্যতীত জাগতিক শিক্ষার প্রতি তাঁর আকর্ষণ বিন্দুমাত্র বৃদ্ধি পায়নি। ১৮৫৫
খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পুরোহিত নিযুক্ত হন।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস
এতে তাঁর কালীসাধনার সুযোগ পান। তিনি দাবি করতেন, দেবী কালীর হাতেই তাঁর
শিক্ষা শুরু হয় এবং সকল দেবদেবীর একত্ব সম্পর্কে তিনি বিশ্বমাতার নিকট
থেকে ধারণা লাভ করেন। তাঁর বারো বছরের তপস্যা জীবনে তিনি দুজন গুরুর দীক্ষা
লাভ করেন। তাঁরা হলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণী ও তোতাপুরী। ভৈরবী তাঁকে তান্ত্রিক
সাধনা সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং তোতাপুরী শিক্ষা দেন বৈদান্তিক সাধনা
সম্পর্কে। দীক্ষা লাভের পর তাঁর নাম হয় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। একই সঙ্গে
রামকৃষ্ণ বৈষ্ণব সাধনায়ও সিদ্ধিলাভ করেন।
রামকৃষ্ণ শুধু হিন্দু ধর্মমতভিত্তিক সাধনায়ই আবদ্ধ থাকেননি, তিনি ইসলামও খ্রিস্টধর্মের আরাধনা পদ্ধতিকেও জানার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে তিনি হযরত মুহাম্মাদ (স.) ও যিশুখ্রিস্ট
প্রবর্তিত ধর্মীয় ধারা পর্যবেক্ষণ করেন। এভাবে সমুদয় ধর্মসাধনার মাধ্যমে
রামকৃষ্ণ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করেন। তাঁর মতে সকল ধর্মেই জীবনের উদ্দেশ্য
ঈশ্বর উপলব্ধি। ধর্মসমূহের পথ ভিন্ন হলেও সকলেরই উদ্দিষ্ট এক ও অভিন্ন
ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ। তাঁর ভাষায় ‘সকল ধর্মই সত্য, যত মত তত পথ’, অর্থাৎ
ধর্মীয় মত ও পথ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক। তিনি প্রথাগত
সন্ন্যাসীদের মতের সঙ্গে একমত ছিলেন না বা তাঁদের মতো পোশাকও পরতেন না।
এমনকি তিনি স্ত্রী সারদা দেবীকে সাক্ষাৎ জগদম্বা জ্ঞানে পূজা করতেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন লোকগুরু। ধর্মের কঠিন তত্ত্বকে সহজ করে বোঝাতেন
তিনি। ঈশ্বর রয়েছেন সকল জীবের মধ্যে, তাই জীবসেবাই ঈশ্বরসেবা- এই ছিল তাঁর
দর্শন। ধর্মীয় সম্প্রীতিতে গভীর বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রধান শিষ্য
স্বামী বিবেকানন্দ
(১৮৬৩-১৯০২) তাঁরই ধর্মীয় আদর্শ জগদ্বাসীকে শুনিয়ে গেছেন, যার ফলে
রামকৃষ্ণের এই জীবসেবার আদর্শ অর্থাৎ মানবধর্ম আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
রামকৃষ্ণের উদার ধর্মীয় নীতির প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও
ভাবাদর্শে মোহগ্রস্ত অনেক শিক্ষিত যুবক ভারতীয় আদর্শে ফিরে আসেন। তিনি
যেমন বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের কাছে যেতেন, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন
সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গও তাঁর নিকট আসতেন। শিবনাথ শাস্ত্রী, কেশবচন্দ্র
সেন, মহেন্দ্রনাথ সরকার, গিরিশচন্দ্র ঘোষসহ আরও অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি
তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন।
রামকৃষ্ণের সাধনাস্থান দক্ষিণেশ্বর এখন অন্যতম তীর্থস্থান। তাঁর মতে
ঈশ্বরলাভ জীবনের পরম উদ্দেশ্য। আর এজন্য গভীর নিষ্ঠা নিয়ে সাধনা করতে
হয়। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত নামক গ্রন্থে তাঁর উপদেশাবলি বিধৃত হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে আলোচনা করে ফরাসি মনীষী রমাঁরলাঁ রামকৃষ্ণ
সম্পর্কে এক বৃহদাকার জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার
সেনগুপ্তের পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ সাহিত্যসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত।
শ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ শ্রীরামকৃষ্ণের ওপর অপর একখানি প্রামাণ্য
জীবনীগ্রন্থ।
রামকৃষ্ণ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি একদল নিবেদিত তরুণ সন্ন্যাসী রেখে যান, যাঁরা পরবর্তীকালে ‘রামকৃষ্ণ
মতবাদ’ গড়ে তোলেন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বিবেকানন্দ স্বয়ং। [পরেশচন্দ্র
মন্ডল এবং অনিল বরণ রায়]
যত মত তত পথ। সব ধর্মের সার কথাটি এমন সহজ করে আর কেউ বলে যেতে পারেননি।
যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ যেন ধর্ম-সমুদ্র মন্থন করেই তুলে দিয়েছিলেন এ
