Friday, July 28, 2023

Post # 1138 Bengali Amarchitra Katha 351

                                                                   ডাউনলোড করুন

 

দ্রৌপদী ছিলেন পাঁচালের রাজা দ্রুপদের কন্যা। আমরা সবাই জানি মহাভারতে দ্রৌপদী ছিলেন পাঁচ পান্ডবের স্ত্রী। মহাভারতে দ্রৌপদীকে পাঁচালি নামেও ডাকা হয়েছে। দ্রৌপদী ভাই ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। দ্রৌপদী এবং পাণ্ডবের সম্পর্ক খুবই সুন্দর ছিল এবং দ্রুপদী তার পাঁচ স্বামীর প্রতিই সমান ভালবাসা ও স্নেহ দেখিয়েছিলেন।

দ্রৌপদী স্বয়ম্বর:

দ্রৌপদী স্বয়ম্বর একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। অনেক রাজা সেই স্বয়ম্বরের কাছে উপস্থিত ছিলেন। সমস্ত রাজারা স্বয়ম্বরে জয়ী হতে চেয়েছিলেন এবং দ্রৌপদীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত কিছু রাজার নাম হল কর্ণ ও পাণ্ডব। পাণ্ডবরা সেই সময়ে নির্বাসনে থাকায় ব্রাহ্মণ রূপে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ, বলরাম, দুর্যোধনের মতো কিছু বড় নামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দ্রৌপদীর হাত জয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। মেরুটির উপরের দিকে ঘোরার সময় মাছের চোখে আঘাত করা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেই শর্ত ছিল মাছকে সরাসরি আঘাত না করে পানিতে ঘূর্ণায়মান মাছের প্রতিফলন দেখে মাছের চোখে আঘাত করতে হবে। একটি ধনুক নিয়েও একটি সমস্যা ছিল কারণ এটি একটি খুব ভারী ধনুক ছিল এবং খুব কম লোকেরই সেই ধনুকটি তোলার ক্ষমতা ছিল।


এখানে দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্ন আসেন এবং চ্যালেঞ্জের কথা ঘোষণা করেন এবং সঠিক উপায়ে চ্যালেঞ্জ জয়ের নিয়ম ও শর্তও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যারা মাছের চোখে আঘাত করবে তারা দ্রৌপদী পাবে। তারপর আসল চ্যালেঞ্জ শুরু হয়, দুর্যোধন এবং বাকি কৌরব সহ অনেক রাজার বিচার করা হয়েছিল কিন্তু তারা ধনুক তুলতেও ব্যর্থ হয়। ধনুক তুলে তাতে তীর বসানো তাদের কাছে বড় কাজ বলে মনে হলো। তারপরে এখানে আসে কর্ণ, মহাভারতের অর্জুনের সাথে প্রায় সেরা তীরন্দাজ। কর্ণ ধনুক তোলার চেষ্টা করার আগেই হঠাৎ দ্রৌপদী হস্তক্ষেপ করে এভাবে বললেন, "আমি সারথির ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না এবং সে শুধু ক্ষত্রিয় বংশের রাজাকে বিয়ে করতে চায়"। এই কথাগুলো শুনে কর্ণ দুঃখ পেয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করলেন।

সমস্ত রাজার পক্ষে সেই চ্যালেঞ্জ ভাঙা কঠিন বলে মনে হয়েছিল। এখন, সেই পাঁচ ব্রাহ্মণের মধ্যে একজন সামনে এসেছিলেন এবং চ্যালেঞ্জে তার চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন। তিনি মহাভারতের শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ অর্জুন ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সমস্ত লোকের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ছিল যে এই ব্রাহ্মণ কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জটি ভাঙতে পারে। অর্জুন সহজেই ধনুক তুলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং তীরটি ধনুকের দিকে স্থির করলেন। অর্জুন ধনুকের লক্ষ্য করেছিলেন মেরুটির উপরের দিকে যেখানে মাছ ঝুলানো হয়েছিল।

অর্জুন জলে মাছের প্রতিচ্ছবি দেখতে লাগলেন। অর্জুন উপরের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করলেন এবং সেই তীরটি ঠিক সেই মাছটির চোখে পড়ল এবং মাছটি মাটিতে পড়ে গেল। অর্জুন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য এবং তীরন্দাজ দক্ষতার সাথে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সমস্ত রাজারা সেই অচেনা ব্রাহ্মণের প্রশংসা করতে লাগলেন এবং তাকে সাধুবাদ জানাতে লাগলেন। দ্রৌপদী ও অর্জুনের বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দ্রৌপদী খুব খুশি হয়েছিল এবং তার হৃদয় আনন্দে ভরে গিয়েছিল কারণ তিনি জানতেন যে তিনি ব্রাহ্মণ রূপে অর্জুন। তিনি যে পুরস্কার চেয়েছিলেন তা পেয়েছিলেন কারণ তিনি ইতিমধ্যেই অর্জুনকে বিয়ে করার ইচ্ছা করেছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ রাজারা প্রতিবাদ শুরু করলেন যে, কীভাবে ক্ষত্রিয় নারীকে ব্রাহ্মণের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যায়। সব রাজার ক্রোধে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। বাকি চার পাণ্ডব অর্জুন ও দ্রৌপদীকে নিরাপদে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদেরকে সেই অনুষ্ঠান থেকে নিরাপদে বের করে এনেছিলেন। এভাবেই মহাভারতে দ্রৌপদী স্বয়ম্বর সমাপ্ত হয়।

পাণ্ডব ও দ্রৌপদী কুন্তীর কাছে আসার পর, অর্জুন মাকে ডেকে এই বলে, "এসো, মা দেখো আমি কি এনেছি"। কিন্তু কুন্তী কুঁড়েঘরের ভিতর থেকে এইভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, "আপনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা আপনার ভাইদের সাথে ভাগ করুন কারণ আপনার পাঁচজনেরও একই কর্তৃত্ব রয়েছে"। কুন্তী ভাবল অর্জুন খাবার এনেছে তাই ভুল করে এমন বলল। কুন্তী বাইরে এসে দ্রৌপদীকে দেখে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন কারণ তিনি পাঁচ পান্ডবদের সাথে এখানে ভাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু সেই কথাগুলো ফিরিয়ে নেওয়া যায়নি তাই দ্রৌপদী পাঁচ পাণ্ডবেরই স্ত্রী হয়েছিলেন।





 

Thursday, July 27, 2023

Post # 1137 Bengali Amarchitra Katha 350

                                                                         ডাউনলোড করুন

 

গুরু রবিদাস জী এর জীবন বিবরণ অনিশ্চিত এবং বিতর্কিত। পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে তিনি ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

গুরু রবিদাসের ভক্তিমূলক শ্লোকগুলি গুরু গ্রন্থ সাহিব নামে পরিচিত শিখ ধর্মগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত ছিল।হিন্দুধর্মের মধ্যে দাদুপন্থী ঐতিহ্যের পঞ্চ বানি পাঠে রবিদাসের অসংখ্য কবিতাও রয়েছে।তিনি বর্ণ ও লিঙ্গের সামাজিক বিভাজন দূর করার শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক সুপরিচিত সাধনায় ঐক্য প্রচার করেছিলেন। পণ্ডিতদের মতে তিনি ১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে মারা যান

গুরু রবিদাস জি রাইদাস নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীর কাছে সীর গোবর্ধনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্মস্থান এখন শ্রী গুরু রবিদাস জন্মস্থান হিসাবে পরিচিত। মাতা কলসান ছিলেন তাঁর মা, এবং তাঁর বাবা ছিলেন সন্তোখ দাস। তার পিতা-মাতা চামড়া-কর্মী চামার সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিল যা তাদেরকে অস্পৃশ্য জাতি বানিয়েছিল। যদিও তার আদি পেশা ছিল চামড়ার কাজ, তিনি তার বেশিরভাগ সময় গঙ্গার তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্যয় করতে শুরু করেন। এরপর তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সুফি সাধক, সাধু এবং তপস্বীদের সঙ্গেই কাটিয়েছেন

অনন্তদাস পারকাই লেখাটি বিভিন্ন ভক্তি আন্দোলনের কবিদের প্রথম দিকের জীবিত জীবনী যা রবিদাসের জন্মের কথা বলে।

ভক্তমলের মতো মধ্যযুগের গ্রন্থগুলি থেকে বোঝা যায় যে রবিদাস ছিলেন ব্রাহ্মণ ভক্তি-কবি রামানন্দের শিষ্য। তিনি ঐতিহ্যগতভাবে কবিরের সমসাময়িক হিসেবে বিবেচিত হন।

যাইহোক, মধ্যযুগীয় রত্নাবলী শিরোনামে লেখা আছে যে রবিদাস রামানন্দের কাছ থেকে তার আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং তিনি রামানন্দী সাম্প্রদায় ঐতিহ্যের অনুসারী ছিলেন।

তাঁর ধারণা এবং খ্যাতি তাঁর জীবদ্দশায় বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং গ্রন্থগুলি থেকে জানা যায় যে ব্রাহ্মণরা (পুরোহিত উচ্চবর্ণের সদস্যরা) তাঁর সামনে মাথা নত করতেন। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থান এবং হিমালয়ে অবস্থিত হিন্দু তীর্থস্থান পরিদর্শন করে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি পরম সত্তার সগুণ (গুণাবলী, ছবিসহ) পরিত্যাগ করেন এবং পরম সত্তার নির্গুণ (গুণাবলী ছাড়া, বিমূর্ত) রূপে মনোনিবেশ করেন। আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর কাব্যিক স্তোত্র অন্যদের অনুপ্রাণিত করায়, বিভিন্ন পটভূমির লোকেরা তাঁর শিক্ষা এবং নির্দেশনা চেয়েছিল।

অধিকাংশ পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে রবিদাস শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি শিখ ধর্মগ্রন্থে শ্রদ্ধেয়, এবং রবিদাসের ৪১ টি কবিতা আদি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। এই কবিতাগুলি তাঁর ধারণা এবং সাহিত্যকর্মের অন্যতম প্রাচীন সত্যায়িত উৎস। রবিদাসের জীবন সম্পর্কে কিংবদন্তি এবং গল্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎস হল শিখ প্রথাতে হ্যাগিওগ্রাফি, যার নাম প্রেমামবোধ। রবিদাসের মৃত্যুর ১৭০ বছর পর ১৬৯৩ সালে এই লেখাটি তাঁকে ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্যের সতেরো জন সাধকের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৭ শতাব্দীর নবদাসের ভক্তমল এবং অনন্তদাসের পারকাই দুটোতেই রবিদাসের অধ্যায় রয়েছে। এগুলি ছাড়াও, শিখ ঐতিহ্য এবং হিন্দু দাদুপন্থী ঐতিহ্যের ধর্মগ্রন্থ এবং গ্রন্থ, রবিদাস (রবিদাসের অনুগামী) সহ রবিদাসের জীবন সম্পর্কে অন্যান্য লিখিত উৎসগুলি ২০ শতকের গোড়ার দিকে রচিত হয়েছিল, অথবাতার মৃত্যুর প্রায় ৪০০ বছর পর

