Thursday, August 31, 2023

Post # 1147 Bengali Amarchitra Katha 354

                                                                     ডা উন লো ড করুন

 

  বহুদিন আগে প্রায় ৩ -৪ বছর হবে , ত্রিপুরার কৈলাশহর


ঊনকোটি থেকে শ্রী শুভ্রজ্যোতি শীল স্ক্যান করে পাঠিয়ে ছিলেন , অসংখ্য ধন্যবাদ তাঁকে ।  বইটির প্রচ্ছদ পাওয়া যায়নি বলে ইংরাজি বইয়ের প্রচ্ছদ টি দিতে হলো ।





 

Wednesday, August 30, 2023

Post # 1146 Bengali Amarchitra Katha 353

                                                                       ডাউনলোড করুন

 

 

৩০ খণ্ডে অসমাপ্ত মহাভারতের  আজ ১৩ তম বই ।   ইংরাজি ও হিন্দি তে ৪২ খণ্ডে সমাপ্ত হয়েছিল ,বাংলায় ৩০ খণ্ডের পর আর প্রকাশিত হয়নি ।






 

Tuesday, August 29, 2023

Post # 1145 Bengali Amarchitra Katha 352

                                                                   ডাউনলোড করুন

 

 

দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা গুলির মধ্যে তামিল হল প্রাচীনতম ।তামিল ভাষায় লেখা প্রথম উপন্যাস   ''প্রতাপন মুদালিয়ন চরিত্রম''  ১৮৭৯ সালে রচিত হয় । লেখক হলেন বেদনায়ম পিল্লাই (১৮২৬ - ১৮৮৯) । তাঁর লেখা কাহিনী থেকে আজকের অমরচিত্র কথা ..................   




 

Saturday, August 19, 2023

Post # 1144 Bengali Amarchitra Katha Special Issue 004

                                                                      ডাউনলোড করুন

 

 

আজ থাকছে ১০০ পাতার রামায়ান স্পেশাল ইস্যু ।

শ্রী রামচন্দ্র কে  "মর্যাদা পুরুষোত্তম" (অর্থাৎ, "শ্রেষ্ঠ পুরুষ" বা "আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি" বা "গুণাধীশ") বলা হয়। শ্রী রামচন্দ্র সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকু বংশ বা পরবর্তীকালে উক্ত বংশের রাজা রঘুর নামানুসারে রঘুবংশ নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শ্রী রাম সংক্রান্ত বিবরনের প্রধান উৎস ঋষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ। 

শ্রী রামচন্দ্র ত্রেতা যুগে আজ থেকে  সাড়ে ৯ লক্ষ বছর পূর্বে,  চৈত্র মাসে, শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে পুনর্ব্বসু নক্ষত্রে,কর্কট লগ্নে শুভলগ্নে শুভক্ষণে শুভযোগে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁহার জন্মকালে রবি মেষ রাশিতে, মঙ্গল মকর রাশিতে। শনি তুলা রাশিতে, বৃহস্পতি ও চন্দ্র কর্কট রাশিতে এবং শুক্র মীন রাশিতে ছিল।ত্রেতা যুগ মোট ৮,৬৪,০০০ বছর এবং কলি যুগের এখন প্রায় ৫,১২০ বছর চলছে, এই দুটো বছর যোগ করলে ৮,৬৯,১২০। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনেরাল সেক্রেটারি আব্দুল রহিম কুরেশি।  কুরেশি তাঁর ''ফ্যাক্টস অফ অযোধ্যা এপিসোড'' নামের বইতে দাবি করেছেন হিন্দু ধর্ম মতে ১৮০ লক্ষ বছর আগেই রামের আবির্ভাব হয়েছিল, কথাটি মিথ্যা হলেও ওনার তথ্য অনুসারে শ্রী রামের জন্ম লক্ষাধিক বছর আগেকশ্যপের পুত্র বিবস্বান্ (সূর্য) থেকে সূর্য বংশের উৎপত্তি এই সূর্য বংশের প্রথম নৃপতি হলেন ইক্ষ্বাকু। তিনি বৈবস্বত মনুর পুত্র। তিনি প্রথম অযোধ্যার সিংহাসনে বসেন। তার প্রধান তিন পুত্র ছিল বিবুক্ষি, নিমি, দন্ডা। বিবুক্ষি অযোধ্যার এবং নিমি মিথিলার রাজা হন। বিবুক্ষির রাজ বংশ থেকেই দশরথ, রামচন্দ্র এবং নিমির বহু পরবর্তী রাজবংশ থেকে জনক প্রভৃতি রাজা হন। এই রাজ বংশ থেকে আর্যাবর্তে অনেক বিখ্যাত রাজ বংশের সৃষ্টি হয় । যেমন যুবনাশ্বের পুত্র– মান্ধাতা, তিনি সম্রাট ছিলেন। রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ দের নাম নীচে দেওয়া হচ্ছে ক্রমানুসারে।

মর্যাদা—পুরুষোত্তম [(অর্থাৎ, "শ্রেষ্ঠ পুরুষ" বা "আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি" বা "গুণাধীশ")] ভগবান #শ্রীরামচন্দ্র ইক্ষ্বাকুবংশজাত, জনগণ যাঁকে 'রাম' নামে জানেন, (তিনি) সংযতাত্মা, মহাবলবান, কান্তিমান, ধৈর্যশীল এবং জিতেন্দ্রিয়। তিনি (শ্রীরামচন্দ্র) সুবুদ্ধিমান, নীতিজ্ঞ, বাগ্মী, শ্রীমান, শত্রুসংহারক, তাঁর স্কন্ধদেশ সুদৃঢ়, বাহুযুগল দীর্ঘ, শঙ্খের ন্যায় তাঁর গ্রীবাদেশ এবং গণ্ডস্থলের ঊর্ধ্বদিক সুপুষ্ট। শ্রীরামচন্দ্রের বক্ষোদেশ বিশাল বিশাল ধনু তাঁর, তাঁর কণ্ঠাহি মাংস দ্বারা আচ্ছাদিত; তিনি শত্রুদমনকারী, আজানুলম্বিত বাহুদ্বয় তাঁর, সুন্দর মস্তক ও উন্নত ললাট এবং তাঁর গমনাগমন মনোহর বিক্রমশালী শ্রীরামচন্দ্রের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ সুবিভক্ত, তাঁর গাত্রবর্ণ সুস্নিগ্ধ। তিনি তেজস্বী। তাঁর বক্ষঃস্থল বিশাল এবং নেত্রন্বয় আয়ত। তিনি লক্ষ্মীবান ও শুভলক্ষণযুক্ত। শ্রীরামচন্দ্র ধর্মজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, প্রজা-কল্যাব্রতী, যশস্বী, জ্ঞানী, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় এবং যোগসমাধিমান পুরুষ। প্রজাপতি ব্রহ্মার ন্যায় বিশ্বের পালক, সর্বৈশ্বর্যসম্পন্ন, শত্রুমর্দনকারী এবং সকল প্রাণীর ও ধর্মের সংরক্ষক। (তিনি) স্বধর্ম এবং স্বজনদের প্রতিপালক, বেদ ও বেদাঙ্গগুলির গূঢ়রহস্যজ্ঞ এবং ধনুর্বিদ্যা বিষয়ে পারদর্শী। (তিনি) সকল শাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ববিষয়ে জ্ঞানী, প্রখর স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, প্রতিভাবান, সর্বজনপ্রিয়, সাধু, উদার ও বিচক্ষণ। নদীসমূহ যেমন সমুদ্রে মিলিত হয় তদ্রূপ সাধু সজ্জনগণ সর্বদা তাঁর শরণাগত হন। তিনি সদ্গুণসম্পন্ন, সর্বদাই সকলের সঙ্গে সমান ব্যবহারসম্পন্ন এবং প্রিয়দর্শন। তিনি সর্বগুঙাম্বিত হয়ে মাতা কৌশল্যার আনন্দবর্ধনকারী। গাম্ভীর্যে তিনি সমুদ্রের মতো এবং হিমালয়ের মতো ধৈর্যশীল।(শ্রীরামচন্দ্র) ভগবান বিষ্ণুর মতো বীর্যবান, চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধদর্শন। ক্রুদ্ধ হলে তিনি প্রলয়াগ্নির মতো (ভয়ঙ্কর) আবার ধরিত্রী মাতার ন্যায় তিনি ক্ষমাশীল। মহান ত্যাগী হলেও তাঁর ধন কুবেরের মতো অক্ষয় এবং সত্যপালনে তিনি দ্বিতীয় ধর্মের ন্যায়।
সূর্য বংশের বংশলতা

ব্ৰহ্মার পুত্র মরীচি, মরীচি পুত্র কশ্যপ, কশ্যপের পুত্র বিবস্বান্ (সূর্য) তাহা হতে বৈবস্বত মনুর জন্ম হয়।  বৈবস্বত মনুর পুত্র ইক্ষ্বাকু পর তার পুত্র

কুকশী বা ভিখুকশী
পুরণজয় বা কাকুৎস্থা
আনিনা বা আনরণ্য
পৃথু
ভীশ্বাগাশ্ব
অর্দ বা চন্দ্র
যুবনাশ্ব
শ্রাভাস্ত
বৃহদাশ্ব
যুবনাশ্ব(২)
মান্ধাতা বা মান্ধাত্রী
পুরুকুৎস(১)
কুভালশ্বর বা ধুন্দুমারা
দ্রিধাশ্ব
প্রমোদ
হরিশ্ব(১)
নিকুম্ভ
শান্তশ্ব
কৃষাশ্ব
প্রসেনজিৎ
এসাদাস্যু
সম্বুত
অনরণ্য(২)
এাসদাশ্ব
হরিয়াশ্বর(২)
ভাসুমন
এিধান্য
এায়ারুনা
সত্যব্রত বা ত্রিশঙ্কু
হরিশচন্দ্র
রোহিতাশ্ব
হরিৎ
চেঞ্চু
বিজয়
রুসক
ভৃকা
বাহু বা অসিত
সাগর
আসামানজশ (পঞ্চল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন)
অংশুমান
দিলিপ(১)
ভগীরথ
শ্রুত
নভগা
অশ্বরীশ
সিন্ধুদ্বীপ
প্রত্যয়ু
শ্রুতপর্ন
সর্বকাম
সুদান(কুরু বংশের প্রতিষ্ঠাতা)
মিত্রাশাহ
সর্বকাম(২)
অনরণ্য(৩)
নিঘ্না
অনিমিত্র
দুলিদুহ
দিলিপ(২)
রঘু(২)
অজ
দশরথ
রামচন্দ্র


PhotoText

1
(ছবিঃসূর্য ও চন্দ্র বংশ পুস্তক)
রামায়ণ সম্পর্কে একটা কথা বহুলভাবে প্রচলিত যে, সাতকাণ্ড রামায়ণ। কিন্তু রামায়ণ কি প্রকৃতপক্ষে সাতকাণ্ড ? না রামায়ণের প্রকৃত ৫ কন্ডের। যে সাত কাণ্ডের কথা বলা হয়, সেই নামগুলো হলো-

