ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র কে আধুনিক হিন্দি গদ্যের জনক বলাহয় । তিনি মাত্র ৩৫ বছর জীবিত ছিলেন , এই অল্প সময়ে ১৭৫ টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন , এর মধ্যে আছে ছোট গল্প , নাটক ,কবিতা ও প্রবন্ধ ।
আজকের কমিকস্ টির গল্প ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রের (১৮৫০ - ১৮৮৫) একটি নাটকের উপর প্রতিষ্ঠিত, এই নাটক সরবরাহ করেছিলেন শ্রীমতী শান্তিদেবী মতিচন্দ্র । নাটকের বিষয়বস্তু তৎকালীন একটি জনপ্রিয় উপকথার উপরে প্রতিষ্ঠিত । দ্বিতীয় গল্পটি উত্তর ভারতের সুপরিচিত উপকথা ।
ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র হিন্দি সাহিত্যের ভগীরথ রূপে পরিগণিত। তার লেখনী স্পর্শেই হিন্দি সাহিত্যে নবজাগরণের যুগরূপে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ শেঠ আমিনচন্দের বংশজাত ভারতেন্দু হিন্দি সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তক। বাল্যাবস্থা থেকেই তার বহুমুখী প্রতিভার বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হয়। তার সৃজনশীল কবিপ্রতিভা এবং বহুমুখী রচনাশৈলী তার জনপ্রিয়তাকে বহুবিস্তৃত করেছিল ফলে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে, ভারতের সমকালীন সাহিত্যজগত সাংবাদিককুল তাকে ভারতেন্দু আখ্যায় ভূষিত করেন।
হিন্দি সাহিত্যক্ষেত্রে আধুনিককালের প্রবর্ত্তকরূপ (১৯০০) ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রের মহত্ব কেবলমাত্র সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ নয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেও তার মহত্ত্ব অপরিসীম। এর মূলত দুটি কারণ স্বীকার করা হয়। একটি কারণ হল ভারতেন্দুই প্রথম কবি যিনি রীতিকালীন নগ্ন শৃঙ্গারের জগত থেকে কাব্যকে উদ্ধার করে সুস্থ এবং স্বকীয় পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছিলেন। অন্য কারণ হল আপন দূরদৃষ্টিসহকারে পদ্যসাহিত্যকে যুগোপযোগী করে তুলেছিলেন এবং সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে যুগোপযোগী চিন্তাচেতনার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলেন।
কবিঘর হরিশচন্দ্র ইতিহাসখ্যাত শেঠ আমিণচন্দের বংশজাত, তার পিতা বাবু গোপালচন্দ্র। গিরিধরদাস সমকালীন যুগের এক প্রসিদ্ধ কবি ছিলেন। হরিশ্চন্দ্র বাল্যাবস্থা থেকেই সর্বতোমুখী রচনাশৈলীর নিদর্শন রাখেন। কবিত্বশক্তির প্রকাশের সাথে সাথে তিনি একজন সাংবাদিকতারূপেও আপন প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। 'কবিবচনসুধা এবং ‘হরিশচন্দ্র চন্দ্রিকা' তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হত। এই পত্রিকা দুটি তৎকালে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
কাশীর স্বনামধন্য কবি নাট্যকার এবং প্রোথিতযশা পুরুষ বাবু গোপালচন্দ্রের (ছদ্মনাম ‘গিরিধরদাস’) পবিত্র গৃহে ১৮৫০ সালে ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রের জন্ম হয়। সহজাত প্রতিভা ও সাহিত্যানুকুল পরিবেশের বাল্যাবস্থা থেকেই ভারতেন্দুর প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল।
ভারতেন্দু ছিলেন প্রধানত কবি যদিও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় তার পদচারণা ছিল স্বচ্ছন্দ। তার রচিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় সত্তর। এদের মধ্যে-'প্রেম মালিকা' ‘প্রেম সরোবর’ ‘গীত গোবিন্দানন্দ’ ‘বর্ষা বিনোদ’ ‘বিনয় প্রেমপচাশ', প্রেম ফুলওয়ায়ী, বেণুগীতি ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতেন্দু গ্রন্থাবলীর প্রথম খণ্ডে তার সমস্ত ছোটো বড়ো কাব্যরচনাসমূহ সংকলিত হয়েছে।