এই লেখা, যাকে বলা হয় পার্কাইস (বা পারচাইস), রবিদাসকে সন্ন্যাসীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন যাদের জীবনী এবং কবিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সময়ের সাথে সাথে অনন্তদাদের পার্কাইয়ের নতুন পাণ্ডুলিপি পুনরুত্পাদন করা হয়েছিল, কিছু ভারতের বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায়। উইনান্দ ক্যালিওয়ার্ট নোট করেছেন যে রবিদাস সম্পর্কে অনন্তদাসের হ্যাগিওগ্রাফির প্রায় ৩০ টি পাণ্ডুলিপি ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এই চারটি পাণ্ডুলিপির মধ্যে সম্পূর্ণ, সংকলিত এবং ১৬৬২, ১৬৬৫, ১৬৭৬ এবং ১৬৮৭ তারিখ করা হয়েছেপ্রথম তিনটি অর্থকে প্রভাবিত না করে কিছু রূপগত রূপের সাথে কাছাকাছি, কিন্তু ১৬৮৭ সংস্করণটি বিভিন্ন জায়গায়, বর্ণ সম্পর্কিত বিবৃতি সহ, ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের নতুন দাবি সহ পাঠ্যটিতে শ্লোকগুলি সন্নিবেশিত করেরবিদাস, রবিদাসের অস্পৃশ্যতার বিষয়ে নোট, কবিরের রবিদাসকে ধারণা দেওয়ার দাবি, নির্গুনি ও সাগুনি ধারণার উপহাস এবং এই ধরনের পাঠ দুর্নীত। ক্যালিওয়ার্ট ১৬৭৬ সংস্করণটিকে আদর্শ সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করেন, তার সমালোচনামূলক সংস্করণরবিদাসের হ্যাগিওগ্রাফি এই সমস্ত সন্নিবেশকে বাদ দেয়, এবং তিনি মন্তব্য করেন যে অনন্তদাসের পার্কাইসের পরিষ্কার সমালোচনামূলক সংস্করণটি প্রস্তাব করে যে ভক্তির আন্দোলনের রবিদাস, কবির এবং সেনের ধারণার মধ্যে পূর্বের ধারণার চেয়ে বেশি মিল রয়েছে।

খারেও একইভাবে রবিদাসের পাঠ্য উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং উল্লেখ করেছেন যে "রবিদাসের হিন্দু ও অস্পৃশ্য আচরণ সম্পর্কে কিছু সহজলভ্য এবং নির্ভরযোগ্য পাঠ্য উৎস" রয়েছে"।





 

Wednesday, July 19, 2023

Post # 1136 Bengali Amarchitra Katha 349

                                        ডাউনলোড করুন

 হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে দ্রুপদ  রাজের কন্যা ও পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী।
 দ্রোণাচার্য
কে হত্যা করারা জন্য,
দ্রুপদ  গঙ্গা ও যমুনার তীরে যাজ ও উপযাজ নামক দুই ব্রাহ্মণের সাহায্যে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেন। এই যজ্ঞের আগুন থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন নামে এক পুত্র ও যজ্ঞবেদী থেকে কৃষ্ণবর্ণা এক কন্যার উদ্ভব হয়। এই কন্যাই দ্রৌপদী। যজ্ঞ থেকে জন্মেছিলেন বলে, এঁর অপর নাম যাজ্ঞসেনী। জন্মের সময় আকাশবাণী হয়- এই পুত্র দ্রোণকে হত্যা করবে এবং এই কন্যা ক্ষত্রিয়দের কুলক্ষয়, দেবতাদের মহত্কর্মসাধন ও কৌরবকুল বিনষ্ট হবে।
পাঞ্চাল দেশের রাজকন্যা বলে ইনি পাঞ্চালী নামে পরিচিত হন। এঁর গায়ের রঙ কালো ছিল বলে তিনি কৃষ্ণা নামে অভিহিত হতেন। অন্যমতে তিনি কৃষ্ণের ভক্তপরায়ণা অথচ বন্ধুর মত ছিলেন বলে কৃষ্ণা নামে অভিহিত হন। তিনি ছিলেন জন্ম থেকেই যুবতী। এঁর ছিল পদ্মফুলের মতো বিকশিত চোখ। চোখের রঙ ছিল নীল। কুঞ্চিত কেশরাশি তাঁকে অনন্যা সৌন্দর্যের অধিকারী করেছিল।

দ্রুপদরাজের কন্যা বলে ইনি দ্রৌপদী নামে পরিচিতি লাভ করেন। অর্জুনের সুখ্যাতি শুনে দ্রৌপদী এঁকে স্বামী হিসাবে কামনা করেন। অন্যদিকে দ্রুপদরাজও কন্যাকে অর্জুনের হাতে সমর্পণের ইচ্ছা পোষণ করতে থাকেন। জতুগৃহ থেকে পরিত্রাণ লাভের পর পাণ্ডবরা কিছুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালেই থাকেন। অর্জুনের কোন সংবাদ না পেয়েও দ্রুপদ দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভা আহ্বান করেন। কিন্তু এর জন্য ইনি এমন একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন যাতে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা একমাত্র অর্জুনেরই ছিল। পরীক্ষাটি ছিল- একটি জলাশয়ের পারে অবস্থিত একটি ঘূর্ণায়মান চক্র থাকবে। উক্ত চক্রের মধ্যে থাকবে একটি মাছ। জলের মধ্যে পতিত ছায়া দেখে ওই চক্রমধ্য-মাছের চোখে বাণ বিদ্ধ করতে হবে।

স্বয়ংবর-সভায় ব্রাহ্মণের বেশে পঞ্চপাণ্ডব উপস্থিত হন। কর্ণ লক্ষ্যভেদের জন্য অগ্রসর হলে- দ্রৌপদী ঘোষণা করেন যে, হীনজাতীয় সূতপুত্রকে তিনি বিবাহ করবেন না। এই কারণে কর্ণ ক্রোধে ধনু ফেলে দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর অন্যান্য ক্ষত্রিয়েরা লক্ষ্যভেদে অকৃতকার্য হলে, অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। কিন্তু অন্যান্য ক্ষত্রিয়রা পাণ্ডবদের আক্রমণ করলে- পাণ্ডবরা সমবেতভাবে তাদের পরাজিত করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। এরপর দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব যখন ঘরে ফেরেন, তখন তাঁদের মা কুন্তী ঘরের মধ্যে ছিলেন। পঞ্চপাণ্ডব তাঁদের মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, তাঁরা একটি অপূর্ব সামগ্রী ভিক্ষা করে এনেছেন। কুন্তী না দেখেই বলেন,- তোমরা সকলে মিলে সেই জিনিস ভোগ কর। এরপর দ্রৌপদীকে দেখে ইনি বিব্রত হয়ে পড়েন। পরে মাতৃ আজ্ঞায় এঁরা পাঁচজনই দ্রৌপদীকে বিবাহ করতে বাধ্য হন।

দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী হওয়ার বিষয়টি ধর্মনাশের কারণ হবে কিনা, সে বিষয়ে পাণ্ডবরা যখন চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, তখন ব্যাসদেব সেখানে আসেন। ব্যাসদেব এই বিবাহ অনুমোদন করতে গিয়ে- দ্রৌপদীর পূর্বজন্মের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তাঁর মতে- পূর্বকালে এক ঋষিকন্যা নিজ কর্মদোষে স্বামীলাভে বঞ্চিত হন। তাই স্বামী লাভের জন্য ইনি মহাদেবের তপস্যা করতে থাকেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে- মহাদেব তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললে, ইনি পাঁচ বার স্বামী লাভের প্রার্থনা করেন। মহাদেব আশীর্বাদ করে বলেন যে- পাঁচবার স্বামী প্রার্থনা করেছে বলে, পরজন্মে তার পাঁচজন স্বামী হবে। গল্পের শেষে ব্যাসদেব বলেন যে,- মহাদেবের বর প্রাপ্ত সেই কন্যাই হলো দ্রৌপদী। তাই মহাদেবের আশীর্বাদের কারণে পঞ্চপাণ্ডবকে স্বামী হিসাবে পেলে দ্রৌপদীর কোন পাপ হবে না বা কোন অধর্ম হবে না। পরে এর বিধিমতো- দ্রুপদ পঞ্চপাণ্ডবের সাথে দ্রৌপদীর বিবাহ অনুমোদন করেন। এর কিছুদিন পর পঞ্চপাণ্ডবের কাছে নারদ উপস্থিত হলে, পঞ্চপাণ্ডবের সাথে দ্রৌপদী কিভাবে স্ত্রী হিসাবে থাকবেন, সে বিষয়ে নারদকে জিজ্ঞাসা করলে, নারদ একটি পরামর্শসূচক গল্প বলেন। পরে পঞ্চপাণ্ডব নিজেরাই যে বিধানটি তৈরি করেন, তা হলো-

১। দ্রৌপদী যখন একজন স্বামীর কাছে থাকবেন, তখন অন্য কোন পাণ্ডব সেখানে যেতে পারবেন না।
২। একজন স্বামীর সাথে থাকা অবস্থায় অন্য পাণ্ডবদের যিনি দেখবেন, তাঁকে ১২ বৎসর ব্রহ্মচারী হয়ে কাটাতে হবে।

এই বিধান তৈরির কিছুদিন পর, ঘটনাক্রমে একবার এক ব্রাহ্মণকে সাহায্য করার জন্য, অর্জুন অস্ত্রাগারে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি যুধিষ্ঠিরের সাথে দ্রৌপদীকে এক শয্যায় দখতে পান। এই কারণে ইনি ১২ বৎসর বনবাসের জন্য গৃহত্যাগ করেন।

যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্যোধন শকুনি মামার পরামর্শে কপট পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান। এই খেলায় যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীসহ রাজ্যপাট হারান। এরপর দুর্যোধনের নির্দেশে দুঃশাসন রজস্বঃলা দ্রৌপদীর চুলধরে সভায় আনেন। কর্ণের পরামর্শে প্রকাশ্য সভায় দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা শুরু করলে, দ্রৌপদীর কাতর আহ্বানে কৃষ্ণ অলৌকিকভাবে তাঁকে অশেষ কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখেন। দ্রৌপদীর এই অপমানের কারণে, ভীম দুঃশাসনকে হত্যা করে তাঁর রক্ত পান করার অঙ্গীকার করেন। দ্রৌপদীও প্রতিজ্ঞা করেন, দুঃশাসনের রক্তে যতক্ষণ পর্যন্ত না ভীম তাঁর চুল বেঁধে দেয়, সে পর্যন্ত ইনি চুল বাঁধবেন না। সভামধ্যে দ্রৌপদীকে অপমান করার জন্য দুর্যোধন বাম উরু প্রদর্শন করলে, ভীম দুর্যোধনের উরুভঙ্গের প্রতিজ্ঞা করেন। এতসব ঘটনায় বিচলিত হয়ে ধৃতরাষ্ট্র সকলকে মুক্তি দেন। এরপর দুর্যোধন ও শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে তাঁরা পুনরায় পাশাখেলায় আহ্বান করেন। এবারও যুধিষ্ঠির হেরে যান এবং ১২ বত্সর বনবাস ও ১ বত্সর অজ্ঞাতবাসের শাস্তি পান। পাণ্ডবরা রাজ্য হারিয়ে বনবাসের পথে গেলে দ্রৌপদী তাঁদের সাথে যান। এই সময় ইনি বিভিন্নভাবে যুধিষ্ঠিরকে কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উত্তেজিত করতে থাকেন।