অমৃতবাণী। তবে এ শুধুই তাঁর কথার কথা নয়। জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা সত্য। সেই
সত্যের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন ধর্মমতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন ঠাকুর।
এমনকী গ্রহণ করেছিলেন ইসলাম ধর্ম।
শ্রীরামকৃষ্ণের বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের দিকটি
তুলনায় স্বল্পালোচিত। তবে সাধনমার্গের এ পথেও হেঁটেছিলেন ঠাকুর। জানা যায়,
১৮৮৬-৮৭ সাল নাগাদ ইসলাম সাধনায় মনোনিবেশ করেন ঠাকুর। গুরু হিসেবে বেছে
নেন গোবিন্দ রায়কে। নাম শুনে হিন্দু মনে হলেও তিনি ছিলেন ইসলামে দীক্ষীত।
তাঁর পূর্বজীবন সম্বন্ধে যা জানা যায়, তাতে তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় সন্তান।
পরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সে ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম হয় ওয়াজেদ আলি খান।
এই গোবিন্দ রায়ের কাছেই ইসলাম মতে দীক্ষা নেন ঠাকুর। মন্দির চত্বরে তাঁকে
দেখেই ঠাকুর মুগ্ধ হন। পরে তাঁর কাছেই দীক্ষা নেন। শিয়া, সুন্নি ও সুফি-
মুসলমানদের এই তিন ভাগের মধ্যে গোবিন্দ রায় ছিলেন সুফি মতের সাধক। সুফি মত
অনেকটাই হিন্দু বেদান্তের আদর্শের কাছাকাছি। এই মতেই দীক্ষা নেন ঠাকুর,
কলমা বা আল্লা ব্যতীত কেউই উপাস্য নেই-এই মন্ত্র গ্রহণ করেন। সেই সময়
মন্দিরে পুজার্চনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকী হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি বা
ছবির দিকেও তাকাতেন না। সাধারণ অহিন্দু দর্শনার্থীর মতো মন্দিরের বাইরেই
বসবাস করতেন। প্রসঙ্গত, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের বাইরেই আছে গাজীপীরের
স্থান। কথিত আছে এই গাজিপীর স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন স্বয়ং রাসমণিকে। পরে
রানিমা তাঁর স্থানে বাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ইসলাম
গ্রহণ প্রসঙ্গে কথামৃতে ঠাকুর নিজে জানিয়েছেন, ইসলাম সাধনায় তিনি এতটাই
তন্ময় ছিলেন যে, হিন্দু দেবদেবীর দিকে দেখতে মনও চাইত না। সে সময় গোমাংস
ভক্ষণেরও সাধ জেগেছিল ঠাকুরের। যদিও রানি রাসমনির জামাই মথুরমোহনের
অনুরোধে সে কাজ তিনি করেননি। কিন্তু নিয়মিত নমাজ পড়তেন। মসজিদে যেতেন।
কথামৃতকার ঠাকুরের মুখের কথা তুলে ধরেছেন এইভাবে, ‘গোবিন্দ রায়ের কাছে
আল্লা মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম।’
অন্যত্র বলছেন, ‘…বটতলায় ধ্যান করছি, দেখালে একজন দেড়ে মুসলমান সানকি করে
ভাত নিয়ে সামনে এলো। সানকি থেকে ম্লেচ্ছদের খাইয়ে আমাকে দুটি দিয়ে গেল। মা
দেখালেন, এক বই দুই নাই। সচ্চিদানন্দই নানা রূপ ধরে রয়েছেন। তিনিই জীবজগৎ
সমস্তই হয়েছেন। তিনিই অন্ন হয়েছেন।’
তিনদিন
ইসলাম ধর্মে গভীর সাধনা করেন ঠাকুর। সে সময় ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনও
চিন্তা তিনি মাথায় রাখেননি। এবং অচিরেই এ পথে সিদ্ধিলাভ করেন। ঠাকুরের
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ নিয়ে সাল তারিখের মতভেদ আছে। বিভিন্ন গ্রন্থে আলাদা আলাদা
সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঘটনাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা
স্মৃতিচারণায়। স্বামী প্রভানন্দের ‘শ্রীরামকৃষ্ণজীবনে ইসলাম’ বইটিতে এ
বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। ঠাকুরের ইসলাম গ্রহণের কথা লিখেছেন
স্বামী নির্বেদানন্দও। কথিত আছে, তিনদিনের সাধনার পর, এক সৌম্যদর্শন ফকিরের
সঙ্গে দেখা হয় ঠাকুরের। দু’জনেই দু’জনকে দেখে বিভোর হয়ে যান। ঠাকুরের মনে
হয় তিনি মহম্মদের দর্শন পেয়েছেন। যাই হোক, এর আগে অদ্বৈতসাধনমার্গে
সিদ্ধিলাভ করে যে অনুভূতিতে পৌঁছেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করেও সেই একই অনুভবে
পৌঁছান ঠাকুর। এরপর খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেও তিনি সিদ্ধিলাভ করেন।
সব ধর্মের পথ পরিক্রমায় মেতেছেন বলেই তিনি এক সহজে বলতে পেরেছেন সর্বধর্ম
সমন্বয়ের কথাটি যা সনাতন ভারতের ঐতিহ্য। ঠাকুরের ভারতবর্ষ তাই সেই উদার ও
ঐতিহ্যের ভারতবর্ষ।
তথ্য সূত্র https://www.sangbadpratidin.in/religion/ramakrishna-embraced-sufi-mysticism-islamic-tenets/