ডাউনলোড করুন
মহাভারতের কাহিনী আঠারটি
পর্বে লিপিবদ্ধ। সংক্ষেপে সে কাহিনী বলবার চেষ্টা করছি।
মহামুনি ব্যাসদেব বেদ বিভাগ করে শিষ্যদের শিখিয়ে দিয়ে প্রচার করবার জন্য
পাঠিয়ে দিলেন। প্রচার চলছে কিন্তু মুনিবর মনে মনে ভাবছেন—বেদের তত্ত্ব
মূর্খ মানুষেরা বুঝতে পারবে না। তখন তিনি পুরাণ রচনা করলেন। আবারও মনে
ভাবলেন একই সমস্যা। তখন তিনি রচনা করলেন ‘মহাভারত’। যাকে ‘পঞ্চম বেদ’ বলা
হয়।
সূচিপত্র:
[show]
Mahabharat Bangla মহাভারত বাংলা সকল পর্ব
মহাভারত একটি সুবিশাল কাহিনী যা ১৮ টি পর্বে বিভক্ত।
Mahabharat Bangla – আদি পর্ব
বর্তমান দিল্লীর কাছেই হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু। ধার্মিক, রূপবান, মহাবীর
সেই রাজা গঙ্গাদেবীর মানবী মূর্তিকে বিয়ে করেন একটি শর্তে। গঙ্গার কোন
কাজে তিনি বাধা দেবেন না কখনও।
প্রতি বছর গঙ্গার গর্ভে এক একটি করে পুত্রের জন্ম হয়, গঙ্গাদেবী সেই
পুত্রগুলিকে এক এক করে গঙ্গায় ভাসিয়ে মেরে ফেলেন।
শান্তনুর বড় দুঃখ কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না। এক এক করে সাতটি পুত্রকে
ফেলে দেবার পর অষ্টমবারে রাজা গঙ্গার এই কাজে বাধা দিলেন।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য গঙ্গা শান্তনু রাজাকে ত্যাগ করে চলে গেলেন।
তবে তিনি তাঁর অষ্টম পুত্রকে রাজাকে দিয়ে গেলেন।
স্বর্গের আটজন বসুই অভিশপ্ত হয়ে গঙ্গার পুত্ররূপে জন্মেছিলেন। বশিষ্ঠদেবের
কামধেনু চুরি করার ফলেই তাঁরা এইভাবে অভিশপ্ত ছিল। তাঁদের মধ্যে যিনি
সবচেয়ে বেশী দোষী ছিলেন, তিনি গঙ্গার এই অষ্টম সন্তান। মহারাজ শান্তনু সেই
পুত্রের নাম রাখলেন দেবব্রত।
একদিন মহারাজ মৃগয়ায় গিয়ে এক অপরূপা রমণীকে দেখতে পেয়ে বিচলিত হলেন,
তারপর তাকে অনুসরণ করে পৌঁছে গেলেন ধীবররাজের ঘরে। প্রস্তাব দিলেন ধীবরের
কন্যাকে বিয়ে করতে চান তিনি।
ধীবর একটি শর্ত দিলেন – তার কন্যার গর্ভের পুত্র হবে হস্তিনাপুরের ভাবী
সম্রাট।
শান্তনু সে প্রস্তাবে রাজী হতে পারলেন না। কারণ তাঁর প্রথম পুত্র দেবব্রতকে
তিনি প্রাণাপেক্ষাও ভালবাসেন। বিশেষ করে সর্বগুণে ভূষিত সেই পুত্র। দুঃখিত
মনে ফিরে এল মহারাজ ।
পুত্র দেবব্রত জানতে পারলেন পিতার দুঃখের কারণ। তারপর ধীবরের ঘরে গিয়ে
প্রতিজ্ঞা করলেন জীবনে তিনি কখনও বিয়ে করবেন না আর রাজত্বও নেবেন না। এই
প্রতিজ্ঞার জন্য তাঁর নাম হল ‘ভীষ্ম’।
Mahabharat Bangla পুত্রের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে মহারাজ শান্তনু তাঁকে