বনে যাবার আগে সূর্যদেবতা দ্রৌপদীকে একটি তাম্রপাত্র দান করেছিলেন। এই পাত্রে কোন কিছু রান্না করে দ্রৌপদী যতক্ষণ না খেতেন, ততক্ষণ যতলোকই উক্ত পাত্র থেকে আহার করুক না কেন তা উক্ত খাদ্যে পূর্ণ থাকতো। দুর্বাসা সামান্য কারণেই রেগে গিয়ে ভীষণ অভিশাপ দিতেন। তাই দুর্বাসাকে দিয়ে দ্রৌপদীকে অভিশপ্ত করার জন্য, দুর্যোধন প্রথমে দুর্বাসা মুনিকে সন্তুষ্ট করেন। পরে দুর্বাসা যখন তাঁকে বর দিতে ইচ্ছা করলেন, তখন- দুর্যোধন বলেন যে, দ্রৌপদীর আহারের পর দুর্বাসা যেন তাঁর দশহাজার শিষ্য নিয়ে পাণ্ডবদের অতিথি হন। দুর্বাসা সেই বর দিয়ে পাণ্ডবদের বাসস্থান কাম্যকবনে আসেন। দ্রৌপদীর আহার শেষে দুর্বাসা দশহাজার শিষ্য নিয়ে পাণ্ডবদের অতিথি হয়ে আহার প্রার্থনা করেন এবং শিষ্যদের সাথে স্নান করতে যান। দ্রৌপদী দুর্বাসার অভিশাপের ভয়ে অত্যন্ত কাতর হয়ে কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রৌপদীর কাছ থেকে তাম্রপাত্রের গায়ে লেগে থাকা সামান্য শাকান্ন আহার করেন। আহার শেষে কৃষ্ণ বলেন যে, বিশ্বাত্মা যেন এতে তৃপ্ত হয়। এর ফলে দুর্বাসা এবং তাঁর দশ হাজার শিষ্যের ক্ষুধা দূর হয়ে যায়। বিষয়টি দুর্বাসা বুঝতে পেরে, লজ্জিত হয়ে অন্যপথে চলে যান। 

বদরিকাশ্রমের কাছে বসবাসকালে, গঙ্গায় সুগন্ধী পদ্মফুল ভেসে যেতে দেখে দ্রৌপদী উক্ত পদ্মসংগ্রহের জন্য ভীমকে অনুরোধ করেন। ভীম উক্ত পদ্ম সংগ্রহের জন্য অগ্রসর হয়ে গন্ধমাদন পর্বতে উপস্থিত হন। সেখানে তাঁর অগ্রজ ও পবনদেবের অপর পুত্র হনুমানের সাথে দেখা হয়। প্রথমে ভীম হনুমানকে চিনতে না পেরে, হনুমানের সাথে যথার্থ ব্যবহার করেন নি। পরে হনুমান তাঁর অনুজ হিসাবে ভীমকে প্রশ্রয় দেন এবং আত্মপরিচয় দেন। এরপর পদ্ম সংগ্রহের জন্য ভুল করে মানুষের অগম্য স্বর্গপথে ভীম রওনা দিলে, হনুমান সঠিক পথের সন্ধান দেন। এই পথে অগ্রসর হয়ে ভীম কুবেরের অনুচরদের পরাজিত করে উক্ত পদ্ম সংগ্রহ করে দ্রৌপদীকে উপহার দেন।

জটাসুর নামক এক রাক্ষস পাণ্ডবদের সাথে ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে বাস করতেন। একদিন ভীম মৃগয়ায় গেলে, এই রাক্ষস যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেব ও দ্রৌপদীকে হরণ করে। ভীম ফিরে এসে প্রকৃত বিষয় অবগত হয়ে এই অসুরকে হত্যা করে সকলকে উদ্ধার করেন। অর্জুন স্বর্গে অস্ত্রশিক্ষার জন্য গেলে, তাঁর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় কৈলাসপর্বতের কাছে পাণ্ডবরা যখন প্রতীক্ষা করছিলেন, তখন দ্রৌপদীর প্ররোচনায় ভীম কুবেরের অনুচর রাক্ষসদেরকে সেখান থেকে বিতারিত করেন। কাম্যকবনে পাণ্ডবরা ফিরে এসে যখন বসবাস করছিলেন, তখন পাণ্ডবদের অনুপস্থিতে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে হরণ করেন। পাণ্ডবরা জয়দ্রথকে ধরে এনে লাঞ্ছিত করতে থাকলে, যুধিষ্ঠির তাঁকে রক্ষা করেন। কিন্তু ভীম তাঁর মাথায় অর্ধাস্ত্র বাণদ্বারা পঞ্চচূড়া তৈরি করে পাণ্ডবদের দাসরূপে বেড়াতে আদেশ করেন। এরপরও যুধিষ্ঠির তাঁকে মুক্তি দেন।

একবৎসর অজ্ঞাতবাসকালে বিরাটের প্রাসাদে ইনি সৌরন্ধ্রী নামে রানী সুদেষ্ণার পরিচারিকা হিসাবে ছিলেন। এই সময় বিরাটরাজের শ্যালক দ্রৌপদীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁর কাছে বিবাহের প্রস্তাব দিলে, দ্রৌপদী তা প্রত্যাখান করেন। এরপর কীচকের বারবার অনুরোধে সুদেষ্ণা মদ আনার অছিলায় দ্রৌপদীকে কীচকের ঘরে পাঠান। কীচক দ্রৌপদীকে ধরার চেষ্টা করলে, দ্রৌপদী তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বিরাটের রাজসভায় উপস্থিত হন। এরপর কীচক রাজসভায় এসে সর্বসমক্ষে দ্রৌপদীর চুল ধরে তাঁকে লাথি মারেন। এই সময় পাণ্ডবরা উক্ত সভায় আত্মগোপন করেছিলেন বলে তাঁরা এসবই সহ্য করেন। দ্রৌপদী রাত্রে গোপনে ভীমের কাছে গিয়ে, তাঁকে এর প্রতিশোধ নেবার জন্য উত্তেজিত করেন। পরে ভীমের পরামর্শে দ্রৌপদী কীচককে তাঁর সাথে সন্ধ্যাবেলায় নাট্যশালায় মিলিত হওয়ার অনুরোধ করেন। দ্রৌপদীর এই আহ্বানে কীচক সন্ধ্যাবেলায় নাট্যশালায় উপস্থিত হলে, ভীম তাঁকে হত্যা করেন। কীচকের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাবার সময় কীচকের ভাইয়েরা দ্রৌপদীকেও চিতায় দেবার জন্য বন্দী করে শ্মশানে নিয়ে যান। এই সময় পাণ্ডবদের ছদ্মনামে দ্রৌপদী বার বার ডাকতে থাকলে, ভীম পিছনের দরজা দিয়ে শ্মশানে উপস্থিত হয়ে সকলকে হত্যা করে দ্রৌপদীকে উদ্ধার করেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে কৃষ্ণ যখন পাণ্ডবদের মতামত গ্রহণের জন্য উপস্থিত হন। তখন দ্রৌপদী তাঁর মুক্ত কেশ দেখিয়ে যুদ্ধের জন্য পাণ্ডবদের উত্তেজিত করেন। যুদ্ধের সপ্তদশ দিনে ভীম দুঃশাসনকে হত্যা করে প্রতিজ্ঞা স্বরূপ তার বক্ষ চিরে রক্তপান করেন এবং দ্রৌপদীর কেশ এই রক্তে ভিজিয়ে তা বেঁধে দেন।
দ্রৌপদীর কারণেই প্রতিজ্ঞা স্বরূপ যুদ্ধের শেষে ভীম দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করেন। এরপর মৃতপ্রায় দুর্যোধনের কাছে কৃপাচার্য, কৃতবর্মা ও অশ্বত্থামা আসেন। এই সময় দুর্যোধন অশ্বত্থামাকে সেনাপতি হিসাবে নিয়োগ করেন এবং ভীমের ছিন্নমুণ্ডু আনার নির্দেশ দেন। অশ্বত্থামা এদের সাথে করে রাত্রিবেলায় পাণ্ডব শিবিরে যান এবং কৃপাচার্য, কৃতবর্মাকে দ্বার রক্ষায় রেখে পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে পাণ্ডব শিবিরের সকলকেই ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন। এই সময় পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ, দ্রৌপদী ও সাত্যকি অন্যত্র থাকায় তাঁরা রক্ষা পান। এই হত্যাকাণ্ডে অন্যান্য পাণ্ডববীরদের সাথে দ্রৌপদীর সকল সন্তান মৃত্যবরণ করে। উল্লেখ্য পঞ্চপাণ্ডবের ঔরসে ইনি যে পাঁচটি পুত্রের জন্ম দেন। এঁরা হলেন- যুধিষ্ঠিরের ঔরসে প্রতিবিন্ধ্য, ভীমের ঔরসে সুতসোম, অর্জুনের ঔরসে শ্রুতকর্মা, নকুলের ঔরসে শতানীক ও সহদেবের ঔরসে শ্রুতসোম ।

এই হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে ইনি অশ্বত্থামাকে হত্যা করে তার মাথার মণি এনে দেবার জন্য, ভীমকে অনুরোধ করেন। পরে অর্জুন ও কৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে পরাজিত করলে, ভীম অশ্বত্থামার মাথার মণি এনে দ্রৌপদীকে দেন। কিন্তু অশ্বত্থামাকে এঁরা হত্যা করেন নি। বিভিন্ন প্রয়োজনে দ্রৌপদী ভীমের উপর অত্যন্ত নির্ভশীল ছিলেন। কিন্তু স্বয়ংবর সভার আগে থেকেই ইনি অর্জুনের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। ঘটনাক্রমে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী হলেও, ইনি অর্জুনকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এই কারণে মহাপ্রস্থানে যাবার পথে মেরুপর্বত পার হওয়ার পর তাঁর পতন হয়েছিল।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে- রাম সীতার বনবাসকালে অগ্নি ভবিষ্যৎবাণী করেন যে, সাতদিনের মধ্যে রাবণ সীতাকে অপহরণ করবেন। এরপর রাম অগ্নিকে অনুরোধ করে সীতার রক্ষার ভার দেন এবং মূল সীতার পরিবর্তে একটি ছায়া সীতা বানিয়ে রামের সঙ্গী হিসাবে প্রদান করেন। রাবণ এই ছায়া সীতাকেই অপহরণ করেছিলেন। সীতার অগ্নিপরীক্ষার সময় ছায়াকে রক্ষা করে মূল সীতাকে রামের কাছে ফিরিয়ে দেন। পরে এই ছায়া সীতা একশত বত্সর মহাদেবের আরাধনা করে পাঁচবার স্বামী প্রার্থনা করেন। সেই কারণে পরবর্তীকালে দ্রৌপদীর জন্ম হয়।
ইনি সত্যযুগে বেদবতী, ত্রেতাতে ছায়া সীতা এবং দ্বাপরে দ্রৌপদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। এর অপরাপর নাম : অযোনিজন্মা, অযোনিজা, অযোনিসম্ভবা, অযোনিসম্ভূতা।
 







 