১। বালকাণ্ড
২। অযোধ্যাকাণ্ড
৩। অরণ্যকাণ্ড
৪। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড
৫। সুন্দরকাণ্ড
৬। যুদ্ধকাণ্ড এবং
৭। উত্তরকাণ্ড।

এ প্রসঙ্গে রাজশেখর বসু, যিনি বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণকে বাংলায় গদ্যে অনুবাদ করেছেন, তিনিতার গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন,

“বর্তমান বাল্মীকি রামায়ণের কতক অংশ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন উত্তরকাণ্ড। যুদ্ধকাণ্ডের শেষে রামায়ণ মাহাত্ম্য আছে, তাতেই প্রমান হয় যে মূল গ্রন্থ সেখানেই সমাপ্ত।”

এই উত্তরকাণ্ডেই আছে সীতার বনবাস এবং পরে যখন রাম আবার সীতাকে নিতে চায় তখন সবার প্রতি অভিমানে সীতার ভূগর্ভে প্রবেশ; এই বিষয়গুলোকে সত্য বলে মনে হয় না এই কারণে যে, একবার সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে রাম তাকে গ্রহন করেছিলেন, তাহলে পরে আবার কেনো রাম, সীতাকে বনবাস দেবেন ? রাম চরিত্রের এই দ্বিচারিতাই প্রমান করে, রামায়ণের উত্তরকাণ্ড, বাল্মীকি কর্তৃক রচিত নয়, পরে এগুলো কেউ রচনা করে বাল্মীকির মূল রামায়ণের সাথে জুড়ে দিয়েছে এবং তখন থেকে চলছে বাল্মীকির নামে সাত কাণ্ড রামায়ণ। উত্তরকাণ্ড যে পরে রচিত, এমন কি সেটা মহাভারতেরও পরে, তার প্রমান আছে মহাভারতেই; কারণ, মহাভারতে যে রাম উপাখ্যান আছে, তারও কাহিনী, রামের সীতা উদ্ধার পর্যন্তই শেষ। সুতরাং যুদ্ধ শেষে অযোধ্যায় ফেরার পর সীতার প্রতি রামের সন্দেহ এবং সীতার বনবাস পরবর্তী কাহিনী, যার জন্য রামকে অনেকেইঅভিযুক্ত করে এবং তার সমালোচনা করে, সেটা সত্য নয় বলেই প্রমাণিত হয়।

যা হোক, সংস্কৃত থেকে বাংলা গদ্যে অনুবাদ করা সময় কৃত্তিবাস ওঝা, রামায়ণের কী কী সর্বনাশ করেছেন এবার সেদিকে নজর দেওয়া যাক :

কৃত্তিবাস, রামায়ণ অনুবাদ করার সময় মূল রামায়ণ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে যা খুশি তাই রামায়নের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে হিন্দু সমাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে। অহিরাবণ মহীরাবনের পাতালের ঘটনা, বীরবাহুর বীরত্ব ও যুদ্ধ, তরণীসেনের কাহিনী, রামের অকাল বোধন, হনুমান কর্তৃক রাবণের মৃত্যুবাণ হরণ, সীতার রাবণমূর্তি অঙ্কন, মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামের শিক্ষা, লব ও কুশের যুদ্ধ সব কৃত্তিবাসের বানানো, এগুলোর একটিও সংস্কৃত রামায়ণে নেই। এভাবে কৃত্তিবাসের রাম, ত্রেতাযুগের কোনো ত্রাতা নয়, বিষ্ণুর কোনো অবতার নয়, এক পিতৃপরায়ণ সন্তান ও স্নেহপরায়ণ পিতা এবং একই সঙ্গে দ্বিধাগ্রস্ত ও সন্দেহে পর্যুদস্ত এক স্বামী । এ থেকে খুব সহজেই উপলবব্ধি করা যায় যে, কৃত্তিবাস- রামায়ণ অনুবাদ কালে বাল্মীকির প্রধান প্রধান কয়েকটি আখ্যান ও উপাখ্যান গ্রহণ করলেও সেগুলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রচনার শুরু থেকেই অগাধ স্বাধীনতা নিয়েছে এবং নিজের প্রয়োজনে বাল্মীকি থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই লিখেছেন। কৃত্তিবাসের এই স্বেচ্ছাচারী মনোভাবকে বুঝতে পেরেই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন,

‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যাহা তাহা সব সত্য নহে।
কবি, তব মনোভূমি, রামের জন্মস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’

যদিও এই কথাটি বলেছিলেন, নারদ, বাল্মীকিকে; কারণ, রাম-রাবনের যুদ্ধ শেষ হলে নারদ এই ইতিহাসটি বাল্মীকিকে রচনা করার জন্য অনুরোধ জানালে, বাল্মীকি বলেছিলেন, আমি তো সবটা জানি না, যদিও তার নাম এবং তার কীর্তিকাহিনী শুনেছি, কিন্তু সবটা না জেনে লিখে যদি সত্যভ্রষ্ট হই ? সেই ভয় আমার আছে, তখন নারদ বাল্মীকিকে বলেছিলেন,

‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি,….’

এই একই কথা কৃত্তিবাস সম্পর্কেও সত্য।

এর মাধ্যমে এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, রত্নাকর দস্যুর বাল্মীকি হয়ে উঠার কাহিনী সম্পূর্ণ মিথ্যা; কারণ, বাল্মীকিকে নারদ যখন রামের ইতিহাস লিখতে বলেন, তখন বাল্মীকি বলেন, “আমি রামের নাম এবং তার কীর্তিকথা শুনেছি, কিন্তু সবটা জানি না”, রত্নাকর দস্যু যদি রাম নাম জপ করে বাল্মীকি মুনিতে পরিণত হতেন, তাহলে কি তিনি এই কথা বলতে পারতেন ?

কৃত্তিবাস তো নিজের ইচ্ছামতো রামায়ণকে অনুবাদ করে যা তা কাহিনী ঢুকিয়েছেই, কিন্তু কৃত্তিবাস যেখানে মূল রামায়ণের কাহিনীকেই অনুসরণ করেছেন, সেখানেও তিনি কিভাবে রামায়ণকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছেন, তার একটি উদাহরণ দেখুন নিচে-

সংস্কৃত রামায়ণে, সীতাকে যখন রাবন ধরে নিয়ে যায়; তখন সীতা, রাবনের সাথে ভয়ংকরভাবে সাহসের সাথে তর্ক বিতর্ক করে। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে ঐ সময়ে সীতা একজন ভীরু ও দুর্বল মহিলা। কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামের চরিত্রও দুর্বল করে দেখানো হয়েছে এবং তাকে নপুংসক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, কৃত্তিবাসী রামায়ণে, রামের চরিত্র নিয়ে এই প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, রাম-সীতা বনে ১২ বছর এক সাথে থাকার পরেও কেনো সীতা গর্ভবতী হলো না ? কিন্তু সংস্কৃত রামায়ণের এই তথ্যকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বনবাসে যাওয়ার আগেই রাম সীতা প্রতিজ্ঞা করেছিলো, বনে গিয়ে তারা কোনো ভোগ-বিলাসে মত্ত হবে না; তারা বনবাসকালীন ব্রহ্মচর্য পালন করবে। তো যারা ব্রহ্মচর্য পালন করবে, তাদের সন্তান হবে কিভাবে ?

মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য লিখে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। কিন্তু তিনি এই কাব্য লিখেছিলেন হিন্দু সমাজ ও রামের প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়, রাবন ও মেঘনাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে; কারণ, তার কাছে রাবন ও মেঘনাদ ছিলো হিরো এবং রাম-লক্ষ্মণ ছিলেন ভিলেন; তাই রাম লক্ষ্মণের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি রচনা করেন মেঘনাদবধ কাব্য।মাইকেলের এই যে ভুল বুঝে ভিলেন কে নায়ক আর নায়ককে ভিলেন ভাবা বা বানানো, এর কারণও কৃত্তিবাস।

ঘটনাটি এরকম : মাইকেল তখন হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করে বাড়ি তথা কোলকাতা থেকে বিতাড়িত, খ্রিষ্টান পাদ্রীদের প্রতারণায় তখন তার ইংল্যান্ড যাওয়াও হয় নি; এখানে উল্লেখ্য যে, মাইকেলের খ্রিষ্টান হওয়ার মূল কারণই ছিলো ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া বা পাঠানোর শর্ত। কারণ, মাইকেলের বাপের সামর্থ্য থাকলেও, মাইকেল বিদেশে গেলেই কোনো ইংরেজ মেয়েকে বিয়ে করবে, এই ভয়ে তার বাপ তাকে বিদেশ পাঠাতে রাজী ছিলো না; কিন্তু মাইকেলের আজীবনের লালিত স্বপ্ন সে ইংল্যান্ড যাবে এবং ইংরেজিতে কাব্য চর্চা করে সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হবে; এই জন্যই মাইকেল খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে, যার মূল শর্তই ছিলো তাকে ইংল্যাল্ড পাঠাতে হবে; কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষা দেওয়ার পর পাদ্রীদের সেই ব্যাপারে আর কোনো আগ্রহ ছিলো না; শেষ পর্যন্ত মাইকেল গিয়ে স্থিতু হয় গুজরাটে এবং সেখানে অন্য এক পাদ্রীর মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করার এবং ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করে।
Untitledr

এই চেষ্টারই ফল স্বরূপ মাইকেল ইংরেজিতে রচনা করে ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ এবং আরো কিছু সনেট। কিন্তু সেগুলোর সমালোচনা করতে গিয়ে ইংরেজরা যখন বলে, মাইকেলের মতো লোকেদের উচিত মাতৃভাষায় কাব্য রচনা করা, তখন ইংরেজিতে কাব্য চর্চা করে কিছু করা যাবে না মনে করে মাইকেল বাংলার দিকে মন দেয় এবং কোলকাতায় থাকা তার এক বন্ধুকে চিঠি লিখে কিছু বাংলা বই পাঠাতে বলে; তখন বাংলা সাহিত্যের তেমন বইও ছিলো না; কারণ, তখন না ছিলো রবীন্দ্রনাথ, না ছিলো বঙ্কিম; তাই বই বলতে মধ্যযুগে অনুবাদ করা কিছু বই এবং মঙ্গলকাব্য। সেজন্য কোলকাতার সেই বন্ধু যেসব বই তাকে পাঠিয়েছিলো, তার মধ্যে একটি ছিলো এই কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং এই কৃত্তিবাসী রামায়ণের সকল কথা বিশ্বাস ক’রে অন্য সকল হিন্দুর মতো মাইকেলও হয়েছিলো বিভ্রান্ত; তাই বই পাঠানোর পরে, সেই বন্ধুকে মাইকেল চিঠি লিখে জানিয়েছিলো, লক্ষ্মণ যেভাবে কাপুরুষের মতো বিভীষণের সহায়তায় আড়াল থেক তীর মেরে মেঘনাদকে হত্যা করেছে, এর প্রতিশোধ আমি নেবো; আমি এই ঘটনা নিয়ে একটি মহাকাব্য লিখবো।

সেই মহাকাব্যই হলো মেঘনাদবধ কাব্য, এটা এক দিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্য এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সার্থক মহাকাব্য; এছাড়াও এটির মাধ্যমে রাম লক্ষ্মণের চরিত্রকে খাটো করে হিন্দু সমাজকে দমন করা যায় ব’লে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে বাংলা বিভাগে পড়ানোর জন্য মুসলমানদের কাছে এটি একটি পছন্দের কাব্য, যেমন পছন্দের কাব্য বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য; কারণ, এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের প্রধা্ন পুরুষ কৃষ্ণকে লম্পট হিসেবে প্রমান করা যায়।
যা হোক, মাইকেলের কেনো এত রাগ ছিলো লক্ষ্মণের উপর, যে কারণে ভিলেন রাবন এবং তার ছেলে মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিৎ তার কাছে হয়ে উঠলো হিরো এবং রাম লক্ষ্মণ তার কাছে হয়ে গেলোভিলেন ?

কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়ে, বাংলাদেশের নাস্তিকজগতের একটি বিখ্যাত নাম এবং নাস্তিকদের গুরু আরজ আলী মাতুব্বর, তার একটি লেখা ‘রাবনের প্রতিভা’য় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, রাম ছিলো সন্তান জন্ম দানে অক্ষম, কারণ বনবাসে এক সাথে ১২ বছর থাকলেও সীতার গর্ভে রাম কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারে নি; কিন্তু সীতাকে উদ্ধার করে আনার পর অগ্নিপরীক্ষা, যাকে আরজ আলী বিবেচনা করেছে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ হিসেবে, যাতে সীতা কিছুতেই স্বীকার করে নি যে রাবন তার সাথে কী করেছে, সেই অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সীতা নিজেকে নিষ্কলঙ্ক প্রমান করলেও পরে যখন সীতার গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন রাম প্রকৃত সত্য অর্থাৎ সীতার গর্ভের সন্তান যে রাবনের ই এটা বুঝতে পেরে সীতাকে আবার বনবাসে পাঠায়।

কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, সীতাকে উদ্ধার করে আনার পর প্রায় বছর খানেক কেটে গেছে, রাম এই ফাঁকে রাজ্যটাকে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তখনও সীতার গর্ভের লক্ষ্মণের কোনো খবর নেই, রাবন যদি সীতার সন্তানের পিতা হতো, তাহলে অযোধ্যায় ফেরার পর পরই তা অবশ্যই প্রকাশ পেয়ে যেতো। কিন্তু রাম, জনরবকে পাত্তা দিয়ে সীতাকে বনবাসে পাঠিয়ে দিলে বাল্মীকি মুনির আশ্রমে পৌঁছার পর সীতা যখন বুঝতে পারে যে তাকে বনবাস দেওয়া হয়েছে, তখন সীতা লক্ষ্মণকে বলে, তোমার ভাই আমাকে মিথ্যা সন্দেহে ত্যাগ করলেও তুমি জেনে যাও যে আমি সবে মাত্র গর্ভ ধারণ করেছি। কিনতু কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই ছোটখাটো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয় নি, যাতে সূক্ষ্ম ঘটনাগুলো ধরা পরে; যেমন- উল্লেখ করা হয় নি, প্রথম বার বনবাসের পূর্বেই রাম সীতা প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, তারা বনবাসে গিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হবে না, আর ভোগ বিলাসে মত্ত না হলে সন্তান হবে কিভাবে ? যে কথা উপরে একবার উল্লেখ করেছি। এই ভাবে কৃত্তিবাসী রামায়ণ যে কাউকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম, এই ভাবেই বিভ্রান্ত হয়েছিলো মাইকেল এবং সম্ভবত নিচের এই ঘটনাটা না জেনে-

কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে অনেকেই মনে করে লক্ষ্মণ, মেঘনাদকে বিনা যুদ্ধে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। অর্থাৎ এটাকে তারা ছলনা বলেই মনে করে। কিন্তু তারও আগে মেঘনাদ যে ছলনা করে রাম-লক্ষ্মণকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো, এটা অনেকেই জানে না বা বলা যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ তাদেরকে তা জানতে দেয় নি।

ঘটনাটি এরকম: মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ স্বয়ং যুদ্ধে নেমেও যখন কিছুতেই রাম লক্ষ্মণকে পরাস্ত করতে পারছিলো না, তখন সে একটি ছল করে; একদিন একটি মায়াসীতা তৈরি করে তার রথের উপর নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসে এবং এবং রাম লক্ষ্মণকে বলে, এই সীতাকে উদ্ধারের জন্যই তো তোমরা লংকায় যুদ্ধ করতে এসেছো ? এখন দেখো, একে আমি কিভাবে হত্যা করি? বলেই সে নির্মম প্রহারে সীতাকে হত্যা করে, এটা দেখেই রাম লক্ষ্মণ মূর্ছিত হয়ে পড়ে যায়। তারপর কোনোরকমে হনুমান, সুগ্রীব তাদেরকে সেভ করে শিবিরে নিয়ে আসে। পরে শিবিরে এসে বিভীষণ যখন রাম লক্ষ্মণের মূর্ছিত হওয়ার কারণ জানতে পারে, তখন তাদেরকে বলে যে, মেঘনাদ যাকে হত্যা করেছে সেটা আসল সীতা নয়, একটা নকল সীতা; কারণ, রাবন কিছুতেই মেঘনাদকে এই কাজ করতে দিতে পারে না।

ইন্দ্রজিতের এই ছলের বিপরীতেই বিভীষণ এবং লক্ষ্মণ আরেক ছলের পরিকল্পনা করে এবং তাতেই ইন্দ্রজিৎ মারা যায়। তো এখানে দোষ কী ? ছলের ফল তো ছল ই হয়।

কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণের এই সব ভুল ভাল তথ্যের বিরুদ্ধ সেই সময় কথা বলার কোনো লোক ছিলো না, কারণ সংস্কৃত জ্ঞানের অভাবে কেউ আসল সত্য সম্পর্কে অবগত ছিলো না। একই ঘটনা ঘটেছে মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশের পরেও, সঠিক জ্ঞানের অভাবে কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারে নি।

কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে, আরজ আলী এটা মনে করতো যে, রামের চেয়ে রাবনের প্রতিভা বেশি, কেননা রাবন সেই সময় তার চলাচলের জন্য পুষ্পক রথ বানিয়েছিলেন, যাতে করে সে সীতাকে অপহরণ ক’রে সমুদ্র পারি দিয়ে তাকে লংকায় নিয়ে গিয়েছিললো; কিন্তু আরজ আলীর মতে, রামের এমন কোন বিমান ছিলো না, তাই তাকে সকলের সহায়তায় সমুদ্রের উপর সেতু নির্মান করে লংকায় যেতে হয়। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণ এই তথ্য দেয় নি যে, রাবন যে পুষ্পক রথ ব্যবহার করতো, সেটা তার নিজের বানানো ছিলো না, ব্রহ্মা এই রথটি দিয়েছিলো কুবেরকে, কুবেরের কাছ থেকে রাবন তা ছিনতাই করে, যদিও কুবের ছিলো রাবনের সৎ ভাই।

এই ভাবে কৃত্তিবাস, রামায়ণের বহু সত্যকে চেপে গিয়ে বা কোথাও বিকৃত করে এক রামায়ণের মাধ্যমে হিন্দু সমাজের ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গেছে।

রামায়ণের পুষ্পক রথ অর্থাৎ বিমান থেকে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, হিন্দুরাই প্রথম বিমান আবিষ্কার করেছিলো বা হিন্দু ধর্মের তত্ত্ব বা প্রযুক্তিরই বাস্তব রূপায়ন আজকের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা।

যা হোক, কৃত্তিবাস- রামায়ণ নিয়ে যে ছেলে খেলা খেলেছে, এটার পেছনে মধ্যযুগের মুসলিম শাসকদের ছিলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন। কারণ, মধ্যযুগের মুসলিম শাসকরা চায় নি যে, হিন্দুধর্ম, হিন্দুদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হোক। তাই মধ্যযুগে শুধু অনুবাদ করা কাব্যেরই বিকৃতি নয়, নতুন নতুন পুরাণ এবং উপনিষদও লেখা হয়েছে এবং করা হয়েছিলো বেদেরও বিকৃতি। এসবই ছিলো হিন্দুধর্মকে হিন্দুদের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ক’রে, প্রকৃত হিন্দুত্বের রূপ হিন্দুদেরকে বুঝতে না দিয়ে, হিন্দুধর্ম ও কালচারকে ধ্বংস করার মধ্যযুগীয় ষড়যন্ত্র। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হলো, সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলমান এবং তা হিন্দুদের মাধ্যমেই।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে ছিলো এবং এখনও আছে- বহু জাতি এবং তাদের বহু ভাষা, কিন্তু তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি ছিলো এক এবং তা ছিলো সনাতন এবং সনাতন ধর্মের মূল গ্রন্থগুলো লিখিত ছিলো এবং আছে সংস্কৃত ভাষায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন জন, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় সনাতন ধর্মের এই গ্রন্থগুলোকে অনুবাদ করে; এভাবে অনুবাদ করার সময় সবার হাতেই প্রত্যেকটা গ্রন্থ কিছু না কিছু বিকৃত হয়েছেই, তাই ধর্ম এক হলেও ভারতের বিভিন্ন এলাকার কালচারে কিছু না কিছু ভিন্নতা আছেই; যেমন- কৃত্তিবাস, তার বাংলা রামায়ণে দুর্গা পূজার কথা উল্লেখ করেছিলো বলেই বাংলায় দুর্গা পূজা প্রচলিত হয়েছে, কিন্তু ভারতের আর অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রামায়ণ প্রচলিত থাকলেও দুর্গা পূজা প্রচলিত নেই, কারন আর কিছুই নয়, সেই সব এলাকায় যে বা যারা রামায়ণ অনুবাদ করেছে, তারা তার মধ্যে দুর্গা পূজার উল্লেখ করে নি বা হয়তো অন্য কোনো পূজার উল্লেখ করেছে, যার মাধ্যমে ঐ এলাকায় সেই ধরণের উৎসব চালু হয়ে গেছে। একারণেই সম্ভবত ভারতের একেক এলাকায়, একেক ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রাধান্য।