ইচ্ছামৃত্যুর বর দিলেন। অর্থাৎ আপন ইচ্ছায় হবে তাঁর মৃত্যু।
মহারাজ শান্তনু ধীবরকন্যা সত্যবতীকে বিয়ে করলেন। কালক্রমে তাঁর গর্ভে
চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য্যের জন্ম হল।
তাদের বাল্যাবস্থায় মহারাজের মৃত্যু হল। কাজে কাজেই ভীষ্মই প্রতিনিধি হয়ে
রাজকার্য পরিচালনা করলেন।
পরে রাজা হলেন চিত্রাঙ্গদ। কিন্তু এক গন্ধর্বরাজের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর
মৃত্যু হয়। তখন রাজা হলেন বিচিত্রবীর্য্য।
কাশীরাজের তিন কন্যা—অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা।
তাদের স্বয়ম্বরে ভীষ্ম গিয়ে রথে তুলে নিয়ে আসেন, সেখানে উপস্থিত সকল
রাজাদের পরাস্ত করে । উদ্দেশ্য বিচিত্রবীর্য্যের সঙ্গে বিয়ে দিবেন।
কিন্তু তাদের মধ্যে অম্বা শাল্বরাজের বাকদত্তা। সে তার গলাতেই মালা দিয়ে
চায়।
ভীষ্ম এই কথা জানতে পেরে অম্বাকে ছেড়ে দেন। তখন অম্বা শাম্বের কাছে ফিরে
গেলেও শাল্ব তাকে গ্রহণ করল না।
Mahabharat Bangla অম্বা তখন ভীষ্মকেই বিয়ে করতে চায়।
কিন্তু ভীষ্ম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই অম্বা অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ দিল।
বিচিত্রবীর্য্যের সঙ্গে বিয়ে হল অম্বিকা ও অম্বালিকার। কিন্তু অল্পদিনের
মধ্যে বিচিত্রবীর্য্যের মৃত্যু হল এক কঠিন রোগে। তিনি তখন পুত্রহীন।
বংশরক্ষা হবে কেমন করে?
সত্যবতীর কুমারী অবস্থায় এক পুত্র ছিলেন, তিনি হলেন সেই মহামুনি ব্যাসদেব।
মায়ের ইচ্ছায় তিনি ভ্রাতৃবধূদের গর্ভে দুই পুত্র সৃষ্টি করলেন। অম্বিকার
গর্ভে হল অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র আর অম্বালিকার গর্ভে জন্মাল পাণ্ডু।
পরে সেই ব্যাসদেবের ঔরসে এক দাসীর গর্ভে জন্মালেন বিদুর সেই বিদুর
পরবর্তীকালে এক মহান ধার্মিক হলেন ।
অন্ধত্বের জন্য ধৃতরাষ্ট্রকে রাজা না করে পাণ্ডুকেই রাজা করা হল।
ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ হয় গান্ধারীর সঙ্গে। রাজা পাণ্ডুর দুই ভার্য্যা। একজন
কৃষ্ণের পিতা বসুদেবের ভগ্নী কুন্তী আর একজন মদ্রদেশের রাজা শল্যের ভগ্নী
মাদ্রী।
কুন্তীর কুমারী অবস্থায় সূর্য্যের বরে এক পুত্র ছিল, তার নাম কর্ণ। অধিরথ
নামে এক সারথির ঘরে সেই কর্ণ বড় হয়। যুদ্ধবিদ্যায় মহাবীর হয়ে উঠেন।
বিদুর বিবাহ করেন সুদেব নামে এক রাজার কন্যা পরাশরীকে।