Tuesday, July 18, 2023

Post # 1135 Bengali Amarchitra Katha 348

                                                                  ডাউনলোড করুন

   ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (INC), ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামকে গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলে,  ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সূচনা থেকে 1905 সাল পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে।১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই শহরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ভারত ইতিহাসে এক অতি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সেই সময় ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন এর সময় গঠিত হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এলান অক্টাভিয়ান হিউম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম সম্মেলন আয়োজিত হয় ১৮৮৫ সালে বোম্বেতে W.C. বোনার্জী সভাপতিত্বে। যেখানে ভারতীয়দের ধর্ম-জাত -ভাষা স্থান এর ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রকৃত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এইজন্য শুরু থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হয়ে উঠেছিল এক সর্বভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন। প্রতিষ্ঠার সময়


জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব কোনভাবেই ব্রিটিশ সরকারের বিরোধী ছিল না। জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ তাদের প্রত্যেক অধিবেশনেই ব্রিটিশ সরকারের ন্যায় বিচার, সুশাসন ও উদার শাসনতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারের জয়গান গাইতেন এবং তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীনে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারটিকে সরকার ভালো নজরে দেখেন নি বরং রাজনৈতিক সমস্যা অপেক্ষা সামাজিক সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করে। কংগ্রেস নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় কংগ্রেস তাদের পক্ষে ক্ষতিকর হবে না। তাঁরা মনে করেছিলেন যে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ হয়তো নিজেদের মধ্যে পাণ্ডিত্যপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই তাদের কার্যাবলী সীমাবদ্ধ রাখবেন। এই কারণে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন। প্রথম তিন বছর পর সরকারি কর্মচারীরা কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদান করে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। দ্বিতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল ১৮৮৬ সালে কলকাতায় এবং তৃতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয় হাজার ১৮৮৭ সালে মাদ্রাজে।ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উৎপত্তি হল একটি রহস্য। হিউম লর্ড ডাফরিন এর অধীনে কংগ্রেস দল গঠন করেন যার প্রধান দুটি কারণ হল- ভারতীয়দের সেফটি ভালব প্রদান করা এবং ইংল্যান্ডের রানীর বিরোধী দলের ন্যয় ভারতেও একটি আধা সাংবিধানিক দল গঠন করা। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হল ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের সময়ের তৈরী। ডাফরিনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী করা যা ভারতে মানুষের আসল ইচ্ছে ও প্রয়োজনকে তুলে ধরবে এবং পাশাপাশি শাসনব্যবস্থাকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচাবে।



                                  

Monday, July 17, 2023

Post # 1134 Bengali Amarchitra Katha 347

                                                                ডাউনলোড করুন

 

পাণ্ডবরা একচক্রা নগরে এক ব্রাহ্মণের ঘরে বাস করতে লাগলেন। তাঁরা ভিক্ষা করে যা আনতেন, কুন্তী সেই সমস্ত খাদ্য দুই ভাগ করতেন, এক ভাগ ভীম একাই খেতেন, অন্য ভাগ অপর চার ভাই ও কুন্তী খেতেন। এভাবে অনেকদিন পার হল। একদিন যুধিষ্ঠিররা ভিক্ষা করতে গেছেন। শুধু ভীম আর কুন্তী ঘরে আছেন, এমন সময় তাঁদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের ঘর থেকে আর্তনাদ শুনতে পেলেন। কুন্তী ঘরের ভিতরে গিয়ে  দেখলেন, ব্রাহ্মণ তাঁর স্ত্রী পুত্র ও কন্যার সঙ্গে নিজেদের মৃত্যু নিয়ে আলাপ করেছেন।

কুন্তী ব্রাহ্মণের কাছে তাদের বিলাপ করার কারণ জানতে চাইলেন। তখন ব্রহ্মণ জানালেন তাদের নগরের কাছে বক নামে এক মহাশক্তিশালী রাক্ষস বাস করে, সেই এদেশের রাজা। কারণ দেশের প্রকৃতরাজা নির্বোধ ও দুর্বল। বক রাক্ষস এই দেশ রক্ষা করে। তার মূল্য হিসেবে প্রতিদিন একজন লােক প্রচুর খাদ্য ও দুইটি মহিষ সঙ্গে নিয়ে যায়। বক সেই মানুষ মহিষ আর খাদ্য খায়। আজ ব্রাহ্মণের যাবার পালা, দরিদ্র ব্রাহ্মণ স্ত্রী পুত্র কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে রাক্ষসের কাছে যাবে ঠিক করেছে।

কুন্তী ব্রাহ্মণকে আশ্বস্ত করে বলে যে তাদের পরিবর্তে ভীম যাবে সেই রাক্ষসের কাছে। পরদিন মার আদেশে ভীম রাক্ষসের খাবার-দাবার নিয়ে রাক্ষসের বনে গেলেন এবং রাক্ষসকে নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। বক রাক্ষস দৈড়ে এসে দেখে ভীম বসে বসে রাক্ষসের খাবার গুলি নিজে খেয়ে ফলছে। তাই দেখে রাক্ষস রেগে গিয়ে ভীমের পিঠে আঘাত করলো, কিন্তু ভীম গ্রাহ্য করলেন না। রাক্ষস একটা গাছ তুলে নিয়ে এসে আক্রমণ করতে এল। ভীম খাওয়া শেষ বাম হাতে রাক্ষসের গাছটি ধরে ফেললেন। তারপর দুজনের মধ্যে লড়াই শুরু হলো। ভীম বক রাক্ষসকে মাটিতে আছড়ে ফেলে গলা চিপে ধরে হত্যা করলেন।পরদিন মার আদেশে ভীম রাক্ষসের খাবার-দাবার নিয়ে রাক্ষসের বনে গেলেন এবং রাক্ষসকে নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। বক রাক্ষস দৈড়ে এসে দেখে ভীম বসে বসে রাক্ষসের খাবার গুলি নিজে খেয়ে ফলছে। তাই দেখে রাক্ষস রেগে গিয়ে ভীমের পিঠে আঘাত করলো, কিন্তু ভীম গ্রাহ্য করলেন না। রাক্ষস একটা গাছ তুলে নিয়ে এসে আক্রমণ করতে এল। ভীম খাওয়া শেষ বাম হাতে রাক্ষসের গাছটি ধরে ফেললেন। তারপর দুজনের মধ্যে লড়াই শুরু হলো। ভীম বক রাক্ষসকে মাটিতে আছড়ে ফেলে গলা চিপে ধরে হত্যা করলেন।রাক্ষসের চিৎকার শুনে তার আত্মীয় পরিজন ভয় পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ভীম তাদের বললেন, তােমরা আর কখনও মানুষদের অত্যাচার করবে না। যদি করো তবে তােমাদেরও প্রাণ যাবে। রাক্ষসরা ভীমের আদেশ মেনে নিলে। তারপর ভীম রাক্ষসের মৃতদেহ নগরের প্রবেশ পথে ফেলে দিয়ে ব্রাহ্মণের ঘরে ফিরে গেলো।

নগরবাসীরা আশ্চর্য হয়ে ব্রাহ্মণের কাছে জানতে চাইলো সে কি করে রাক্ষসটিকে হত্যা করেছে। তখন ব্রহ্মণ তাদের জানালো যে একজন মন্ত্রসিদ্ধ মহাত্মা দয়া করে আমার পরিবর্তে রাক্ষসের কাছে অন্ন নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনিই তাকে বধ করে সকলের উপকার করেছেন।




 

Sunday, July 16, 2023

Post # 1133 Bengali Amarchitra Katha 345

                                                                      ডাউনলোড করুন

 
 
তাঁর মাথা ছিল ঘটের আকৃতির। মাথায় ছিল না চুল। তাই তাঁর এই নামকরণ হয়েছিল। রাক্ষসকূলের সদস্য হয়েও পাণ্ডবদের জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এই মায়াবি রাক্ষস।মহাভারতের কাহিনী অনুসারে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের চতুর্দশ দিনে কর্ণ প্রবল শক্তি নিয়ে লড়াই করতে থাকেন। কর্ণকে রুখতে হিমসিম খান পাণ্ডব সেনারা। দিনের পর রাতেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। যার ফলে যুদ্ধে ক্রমশ ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে পাণ্ডবদের। এই অবস্থায় কর্ণকে বশে আনতে তৎপর হন শ্রীকৃষ্ণ। ভীমের পুত্র ঘটোৎকচকে তলব করেন তিনি।ঘটোৎকচকে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, কর্ণের মতো বীরের সঙ্গে লড়াই করতে পারেন এমন যোদ্ধা পাণ্ডবপক্ষে রয়েছেন মাত্র ২ জন। একজন স্বয়ং অর্জুন, অন্যজন ঘটোৎকচ। কিন্তু রাতে যুদ্ধ করতে দক্ষ নন অর্জুন। তাছাড়া অর্জুনকে হত্যা করার জন্য ইন্দ্রের উপাসনা করে বৈজয়ন্তী শক্তি পেয়েছিলেন কর্ণ। সেই শক্তি মাত্র ১ বারই প্রয়োগ করতে পারবেন তিনি। উলটো দিকে রাক্ষসকূলজাত হওয়ায় ঘটোৎকচের সেই ক্ষমতা রয়েছে। নানা মায়াবি কৌশল জানা রয়েছে তাঁর। ফলে কর্ণের মুখোমুখি হতে যেতে হবে তাঁকেই।
 

কৃষ্ণ ও অর্জুনের নির্দেশে ঘটোৎকচ যখন কর্ণকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার দিকে ছুটে যান, তখন ছিল মধ্যরাত। এই সময়ে রাক্ষসদের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকে এবং এজন্যই কৃষ্ণ এই সময়টায় কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘটোৎকচকে প্রেরণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ভগদত্ত ও অশ্বত্থামা দ্বৈরথ যুদ্ধে ঘটোৎকচকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু ভগদত্ত ঘটোৎকচকে পরাজিত করেছিলেন পরিপূর্ণ দিনের আলোয়, যখন রাক্ষসদের শক্তিমত্তা থাকে তুলনামূলকভাবে কম এবং অশ্বত্থামা ঘটোৎকচকে পরাজিত করেছিলেন রাতের প্রথম প্রহরে, যখন রাক্ষসদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি পায় বটে, কিন্তু শীর্ষে থাকে না। অন্যদিকে, ঘটোৎকচ যখন কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হন, তখন ছিল মধ্যরাত এবং ঘটোৎকচ ছিলেন তার শক্তির শীর্ষে।

উল্লেখ্য, ঘটোৎকচ দিনের বেলায় যে কম ভয়ঙ্কর যোদ্ধা ছিলেন, এমনটি মোটেই নয়। দিনে সংঘটিত যুদ্ধে তিনি দ্রোণাচার্য, অশ্বত্থামা, ভুরিশ্রবা, শল্য ও দুর্যোধনের মতো শীর্ষ কৌরব যোদ্ধাদেরকে পরাজিত করেছেন এবং স্বয়ং ভীষ্মও ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়িয়ে গেছেন। কৌরব বাহিনীর শীর্ষ যোদ্ধাদের মধ্যে (কর্ণ ব্যতীত) একমাত্র ভগদত্ত ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে অপরাজিত ছিলেন, কারণ তিনি নিজেও ছিলেন অসুর নরকের ছেলে এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একজন যোদ্ধা। যুদ্ধের চতুর্দশ রাতের প্রথম প্রহরে অশ্বত্থামা ঘটোৎকচকে একবার পরাজিত করতে সক্ষম হন, কিন্তু ইতিপূর্বে তিনি দিনের বেলায় ঘটোৎকচের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সুতরাং সামগ্রিকভাবে, মধ্যরাতের যুদ্ধে ঘটোৎকচকে পরাজিত করা ছিল অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।একটি সুবৃহৎ রথে চড়ে ঘটোৎকচ কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। রথটি বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল, রথটির আটটি চাকা ছিল (কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ব্যবহৃত সিংহভাগ রথের চাকা ছিল দুইটি) এবং রথটির সঙ্গে চারটি অতিকায় হাতির সমআকৃতির হিংস্র ঘোড়া সংযুক্ত ছিল। হিংস্র চেহারার এক রাক্ষস ছিল ঘটোৎকচের রথের সারথি। বৃহদাকৃতির একটি ধনুক হাতে নিয়ে এবং চতুর্দিকে অত্যন্ত বড় আকৃতির বিপুল সংখ্যক তীর নিক্ষেপ করতে করতে ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে অগ্রসর হন। ঘটোৎকচের ভয়াল রূপ দেখে কৌরব সৈন্যরা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু কর্ণ তার রথে চড়ে ঘটোৎকচের দিকে অগ্রসর হন এবং ঘটোৎকচের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।