মূলত আধুনিক হিন্দি নাটক ও প্রবন্ধরচনা ভারতেন্দুর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। প্রাক ভারতেন্দু যুগে, রঙ্গমঞ্চ বা নাট্যধারার বিকাশ ঘটেনি তেমনভাবে। অত্যন্ত নিম্নমানের কয়েকটি ভ্রাম্যমান পার্সী থিয়েটারের দল থাকলেও যুগোপযোগী চিন্তাশৈলির এবং সামাজিক পটভূমিকার যথার্থ রূপায়ণের কোনও প্রকাশ তৎকালে দেখা যায়নি।
নিরাশার কালিমা থেকে পবিত্র ভারতীয় জীবন ও সাহিত্যকে উদ্ধার করে ভারতেন্দু সূর্য হিন্দি সাহিত্যের আকাশকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছিল।
সাহিত্যের অনেকগুলি শাখা থাকলেও নাটকই একমাত্র শাখা যার মাধ্যমে সামাজিক শিক্ষা, চিত্তবিনোদন এবং ভাববিনিময়ের সুযোগ সর্বাধিক বিদ্যমান। সুতরাং সাহিত্যের এই শাখার যথার্থ বিকাশ ব্যতিরেকে অন্যান্য শাখাগুলিও কিয়দংশে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সারসত্যটি ভারতেন্দু যথার্থভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই দেশের অতীত ইতিহাসের নাট্যরূপায়ণে প্রয়াসী হন। ফলে পরাধীন ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ঐক্য এবং নবজাগরণের সূচনাকল্পে বারতেন্দুজী তার লেখনী ধারণ করেছিলেন নাটক রচনার মাধ্যমে। তার অনুদিত এবং মৌলিক নাটকের সংখ্যা সতেরো। ওই নাটকসমূহের কায়ায় তৎকালীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রাবন্ধিক ভারতেন্দু সাহিত্যাকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। সমকালীন সমাজে পুঁজিবাদের বিস্তার মানবের মুক্তিপথে বাধার অচলায়তন রূপে বিরাজ করছিল। রাজনীতি, শিল্প, পুরাতত্ত্ব, ইতিহাস, ভ্রমণ, জীবনী, সমাজসংস্কার এবং ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধাবলী আমাদের চিন্তাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে। তাই হিন্দি সাহিত্যের আলোচনার পুরোধাপুরুষ হিসাবে আমরা ভারতেন্দুকে উল্লেখ করতে পারি।
www.bonglib.in একটি ওয়েব সাইট আমাদের এই ব্লগ সহ বিভিন্ন ব্লগে প্রকাস পাওয়া বই গুলি তাঁদের সাইটে দিচ্ছেন , এনাদের প্রোফাইলে আবার ফাউন্ডার কোফাউন্ডার লিখে দিচ্ছেন , কিন্তু লেবেল নিতে গেলে তো নিজেদের কিছু করে দেখানো প্রয়াজন , নিজে জীবনে একটি বই ও স্ক্যান না করেও এভাবে সাইট চালিয়ে লাভ কোথায় জানিনা ,অনেক ব্লগার এদের জন্য ব্লগ বন্ধ করে দিয়েছেন ।
আজ আমার প্রিয় একটি কমিকস্ পোস্ট করলাম , বেশ মনে আছে ছোটবেলায় আমরা ভাই রা এই গল্পের কুঁড়ে ভালুক টির সংলাপ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম। এরপর একদিন কালের নিয়মে আমিও শোলার টুপি পরে বিয়ে করলাম ... তারপর আমার স্ত্রী কে ডায়লগ দিতাম খুসি করার জন্য যে - পৃথিবীর একমাত্র একজনের রান্না থেকেই এমন চমৎকার গন্ধ বেরয় ...ইত্যাদি ইত্যাদি ।।
গল্প শোনার যতো মজা ,গল্প বানানোর মজা তার
থেকে কম নয় । আর এই বানানো গল্পটি যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে,এক ভাষা থেকে অন্য
ভাষায় উড়ে চলে – তার মজাও কম নয় । একবার সে পোশাক বদলায়,আরেক বার তার মুখের কথায়
নতুন বাতাস লাগে । তারপর আবার নতুন কেনা জামা কাপড় পরে এ যেন আরেক নতুন মানুষ
.........
আজ আপনাদের প্রিয় ব্লগে থাকছে জাতকের আর একটি কাহিনী ।
জাতক কাহিনী: গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী নিয়ে রচিত এক অসাধারণ সাহিত্যকর্ম
পঞ্চতন্ত্র,
ঈশপের গল্পের মতোই জাতকের গল্পগুলো অসাধারণ সাহিত্যরসে ভরপুর। জাতকের
কাহিনীগুলো বিভিন্ন বয়সী পাঠকদের কাছে আজও সমান জনপ্রিয়। তাই গল্পগুলো এখন
আর বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কমিকের বইয়ে বা কখনও অ্যানিমেশন ছবিতে
জীবন্ত হয়ে আছে। জাতকের কাহিনীগুলো এখনও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত
হচ্ছে।
জাতক কী?