পাণ্ডুরাজার পাঁচ পুত্র। কুন্তীর গর্ভে ধর্মরাজের বরে যুধিষ্ঠির, পবনের বরে
ভীম আর ইন্দ্রের বরে অর্জুন। মাদ্রীর গর্ভে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বরে নকুল ও
সহদেব। পাণ্ডুর এই পাঁচ পুত্ৰ ‘পাণ্ডব’ নামে পরিচিত।
ধৃতরাষ্ট্রের একশ পুত্র, এক কন্যা। পুত্রদের জ্যেষ্ঠ দুর্যোধন, পরে দুঃশাসন
ইত্যাদি। আর কন্যার নাম দুঃশলা। ধৃতরাষ্ট্রের এই শত পুত্র ‘কৌরব’ নামে
পরিচিত।
রাজা পাণ্ডুর হল অকালমৃত্যু। মাদ্রী গেলেন সহমরণে।
Also Read:
১৫ টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প
গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী
তারপর রাজা হলেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র।
পাণ্ডুপুত্র ও নিজের পুত্রদের বিদ্যাশিক্ষা দিলেন কৃপাচার্য্যের কাছে।
অস্ত্রবিদ্যায় পাণ্ডবরা কৌরবদের থেকে এগিয়ে। বিশেষ করে অর্জুন। এর ফলে
দুৰ্য্যোধন পাণ্ডব বিদ্বেষী হয়ে উঠল—বিশেষ করে ভীমের উপর। Mahabharat
Bangla কারণ ভীমের কাছে দুর্যোধন কখনই এঁটে উঠতে পারত না।
একদিন গঙ্গাস্নানে গিয়ে দূৰ্য্যোধন গোপনে ভীমকে খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে
নদীতে ফেলে দেয়।
কিন্তু রাখ হরি মারে কে। ভীম জলে ডুবে গিয়ে নাগলোকে চলে গেল। সেখানে সাপের
দংশনে বিষে বিষে বিষক্ষয় হল। বাসুকি নাগ ভীমকে অমৃত খাইয়ে আগের থেকে আরও
বেশী বলবান করে তুলল।
কৃপাচার্য্যের পর কুরু-বালকদের অস্ত্রগুরু হলেন দ্রোণাচার্য্য।
একদিন পরীক্ষা নিলেন সবার। সেই পরীক্ষায় ধনুর্বিদ্যায় জিতলেন কেবল
অর্জুন। আর গদাযুদ্ধে ভীম আর দুর্য্যোধন প্রায় সমান ।
কিছুদিন পরে আর এক পরীক্ষাতেও অর্জুন হলেন সবার সেরা। কর্ণ ছিলেন সেখানে।
তিনি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেন।
কিন্তু তিনি সারথির পুত্র হওয়ায় সে যুদ্ধের মহড়া শেষ পৰ্য্যন্ত হল না।
কর্ণের তাই খুব দুঃখ, দুর্য্যোধন তাঁকে অঙ্গরাজ্য দান করে সেখানকার রাজা
করে দিলেন। তখন কর্ণ প্রতিজ্ঞা করল চিরকাল দুর্য্যোধনের বন্ধু হয়েই থাকবে।
দুর্যোধনের মামা শকুনি মহাকূটবুদ্ধিদাতা। তার বাবার নাম ছিল সুবল। সুবল
মারা যাওয়ার পর তার হাড় দিয়ে পাশাখেলার গুটি তৈরি করে, সেই গুটির দ্বারা
পাশাখেলায় সব সময় সে জিতে যেত।
পাণ্ডবদের প্রতি দুর্য্যোধনের সদাই হিংসা, কেমন করে তাঁদের বিনাশ করা যায় –
এই চিন্তা তার সবসময়। মামা শকুনি, সখা কর্ণ আর ভাই দুঃশাসনকে নিয়েই তার