কর্ণ ও ঘটোৎকচ সজোরে একে অপরকে তীরবিদ্ধ করতে থাকেন এবং একে অপরের দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকেন। কর্ণ ঘটোৎকচের দিকে সাধারণ তীর নিক্ষেপ করছিলেন, কিন্তু ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে অত্যন্ত বড় আকৃতির তীর নিক্ষেপ করছিলেন। তারা একে অপরকে বারবার তীরবিদ্ধ করতে থাকেন এবং একে অপরকে তীরের সাহায্যে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকেন। কর্ণ ও ঘটোৎকচের শরীরের বিভিন্ন অংশ তাদের একে অপরের তীরে গভীরভাবে বিদ্ধ হয় এবং তাদের দুইজনের শরীর থেকেই রক্ত ঝরতে শুরু করে। কিন্তু উভয়েই অটল থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। ঘটোৎকচের ধনুকের সুতীব্র টঙ্কার শুনে কৌরব ও পাণ্ডব উভয় পক্ষের সৈন্যরাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যে সমানে সমানে যুদ্ধ চলে এবং তাদের কেউই অপর জনকে পরাজিত করতে পারছিলেন না। এমতাবস্থায় কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে একটি দিব্যাস্ত্রকে আহ্বান করেন এবং সেটিকে ঘটোৎকচের দিকে তাক করেন। এটি দেখে ঘটোৎকচ একটি ভয়ঙ্কর ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন। সেটির ফলে তার চতুর্দিকে একটি সুবৃহৎ রাক্ষস সৈন্যদলের আবির্ভাব ঘটে এবং উক্ত ভয়ালদর্শন রাক্ষসরা অস্ত্র হিসেবে গদা, বর্শা, বড় পাথর ও পর্বতশৃঙ্গ বহন করছিল। ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্রের সৃষ্টি হয় এবং ঘটোৎকচ সেটি হাতে নিয়ে তীব্র গর্জন করতে করতে কর্ণের দিকে ছুটে যান। ঘটোৎকচের গর্জন শুনে কৌরব ও পাণ্ডব সৈন্যরা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঘটোৎকচ কর্তৃক সৃষ্ট রাক্ষস সৈন্যরা কৌরব সৈন্যদের ওপর অসংখ্য বড় বড় পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে এবং ঘটোৎকচের সৃষ্ট ইন্দ্রজালের ফলে আকাশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোহার তৈরি রথের চাকা, অগ্নিগোলক, বিশেষ ধরনের তীর, বর্শা, বল্লম, শতঘ্নী, কুঠার প্রভৃতি অস্ত্র কৌরব সৈন্যদের ওপর পতিত হতে থাকে। এর ফলে কৌরব বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।

ঘটোৎকচ ও তার রাক্ষস সৈন্যদলের তাণ্ডব দেখে আতঙ্কিত হয়ে কৌরব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন ও তার ভাইয়েরা, কৌরব বাহিনীর সকল রাজরাজড়া এবং সকল শীর্ষ যোদ্ধা পশ্চাৎপসরণ করেন। সেসময় কর্ণ ছিলেন একমাত্র কৌরব যোদ্ধা, যিনি যেখানে ছিলেন সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। তিনি তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘটোৎকচ কর্তৃক সৃষ্ট রাক্ষস সৈন্যদলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেন এবং ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালকে ধ্বংস করে দেন। এর ফলে কৌরব সৈন্যদের ওপর ঘটোৎকচের সৃষ্ট অস্ত্রবৃষ্টি বন্ধ হয়। ঘটোৎকচ ক্ষিপ্ত হয়ে কর্ণের দিকে বিপুল সংখ্যক তীর নিক্ষেপ করেন এবং সেগুলো কর্ণের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে মাটিতে গেঁথে যায়। কর্ণের শরীর থেকে রক্তস্রোত ঝরতে থাকে।

 

কর্ণ ঘটোৎকচের দিকে ১০টি তীর নিক্ষেপ করেন এবং সেগুলো ঘটোৎকচের শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলোয় আঘাত করে, যার ফলে ঘটোৎকচ তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি একটি বিশালাকৃতির রথের চাকা উঠিয়ে নেন এবং সেটিকে সজোরে কর্ণের দিকে নিক্ষেপ করেন। উক্ত চাকাটি ছিল দৈব ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু কর্ণের তীরের আঘাতে সেটি টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ক্রুদ্ধ ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরগুলো কর্ণের রথকে ঢেকে ফেলে। কর্ণ তীরের সাহায্যে ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন এবং ঘটোৎকচের রথের দিকে বিপুল সংখ্যক তীর নিক্ষেপ করেন, যার ফলে ঘটোৎকচের রথ কর্ণ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরে ঢাকা পড়ে যায়। এরপর ঘটোৎকচ একটি গদা উঠিয়ে সেটিকে সজোরে কর্ণের দিকে নিক্ষেপ করেন, কিন্তু কর্ণের তীরের আঘাতে সেটি টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।

ঘটোৎকচ তার রথ থেকে শূণ্যে ভেসে ওঠেন এবং তীব্র গর্জন করে কর্ণের বিরুদ্ধে আরেকটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন। ঘটোৎকচের প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে কর্ণের ওপর আকাশ থেকে বিপুল সংখ্যক গাছ পতিত হতে থাকে। কর্ণ তীরের সাহায্যে ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গাছগুলোকে কেটে ফেলেন এবং ঘটোৎকচকে আকাশে ভেসে থাকা অবস্থাতেই ব্যাপকভাবে তীরবিদ্ধ করেন। এরপর কর্ণের তীরের আঘাতে ঘটোৎকচের রথের রাক্ষস সারথি ও রথটির সঙ্গে যুক্ত অতিকায় ঘোড়াগুলো নিহত হয় এবং কর্ণ তীরের সাহায্যে ঘটোৎকচের সুবৃহৎ রথটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। ঘটোৎকচের রথটিকে ধ্বংস করার পর কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে একটি দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে ঘটোৎকচ এমনভাবে তীরবিদ্ধ হন যে, তার শরীরের এমন কোনো স্থান ছিল না যেখানে তীর বিদ্ধ হয়নি। কর্ণের তীরে ঘটোৎকচ এমনভাবে ঢাকা পড়ে যান যে, আকাশে তাকে আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এমতাবস্থায় ঘটোৎকচ একটি শক্তিশালী ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করে কর্ণ কর্তৃক প্রয়োগকৃত দিব্যাস্ত্রটিকে ধ্বংস করেন এবং তার প্রয়োগকৃত আরেকটি ইন্দ্রজালের ফলে কর্ণের ওপর আকাশ থেকে বিপুল সংখ্যক তীর পতিত হতে থাকে। কর্ণ তীরের সাহায্যে ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন। এরপর ঘটোৎকচ আকাশে ভেসে থাকা অবস্থায় একটি অতি ভয়াল রূপ ধারণ করেন এবং তার শরীরে অনেকগুলো ভয়ালদর্শন মাথাকে যুক্ত অবস্থায় দেখা যায়। এই দৃশ্য কৌরব সৈন্যদেরকে আতঙ্কিত করে। কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করতে থাকেন, কিন্তু ঘটোৎকচের প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে সৃষ্ট মাথাগুলো কর্ণ কর্তৃক প্রয়োগকৃত দিব্যাস্ত্রগুলোকে ভক্ষণ করতে শুরু করে।

কর্ণ ঘটোৎকচের দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং তাকে ক্ষতবিক্ষত করেন। কর্ণের তীরবৃষ্টিতে ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালটি ধ্বংস হয় এবং কৌরব সৈন্যরা দেখতে পায় যে, ঘটোৎকচের বিশাল দেহ অসংখ্য ক্ষত সমেত মাটিতে অনড় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটি দেখে কৌরব সৈন্যরা মনে করে যে, ঘটোৎকচ নিহত হয়েছেন এবং এজন্য তারা উল্লসিত হয়ে ওঠে। কিন্তু শীঘ্রই ঘটোৎকচ নতুন নতুন রূপ ধারণ করে চতুর্দিকে ঘুরতে থাকেন। একবার তিনি অতিকায় আকার ধারণ করেন এবং তার ১০০টি মাথা ও ১০০টি শরীর দেখতে পাওয়া যায়। একবার তিনি হাতের আঙুলের সমান ক্ষুদ্র রূপ ধারণ করে চতুর্দিকে ছুটে বেড়ান। একবার তিনি ভূগর্ভের ভিতরে ঢুকে পড়েন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। একেক মুহূর্তে তাকে একেক স্থানে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর দেখা যায় যে, তিনি আকাশ থেকে নেমে তার ইন্দ্রজালের সাহায্যে সৃষ্ট একটি রথে চড়ে কর্ণের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।

 

কর্ণের কাছাকাছি অগ্রসর হয়ে তিনি কর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সুতপুত্র! একটু অপেক্ষা করো! আজকে তুমি আমার কাছ থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারবে না। আজ আমি তোমার যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে দেবো!” এই বলে ঘটোৎকচ আবার শূণ্যে আরোহণ করেন এবং অট্টহাসি করে ওঠেন। সেখান থেকে তিনি কর্ণের বিরুদ্ধে আরেকটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে কর্ণের ওপর আকাশ থেকে তীব্র তীরবৃষ্টি পতিত হয়। সেই তীরগুলোর প্রতিটি ছিল রথের অক্ষের সমান লম্বা। কর্ণ তার রথটিকে একটু পিছিয়ে নিয়ে তীরের সাহায্যে দূর থেকে ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন এবং ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালটিকে ধ্বংস করেন। এটি দেখে ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে অদৃশ্য হয়ে যান।