মধ্যযুগে যারা সংস্কৃত থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ অনুবাদ করেছে তারা যে তাদের ইচ্ছামতো যা খুশি তা অনুবাদ করেছে, সেটা তো কৃত্তিবাসের কীর্তি দেখে কিছুটা অনুমান করতে পেরেছেন। কিন্তু এই সময়ে এসেও কেউ যদি প্রকৃত সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের উদ্দেশ্যকে আপনি কীবলবেন ? নিশ্চয়, হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করার নতুন ষড়যন্ত্র ? হ্যাঁ, এই কাজটিই করা শুরু করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস।

গীতা প্রেস শুধু গীতা ই ছাপায় না, এরা প্রায় সব হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ, ভারতের প্রায় সব প্রধান ভাষায় ছাপিয়ে বিজনেস করে। এভাবে এরা বাংলা রামায়ণও সংস্কৃত থেকে অনুবাদ করে ছাপিয়ে বিক্রি করছে, কিন্তু সর্বনাশটা যেখানে করছে, তা হলো, তাদের ছাপানো গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তারা তাদের নিজস্ব বিশ্বাসকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার অপচেষ্টা করছে।

আমি যদি মাছ মাংস অর্থাৎ আমিষ খাই, সেটা যেমন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার; তেমনি আমি যদি নিরামিষ খাই, সেটাও আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমি যখনশাস্ত্রের কথা বলবো, তখন শাস্ত্রে যেটা লিখা আছে, সেটাই আমাকে বলতে হবে; সেখানে আমি যদি আমার মতামত বা ইচ্ছাকে কৌশলে শাস্ত্রের মধ্যে দিয় প্রকাশ বা প্রমান করার চেষ্টা করি, সেটাকে আপনার কী বলবেন ? নিশ্চয় অপরাধ ? সেই অপরাধই করে চলেছে গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস।

বাল্মীকি রামায়ণে বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্ট করে লিখা আছে যে, বনবাস কালে রাম সীতা লক্ষ্মণ বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করে তার মাংস খেতো। কিন্তু গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস যেহেতু চালায় একটি নিরামিষ ভোজী গোষ্ঠী অর্থাৎ তৃণভোজীরা, সেহেতু তারা ঐ সব শ্লোকের বাংলা অনুবাদ করা সময় টীকা হিসেবে লিখে দিয়েছে যে, এসব জায়গায় অমুক অমুক গাছের মূল বা ফল বুঝতে হবে। এর কারণ, তারা যেহেতু হিন্দু ধর্মের প্রকৃত সত্য না জেনে বিভ্রান্ত হয়ে নিরামিষ ভোজী, তারাও চায় সবাই তাদের মতো নিরামিষ ভোজী হোক; তাই তাদের মতে, রাম সীতার পক্ষে মাংস খাওয়া- ইন ওয়ান ওয়ার্ড- অসম্ভব।

আগের কয়েকটি পোস্টেও আমি এই কথা বলেছি যে, বনবাস কালে রাম সীতা বিভিন্ন প্রাণীর মাংস ভোজন করতেন; এটাও তথ্য প্রমান এবং উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে, সীতা যে হরিণ শিকারের জন্য রামকে পাঠায়, যে সময় সে রাবন কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলো, সেটা তারা খাওয়ার জন্যই শিকার করতে চেয়েছিলো; কারণ, হরিণ ধরে পোষার শখ করার মতো অবস্থা সেই সময় সীতার ছিলো না। কিন্তু সীতার হরিণ ধরতে চাওয়ার কারণ তো পাবলিককে নিরামিষ আকারে বোঝাতে হবে যে কেনো সীতা, রামকে হরিণ ধরতে পাঠিয়েছিলো ? তাই কৌশলে সেই মায়া হরিণকে সোনার হরিণ বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সোনার হরিণ বলে যে বাস্তবে কিছু হয় না, সেটা আমাদের বাঙ্গালি হিন্দুদের মাথায় গত ৫/৬ শ বছরেও ধরা পড়ে নি, আমি বলার আগে।

যা হোক, এবার দেখে নিন, সংস্কৃত রামায়ণের কোথায় কোথায় রাম সীতার মাংস ভোজনের কথা আছে:

অযোধ্যাকাণ্ডের ১৪ নং উপাখ্যান (শৃঙ্গবেরপুর- নিষাদরাজ গৃহ) সর্গ : ৪৯-৫২ তে এক জায়গায় রাম তার পিতার প্রধানমন্ত্রী সুমন্ত্র, যে রামকে বনে ছাড়তে গিয়েছিলো, তাকে বলছে,

“আবার আমি কবে পিতা মাতার সঙ্গে মিলিত হয়ে সরযুতটের পুষ্পিত বনে মৃগয়া করবো ?” (ফটোপোস্টে যুক্ত পুস্তকের পৃষ্ঠা ১০৬)

যারা জানেন না, তাদের জন্য বলছি- মৃগয়া মানে শিকার করা, আর এই শব্দটি এসেছে মৃগ থেকে যার অর্থ হরিণ। প্রাচীন কালের রাজারা শুধু হরিণকেই শিকার করতো, তাই হরিণের প্রতিশব্দ মৃগ থেকে মৃগয়া শব্দের উৎপত্তি। আর রাজারা অন্যান্য হিংস্র প্রাণী বীরত্ব দেখানোর জন্য শিকার করলেও তৃণভোজী প্রাণী কিন্তু শিকার করতো শুধু মাত্র ভোজনের উদ্দেশ্যে। তাহলে রামের মৃগয়া করার উদ্দেশ্যটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ? না পারলেও একটু পরেই সেটা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। কা্রণ, এই উপাখ্যানেরই শেষের দিকে, উল্লিখিত পুস্তকের পৃষ্ঠা ১০৯ তে, সীতা গঙ্গার কাছে প্রার্থনা করে বলছে, আমরা যদি ঠিক ঠাক মতো বনবাস শেষ করে রাজ্যে ফিরে যেতে পারি, তাহলে, “তোমাকে সহস্র ঘট সূরা এবং মাংসযুক্ত অন্নের ভোগ দেবো।”

যে মাংস খায় না, তার পক্ষে কি মাংসের ভোগ দেওয়া সম্ভব ?

এই পৃষ্ঠাতেই এই উপাখ্যানের একেবারে শেষ অনুচ্ছেদে বলা আছে,

“কিছুকক্ষণ পর তারা সমৃদ্ধ শস্যসম্পন্ন বৎস্যদেশে উপস্থিত হলেন। সেখানে রাম লক্ষ্মণ- বরাহ (শুকর), ঋষ্য, পৃষত (কৃষ্ণসার হরিণ) এবং মহারুরু (শম্বর, এটা আমার অচেনা) এই চার প্রকার পশু বধ করে, তাদের পবিত্র মাংস নিয়ে ক্ষুধিত হয়ে সায়ংকালে বাসের নিমিত্তে বনে প্রবেশ করলেন।”

রাম-লক্ষ্মণ-সীতা যদি মাংসই না খায়, তাহলে তারা এই পশুগুলো হত্যা করলো কেনো ?

এরপর অযোধ্যাকাণ্ডের ১৫ নং উপাখ্যান, উক্ত পুস্তকের পৃষ্ঠা নং ১১১ তে বলা আছে, “এক ক্রোশ গিয়ে দুই ভ্রাতা বহু প্রকার পবিত্র মৃগ বধ করে এনে যমুনা তীরস্থ বনে ভোজন করলেন।”

এবং পৃষ্ঠা ১১২ তে বলা আছে- রাম, লক্ষ্মণকে বলছে,

“অতএব তুমি মৃগ বধ কর নিয়ে এসো। লক্ষ্মণ পবিত্র মৃগ বধ করে এনে তার মাংস অগ্নিপক্ব ও শোনিত শূন্য করে রামকে দিলেন।”

শুধু যে রাম লক্ষ্মণ সীতা ই মাংস খেতো, তাই নয়, খেতো ভরতও, তার প্রমান আছে, পৃষ্ঠা ১২৯ এ; সেখানে, রামের সাথে দেখা করে তাকে রাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ভরত বনের মধ্যে এলে, গুহ নামক একব্যক্তির জনপদের কাছে ভরত শিবির ফেলে বিশ্রামের জন্য, খবর এবং পরিচয় পেয়ে সেই গুহ, মৎস্য-মাংস-মধু উপহার নিয়ে ভরতের সাথ দেখা করতে যায়।

সেগুলো যদি না খাওয়া হয়, তাহলে সেগুলো উপহার নিয়ে যাবে কেনো ?

গুহ এর ওখান থেকে ভরত যায় ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে, সেখান ভরতের সাথের সকল সৈন্যসামন্তকে বলা হয়, “সূরাপায়িগন সূরা পান করো, বুভূক্ষিতগণ পায়স ও সুসংস্কৃত মাংস যা ইচ্ছা হয় খাও”(পৃষ্ঠা-১৩২)।অনেক কিছুর সাথে এখানে ভরতের লোকজনের আপ্যায়ণের জন্য ছিলো- ছাগ ও বরাহের মাংস, মৃগ, ময়ূর ও কুক্কুটের(মুরগী) মাংস (পৃষ্ঠা-১৩৩)। এই তথ্যেএখানে পরিষ্কার যে, সেকালে ঋষিরাও মাংস খেতো, কেউ নিরামিষ ভোজী ছিলো না।

এরপর অরণ্যকাণ্ডের ১১ নং উপাখ্যান “মায়া মৃগ ও মারীচ বধ”, যে উপাখ্যানের ঘটনায় একটি সুন্দর হরিণ দেখে সীতা রামকে সেই হরিণ ধরে আনার জন্য বলেছিলো, সেই হরিণ ছিলো আসলেই একটি মায়া হরিণ, কিন্তু প্রচলিত ধারণা মতো সোনার হরিণ নয়, রামকে বিভ্রান্ত করার জন্য মারীচ এই হরিণের রূপ ধরেছিলো। যা হোক, এই উপাখ্যানের শেষে বলা আছে, শেষ পর্যন্ত সেই মায়া হরিণকে না পেয়ে “রাম অন্য মৃগ বধ করে মাংস নিয়ে আশ্রমের দিকে চললেন (পৃষ্ঠা-১৭৮)।”

রাম সীতা যদি মাংসই না খায়, তাহলে রাম, সীতার সেই পছন্দের হরিণকে ধরতে না পেরে অন্য হরিণ বধ করলো কেনো ?

শুধু তাই নয়, রাবন যখন সীতাকে অপহরণ করতে ছদ্মবেশে গেছে, তখন রাবনকে সীতা চিনতে না পেরে বলছে,

“আপনি একটু বিশ্রাম করুন, আমার স্বামী শীঘ্রই রুরু (হরিণ), গোধা (গোসাপ) বরাহ প্রভূতি পশু বধ করে নিয়ে আসবেন।”(পৃষ্ঠা-১৮২)

রাম সীতা যদি মাংসই না খায় তাহলে রাম এই পশুগুলো শিকার করবে কেনো এবং কেনো সীতা, একজন অতিথিকে মাংস খাওয়ানোর লোভ দেখাচ্ছে ?