শলা-পরামর্শ। Mahabharat Bangla
একবার এই রকম এক যুক্তি করে বারাণাবতে সহজে জ্বলে উঠে এমন সব জিনিস দিয়ে
ঘর বানিয়ে দুর্য্যোধন পাণ্ডবদের পাঠিয়ে দিল সেখানে পুড়িয়ে মারবার জন্য।
সঙ্গে তাঁদের মা কুন্তীদেবীও ছিলেন।
বিদুর দুর্যোধনের সেই কৌশল জানতে পেরে গোপনে সেই ঘরটি থেকে একটা সুড়ঙ্গ
কেটে রাখলেন।
আরও পড়ুন: শুভ অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৩ ছবি ও শুভেচ্ছা বার্তা
তারপর পঞ্চপাণ্ডব সেই ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যান সেই পথ দিয়ে।
তারপর তাঁরা গঙ্গা পার হয়ে এক বনের মধ্যে আশ্রয় নিলেন।
সেখানে এক রাক্ষস হিড়িম্ব আর তার বোন হিড়িম্বা থাকে। হিড়িম্ব তাঁদেরকে
খাওয়ার চেষ্টা করলে ভীম তাকে বধ করে।
ভীম তার বোন হিড়িম্বাকে বিয়ে করেন। তার গর্ভে ভীমের এক পুত্র জন্মায় –
তার নাম ঘটোৎকচ। সে মায়ের কাছে বনেই রয়ে গেল।
তারপর পঞ্চপাণ্ডব ব্রাহ্মণবেশে নানা স্থানে ঘুরতে ঘুরতে একচক্রা গ্রামে এসে
এক ব্রাহ্মণের বাড়ীতে আশ্রয় নেন।
সেই গ্রামের পাশে এক বনে বক নামে এক রাক্ষস থাকত। গ্রামের শান্তির জন্য
প্রতিদিন তার কাছে একটি করে মানুষ পাঠিয়ে দেওয়া হত।
একদিন পড়ল সেই ব্রাহ্মণ বাড়ীর পালা। কাঁদতে বসেছে সবাই। একজনকে হারাতে
হবে।
কিন্তু ভীম সেই বক রাক্ষসকে মেরে সারা গ্রামেরই উপকার করলেন।
সেই সময় পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ তাঁর কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবরের ব্যবস্থা করলে,
অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে তাকে লাভ করেন।
কিন্তু মা কুন্তীর ইচ্ছায় পঞ্চপাণ্ডবই হলেন তার স্বামী।
পরে পঞ্চপাণ্ডবের ছদ্মবেশ প্রকাশ পেল। তখন ধৃতরাষ্ট্র সংবাদ পেয়ে
পাণ্ডবগণকে নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন।
তারপর সমগ্র রাজ্যকে দু’ভাগ করে, এক ভাগ পাণ্ডবদের আর এক ভাগ নিজের
পুত্রদের দিলেন। পাণ্ডবরা রাজ্য স্থাপন করলেন ইন্দ্রপ্রস্থে।
পাঁচ ভাই এর এক স্ত্রী। তাই একটা নিয়ম করা হল—যখন দ্রৌপদীর সঙ্গে কোন এক
ভাই গোপনে আলাপ করবেন, তখন কেউ সেখানে যাবে না।
কিন্তু অর্জুন এক ব্রাহ্মণের গোরু চোরকে শাস্তি দেবার জন্য অস্ত্রাগারে
প্রবেশ করার জন্য সেই নিয়ম লঙ্ঘন করায় তাঁকে বারো বছরের জন্য দেশত্যাগী
হতে হল।
Mahabharat Bangla অর্জুন প্রথমে পাতালরাজ্যে গিয়ে নাগকন্যা উলুপীকে বিয়ে
করেন।