এরপর ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে একটি উঁচু পর্বতের রূপ ধারণ করেন, যেটির অনেকগুলো চূড়া ছিল এবং যেটিতে প্রচুর লম্বা গাছ ছিল। উক্ত পর্বত থেকে কর্ণের ওপর বিপুল সংখ্যক গদা, তলোয়ার, বর্শা ও বল্লম বের হয়ে পতিত হতে থাকে। কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে উক্ত ইন্দ্রজালের বিরুদ্ধে একটি দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং উক্ত দিব্যাস্ত্রের আঘাতে ঘটোৎকচ কর্তৃক সৃষ্ট উঁচু পর্বতটি ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে নীল মেঘের রূপ ধারণ করেন, যেটিতে একটি রংধনু দেখা যাচ্ছিল। উক্ত মেঘ থেকে কর্ণের ওপর বিপুল সংখ্যক পাথর ও বিশেষ ধরনের তীর পতিত হতে থাকে। কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে উক্ত ইন্দ্রজালের বিরুদ্ধে বায়ব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে উক্ত মেঘটি বিলীন হয়ে যায়। ঘটোৎকচ দৃশ্যমান হয়ে ইন্দ্রজালের সাহায্যে একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র সৃষ্টি করে সেটিকে কর্ণের দিকে নিক্ষেপ করতে উদ্যত হন, কিন্তু কর্ণ চতুর্দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং তীরের সাহায্যে ঘটোৎকচের হাতে থাকা অস্ত্রটিকে ধ্বংস করেন।

ঘটোৎকচ অট্টহাসি করে আরেকটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন এবং এরপর দেখা যায় যে, ঘটোৎকচের নেতৃত্বে একটি বিশাল রাক্ষস সৈন্যদল কর্ণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উক্ত রাক্ষসগুলোর একদল ঘোড়ায় চড়ে, একদল হাতির পিঠে চেপে ও একদল রথে চড়ে অগ্রসর হচ্ছিল এবং তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল। এটি দেখে কর্ণ ঘটোৎকচের দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে কর্ণ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন এবং ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ৫টি তীর কর্ণকে বিদ্ধ করে। কর্ণ আবার ঘটোৎকচের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু ঘটোৎকচ মন্ত্র উচ্চারণ করে কর্ণের বিরুদ্ধে অঞ্জলিকাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং উক্ত অস্ত্রের আঘাতে কর্ণের ধনুক কাটা পড়ে ও কর্ণ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যায়।

কর্ণ আরেকটি ধনুক উঠিয়ে ঘটোৎকচ কর্তৃক সৃষ্ট রাক্ষস সৈন্যদলটিকে আক্রমণ করেন এবং তাদের দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। কর্ণের তীরে উক্ত রাক্ষসগুলো এবং তাদের সমস্ত রথ, হাতি ও ঘোড়া নিহত হয়। কর্ণের হাতে ঘটোৎকচ কর্তৃক সৃষ্ট রাক্ষস সৈন্যদল ধ্বংস হওয়ার পর ক্রুদ্ধ ঘটোৎকচ তার ইন্দ্রজালের সাহায্যে আরেকটি সুবৃহৎ রথ সৃষ্টি করেন। রথটির সঙ্গে অতিকায় হাতির সমআকৃতির চারটি গাধা সংযুক্ত ছিল, যেগুলোর মুখের আকৃতি ছিল পিশাচদের মতো, এবং ভয়ালদর্শন এক রাক্ষস ছিল উক্ত রথটির সারথি। সেই রথে আরোহণ করে ঘটোৎকচ রথটির সারথিকে আদেশ করেন, “আমাকে সুতপুত্রের দিকে নিয়ে চলো!” কর্ণের দিকে অগ্রসর হয়ে ঘটোৎকচ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন।

 

ঘটোৎকচ মন্ত্র উচ্চারণ করে একটি দৈব অশনি (বিশালাকৃতির এক ধরনের অস্ত্র যেটির সঙ্গে আটটি চাকা সংযুক্ত থাকে) উঠিয়ে নেন। এই অস্ত্রটি ছিল স্বয়ং শিবের তৈরি। উক্ত অশনি উঠিয়ে ঘটোৎকচ সেটিকে সজোরে কর্ণের দিকে নিক্ষেপ করেন। কর্ণ ক্ষিপ্রগতিতে তার ধনুক নামিয়ে রেখে তার রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন এবং তার দিকে তীব্রবেগে ছুটে আসা অশনিটি ধরে ফেলে সেটিকে ঘুরিয়ে ঘটোৎকচের দিকে নিক্ষেপ করেন। এটি দেখে ঘটোৎকচ ক্ষিপ্রগতিতে তার রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে আত্মরক্ষা করেন এবং উক্ত অশনির আঘাতে ঘটোৎকচের রথটি সেটির রাক্ষস সারথি ও সেটির সঙ্গে যুক্ত পিশাচমুখী অতিকায় গাধাগুলোসহ ভস্মে পরিণত হয়। এভাবে ঘটোৎকচের রথটিকে ধ্বংস করে উক্ত অশনিটি ভূগর্ভে প্রবেশ করে। এটি দেখে কৌরব ও পাণ্ডব উভয় পক্ষের সৈন্যরা কর্ণের প্রশংসা করে এবং কর্ণ ক্ষিপ্রগতিতে তার রথে আরোহণ করে পুনরায় তার ধনুক উঠিয়ে নেন।

এরপর কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে একটি দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে কর্ণের ধনুক থেকে নিক্ষিপ্ত অসংখ্য তীর ঘটোৎকচকে সজোরে বিদ্ধ করে। এমতাবস্থায় ঘটোৎকচ আবার অদৃশ্য হয়ে যান এবং অদৃশ্য অবস্থায় একটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করে কর্ণ কর্তৃক প্রয়োগকৃত দিব্যাস্ত্রটিকে ধ্বংস করেন। কিন্তু কর্ণ অদৃশ্য ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে শব্দভেদী তীর নিক্ষেপ করে তাকে বিদ্ধ করতে থাকেন। ঘটোৎকচ আরেকটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন এবং সেটির ফলে চতুর্দিকে বহুসংখ্যক ঘটোৎকচকে দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে ঘটোৎকচ কৌরব বাহিনীকে আতঙ্কিত করতে থাকেন। কর্ণ চতুর্দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং ঘটোৎকচের সবগুলো রূপকে তীরবিদ্ধ করে তার প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালকে ধ্বংস করেন।

এরপর ঘটোৎকচ আবার অদৃশ্য হয়ে যান এবং কর্ণের বিরুদ্ধে আরেকটি ভয়ঙ্কর ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন। ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে চতুর্দিক থেকে অসংখ্য ভয়ালদর্শন রাক্ষস, পিশাচ, যাতুধান (এক ধরনের অসুর), সিংহ, বাঘ, হায়েনা, নেকড়ে, চিতা, আগুনে জিহ্বাবিশিষ্ট সাপ এবং লোহার ঠোঁটযুক্ত বড় পাখি কর্ণকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে তার দিকে ছুটে আসে। কর্ণ চতুর্দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং তার তীরের আঘাতে বর্ণিত হিংস্র প্রাণিগুলোর প্রত্যেকটি নিহত হয়। এরপর কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের বিরুদ্ধে একটি দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং সেটির আঘাতে উক্ত ইন্দ্রজাল ধ্বংস হয়ে যায়।ঘটোৎকচ আবার দৃশ্যমান হন এবং ইন্দ্রজালের সাহায্যে আরেকটি সুবৃহৎ রথ সৃষ্টি করে সেটিতে আরোহণ করেন। রথটির সঙ্গে চারটি অতিকায় ঘোড়া যুক্ত ছিল এবং একটি রাক্ষস ছিল রথটির সারথি। এই রথটিতে চড়ে ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু কর্ণের তীরের আঘাতে ঘটোৎকচের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ও রথটির সারথি নিহত হয়। ক্রুদ্ধ ঘটোৎকচ কর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি এখনই তোমাকে ধ্বংস করবো!” এই বলে ঘটোৎকচ আবারো অদৃশ্য হয়ে যান।

 

যখন কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যে এরকমভাবে যুদ্ধ চলছিল, তখন রাক্ষস অলায়ুধ একটি সুবৃহৎ রাক্ষস সৈন্যদলসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এসে উপস্থিত হন। ইতিপূর্বে পাণ্ডব ভীমের হাতে অলায়ুধের রাক্ষস আত্মীয় বক ও কিরমির এবং বন্ধু হিড়িম্ব নিহত হয়েছিলেন। এজন্য অলায়ুধ পাণ্ডবদের ওপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত ছিলেন এবং এতদিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। কুরুক্ষেত্রে কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে, এটি জানতে পেরে তিনি সসৈন্যে কুরুক্ষেত্রে এসে উপস্থিত হন এবং দুর্যোধনের কাছে গিয়ে পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। দুর্যোধন যথারীতি সোৎসাহে অলায়ুধকে সেই অনুমতি প্রদান করেন।

অলায়ুধ একটি সুবৃহৎ ও নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত রথে আরোহণ করে সসৈন্যে পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হন। তার রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ছিল অতিকায় আকৃতির এবং একটি হিংস্র চেহারার রাক্ষস ছিল সেটির সারথি। সেই রথে চড়ে অলায়ুধ ঘটোৎকচের দিকে অগ্রসর হন এবং অলায়ুধকে দেখতে পেয়ে ঘটোৎকচ কর্ণের সঙ্গে তার চলমান যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অলায়ুধের দিকে ছুটে যান। ঘটোৎকচ অলায়ুধের দিকে অগ্রসর হওয়ার পর কর্ণ ভীমের দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু ভীম কর্ণকে এড়িয়ে একটি বৃহৎ সৈন্যদল নিয়ে অলায়ুধের দিকে ছুটে যান এবং অলায়ুধ রথ ঘুরিয়ে ভীমের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। বস্তুত পাণ্ডবদের পরিকল্পনা ছিল এরকম যে, ঘটোৎকচ কর্ণকে হত্যা করবেন। অলায়ুধের কারণে যেন ঘটোৎকচের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য ভীম অলায়ুধের গতিরোধ করেন। এমতাবস্থায় কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যে আবার যুদ্ধ আরম্ভ হয়।

এদিকে ভীম ও অলায়ুধ পরস্পরকে সজোরে তীরবিদ্ধ করতে থাকেন। অলায়ুধের রাক্ষস সৈন্যরা ভীমের দিকে ছুটে আসে, কিন্তু ভীম তাদের সকলকে তীরবিদ্ধ করেন এবং ভীমের তীরে বিদ্ধ হয়ে তারা পশ্চাৎপসরণ করে। এটি দেখে অলায়ুধ ভীমের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যুত্তরে ভীম অলায়ুধের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু অলায়ুধ ভীম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরগুলোকে হয় নিজস্ব তীরের সাহায্যে কেটে ফেলেন নয়তো রথ থেকে লাফিয়ে সেগুলোকে ধরে ফেলেন। ভীম তার ধনুক নামিয়ে রেখে একটি গদা উঠিয়ে নেন এবং সেটিকে সজোরে অলায়ুধের দিকে নিক্ষেপ করেন। অলায়ুধও তার ধনুক নামিয়ে রেখে একটি গদা উঠিয়ে নেন এবং সেটিকে ভীম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গদাটির দিকে নিক্ষেপ করেন। ভীম ও অলায়ুধ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গদা দুইটি পরস্পরকে তীব্র বেগে আঘাত করে মাটিতে পড়ে যায়।