এরপর সুন্দরকাণ্ডের ৭ নং উপাখ্যান, ‘সীতা হনুমান সংবাদ’ এ, হনুমান, সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে রামের কী অবস্থা সেটা তাকে বোঝানোর জন্য বলছে, “তিনি মাংস খান না, মদ্য পান করেন না, কেবল বিহিত বন্য ফলমুল খান।” (পৃষ্ঠা-২৭৭)

সীতার শোকে রাম যে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সেই কথা ই হনুমান এখানে সীতাকে বোঝাচ্ছে।

আশা করছি, রাম- সীতা যে নিরামিষভোজী ছিলো না, সেই বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। তারপরও যদি গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস এর লোকজনের মতো আপনার এই ধারণা থাকে যে, না, রাম সীতার পক্ষে মাংস খাওয়া অসম্ভব। তাহলে রাজশেখর বসুর অনুবাদ করা এই রামায়ণটি আপনাকে কালেক্ট করে পড়তে হবে। কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলতে পারেন যে, রাজশেখর বসুই যে রামায়ণের সঠিক অনুবাদ করেছে, তার নিশ্চয়তা কী ? তাহলে তো আপনাকে এটা পড়তেই হবে। কারণ, পড়ার পরই আপনি বুঝতে পারবেন, অনুবাদ কী এবং অনুবাদ করা কাকে বলে ?

এবার কৃত্তিবাসী রামায়ণের কিছু মজার গল্প আপনাদের শোনাই :

“রামের লঙ্কা অভিযানের সময়, রাবনের মানসপুত্র অহিরাবনছিলো পাতাল পতি এবং অহিরাবনের পুত্রের নাম মহীরাবন। রাম যখন রাবনের সৈন্যদের মেরে ছারখার করছিলো, তখন উপায় না দেখে রাবন তার অনুগত, অহিরাবন ও মহীরাবনকে তলব ক’রে রাম লক্ষ্মনকে হত্যার নির্দেশ দেয়। অহিরাবন তার মন্ত্রের শক্তি দ্বারা পাতাল থেকে রামের শিবিরে রামের ঘর পর্যন্ত সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং মন্ত্রের শক্তিতে রাম লক্ষ্মণ ক’রে অজ্ঞান করে পাতালে নিয়ে যায়। হনুমান যখন বুঝতে পারে যে রাম লক্ষ্মণকে অপহরণ করা হয়েছে, তখন সেই সুড়ঙ্গ পথেই হনুমান পাতালে নেমে মহিরাবনের মন্দিরে চলে যায় এবং সেখানে রাম লক্ষ্মণকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পেয়ে দেবী পাতাল ভৈরবীর মূর্তির পেছনে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এরপর মহিরাবন সেখানে আসে এবং রাম লক্ষ্মণকে দেবীর কাছে বলি হওয়ার আদেশ দিয়ে প্রণাম করার ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রাখতে বললে- রাম বলে,

“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও।”

শুনে মহিরাবন বলে, “এই কথা, দাঁড়াও শিখিয়ে দিচ্ছি,” এই ব’লে মহিরাবন যেই প্রণামের ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রেখেছে, অমনি হনুমান মূর্তির পেছন থেকে বেরিয়ে এসে হাড়িকাঠের শিক আটকে দিয়ে এক কোপে মহিরাবনের গলা কেটে ফেলেছে। মহিরাবন শেষ।

এরপর অহিরাবন সহ অন্যান্যরা এলে তাদেরকেও রাম, লক্ষ্মণ ও হনুমান মেরে সাফ করে দেয়। এরপর কৃত্তিবাস মৎস্য কন্যা বলে হনুমানের এক স্ত্রীর এবং মকরধ্বজ নামে এক পুত্রের আবির্ভাব ঘটায়, যে পুত্রের হাতে পাতাল শাসনের ভার দিয়ে রাম-লক্ষ্মন-হনুমান ফিরে আসে; এখানে রামের মুখে বলানো-“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও”- এটা পড়ার পর আমার মনে হলো, এ্যাডাল্ট সিনেমাগুলোতে যেমন সতর্কবাণী থাকে যে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচের কারো দেখা নিষেধ, তেমনি কৃত্তিবাসের রামায়ণের উপর লিখে দেওয়া দরকার যে,

“ছোটদের রামায়ণ, ১০ বছরের উর্ধ্বের কেউ পড়বেন না।”

কারণ, কেচ্ছার মতো ঐ গল্প বড়দের জন্য নয়, শিশুদের জন্যই মানায় ভালো। বিয়ে শাদী করা প্রাপ্ত বয়স্ক একজন লোক বলছে যে, ‘প্রণাম কিভাবে করতে হয় আমরা জানি না’, আর সেটা আরেক প্রাপ্ত বয়স্ক রাজা বিশ্বাস করছে; কৃত্তিবাস এখন বেঁচে থাকলে এসব লেখার জন্য পাবলিকের মার খেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ওকে হসপিটালে ভর্তি হতে হতো।

যা হোক, রামায়ণ নিয়ে আরো কিছু কথা না বললেই নয়- রামায়ণ, মহাভারতের মতো নির্ভুল গ্রন্থ নয়। এখানে সংখ্যাতত্ত্বের বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে। যেমন- যুদ্ধকাণ্ডের ৪ নং উপাখ্যানে বলা আছে,

“সমুদ্রের উপর সীমন্তরেখার ন্যায় শোভমান এই সেতুপথে সহস্র কোটি বানর লাফাতে লাফাতে সগর্জনে পার হতে লাগলো।”

এই বানররা যে বানর ছিলো না, ছিলো মানুষ, সেটা একটু পরেই আপনার বুঝতে পারবেন, এখানে শুধু সংখ্যাটা খেয়াল রাখুন, সহস্র কোটি মানে হাজার কোটি; এখনও সারা পৃথিবীর মানুষের সংখ্যা ১ হাজার কোটি নয়, অথচ এই হাজার কোটি বানর সমুদ্র পার হয়ে লংকার মতো একটি ছোট দ্বীপে থাকতে পারছে! শুধু তাই নয়, রাবন যখন রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, তখন সে কী কী নিয়ে যুদ্ধ করতে আসে দেখুন- এক নিযুত(১০ লক্ষ) রথ, তিন নিযুত (৩০ লক্ষ) হস্তী, ষাট কোটি অশ্ব, ও অসংখ্য পদাতিক সৈন্য (পৃষ্ঠা-৩৬৯)। ১০ লক্ষ রথে কমপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষ ছিলো; কারণ, একজন রথ চালায় এবং অন্যজন যুদ্ধ করে; একইভাবে ৩০ লক্ষ হাতিতেও কমপক্ষে ৬০ লক্ষ মানুষ ছিলো, তারপর ষাট কোটি ঘোড়ায় ৬০ কোটি মানুষ; এভাবে রাবনের বাহিনীতে ছিলো প্রায় ৬১ কোটি মানুষ এবং তাদের রথ, হাতি ও ঘোড়া। খেয়াল করবেন, রাম ও রাবনের এই সমগ্র বাহিনী কিন্তু যুদ্ধ করছে লংকার মতো একটি ছোট্ট দ্বীপে, এটা কি সম্ভব ?

রাজশেখর বসুর অনুবাদের সত্যতা নিয়ে যাদের সন্দেহ আছে, তাদের জন্য এখানে আছে একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত, অনুবাদ হয় এইরকমই, যেখানে ব্যক্তিগত লাভালাভ বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সত্যকে বিকৃতি বা চাপা দেওয়া হয় না। বসু মহাশয় চাইলেই এই সংখ্যাগুলোকে কম করে লিখে একটা বাস্তব রূপ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেই চেষ্টা করেন নি, যা পেয়েছেন তাই লিখেছেন। এই একই কারণে কোরানের বাংলা অনুবাদ যদি আপনারা গিরিশের টা না পড়েন, প্রকৃত সত্যের নাগাল কখনো পাবেন না। কারণ, গিরিশ, কোরান অনুবাদ করেছিলেন নিজের লাভালাভের কথা চিন্তা না করে; কিন্তু পরে যে সব মুসলমান কোরান অনুবাদ করেছে, তাদের সবার মাথায় ছিলো বেহেশতের ৭২ হুরের চিন্তা।

এছাড়াও, রামায়ণ পড়লে, রামের বনবাস এবং যুদ্ধকালীন, শুধু রাম-সীতা এবং লক্ষ্মণকেই আপনি মানুষ হিসেবে পাবেন, আর তাদের আশে পাশে যাদেরকে পাবেন, তারা সবাই বানর, রাক্ষস ইত্যাদি। রাক্ষস বলতে প্রকৃতপক্ষে কিছু নেই, আছে রাক্ষস স্বভাবের মানুষ; সেই হিসেবে রাবনের পক্ষের সবাই রাক্ষস স্বভাবের মানুষ। কিন্তু বিভীষণ সেই রাক্ষস স্বভাবের উর্ধ্বে ছিলো বলেই তাকে আমরা সুসংস্কৃত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি, যদিও তিনি রাক্ষসকূলজাত। বিভীষণ যদি প্রকৃতই রাক্ষস হতো বা রাক্ষস বলে যদি আলা্দা প্রজাতির কোনো প্রাণী থাকতো, তাহলে বিভীষণ মানুষের মতো বিচার বুদ্ধি বা আচরণ করে কিভাবে ?