তারপর মণিপুরে গিয়ে সেখানকার রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে করেন। তার
গর্ভে বজ্রবাহনের জন্ম হয়। এই দুই রাজকন্যা সেই রাজার কাছেই রয়ে গেলেন।
তারপর অর্জুন দ্বারকায় গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের ভগ্নী সুভদ্রাকে হরণ করে
ইন্দ্রপ্রস্থে নিয়ে এলেন তাঁকে সঙ্গে করে।
ক্ষুধাতুর অগ্নিদেবের ইচ্ছা হল খাণ্ডববন দহন করবার। তখন তিনি কৃষ্ণ ও
অর্জুনের সাহায্য চাইলেন।
দারুণভাবে বাধা দিলেন ইন্দ্র। ব্রহ্মার পরামর্শমত অগ্নি তখন অর্জুনকে দিলেন
গাণ্ডীব ধনুক, অক্ষয় তৃণ আর একটি দিব্য রথ – যার নাম কপিধ্বজ।
কৃষ্ণকে দিলেন কৌমোদকী গদা ও সুদর্শন চক্র।
খাণ্ডববন পুড়তে লাগল, ইন্দ্র বাধার সৃষ্টি করলেও শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের
কাছে হার স্বীকার করে ফিরে গেলেন। রক্ষা পেল মাত্র চারটি বকের ছানা,
তক্ষকের পুত্র অশ্বসেন আর ময়দানব।
আরও পড়ুন:
কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী
২৭০ টি মোটিভেশনাল উক্তি
মহাভারত বাংলা – সভা পৰ্ব
ময়দানব একজন দক্ষ শিল্পী। অর্জুন তার দ্বারায় ইন্দ্রপ্রস্থে একটি সুন্দর
সভাগৃহ তৈরি করালেন। অপরূপ তার কারুকার্য্য।
ইতিমধ্যে দ্রৌপদীর গর্ভে পঞ্চপাণ্ডবের পাঁচটি পুত্র জন্মেছে। তারা হল
যথাক্রমে— প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতবর্মা, শাতনীক ও সুতসেন।
মহারাজ যুধিষ্ঠির দেবর্ষি নারদের পরামর্শে রাজসূয় যজ্ঞ করবেন।
তার আগে সকল রাজাদের পরাজিত করে কর আদায় করার বিধান আছে। সকল রাজাই নত
মস্তকে কর দিলেন।
একমাত্র জরাসন্ধই বাধ সাধলেন। ভীম শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে জরাসন্ধকে
মল্লযুদ্ধে বিনাশ করলেন।
মহারাজ যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ শুরু করবেন(Mahabharat Bangla)।
শ্রীকৃষ্ণকেই যজ্ঞেশ্বর-শ্রেষ্ঠ হিসাবে ঘোষণা করা হলে, শিশুপাল সেই
প্রস্তাবের বিরোধিতা করে শ্রীকৃষ্ণকে কটাক্ষ করে বহু কটূক্তি করল।
শিশুপালের মায়ের কাছে কৃষ্ণ প্রতিশ্রুত ছিলেন যে, তিনি তার শত অপরাধ ক্ষমা
করবেন। তাই শিশুপালের শত অপরাধ পূর্ণ হওয়ার পর আরও অপরাধ করলে শ্রীকৃষ্ণ
সুদর্শন চক্রের দ্বারায় তার মস্তক ছেদন করলেন।
তারপর নির্বিঘ্নে শেষ হল যজ্ঞের কাজ।
পাণ্ডবদের ঐশ্বর্য্য দেখে দুর্য্যোধনের চোখ ঠিকরে গেল। হিংসায় জ্বলতে
লাগল। তাঁদের স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদটিতে জলকে স্থল আর স্থলকে জল জ্ঞান করে