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে অবস্থিত ভীমের ভাস্কর্য

এরপর ভীম ও অলায়ুধ আবার তাদের ধনুকদ্বয় উঠিয়ে একে অপরের ওপর তীরবর্ষণ করেন। ভীম অলায়ুধের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু অলায়ুধ তীরের সাহায্যে ভীম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন। এমতাবস্থায় অলায়ুধের রাক্ষস সৈন্যরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে ভীমের সৈন্যদলকে আক্রমণ করে। উক্ত রাক্ষসদের হাতে বিপুল সংখ্যক পাণ্ডব সৈন্য এবং তাদের হাতি ও ঘোড়া নিহত হয়। অলায়ুধের রাক্ষস সৈন্যদলের আক্রমণে ভীমের নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কৃষ্ণের পরামর্শে ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, যুধমন্যু, উত্তমৌজ ও উপপাণ্ডবগণ কর্ণের বিরুদ্ধে, সাত্যকি, নকুল ও সহদেব অলায়ুধের রাক্ষস সৈন্যদলের বিরুদ্ধে এবং অর্জুন দ্রোণাচার্যের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।

এসময় অলায়ুধের তীরের আঘাতে ভীমের ধনুক কাটা পড়ে এবং ভীমের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ও রথটির সারথি নিহত হয়। ভীম একটি গদা উঠিয়ে তার বিকল রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন এবং গদাটিকে অলায়ুধের দিকে নিক্ষেপ করেন, কিন্তু অলায়ুধ ক্ষিপ্রগতিতে তার ধনুক নামিয়ে রেখে একটি গদা উঠিয়ে ভীম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গদাটিকে আঘাত করেন এবং সেটি মাটিতে পড়ে যায়। ভীম আরেকটি গদা উঠিয়ে নিয়ে অলায়ুধের দিকে ছুটে যান এবং অলায়ুধ গদা হাতে তার রথ থেকে লাফিয়ে নেমে ভীমের দিকে ছুটে যান। ভীম ও অলায়ুধের মধ্যে তীব্র গদাযুদ্ধ সংঘটিত হয়, কিন্তু গদাযুদ্ধে তাদের কেউ প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে পারেননি। এমতাবস্থায় তারা দুইজনই গদা নামিয়ে রেখে পরস্পরের বিরুদ্ধে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হন, কিন্তু মল্লযুদ্ধেও তাদের কেউ প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে পারেননি।

এরপর ভীম ও অলায়ুধ তাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা রথের চাকা, অক্ষ ও অন্যান্য অংশ এবং অন্য বিভিন্ন বস্তু উঠিয়ে নিয়ে একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকেন। এগুলোর আঘাতে তাদের উভয়ের শরীর থেকেই রক্ত ঝরতে থাকে। এই পর্যায়ে এসে অলায়ুধ ভীমকে প্রচণ্ড আক্রমণ করেন এবং ভীম নিশ্চিত পরাজয়ের সম্মুখীন হন। এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণ ঘটোৎকচকে ডেকে কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অলায়ুধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন এবং ঘটোৎকচকে বলেন যে, তিনি পরবর্তীতে কর্ণকে হত্যা করতে পারবেন। কৃষ্ণের কথায় ঘটোৎকচ কর্ণের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অলায়ুধের দিকে অগ্রসর হন এবং তাকে আক্রমণ করেন। অলায়ুধ ভীমকে ছেড়ে ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন।

অলায়ুধ ও ঘটোৎকচের মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর কর্ণ ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, যুধমন্যু, উত্তমৌজ ও উপপাণ্ডবদের নেতৃত্বাধীন সুবৃহৎ পাণ্ডব বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং পাণ্ডব বাহিনীর বহুসংখ্যক রাজা ও বহুসংখ্যক শীর্ষ রথী কর্ণের নিকট পরাজিত হন। এদিকে সাত্যকি, নকুল ও সহদেবের তীরে অলায়ুধের রাক্ষস সৈন্যরা নিহত হয় এবং উক্ত রাক্ষস সৈন্যদলটিকে ধ্বংস করার পর তারা কর্ণের দিকে অগ্রসর হন। পাঞ্চালের বহুসংখ্যক শীর্ষ রথী দ্রোণাচার্যের দিকে অগ্রসর হন।

অলায়ুধ–ঘটোৎকচ যুদ্ধ: দুই রাক্ষসের ভয়ঙ্কর দ্বৈরথ

অলায়ুধ ও ঘটোৎকচ রথে চড়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। অলায়ুধ একটি বৃহদাকৃতির পরিঘা (লোহার কাঁটাযুক্ত ভারী গদা) উঠিয়ে সেটিকে সজোরে ঘটোৎকচের দিকে নিক্ষেপ করেন এবং সেটি তীব্রবেগে ছুটে গিয়ে ঘটোৎকচের মাথায় আঘাত করে। উক্ত পরিঘার আঘাতে ঘটোৎকচ সংজ্ঞাহীন হয়ে তার রথের ওপর বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটোৎকচ সংজ্ঞা ফিরে পান এবং একটি ভারী গদা উঠিয়ে সেটিকে সজোরে অলায়ুধের দিকে নিক্ষেপ করেন। ঘটোৎকচ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত গদাটিকে তীব্রবেগে ছুটে আসতে দেখে অলায়ুধ ক্ষিপ্রগতিতে তার রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। উক্ত গদাটির আঘাতে অলায়ুধের রথের সারথি ও রথটির সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো নিহত হয় এবং অলায়ুধের রথটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

একটি নতুন ধাঁচের চিত্রকর্মে ঘটোৎকচ
 

অলায়ুধ ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করতে শুরু করেন এবং তার প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে ঘটোৎকচের ওপর আকাশ থেকে তীব্র রক্তধারা পতিত হয়। অলায়ুধ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে সমগ্র আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় এবং তীব্র বজ্রপাত শুরু হয়। এসব দেখে ঘটোৎকচ তার রথ থেকে শূণ্যে আরোহণ করেন এবং তার নিজস্ব ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করে অলায়ুধ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালটিকে ধ্বংস করেন। এরপর ঘটোৎকচ তার রথের ওপর নেমে আসেন। অলায়ুধ ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে আরেকটি ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে ঘটোৎকচের ওপর আকাশ থেকে একটি তীব্র ও ভয়ঙ্কর পাথরবৃষ্টি পতিত হয়। ঘটোৎকচ তীরের সাহায্যে উক্ত পাথরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন। এরপর অলায়ুধ ও ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে পরস্পরের ওপর নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র, যেমন: পরিঘা, বল্লম, গদা, ক্ষুদ্র দণ্ড, অগ্নিগোলক, ত্রিশূল, তলোয়ার, বর্শা, লম্বা বর্শা, ঘণ্টা, বিভিন্ন ধরনের তীর, চক্র, কুঠার, লৌহগোলক এবং গরুর মাথার আকৃতির অস্ত্র বিপুল পরিমাণে নিক্ষেপ করেন।

তদুপরি, তারা দুইজন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে ফেলে একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করেন এবং পর্বতশৃঙ্গ ও নানাবিধ ধাতুর সাহায্যে একে অপরকে আঘাত করেন। কোনোভাবেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে না পেরে অলায়ুধ ও ঘটোৎকচ একে অপরের বিরুদ্ধে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হন। একে অপরের চুল আঁকড়ে ধরে তারা পরস্পরকে আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘটোৎকচ অলায়ুধকে তুলে মাটিতে নিক্ষেপ করেন এবং ক্ষিপ্রগতিতে একটি তলোয়ারের সাহায্যে অলায়ুধের মাথা কেটে ফেলেন। এভাবে তীব্র যুদ্ধের পর ঘটোৎকচের হাতে অলায়ুধ নিহত হন।

অলায়ুধ নিহত হওয়ার পর পাণ্ডব সৈন্যরা অত্যন্ত উল্লসিত হয় এবং চতুর্দিকে তাদের শঙ্খধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। এরপর ঘটোৎকচ অলায়ুধের বিচ্ছিন্ন মাথাটি তুলে নিয়ে দুর্যোধনের রথের কাছে যান এবং সেটিকে দুর্যোধনের রথের ওপর ফেলে দেন। অলায়ুধ নিহত হওয়ার পর দুর্যোধন নিজের ও নিজের সৈন্যদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অলায়ুধ নিজে থেকে এসে কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং ভীমকে হত্যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বস্তুত অলায়ুধ ভীমকে প্রায় পরাজিত করে ফেলেছিলেন, কিন্তু ঘটোৎকচ তাদের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন এবং অলায়ুধকে হত্যা করেন। অলায়ুধের মৃত্যুর পর দুর্যোধনের আশঙ্কা হতে থাকে যে, ভীম তাকে ও তার ভাইদেরকে হত্যা করার জন্য যে প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেটি হয়ত সত্যি সত্যিই পূর্ণ হয়ে যাবে।

তথ্য সূত্র  https://roar.media.com






 

Saturday, July 15, 2023

Post # 1132 Bengali Amarchitra Katha 344

                                           ডাউনলোড করুন

 

 

