১ - ১০০ মধ্যে সমস্ত বই নতুন পি ডি এফ হয়ে যাবার পর ইন্দ্রজাল কমিক্স ১০২-১৫০ লেবেলের ( ১০২ ও ১০৩ প্রকাশিত হয়নি কর্মী বিক্ষোবের জন্য ) বই গুলি এখন পি ডি এফ করার কাজ চলছে ,১০ টি বই হয়েও গেছে , আপনারা রোজ একবার এই লেবেল টি ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন ।
জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ইংরেজ সরকারের একজন ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। বসু পরিবারের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল নামক গ্রামে।
জগদীশচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত হয় ফরিদপুর জেলার একটি গ্রাম্য বিদ্যালয়ে। এ সময় বাংলার লোক অভিনয়, যাত্রা-পালাগান এবং রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনী এবং চরিত্রগুলি সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ জাগে। তাঁর এগার বৎসর বয়সে বসু পরিবার কলকাতায় চলে যায়। সেখানে তিনি প্রথমে হেয়ার স্কুলে, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে অধ্যয়ন করেন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৫ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। ১৮৭৯ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময়েই তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচিত হয়। রেভারেন্ড ফাদার লাফোন্ট (Rev Father Lafont)-এর উৎসাহে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। লাফোন্টের উদ্যোগে তাঁকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তবে প্রথমে তিনি এক বৎসর চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ডাক্তারি পড়া বাদ দিয়ে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপজ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। প্রায় একই সময়ে ১৮৮৪ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। এখানেই তাঁর শিক্ষক এবং যথার্থ অনুসন্ধানী গবেষকের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জীবনের সূত্রপাত ঘটে। জগদীশচন্দ্র ১৮৯৪ সালের দিকে ব্যাপকভাবে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। বিদ্যুৎতরঙ্গের আলোকধর্মী প্রবণতার মধ্যে প্রতিফলন, প্রতিসরণ, সর্বমোট প্রতিফলন, সমবর্তী বিচ্ছুরণ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন। আকাশ-তরঙ্গ ও বৈদ্যুতিক চুম্বক তরঙ্গের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে জগদীশচন্দ্র বেতার বার্তার সূত্র আবিষ্কার করেন। বিনাতারে শব্দ প্রেরণের ‘ক্রিস্ট্যাল রিসিভার’ নামক যে বেতার যন্ত্রটি তিনি আবিষ্কার করেন তার সাহায্যে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত তাঁর বাসভবনে সাংকেতিক শব্দ প্রেরণ করতে সক্ষম হন।এ ছাড়া তিনি নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে অদৃশ্য-আলোকেও দৃশ্য-আলোকের সকল ধর্ম বর্তমান।
তাঁর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞান সাময়িকীগুলিতে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে দি ইলেক্ট্রিশিয়ান, প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি, জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এবং দ্য ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন এর মতো বিখ্যাত সাময়িকী ও জার্নালগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ সকল গবেষণা কর্মের ওপর ভিত্তি করেই ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এসসি ডিগ্রি প্রদান করে। ক্ষুদ্র শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি সম্পর্কিত তাঁর গবেষণা থেকে আধুনিক তরঙ্গপথের ধারণার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর পরিচালিত গবেষণা ও আবিষ্কৃত যন্ত্রসমূহের সঙ্গে রাডার প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ের যন্ত্রসমূহের ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য রয়েছে।
১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত সময়ব্যাপী জগদীশ বসু জীব ও জড়ের উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণায় ব্যাপৃত থাকেন। বৈদ্যুতিক তরঙ্গ গ্রহণকারী বা ‘কোহেরারস’ (coherers)-এর কার্যকারিতা কমে যাওয়া আবার কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর কার্যকর হওয়া সম্পর্কিত পূর্ববর্তী গবেষণাগুলির গভীর পর্যবেক্ষণ তাঁকে নতুন করে এ ক্ষেত্রটি সম্পর্কে খুবই উৎসাহী করে তুলেছিল। ওয়ালার-এর তত্ত্বের প্রতিবিধান অনুসারে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার সামর্থ্যকে প্রাণশক্তি উন্মেষের বিশ্বজনীন চিহ্ন হিসেবে পরিগণিত করা যেতে পারে। বসু পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদর্শন করেন যে, জীব ও জড় বস্ত্তর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ তাদের আণবিক গঠনে একই রূপ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এ ধরনের কিছু ধারাবাহিক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রাণীদেহ এবং শাকসবজির কোষকলাসমূহ বৈদ্যুতিক ক্রিয়া দ্বারা উদ্দীপ্ত হয় ও সাড়া দেয়। এ ছাড়া তাপ, ঔষধ, রাসায়নিক দ্রব্য এবং যান্ত্রিক চাপেও একইভাবে এরা উদ্দীপ্ত হয়। তিনি আরও দেখিয়েছেন, একইভাবে নির্দিষ্ট কিছু অজৈব পদার্থেও সমরূপ উদ্দীপনা ঘটানো যেতে পারে। তাঁর এ গবেষণাকর্ম বিখ্যাত বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি সাময়িকীটিতে ‘জীব ও জড়ের সাড়া দেয়ার শক্তি’ (Response in the Living and Non-Living) শিরোনামে তাঁর এ সংক্রান্ত সকল লেখা সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হয়।
উদ্ভিদ জগতের সংবেদনশীলতা বিষয়ক গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র আত্মনিয়োগ করেন প্রাণ-পদার্থবিদ্যা এবং উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায়। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর পদার্থবিদসুলভ গভীর দৃষ্টি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দক্ষতার কার্যকরী প্রয়োগ ঘটান। তিনি কিছুসংখ্যক অজৈব পদার্থের মডেল তৈরি করেন যা প্রাণী ও উদ্ভিদের কোষকলাসমূহের মতো নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি সমরূপ সাড়া প্রদান করে। এধরনের একটি মডেল তৈরি করা হয় নরম লৌহদন্ডের উপর তার পেঁচিয়ে, একটি বিদ্যুৎপ্রবাহ উৎস এবং একটি গ্যালভানোমিটার সংযুক্ত করে। প্রাণীর স্নায়ুতে পরিচালনের ফলে সৃষ্ট আন্দোলন গ্যালভানোমিটার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। জগদীশ বসু উদ্ভাবিত বিভিন্ন যন্ত্রের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যন্ত্রটির নাম ক্রেসকোগ্রাফ। এটি সামান্য নড়াচড়াকে ১ কোটি গুণ বিবর্ধিত করতে পারে। পরিবাহিতা পরিমাপক, ট্রান্সপিরোগ্রাফ, ফটোসিনথেটিক গ্রাহক এবং চৌম্বক রেডিওমিটার তাঁর উদ্ভাবিত অন্যান্য যন্ত্র। জগদীশচন্দ্রের বিস্ময়কর কর্মউন্মাদনা এবং একাগ্রচিত্ত বিজ্ঞান সাধনার ফলেই এসব গবেষণা কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অসংখ্য গবেষণা প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ রচনা করেন।
জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি এমিরিটাস প্রফেসর পদ লাভ করেন। ১৯১৭ সালে উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এখানে উদ্ভিদ ও কৃষি রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণার জন্য উল্লিখিত বিষয়সমূহের বিভাগ খোলা হয়। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র আমৃত্যু এখানে গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন।
জগদীশচন্দ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানকার বিদগ্ধ বিজ্ঞানীদের নিকট তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলে ধরেন। এসময়ে কিছুকাল (১৯০০-১৯০২) তিনি লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। ১৯১৬ সালে জগদীশচন্দ্র বসু ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯২৮ সালে ভিয়েনা একাডেমী অব সায়েন্সের করেসপন্ডিং সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বিজ্ঞান সমিতির সম্মানিত সদস্য ছিলেন। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১৯২৭ কার্যবর্ষে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ঐ সময়ে লীগ অব নেশন্স-এর বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যার বর্তমান নাম ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী। তিনি কিছুকাল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধাবলী অব্যক্ত নামক গ্রন্থে সংকলিত। তাঁর ইংরেজি রচনাবলি হচ্ছে: Responses in the Living and Non-living (1902), Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (1906), Comparative Electrophysiology (1907), Physiology of the Asent of Sap (1923), Physiology of Photosynthesis (1924), Nervous Mechanism of Plants (1925), Collected Physical Papers (1927), Motor Mechanism of Plants (1928), Growth and Tropic Movement in Plants (1929)। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ বিজ্ঞানী তাঁর সুদীর্ঘ কর্মময় জীবন শেষে ১৯৩৭ সালে গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন।আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু কে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞান পথিকৃৎ। বলা হয়ে থাকে তিনি নাকি সময়ের আগেই পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। তার যথার্থ বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন এখনো করা সম্ভব হয়নি।