লজ্জিতও হল।
ফিরে এল হস্তিনায়। মামা শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলতে ডাকলে
ধর্মভীরু যুধিষ্ঠির না বলতে পারলেন না। খেলতে শুরু করলেন।
শকুনির পাশার জুয়াচুরির জন্য যুধিষ্ঠির তাঁর সমস্ত ঐশ্বর্য্য,
সৈন্য-সামন্ত, রাজধানীও হারালেন।
শেষে চার ভাই, নিজে এমন কি দ্রৌপদীকেও পণ রাখলেন আর হেরেও গেলেন।
দুৰ্য্যোধনের মনোবাসনা পূর্ণ হল। দুঃশাসনকে আদেশ করলেন দ্রৌপদীকে সভামাঝে
ধরে নিয়ে আসার জন্য। আনা হল তাঁকে।
তারপর আদেশ করল তাঁকে উলঙ্গ করবার জন্য। দুঃশাসন দ্রৌপদীর শাড়ী ধরে টানছে।
তখন দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হলে, ভগবান অজস্র বস্ত্র জোগান করে তাঁর
লজ্জা নিবারণ করলেন।
পঞ্চপাণ্ডবের সামনে এতসব কাণ্ড হয়ে গেল কেউ মাথা তুলতে পারছে না লজ্জায়।
কিন্তু ভীম সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন – দুঃশাসনের বুক চিরে রক্তপান
করবেন, আর কুরুকুল ধ্বংস করবেন।
তারপর দুর্য্যোধন ঊরু দেখিয়ে দ্রৌপদীর প্রতি কুৎসিত ইঙ্গিত করলে, ভীম আবার
পণ করলেন – গদাঘাতে তার ঊরু ভাঙবেন।
ভীমের পরাক্রম সবাই জানে। তাই তাঁর প্রতিজ্ঞা শুনে সবাই আতঙ্কিত।
তাই ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্মের সঙ্গে পরামর্শ করে পাণ্ডবদের পাশা খেলায় হারানো
সকল সম্পদ ফিরিয়ে দিলেন।
দুৰ্য্যোধন কিন্তু হিংসায় জ্বলতে লাগল। আবার পাশা খেলার জন্য যুধিষ্ঠিরকে
ডেকে পাঠালেন। সেই খেলার পরিণাম জেনেও যুধিষ্ঠির যোগ দিলেন খেলায়।
Mahabharat Bangla শকুনির চক্রান্তে আবারও পরাজিত হলেন। পণ রাখলেন—বারো বছর
বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাস। সেই অজ্ঞাতবাসকালে প্রকাশ হলে, আবার হবে বারো
বছর বনবাস। এই পণে খেলায় আবার হারলেন পঞ্চপাণ্ডব।
তারপর পঞ্চপাণ্ডব মা-কুন্তীকে বিদুরের কাছে রেখে দ্রৌপদীকে নিয়ে চললেন
বনবাসে।
তারপর একদিন দেবর্ষি নারদ কৌরবসভায় এসে ধৃতরাষ্ট্রকে বহু তিরস্কার করে
জানিয়ে গেলেন তের বছর পরে হবে কুরুবংশ ধ্বংস। নারদের ভবিষ্যৎ-বাণী শুনে
ধৃতরাষ্ট্র খুব দুঃখিত হলেন।
কিন্তু এখন আর করার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জীবনী ও বাণী
Mahabharat in Bengali – বনপর্ব
পাণ্ডবগণ প্রথমে রইলেন কাম্যকবনে। তাঁদের সঙ্গে তাঁদের অনুগত ভৃত্য ছিল
চৌদ্দজন ৷ অসংখ্য গুণমুগ্ধ প্রজাও ছিল তাঁদের সঙ্গে। চিন্তিত হলেন
যুধিষ্ঠির—এত লোকের আহার জুটবে কেমন করে?