চিত্তরঞ্জন দাশ, দেশবন্ধু
১৮৭০-১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ভুবনমোহন দাশ ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সলিসিটার। মায়ের নাম নিস্তারিণী দেবী। উল্লেখ্য এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল মুন্সীগঞ্জের তেলিরবাগে।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরের (কলকাতা) লন্ডন মিশনারি সোসাইটির ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি লণ্ডন মিশনারি স্কুলের ভরতি হন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেন।
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ জীবনে তিনি সুরেন্দ্রনাথের স্টুডেন্টস ই‌উনিয়নের সদস্য ছিলেন।
উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান। এরপর ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাশ করে ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রাজকোর্টের বরদাপ্রসাদ হাওলাদারের কন্যা বাসন্তীদেবীকে বিবাহ করেন।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ কলকাতার ১২ নং মদন মিত্র লেনে, ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবী গুপ্ত সংগঠন
অনুশীলন সমিতি স্থাপিত হয়। এর সভাপতি ছিলেন ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহ-সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ এই সমিতির প্রতিষ্ঠকাল থেকে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এই সময় তিনি এস.এন ব্যানার্জী, বি.সি পাল ও অরবিন্দ ঘোষের সহকর্মী হিসেবে বাংলায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই সময় তিনি আইনজীবী হিসেবে চিত্তরঞ্জন দাশ সিভিল কোর্টের প্র্যাকটিসের পরিবর্তে ক্রিমিনাল কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। এজন্য তাঁকে প্রায়ই মফস্বলে যেতে হত। তিনি গরীব মক্কেলের কাছ থেকে প্রায়ই কোন টাকা নিতেন না। আইনজীবী হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর চিত্তরঞ্জন দাশ মফস্বল ছেড়ে কলকাতায় প্রাকটিস শুরু করেন এবং পুনরায় সিভিল কেসগুলো পরিচালনা করে বেশ সাফল্য পান।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি  কংগ্রেসের কলকাতা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে মুরারিপুকুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষের  উপর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ বিনা পারিশ্রমিকে এই মামলায় লড়েন।  তিনি এত সুনিপুণ দক্ষতায় মামলাটিতে বিবাদী পক্ষ সমর্থন করেন যে অরবিন্দকে শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় বিবাদী পক্ষের কৌশলী ছিলেন। এই মামলার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার অনুশীলন সমিতির প্রধান পুলিন বিহারী দাশ এবং সঙ্গীদেরকে নির্বাসন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু চিত্তরঞ্জন দাশ এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করেন। তাঁর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ৬ মাসের শাস্তি এবং ৩৩ জনের মধ্যে ১১ জনের তুলনামূলক কম শাস্তি হয়েছিল।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা’ পরিচালনা করেন। এটাও ছিল একটি রাজনৈতিক মামলা। ‘দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ১৪ জন বিপ্লবীকে লর্ড হার্ডিঞ্জ হত্যা প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত করে। কিন্তু চিত্তরঞ্জন দাশের তীক্ষ্ম যুক্তির কাছে ইংরেজ সরকার হেরে যায় এবং তিনি জয়ী হন।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরে অনুষ্ঠিত বাংলার প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিনি।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘আলিপুর ট্রাঙ্ক মার্ডার কেস- মামলা থেকে তিনি পাঁচ জন ব্যক্তিকে মুক্ত করেন। এই বছর চিত্তরঞ্জন দাশ হাতে নেন 'অমৃতবাজার পত্রিকা মামলা'। কলকাতা হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ অভিমত প্রকাশ করে যে, কলকাতা উন্নয়ন ট্রাস্ট কোনো ব্যক্তিগত জমি রাখতে পারবে না। একই সময় হাইকোর্টে অন্য একজন বিচারক রায় দেন যে, কলকাতা উন্নয়ন ট্রাস্ট সেই ক্ষমতা রাখে। এরকম বিপরীতধর্মী মতামতের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতি
Sir Lancelot Sanderson , বিচারপতি Jonh Woodroffe এবং Mr. Chitty নিয়ে এই বেঞ্চ গঠন করা হয়। কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা অমৃতবাজার এ ব্যাপারে মন্তব্য করে সম্পাদকীয় ছাপে। পত্রিকাটি স্পেশাল বেঞ্চের গঠন সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে। এই অবস্থায় প্রধান বিচারপতি অমৃতবাজারকে শোকজ করেন এবং আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন। 'অমৃতবাজার পত্রিকা' তখনকার কলকাতা বারের প্রখ্যাত আইনজীবীদের নিযুক্ত করে। এঁদের মধ্যে ছিলেন মি. জ্যাকসন, মি. নরটন, ব্যোমকেশ চক্রবর্ত্তী এবং চিত্তরঞ্জন দাশ। মামলার শেষের দিকে অন্য তিন আইনজীবী সরে দাঁড়ালে একমাত্র চিত্তরঞ্জন দাশ মামলা পরিচালনা করেন এবং জয়ী হন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই এপ্রিল পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ব্রিটিশ সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড চালায়। ব্রিটিশের নানা টালবাহানার পর এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের জন্য সর্ব-ভারতীয় কংগ্রেস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সদস্য ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহেরু, আব্বাস তৈয়্যবজী এবং ড. জাকির হোসেন। তদন্ত কমিটির অধিকাংশ খরচ বহন করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর প্রজ্ঞার সূত্রে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি মহাত্মা গান্ধীকে সমর্থন করেন এবং আইনজীবীর পেশা পরিত্যাগ করেন। এই অসামান্য ত্যাগের জন্য ভারতবর্ষের জনগণ কর্তৃক তিনি 'দেশবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত হন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলসের কলকাতা সফর বর্জনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। গান্ধী যখন অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন তখন তিনি তার তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিষয়টিকে গুরুতর ভুল বলে নিন্দা করেন। করেন। এই বছরেই চিত্তরঞ্জন দাশ-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'বাঙ্গালার কথা' নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। স্বদেশী ভাবপুষ্ট লেখা প্রকাশের জন্য, ব্রিটিশ-ভারতের পুলিশ ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাশ-কে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। এই সময় পত্রিকার হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবী।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গয়ায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৪০তম অধিবেশনে। এই সভার সভপতিত্ব করেছিলেন চিত্তরঞ্জন। এই অধিবেশনে পরিষদে তাঁর সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দেন। এই সময় পণ্ডিত মতিলাল নেহরু, হাকিম আজমল খান, আলী ভ্রাতৃদ্বয় ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় কংগ্রেসের কর্মীদের নিয়ে স্বরাজ দলের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় বিধান পরিষদের নির্বাচনে স্বরাজ দল উল্লেখযোগ্য বিজয় সাফল্য লাভ করেন। তিনি নিজে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জ্বলন্ত অগ্রদূত ছিলেন বলে বাংলার সাম্প্রদায়িক সমস্যা নিরসনে স্মরণীয়ভাবে সাফল্যলাভ করেছেন। বেঙ্গল প্যাক্ট নামে সাধারণভাবে পরিচিত এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি বাংলার মুসলমানদের আস্থাভাজন হয়ে তাদেরকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত স্বরাজ্য পরিষদ দলের এক সভায় চুক্তিটির শর্তাবলি গৃহীত হয়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোকনদ সেশনে চুক্তিটি বাতিল করা হলে, তিনি এর তীব্র সমালোচনা করেন। এই বছরের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়নের কংগ্রেসে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এ্‌ই বছরেই তিনি স্বরাজ্য দলের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিকী দ্য ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে জুন মাসে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলন কর্তৃক তিনি চুক্তিটির শর্তাবলি অনুসমর্থন করিয়ে নিতে সক্ষম হন। এই বছরে কলকাতা কর্পোরেশন-এর নির্বাচনে স্বরাজবাদী বিজয় অর্জন করে এবং চিত্তরঞ্জন দাশ প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এই বছরে কলকতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়নের কংগ্রেসে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এই বছরে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের মুখপত্র মিউনিসিপ্যাল গেজেটও প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় তিনি ডেপুটি মেয়র হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীকে । এছাড়া শরৎচন্দ্র বসু অল্ডারম্যান এবং সুভাষচন্দ্রকে চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই বছরে তারকেশ্বর মন্দিররের পুরোহিতের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। সাধারণভাবে তাঁর এই আন্দোলনটি তারকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, তারকেশ্বর মন্দিররে পুরোহিতরা 'মোহান্ত' নামে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরের মোহান্ত'দের নিয়ে নানারকম অনাচারের অভিযোগ ছিল। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে (১২৮০ বঙ্গাব্দ) মোহান্তের নামে প্রথম নারীঘটিত অভিযোগ উঠেছিল। তখন থেকেই মোহান্তদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ-সহ নানা ধরনের অনাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। দীর্ঘদিন পর ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ (১৩৩১ ৩১ বঙ্গাব্দ) দিকে তৎকালীন মোহান্ত সতীশচন্দ্র গিরির নামে নারীঘটিত এবং অর্থ আত্মসাতের মতো অভিযোগ ওঠে। এই সময় স্থানীয় মানুষ এর প্রতিবাদ শুরু করে। এরই সূত্রে ধরে ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ২৭শে জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ১০ জুন ১৯২৪) থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তারকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন।
মূলত এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ১০ম মোহান্ত শ্রীমন্ত গিরির আমলে প্রথম অনাচারের সংবাদ আলোড়িত করে। হত্যা ও অবৈধ নারী-সম্ভোগের জন্য এই মোহান্তের ফাঁসি হয়েছিল ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে (১২৩১ বঙ্গাব্দ)। সে সময়ের প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকা 'সমাচার দর্পণ'-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর ১২তম মোহান্ত মাধবচন্দ্র গিরি সম্পর্কে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই মোহান্ত এলোকেশী নামক এক মহিলাকে ধর্ষণ করে। এই অপরাধে তাঁর কারাদণ্ড হয়। এই সময় তাঁর শিষ্য শ্যাম গিরি মোহান্ত পদ লাভ করেন। জেল থেকে ফিরে মাধবচন্দ্র গিরি মোহান্ত পদ লাভের আবেদন করে। কিন্তু শ্যাম গিরি ও উত্তর পাড়ার মুখোপাধ্যায় ব্রাহ্মণরা এর বিরোধিতা করলে, মাধবচন্দ্র গিরি মোহান্ত পদ লাভের জন্য আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিনি আদলতে বলেন যে, যেহেতু তিনি দশনামা সন্ন্যাসী তাই পরনারী গমনে তাঁর কোনো বাধা নাই। তাছাড়া ফৌজদারি জেল খেটে এসেছে, সেই কারণে মোহান্ত পদ পুনরায় লাভ করতে পারে। এই মামলায় মাধবচন্দ্র গিরি তাঁর মোহান্ত পদ ফিরে পেয়েছিলেন।
এরপর থেকে মাধবচন্দ্র গিরি আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। এরই সূত্রে ধরে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের (১৩৩১ বঙ্গাব্দ) শুরু দিকে স্বামী বিশ্বানন্দ এবং পণ্ডিত ধরানাথ ভট্টাচার্য প্রতিবাদ ও প্রচারণা শুরু করেন। এই সময় স্থানীয় অধিবাসীরা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।
এই অন্দোলন উপলক্ষে একটি প্রতিবাদী কমিটি তৈরি করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বামী সচ্চিদানন্দ। এছাড়া কমিটির অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিলেন আসানসোল ট্রেড ইউনিয়ন নেতা স্বামী বিশ্বানন্দ। এই সময় স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ 'বীরদল' নামক স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা এগিয়ে আসেন। এর নেতৃত্ব দেন বীরদলের নেতা স্বামী বিশ্বানন্দ এবং স্বামী সচ্চিদানন্দ। পরে প্রাদেশিক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং চিত্তরঞ্জন দাস বীরদলকে সমর্থন করেন। ৮ই এপ্রিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি স্বচক্ষে দেখার জন্য তারেকশ্বর যান। এরপর ৩০ এপ্রিল চিত্তরঞ্জন দাস সেখানে যান।
এই সূত্রে তারকেশ্বরের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্য ছিলেন- চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, ডাঃ এএম দাশগুপ্ত, অনুলবরণ রায়, পণ্ডিত ধরানাথ ভট্টাচার্য, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মৌলানা আক্রাম খাঁ। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভায় এই বিষয়ে সদস্য হিসেবে থাকতে চিত্তরঞ্জন অস্বীকার করলে, দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রতাপচন্দ্র গুহরায়।
১৩৩১ বঙ্গাব্দের ২৭শে জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ১০ জুন ১৯২৪) থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, আনুষ্ঠানিকভাবে তারেকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন। এই অন্দোলন উপলক্ষে একটি প্রতিবাদী কমিটি তৈরি করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বামী সচ্চিদানন্দ। এই সময় এই আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র বসু বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন।
এই আন্দোলনের মুখে ২২শে সেপ্টেম্বর সতীশচন্দ্র গিরি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন প্রভাতচন্দ্র গিরির হাতে। এই সময় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন আষাঢ় মাসের তৃতীয় সপ্তাহের (মে মাসের প্রথম সপ্তাহ) দিকে। এই সময় তিনি একটি গান রচনা করেন। গানটি হলো- জাগো আজ দণ্ড-হাতে চণ্ড বঙ্গবাসী। গানটির শিরোনাম ছিল 'মোহান্তের মোহ-অন্তের গান'।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জুন চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করেন। 

তথ্য সূত্র - http://onushilon.org





 

Friday, July 14, 2023

Post # 1131 Bengali Amarchitra Katha 343

                                             ডাউনলোড করুন

 মহাভারত-এ জতুগৃহ বলতে বোঝায় সেই গৃহ যেখানে পঞ্চপান্ডব ও কুন্তীকে জ্বলন্ত দগ্ধ করার জন্য দুর্যোধন পক্ষ ঘি ও অন্যান্য দাহ্য বস্তু দিয়ে নির্মাণ করে। কিন্তু দুর্যোধনের চক্রান্ত ব্যর্থ করে বেঁচে আসেন পঞ্চপান্ডব এবং পরিবর্তে পুড়ে ছাই হয় এক নিষাদী ও তার পাঁচ পুত্র সন্তান।