এরপর বালী- সুগ্রীবের কাহিনী যখন আপনি পড়বেন, তখন আপনার মনেই হবে না যে, তারা বানর; কারণ, তাদের রাজ্য আছে, রাজত্ব আছে, তারা মানুষের মতো কথা বলে, তাদের স্ত্রী সন্তান আছে, তাদের বসবাস করার জন্য নগর, দালান- ইমারত আছে। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে বানর হতো, তাহলে তারা কি এসব নির্মান করতে পারতো, না তাদের জীবনে এসবের প্রয়োজন হতো ? আর বানর হিসেবে এইরকম বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষই বা কিভাবে সম্ভব ? এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই বুঝতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি, প্রাচীন যুগের মানুষের গোত্র বিভাগ কিভাবে হয়েছিলো, সেই ইতিহাস না জানবেন।

আমরা অনেক হিন্দুরই নামের শেষে পদবী হিসেবে লাগানো দেখি সিংহ (Lion), কারো নামের সাথে নাগ (সাপ) বা কারো সাথে সেন (শ্যেন, বাজ পাখি)। কিন্তু এগুলো কেনো ? যাদের নামের সাথে সিংহ লাগানো আছে তারা কি প্রকৃত পক্ষেই সিংহ, বা যাদের নামের সাথে নাগ আছে, তারা সাপ ? আসলে তারা প্রকৃত সিংহ, সাপ বা বাজপাখি নয়। প্রাচীন কালে এক গোত্রের মানুষের থেকে অন্য গোত্রের মানুষকে আলাদা করার জন্য পশু পাখিদের নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছিলো, শুধু কোন গোত্রের মানুষ, তা আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য। বানর রাজ সুগ্রীব বা বালি বলতে বানরদের রাজাকে বোঝায় না, এরা আসলে বানর গোত্রের মানুষদের রাজা। তাই রামায়ণে বানর, রাক্ষস বলতে যাদেরকে বোঝানো হয়, আসলে এরা কেউ প্রকৃত অর্থে বানর বা রাক্ষস নয়, সবাই মানুষ, তবে ভিন্ন গোত্র বা ভিন্ন ধরণের।

তথ্য সূত্র https://www.ধর্ম্মতত্ত্ব.com








 

Friday, August 18, 2023

Post # 1143 Bengali Amarchitra Katha Special Issue

                                                                  ডাউনলোড করুন

 

 

 উইকিপিডিয়া থেকে

পরমহংস যোগানন্দ (জন্ম মুকুন্দ লাল ঘোষ ; 5 জানুয়ারী, 1893 - মার্চ 7, 1952) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী , যোগী এবং গুরু যিনি তার সংস্থা, আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপ (SRF) / যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধ্যান এবং ক্রিয়া যোগের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের - একমাত্র তিনিই তাঁর শিক্ষা প্রচারের জন্য তৈরি করেছিলেন। যোগ গুরু স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বর গিরির একজন প্রধান শিষ্য , তিনি তাঁর বংশের দ্বারা পশ্চিমে যোগের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। তিনি 27 বছর বয়সে আমেরিকায় চলে যান  প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য ধর্মের মধ্যে ঐক্য প্রমাণ করা এবং পাশ্চাত্য বস্তুগত বৃদ্ধি এবং ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ভারসাম্য প্রচার করা। আমেরিকান যোগ আন্দোলনে এবং বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসের যোগ সংস্কৃতিতে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব , তাকে যোগ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা "পশ্চিমে যোগের জনক" বলে বিবেচিত করে। তিনি আমেরিকায় তার শেষ 32 বছর বসবাস করেন। 

যোগানন্দ ছিলেন আমেরিকায় স্থায়ী হওয়া প্রথম প্রধান ভারতীয় শিক্ষক এবং হোয়াইট হাউসে হোস্ট করা প্রথম বিশিষ্ট ভারতীয় ( 1927 সালে রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ দ্বারা); তার প্রাথমিক প্রশংসা তাকে লস এঞ্জেলেস টাইমস দ্বারা "20 শতকের প্রথম সুপারস্টার গুরু" হিসেবে অভিহিত করে ।  1920 সালে বোস্টনে পৌঁছে, 1925 সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে বসতি স্থাপনের আগে তিনি একটি সফল ট্রান্সকন্টিনেন্টাল স্পিকিং ট্যুর শুরু করেন। পরবর্তী আড়াই দশক ধরে, তিনি স্থানীয় খ্যাতি অর্জন করেন এবং বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করেন: তিনি একটি সন্ন্যাসীর আদেশ তৈরি করেন এবং প্রশিক্ষিত শিষ্যরা, শিক্ষাদান-ভ্রমণে গিয়েছিলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন লোকেলে তার সংস্থার জন্য সম্পত্তি কিনেছিলেন এবং হাজার হাজার ক্রিয়া যোগে দীক্ষিত হন। [৫]1952 সাল নাগাদ, SRF-এর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 100 টিরও বেশি কেন্দ্র ছিল। 2012 সালের হিসাবে , প্রায় প্রতিটি বড় আমেরিকান শহরে তাদের গ্রুপ ছিল।  তাঁর "সরল জীবনযাপন এবং উচ্চ চিন্তাভাবনা" নীতিগুলি তাঁর অনুসারীদের মধ্যে সমস্ত পটভূমির মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। 

তিনি 1946 সালে একটি যোগীর আত্মজীবনী প্রকাশ করেন যা সমালোচক ও বাণিজ্যিক প্রশংসা লাভ করে। এটি চার মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি করেছে, হার্পার সান ফ্রান্সিসকো এটিকে "20 শতকের 100 সেরা আধ্যাত্মিক বই" হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।  অ্যাপলের প্রাক্তন সিইও স্টিভ জবস বইটির ৫০০ কপি অর্ডার দিয়েছিলেন, তার স্মৃতিসৌধে প্রত্যেক অতিথিকে একটি কপি দেওয়ার জন্য। বইটি নিয়মিতভাবে পুনঃমুদ্রিত হয়েছে এবং "যে বইটি লক্ষাধিক মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে" নামে পরিচিত। এসআরএফ দ্বারা পরিচালিত তার জীবন সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র, জাগ্রত: দ্য লাইফ অফ যোগানন্দ , 2014 সালে মুক্তি পায় তিনি পশ্চিমা আধ্যাত্মিকতার একটি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব অবশেষ। যোগানন্দের একজন জীবনীকার, ফিলিপ গোল্ডবার্গ তাকে "পশ্চিমে আসা সমস্ত ভারতীয় আধ্যাত্মিক শিক্ষকদের মধ্যে সেরা পরিচিত এবং সবচেয়ে প্রিয়" বলে মনে করেন। 

ছয় বছর বয়সে যোগানন্দ

যোগানন্দ ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে মুকুন্দ লাল ঘোষের জন্মেছিলেন একজন হিন্দু বাঙালি , কায়স্থ - ক্ষত্রিয় পরিবারে [১৬] তিনি ছিলেন বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভগবতী চরণ ঘোষ এবং জ্ঞানপ্রভা দেবীর আট সন্তানের মধ্যে চতুর্থ এবং চার পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই সানন্দের মতে, আধ্যাত্মিক বিষয়ে মুকুন্দের সচেতনতা এবং অভিজ্ঞতা তার প্রথম বছর থেকেই সাধারণের বাইরে ছিল।  যেহেতু তার বাবা বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তাই তার চাকরির প্রকৃতির কারণে মুকুন্দের শৈশবকালে পরিবারটি বেশ কয়েকবার স্থানান্তরিত হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল লাহোর , বেরেলি এবং কলকাতা ।  একজন যোগীর আত্মজীবনী অনুসারে , তার বয়স যখন এগারো বছর, তার মা মারা যান, তার বড় ভাই অনন্তের বিয়ের ঠিক আগে; তিনি মুকুন্দার জন্য একটি পবিত্র তাবিজ রেখে গিয়েছিলেন, যা তাকে একজন পবিত্র ব্যক্তি দ্বারা দেওয়া হয়েছিল, যিনি তাকে বলেছিলেন যে মুকুন্দাকে কয়েক বছরের জন্য এটির অধিকারী হতে হবে, তার পরে এটি যে ইথার থেকে এসেছে তাতে অদৃশ্য হয়ে যাবে। তার শৈশব জুড়ে, তার বাবা দূরবর্তী শহর এবং তীর্থস্থানে তার বহু দর্শনীয় ভ্রমণের জন্য ট্রেনের পাসের অর্থ প্রদান করতেন, যা তিনি প্রায়শই বন্ধুদের সাথে নিয়ে যেতেন। যৌবনে তিনি সোহম "টাইগার" স্বামী , গান্ধা বাবা এবং সহ ভারতের অনেক হিন্দু ঋষি ও সাধুদের সন্ধান করেছিলেন।মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত , তার আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে তাকে গাইড করার জন্য একজন আলোকিত শিক্ষক খুঁজে পাওয়ার আশা করছেন। 

হাই স্কুল শেষ করার পর, মুকুন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং বারাণসীতে একটি মহামণ্ডল হারমিটেজে যোগ দেন ; যাইহোক, তিনি শীঘ্রই ধ্যান এবং ঈশ্বর- উপলব্ধির পরিবর্তে সাংগঠনিক কাজের উপর জোর দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হন। তিনি হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করতে লাগলেন; 1910 সালে, 17 বছর বয়সে, তিনি তার গুরু স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বর গিরির সাথে দেখা করার সময় বিভিন্ন শিক্ষকের খোঁজে তার বেশিরভাগই শেষ হয়ে যায় ;  সেই সময়ে তার সু-রক্ষিত তাবিজ রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, যার আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ছিল। তাঁর আত্মজীবনীতে, তিনি শ্রীযুক্তেশ্বরের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাতকে এমন একটি সম্পর্কের পুনরুজ্জীবিত হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা বহুকাল ধরে স্থায়ী ছিল:

"আমরা নীরবতার একত্বে প্রবেশ করেছি; শব্দগুলিকে সবচেয়ে বেশি উচ্চতা বলে মনে হয়েছিল। গুরুর হৃদয় থেকে শিষ্যের হৃদয়ে শব্দহীন কণ্ঠে বাগ্মীতা প্রবাহিত হয়েছিল। অপরিবর্তনীয় অন্তর্দৃষ্টির অ্যান্টেনার সাথে আমি অনুভব করেছি যে আমার গুরু ঈশ্বরকে জানেন, এবং আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন। এর অস্পষ্টতা এই জীবন জন্মপূর্ব স্মৃতির একটি ভঙ্গুর ভোরে অদৃশ্য হয়ে গেল। নাটকীয় সময়! অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এর সাইকেল চালানোর দৃশ্য। এই পবিত্র পায়ে আমাকে খুঁজে পাওয়া এই প্রথম সূর্য ছিল না!" 