ধৌম্য নামে এক ব্রাহ্মণের উপদেশমত যুধিষ্ঠির সূর্য্যের আরাধনা করলেন।
সূর্য্যদেব খুশী হয়ে যুধিষ্ঠিরকে দিলেন এক স্বর্ণথালা। তার গুণ হল এই –
যতক্ষণ না দ্রৌপদীর আহার শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ সেই থালার কাছ থেকে যত খাবার
চাইবে, সবই পাবে।
আর কোন চিন্তা নাই। অসংখ্য লোকের আহার সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে নিয়ে
যুধিষ্ঠির আনন্দেই আছেন।
কাম্যকবনে থাকাকালীন ভীম বক রাক্ষসের ভাই কির্মীকে বধ করলেন।
সেই বনে থাকার সময় তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসতেন বহু মুনি-ঋষিরা।
একদিন শ্রীকৃষ্ণও এলেন। তিনি পাণ্ডবদের সান্ত্বনা দিয়ে বললেন – তেরোটা বছর
দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। কৌরবরা তাদের দুষ্কর্মের ফলভোগ করবে। ধর্মের জয়
একদিন হবেই।
কাম্যকবনে বেশ কিছুদিন বাস করার পর পাণ্ডবরা দ্বৈতবনে গিয়ে কুটির বাঁধলেন।
একদিন ব্যাসদেব তাঁদের কুটিরে গিয়ে তাঁদেরকে ‘প্রতিস্মৃতি’ নামে একটি
মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন। Mahabharat Bangla অর্জুন সেই মন্ত্র জপ করে
মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বহু অস্ত্র-শস্ত্র ও আশীর্বাদ লাভ করলেন তাঁর কাছ
থেকে।
তারপর অর্জুন স্বর্গে গিয়ে কুবের, যম, বরুণ, ইন্দ্রাদি দেবতাগণের কাছ থেকে
বহু অস্ত্র লাভ করলেন।
অর্জুন যখন তপস্যার জন্য চলে গেলেন, সেই সময় লোমশ মুনির পরামর্শমত
পাণ্ডবগণ দ্রৌপদীসহ নানা তীর্থ ভ্রমণ করে বদ্রীনাথে অবস্থান করছেন, অর্জুন
স্বর্গলোক থেকে পুষ্পক রথে চড়ে সেখানে এলেন।
তারপর তাঁরা দ্বৈতবন হয়ে পুনরায় কাম্যকবনে গিয়ে বাস করতে লাগলেন।
পাণ্ডবদের বনে পাঠিয়ে কৌরবেরা খুব খুশী। তাঁদের দুঃখের অবস্থা নিজেদের
চোখে দেখবার জন্য নিজেদের ঐশ্বর্য্য দেখানোর উদ্দেশ্যে দুর্য্যোধন সপরিবারে
কাম্যকবনের কাছে প্রভাসে আড়ম্বরের সঙ্গে স্নান করবার জন্য গেলে, চিত্ররথ
গন্ধবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাঁধে। শেষে সপরিবারে দুর্য্যোধন বন্দী হয় তাঁর
কাছে (Mahabharat Bangla)। বেগতিক দেখে কর্ণ ভয়ে পালিয়ে গেল।
যুধিষ্ঠির এই সংবাদ পেয়ে ভীম আর অর্জুনকে পাঠিয়ে চিত্ররথ গন্ধর্বের সঙ্গে
যুদ্ধ করে দুর্য্যোধনাদিকে মুক্ত করে দিলেন।
তখন দুর্য্যোধন সবার সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের কাছে এলে, যুধিষ্ঠির তাকে বহু উপদেশ
দিলেন।
দ্রৌপদী কৌরব – মহিলাদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন। পাণ্ডবদের এই মহানুভবতা
সবাই জানতে পেরে খুব খুশী হল তাঁদের প্রতি।
এই ব্যবহারে দুর্য্যোধনের মনে কিছুটা অনুশোচনা হল। তারপর ফিরে গেল তারা
হস্তিনাপুরে।
কিছুদিন পরে দুর্যোধনের সেই হিংসা জেগে উঠল পাণ্ডবদের প্রতি অসদ্ শকুনি,
দুঃশাসন আর কর্ণের সঙ্গলাভের জন্য। চিন্তা করতে লাগল – পাণ্ডবদের কেমন করে
জব্দ করা যায়?
যুক্তি স্থির করে ভগ্নীপতি জয়দ্রথকে পাঠিয়ে দিল কাম্যকবনে দ্রৌপদীকে হরণ
করবার জন্য। কিন্তু ভীমসেনের হাতে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত হল জয়দ্রথ সেই কাজে
ধরা পড়ে।
এই ঘটনার পর জয়দ্রথ পাণ্ডবনিধনে মরিয়া হয়ে মহাদেবের তপস্যা করে বর লাভ
করল – অর্জুন ছাড়া চার পাণ্ডবকে পরাজিত করতে পারবে। আর তার সহায়তায়
অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর হবে বিনাশ ।
একদিন দুর্বাসা মুনি তাঁর দশ হাজার শিষ্য নিয়ে দুর্যোধনের অতিথি হলে,
দুৰ্য্যোধন খুব ভয় পেয়ে বহু পরিচালকের দ্বারা তাঁদের সেবা করে পরিতুষ্ট
করল।
মহারাগী মুনি দুর্বাসা তাকে তখন বর দিতে চাইলে, যুধিষ্ঠিরের কুটিরে তাঁর
সকল শিষ্যদের নিয়ে অতিথি হওয়ার জন্য দুর্য্যোধন বর চাইল।
তখন দুর্বাসা মুনি কাম্যকবনে গিয়ে যুধিষ্ঠিরের কুটিরে অতিথি হলেন। তখন
অপরাহু কাল। দ্রৌপদীর আহার সমাপ্ত হয়েছে। বড় বিপদ বুঝলেন যুধিষ্ঠির।
কিন্তু দ্রৌপদী বিপদহারী মধুসূদনের সহায়তায় দূর থেকেই সেই সকল অতিথিগণকে
বিদায় করে দিলেন (Mahabharat Bangla)। দ্রৌপদীর সেই সূৰ্য্য প্রদত্ত সোনার
থালা থেকে একটু শাকের কণা খেয়ে কৃষ্ণ পরম তৃপ্তি লাভ করলেন। তার ফলে
স্নানরত দুর্বাসা মুনি তাঁর শিষ্যগণের সঙ্গে এইবোধ করলেন যে, তারা এইমাত্র
ভরপেটে খেয়েছেন। আর সামান্য খাবারও খাওয়া যাবে না। তাই তাঁরা পাণ্ডবদের
কুটিরে না গিয়ে, নিজ স্থানে ফিরে গেলেন।
এক এক করে বারোটা বছর কেটে গেল। আর মাত্র ছ’দিন বাকী। পরবর্তী এক বছর থাকতে
হবে অজ্ঞাতে। কেউ যেন না জানতে পারে কোথায় আছে, ধরা পড়লেই রক্ষা নাই।
আবার বারো বছর বনবাসে থাকতে হবে। পাণ্ডবগণ ঠিক করলেন— মৎস্যরাজ বিরাটের
প্রাসাদেই কাটিয়ে দেবেন ছদ্মবেশে।
তখন তাঁরা তাদের অস্ত্র-শস্ত্র মৎস্যদেশের মধ্যে এক দুর্গম প্রান্তরে একটি
শমী বৃক্ষের উপর রেখে গমন করলেন বিরাটের রাজসভায়।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২০ টি উক্তি
Mahabharat Bangla – বিরাট পর্ব
পরম ধার্মিক মৎস্যরাজ বিরাট। দ্রৌপদী সহ পঞ্চপাণ্ডব তাঁর কাছে গিয়ে
ক
আজ থেকে বহু প্রতীক্ষিত মহাভারতের খণ্ড গুলি আপলোড শুরু করলাম ।
মহাভারত সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই ... অমর চিত্র কথা কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৬০ খণ্ডে সমাপ্য বলে ঘোষণা করলেও পরে সিদ্ধান্ত নেন যে ৪২ খণ্ডে শেষ করা হবে , কিন্তু এর পরেও বাংলা ভাষায় ৩০ খণ্ড যুদ্ধারম্ভ - তে শেষ হয়ে যায় এই শৃঙ্খলা, কিন্তু অন্য ভাষায় প্রকাশ পায় ৪২ খণ্ড অবধিই ।
বাংলাতে যে বই গুলি প্রকাশ পায়নি ইংরাজি ও হিন্দি তে প্রকাশিত সেই বাকি বই গুলির প্রচ্ছদ ।