তিনি শ্রীরামপুর এবং পুরীর আশ্রমে পরবর্তী দশ বছর (1910-1920) তাঁর শিষ্য হিসাবে শ্রীযুক্তেশ্বরের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন পরে শ্রীযুক্তেশ্বর মুকুন্দকে জানান যে যোগব্যায়াম প্রচারের একটি বিশেষ বিশ্ব উদ্দেশ্যে তাকে তাদের বংশের মহান গুরু মহাবতার বাবাজি তার কাছে পাঠিয়েছিলেন । 

1915 সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আর্টসে তার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর , তিনি কলেজের শ্রীরামপুর কলেজ থেকে বর্তমান সময়ের ব্যাচেলর অফ আর্টস বা বিএ (তখন এবি হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এর অনুরূপ ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হন। দুটি সত্ত্বা রয়েছে, একটি শ্রীরামপুর কলেজের (বিশ্ববিদ্যালয়) সেনেটের একটি কন্সটিটুয়েন্ট কলেজ হিসেবে এবং অন্যটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে এটি তাকে শ্রীরামপুরে যুক্তেশ্বরের আশ্রমে সময় কাটাতে দেয় ।

1915 সালের জুলাই মাসে, কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, তিনি সন্ন্যাসী স্বামী আদেশে আনুষ্ঠানিক ব্রত গ্রহণ করেন; শ্রী যুক্তেশ্বর তাকে তার নিজের নাম বেছে নিতে দিয়েছেন: স্বামী যোগানন্দ গিরি।  1917 সালে, যোগানন্দ পশ্চিমবঙ্গের দিহিকাতে ছেলেদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা যোগ প্রশিক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক আদর্শের সাথে আধুনিক শিক্ষাগত কৌশলগুলিকে একত্রিত করে। এক বছর পরে , স্কুলটি রাঁচিতে স্থানান্তরিত হয় ।  স্কুলের প্রথম ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ ভাই, বিষ্ণুচরণ ঘোষ , যিনি সেখানে যোগাসন শিখেছিলেন এবং বিক্রম চৌধুরীর কাছে আসন শিখিয়েছিলেন । এই স্কুলটি পরে ভারতের যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটি হয়ে উঠবে, যা যোগানন্দের আমেরিকান সংস্থা, আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপের ভারতীয় শাখা।

আমেরিকায় শিক্ষকতা

1910 সালে ধ্যান করা

1920 সালে, তার রাঁচির স্কুলে একদিন ধ্যান করার সময়, যোগানন্দ একটি দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছিলেন: বহু আমেরিকানদের মুখ তার মনের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাকে জানিয়েছিল যে তিনি শীঘ্রই আমেরিকা যাবেন। স্কুলের দায়িত্ব তার অনুষদের (এবং অবশেষে তার ভাই শিষ্য স্বামী সত্যানন্দের কাছে ) দেওয়ার পর, তিনি কলকাতা চলে যান; পরের দিন তিনি আমেরিকান ইউনিটেরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন যাতে সে বছর বোস্টনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় উদারপন্থীদের কংগ্রেসে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে ।  যোগানন্দ তার গুরুর পরামর্শ চেয়েছিলেন এবং শ্রীযুক্তেশ্বর তাকে যেতে পরামর্শ দেন। ফিলিপ গোল্ডবার্গের মতে, যোগানন্দ তার অটোবায়োগ্রাফি অফ এ যোগী বইতে নিম্নলিখিত বিবরণটি ভাগ করেছেন. তাঁর ঘরে গভীর প্রার্থনা করার সময়, তিনি তাঁর বংশের মহান গুরু মহাবতার বাবাজির কাছ থেকে একটি আশ্চর্যজনক সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যিনি তাঁকে সরাসরি বলেছিলেন যে তিনিই পশ্চিমে ক্রিয়া যোগ প্রচার করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আশ্বস্ত ও উন্নীত, যোগানন্দ শীঘ্রই বোস্টনে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই অ্যাকাউন্টটি তার বক্তৃতার একটি আদর্শ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। 

 

1920 সালের আগস্টে, তিনি "দ্য সিটি অফ স্পার্টা" জাহাজে চড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন দুই মাসের সমুদ্রযাত্রায় যা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বোস্টনের কাছে অবতরণ করে।  অক্টোবরের শুরুতে তিনি আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে বক্তৃতা করেন এবং সমাদৃত হন; সেই বছরের পরে তিনি ভারতের প্রাচীন অনুশীলন এবং যোগের দর্শন এবং এর ধ্যানের ঐতিহ্যের উপর তার শিক্ষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপ (SRF) প্রতিষ্ঠা করেন।  যোগানন্দ পরের চার বছর বস্টনে কাটিয়েছেন; অন্তর্বর্তী সময়ে, তিনি পূর্ব উপকূলে বক্তৃতা ও শিক্ষা দেন  এবং 1924 সালে একটি আন্ত-মহাদেশীয় স্পিকিং ট্যুর শুরু করেন। হাজার হাজার লোক তার বক্তৃতায় আসত। এই সময়ে তিনি সোপ্রানো অ্যামেলিটা গ্যালি-কুরসি , টেনার ভ্লাদিমির রোজিং এবং মার্ক টোয়েনের মেয়ে ক্লারা ক্লেমেন্স গ্যাব্রিলোভিটস সহ বেশ কয়েকটি সেলিব্রিটি অনুসারীদের আকর্ষণ করেছিলেন 1925 সালে, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার ক্রমবর্ধমান কাজের আধ্যাত্মিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।  যোগানন্দ ছিলেন যোগের প্রথম হিন্দু শিক্ষক যিনি তার জীবনের একটি বড় অংশ আমেরিকায় কাটিয়েছিলেন। তিনি 1920 থেকে 1952 সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন, 1935-1936 সালে বিদেশ বর্ধিত ভ্রমণের কারণে বিঘ্নিত হন এবং তাঁর শিষ্যদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্রিয়া যোগ কেন্দ্র গড়ে তোলেন।

যোগানন্দকে সরকারি নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছিল এবং এফবিআই এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রাখা হয়েছিল, যারা ভারতের ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল।  1926 থেকে 1937 সাল পর্যন্ত তার ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশীলন নিয়ে উদ্বেগের কারণে একটি গোপন ফাইল রাখা হয়েছিল।  ফিলিপ গোল্ডবার্গের জীবনী যোগানন্দকে আমেরিকার সবচেয়ে খারাপ ত্রুটিগুলির একটি নিখুঁত ঝড়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন: মিডিয়া চাঞ্চল্যকরতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতিগত স্টেরিওটাইপিং, পিতৃত্ববাদ, যৌন উদ্বেগ এবং নির্লজ্জ বর্ণবাদ। 

1928 সালে, যোগানন্দ মিয়ামিতে প্রতিকূল প্রচার পেয়েছিলেন এবং পুলিশ প্রধান লেসলি কুইগ যোগানন্দকে আর কোনো অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছিলেন। কুইগস বলেছিলেন যে এটি স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে নয় বরং জনশৃঙ্খলা এবং যোগানন্দের নিজের সুরক্ষার স্বার্থে। কুইগ যোগানন্দের বিরুদ্ধে গোপন হুমকি পেয়েছিলেন।  ফিল গোল্ডবার্গের মতে: 

দেখা যাচ্ছে যে মিয়ামির কর্মকর্তারা এই বিষয়ে তাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ ভাইস কনস্যুলেটকে ডেকেছিলেন ... একজন কনস্যুলেট কর্মকর্তা বলেছিলেন যে মিয়ামি শহরের ব্যবস্থাপক এবং প্রধান কুইগ "এই সত্যটি স্বীকার করেছেন যে স্বামী একজন ব্রিটিশ প্রজা এবং দৃশ্যত একজন শিক্ষিত মানুষ, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাকে দেশের এই অংশে একজন রঙ্গিন মানুষ বলে মনে করা হয়।" দক্ষিণের সাংস্কৃতিক আধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি উল্লেখ করেছেন, "স্বামী জনগণের কাছ থেকে শারীরিক ক্ষতি ভোগ করার বড় বিপদে ছিলেন।"

1920-এর দশকের শেষের দিকে, অ্যাডিলেড এরস্কিন নামে যোগানন্দের একজন শিষ্য তাঁর ফটোগ্রাফার হিসাবে কাজ করেছিলেন। তার বংশধররা পরে যোগানন্দকে অ্যাডিলেডের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকার এবং তার একটি সন্তান বেন এরস্কাইনের পিতা হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করবে, যদিও বেন স্বীকার করেন যে তিনি তাকে কখনই বলেননি যে তার বাবা কে। 1995 সালে বেন এরস্কাইনের কন্যা এটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান এবং আর্থিক চাহিদার সাথে SRF পিতৃত্বের দাবিও দেন। 2002 সালে, SRF একজন প্রাক্তন সান দিয়েগো প্রসিকিউটর, জি. মাইকেল স্টিলকে নিয়োগ করেছিল, ভারতে যোগানন্দের তিনজন পুরুষ আত্মীয়ের ডিএনএ এরস্কাইনের ডিএনএর সাথে তুলনা করার জন্য। ল্যাবের কাজ দুটি পৃথক ল্যাবে করা হয়েছিল, একটি মিসৌরিতে এবং একটি লুইসিয়ানায়। উভয় ল্যাবের ফলাফল যোগানন্দ এবং এরস্কাইনের মধ্যে কোন জৈবিক সংযোগ দেখায়নি, দাবি নিষ্পত্তি করে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের ওয়াতানাবে অনুসারে, জি।

ভারত সফর, 1935-1936

1935 সালে, তিনি তার গুরু শ্রী যুক্তেশ্বর গিরিকে দেখতে এবং ভারতে তার যোগদা সৎসঙ্গের কাজ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করার জন্য তার দুই পশ্চিমী ছাত্রের সাথে সমুদ্রের জাহাজের মাধ্যমে ভারতে ফিরে আসেন । পথ চলার সময়, তার জাহাজ ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরতে থাকে; তিনি অন্যান্য জীবিত পশ্চিমা সাধুদের পরিদর্শন করেন যেমন থেরেসি নিউম্যান , কননারসরিউথের ক্যাথলিক স্টিগমাটিস্ট এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের স্থান: অ্যাসিসি , ইতালি সেন্ট ফ্রান্সিসকে সম্মান জানাতে , গ্রিসের এথেনিয়ান মন্দির এবং সক্রেটিসের জেল সেল, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি এবং যীশু মন্ত্রণালয়ের অঞ্চল , এবংপ্রাচীন পিরামিড দেখার জন্য কায়রো, মিশর । 

আগস্ট 1935 সালে, তিনি মুম্বাই বন্দরে ভারতে আসেন , তখন তাকে বোম্বে বলা হয় এবং আমেরিকায় তার খ্যাতির কারণে, তাজমহল হোটেলে তার সংক্ষিপ্ত থাকার সময় অনেক ফটোগ্রাফার এবং সাংবাদিক তার সাথে দেখা করতে আসেনপূর্ব দিকে একটি ট্রেন ধরলে এবং কলকাতার (পূর্বে কলকাতা ) কাছে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলে, তার ভাই বিষ্ণুচরণ ঘোষ এবং কাসিমবাজারের মহারাজার নেতৃত্বে একটি বিশাল জনতা এবং একটি আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা তাকে স্বাগত জানায় শ্রীরামপুরে গিয়ে, তিনি তার গুরু শ্রী যুক্তেশ্বরের সাথে একটি আবেগপূর্ণ পুনর্মিলন করেছিলেন, যা তার পশ্চিমা ছাত্র সি. রিচার্ড রাইট বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছিলেন। ভারতে থাকার সময়, তিনি দেখেছিলেন তার রাঁচির ছেলেদের স্কুল আইনত অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, এবং একটি ট্যুরিং গ্রুপ নিয়ে বিভিন্ন লোকেল ঘুরে দেখেন: আগ্রার তাজমহল , মহীশুরের চামুন্ডেশ্বরী মন্দির , এলাহাবাদ 1936 সালের জানুয়ারী কুম্ভ মেলার জন্য এবং বৃন্দাবন লাহিড়ী মহাশয়ের একজন উচ্চ শিষ্য স্বামী কেশবানন্দের সাথে দেখা করতে । 

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন লোকের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন যারা তার আগ্রহ দেখেছিলেন: মহাত্মা গান্ধী , যাকে তিনি ক্রিয়া যোগে দীক্ষিত করেছিলেন; মহিলা-সন্ত আনন্দময়ী মা ; গিরি বালা, একজন বয়স্ক যোগী মহিলা যিনি না খেয়ে বেঁচে ছিলেন; প্রখ্যাত পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন এবং শ্রীযুক্তেশ্বরের গুরু লাহিড়ী মহাশয়ের বেশ কয়েকজন শিষ্য ।  ভারতে থাকাকালীন, শ্রী যুক্তেশ্বর যোগানন্দকে পরমহংসের সন্ন্যাসী উপাধি দিয়েছিলেন , যার অর্থ "সর্বোচ্চ রাজহাঁস" এবং সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক প্রাপ্তির ইঙ্গিত দেয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে তার পূর্ববর্তী "স্বামী" উপাধিকে বাদ দিয়েছিল। [৩১]1936 সালের মার্চ মাসে, বৃন্দাবন পরিদর্শন করার পর যোগানন্দের কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের পর, শ্রী যুক্তেশ্বর পুরীতে তাঁর আশ্রমে মৃত্যুবরণ করেন (অথবা, যোগিক ঐতিহ্যে, মহাসমাধি লাভ করেন ) 1936 সালের মাঝামাঝি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে যোগানন্দ তার গুরুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালনা করার পরে, কয়েক মাস ধরে শিক্ষাদান, সাক্ষাত্কার পরিচালনা এবং বন্ধুদের সাথে দেখা করতে থাকেন।

তাঁর আত্মজীবনী অনুসারে, 1936 সালের জুন মাসে, কৃষ্ণের দর্শন পাওয়ার পর , মুম্বাইয়ের রিজেন্ট হোটেলের একটি কক্ষে থাকাকালীন তাঁর গুরু শ্রী যুক্তেশ্বরের পুনরুত্থিত আত্মার সাথে তাঁর একটি অতিপ্রাকৃত সাক্ষাত হয়েছিল। অভিজ্ঞতার সময়, যেখানে যোগানন্দ শারীরিকভাবে তার গুরুর দৃঢ় রূপ ধরে রেখেছিলেন এবং ধরে রেখেছিলেন, শ্রী যুক্তেশ্বর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে তিনি এখন একটি উচ্চ-অ্যাস্ট্রাল গ্রহে আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করেছেন, এবং এই বিষয়ে গভীর বিশদভাবে সত্যগুলি ব্যাখ্যা করেছেন: জ্যোতির্জ রাজ্য, সূক্ষ্ম গ্রহ এবং পরকাল; জীবনধারা, ক্ষমতা এবং জ্যোতিষ প্রাণীদের স্বাধীনতার বিভিন্ন স্তর; কর্মফল; মানুষের বিভিন্ন সুপার ফিজিক্যাল বডি এবং সে কীভাবে সেগুলির মাধ্যমে কাজ করে এবং অন্যান্য মেটাফিজিকাল বিষয়। নতুন জ্ঞানের সাথে এবং এনকাউন্টার থেকে নতুন করে, যোগানন্দ এবং তার দুই পশ্চিমী ছাত্র মুম্বাই থেকে সমুদ্রের জাহাজের মাধ্যমে ভারত ত্যাগ করে; ইংল্যান্ডে কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করে, তারা লন্ডনে বেশ কয়েকটি যোগ ক্লাস পরিচালনা করে এবং 1936 সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ঐতিহাসিক স্থানগুলি পরিদর্শন করে।

আমেরিকাতে ফিরে যান,

1936 সালের শেষের দিকে, যোগানন্দের জাহাজটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি পেরিয়ে নিউ ইয়র্ক বন্দরে এসে পৌঁছায় ; তারপর তিনি এবং তার সঙ্গীরা তার ফোর্ড গাড়িতে করে মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তার মাউন্ট ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া , সদর দফতরে ফিরে যান। তার আমেরিকান শিষ্যদের সাথে পুনরায় যোগদান করে, তিনি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বক্তৃতা, লিখতে এবং গীর্জা প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার এনকিনিটাসে এসআরএফ আশ্রমে বাসস্থান গ্রহণ করেন , যা ছিল তাঁর অগ্রসর শিষ্য রাজর্ষি জনকানন্দের একটি আশ্চর্য উপহার । এই আশ্রমেই যোগানন্দ তাঁর বিখ্যাত এক যোগীর আত্মজীবনী লিখেছিলেনএবং অন্যান্য লেখা। এছাড়াও, এই সময়ে তিনি "ভারতের আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপ/যোগদা সৎসঙ্গ সোসাইটির আধ্যাত্মিক এবং মানবিক কাজের জন্য একটি স্থায়ী ভিত্তি" তৈরি করেছিলেন। 

যোগানন্দ তার আত্মজীবনী সহ, 1950

1946 সালে, যোগানন্দ অভিবাসন আইনে পরিবর্তনের সুবিধা গ্রহণ করেন এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। 1949 সালে তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিল, এবং তিনি একজন স্বাভাবিক মার্কিন নাগরিক হয়েছিলেন। 

তার জীবনের শেষ চার বছর প্রাথমিকভাবে তার কিছু শিষ্যদের সাথে নির্জনতায় কাটিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার টোয়েন্টিনাইন পামসে তার মরুভূমিতে, তার লেখা শেষ করতে এবং কয়েক বছর ধরে পূর্বে লেখা বই, নিবন্ধ এবং পাঠের সংশোধন শেষ করতে।  এই সময়কালে তিনি কয়েকটি সাক্ষাৎকার এবং পাবলিক বক্তৃতা দেন। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের বলেছিলেন, "আমার কলম দিয়ে অন্যদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমি এখন আরও অনেক কিছু করতে পারি।"

মৃত্যু

যোগানন্দ তার শিষ্যদের ইঙ্গিত করতে লাগলেন যে তার এই পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। ফিল গোল্ডবার্গের মতে, একটি উদাহরণ ছিল যোগানন্দ ডিনারের ঠিক আগে দয়া মাতাকে যা বলেছিলেন, "তুমি কি বুঝতে পারছ যে এটা মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার এবং আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যাব?" 

7 মার্চ, 1952-এ, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের বিল্টমোর হোটেলে মার্কিন সফররত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় রঞ্জন সেন এবং তার স্ত্রীর জন্য একটি নৈশভোজে অংশ নেন। ভোজসভার সমাপ্তিতে, যোগানন্দ ভারত ও আমেরিকা, বিশ্ব শান্তি এবং মানব অগ্রগতিতে তাদের অবদান এবং তাদের ভবিষ্যত সহযোগিতার কথা বলেন, [৪০] একটি "ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড" এর জন্য তার আশা প্রকাশ করেন যা "এর সেরা গুণাবলীকে একত্রিত করবে। দক্ষ আমেরিকা" এবং "আধ্যাত্মিক ভারত"। তাঁর প্রত্যক্ষ শিষ্য এবং SRF দয়া মাতার শেষ প্রধান , যিনি ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন, যোগানন্দ তাঁর বক্তৃতা শেষ করার সময়, তিনি তাঁর মাই ইন্ডিয়া কবিতা থেকে পাঠ করেন।, "যেখানে গঙ্গা, কাঠ, হিমালয়ের গুহা এবং মানুষ ঈশ্বরের স্বপ্ন দেখে—আমি পবিত্র; আমার শরীর সেই মাটিকে স্পর্শ করেছে।"  দয়া মাতা বলেছিলেন যে "তিনি এই শব্দগুলি উচ্চারণ করার সাথে সাথে তিনি কুটস্থ কেন্দ্রের দিকে চোখ তুলেছিলেন এবং তার দেহ মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল।"  লস অ্যাঞ্জেলেসের মাউন্ট ওয়াশিংটনের উপরে এসআরএফ সদর দফতরে শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। রাজর্ষি জনকানন্দ , যাকে যোগানন্দ আত্ম-উপলব্ধি ফেলোশিপের নতুন সভাপতি হিসেবে তার উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, "ভগবানের কাছে দেহ ছেড়ে দেওয়ার জন্য একটি পবিত্র আচার পালন করেছিলেন।"

Divine Interventions: True Stories of Mysteries and Miracles that Change Lives বই অনুসারে , তার মৃত্যুর তিন সপ্তাহ ধরে যোগানন্দের শরীরে "শারীরিক অবনতির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি এবং 'তার অপরিবর্তিত মুখ অক্ষয়তার ঐশ্বরিক দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।'" একটি নোটারাইজড চিঠি। হ্যারি টি. রোয়ের কাছ থেকে, মৃতদেহের পরিচালক, যোগ করেছেন: "ক্ষয়ের কোন চাক্ষুষ চিহ্নের অনুপস্থিতি ... আমাদের অভিজ্ঞতার সবচেয়ে অসাধারণ ঘটনাটি উপস্থাপন করে... একটি দেহের নিখুঁত সংরক্ষণের এই অবস্থা, যতদূর আমরা জানি মৃতদেহের ইতিহাস, একটি অতুলনীয়.... যোগানন্দের দেহ দৃশ্যত অপরিবর্তনীয়তার একটি অসাধারণ অবস্থায় ছিল... কোনো সময় তার শরীর থেকে ক্ষয়ের কোনো গন্ধ বের হয়নি... এই কারণে আমরা আবারও বলি যে পরমহংসের ঘটনা আমাদের অভিজ্ঞতায় যোগানন্দ অনন্য।" রোয়ে লিখেছিলেন যে যোগানন্দের মৃতদেহ তার মৃত্যুর প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পরে সুগন্ধযুক্ত করা হয়েছিল। 26শে মার্চ তার নাকে একটি সবেমাত্র লক্ষণীয় ডেসিকেশন দেখা যায় এবং 27শে মার্চ রোয়ে উল্লেখ করেন যে যোগানন্দের দেহটি তার মৃত্যুর দিনে যেমন হয়েছিল ক্ষয় দ্বারা সতেজ এবং অবিকৃত দেখায়। যোগানন্দের দেহাবশেষ ক্যালিফোর্নিয়ার গ্লেনডেলে গ্রেট মওসোলিয়ামের ফরেস্ট লন মেমোরিয়াল পার্কে (সাধারণত দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকলেও যোগানন্দের সমাধি প্রবেশযোগ্য) এ সমাহিত করা হয় । 

মৃত্যুর কারন

তার মৃত্যুর বিভিন্ন বিবরণ রয়েছে। ডাক্তারি রায় ছিল "একিউট করোনারি অক্লুশন", অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক।অন্যান্য বিবরণ অনুসারে, আত্ম-উপলব্ধির শিষ্যরা দাবি করেন যে তাদের শিক্ষক মহাসমাধিতে প্রবেশ করেছেন (শরীর থেকে যোগীর সচেতন প্রস্থান)।