‘জাতক’ শব্দের অর্থ জন্মগ্রহণকারী। জাতক
হলো গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন জন্মের কাহিনী রচিত গল্প সঙ্কলন। শোনা যায়,
বুদ্ধদেব নিজেই জাতকের কাহিনীগুলো শুনিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের পূর্বজন্মের
নানা কাহিনী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জাতকের ৫৪৭টি গল্প। বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম
বুদ্ধ তার অতীত জীবনের কথা স্মরণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি শিষ্যদের
সাথে ধর্মালোচনার সময় প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে তার পূর্বজন্মের নানা ঘটনার
কথা উল্লেখ করতেন। সেসব ঘটনার সঙ্কলনই জাতক সাহিত্য হিসেবে পরিচিত।
পালি ভাষায়
জাতকের এই কাহিনীগুলোকে বলা হয় ‘জাতকত্থ বন্ননা’। ধারণা করা হয়, সম্রাট
অশোকের পুত্র মহেন্দ্র বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য যখন সিংহল পরিভ্রমণ করেন,
তখন শিষ্যদের জ্ঞানদানের জন্য তার সাথে ছিল জাতকের কাহিনীগুলো। সেই মূল
গ্রন্থটি এখন বিলুপ্ত। সিংহলি ভাষায় যে জাতক প্রচলিত আছে, বর্তমানের
‘জাতকমালা’ তারই অনুবাদ বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকের মতে, ‘জাতক’ হলো
পৃথিবীর সমস্ত ছোট গল্পের উৎস।
জাতকের সময়
জাতক গল্পের
অধিকাংশই প্রাক-বুদ্ধ যুগের। পঞ্চতন্ত্রসহ বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্কলনেও এইসব
কাহিনীর কিছু কিছু পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বাইরেও জাতকের
বেশ কিছু কাহিনীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মানবজাতির জ্ঞান ও নৈতিকতা অর্জনের
জন্য জাতক কাহিনীগুলো রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। জাতকের এই গল্পগুলো
দীর্ঘকাল গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুতি থেকে স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব
তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ
মহাসঙ্গীতি কালে জাতক গ্রন্থিত হয়। পালি ভাষাতেই জাতকের গল্পগুলো লিখিত
হয়েছিল। বুদ্ধঘোষ রচিত জাতকত্থ বণ্ণনা নামক গ্রন্থে ৫৪৭টি জাতক কাহিনী
অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত জাতকের কাহিনীগুলো ইংরেজি
ভাষায় অনূদিত হয়। পরবর্তীকালে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তা অনূদিত
হয়। বাংলা ভাষায় জাতকের কাহিনীগুলো অনুবাদ করেন ঈশান চন্দ্র ঘোষ।
বাংলা
ভাষায় রচিত জাতকের গল্প সঙ্কলনেও ৫৪৭টি জাতক কাহিনী স্থান পায়। কিন্তু
ত্রিপিটকের সূত্তপিটক মতে, বুদ্ধদেব ৫৫০ বার জন্ম নিয়েছিলেন। সে হিসেবে
জাতক সংখ্যা ৫৫০টি হওয়া উচিত। কিন্তু জাতকের তিনটি কাহিনী সম্পর্কে কোনো
তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের মতে, জাতকে
যে ৫৪৭টি গল্প আছে তার অনেকগুলোই পরবর্তী সময়ে সংযোজিত হয়েছে। তাই কোন
জাতকগুলো প্রাচীনতম অর্থাৎ বুদ্ধেরই বলা, তা চিহ্নিত করা খুব কঠিন। তবে
গবেষকগণ কিছু কিছু গল্পের ভাব ও ভাষা বিচার করে কয়েকটি কাহিনীকে চিহ্নিত
করতে পেরেছেন।
জাতক গল্পের মূল বিষয়বস্তু
বুদ্ধদেব নির্বাণ
লাভ করার অল্প কিছুদিন পর থেকেই তার অনুগামীরা জাতকের কাহিনী শোনাতেন। এসব
কাহিনী তারাই চিরস্মরণীয় করার ব্যবস্থা করেন। আত্মজীবনীমূলক এই কাহিনীগুলোর
নৈতিক মূল্য রয়েছে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে। গৌতম বুদ্ধের জীবনের
বিভিন্ন ঘটনা, বৈশিষ্ট্য এবং পরিস্থিতি জাতকে বর্ণিত কাহিনীগুলো দিয়ে
আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। জাতকের গল্পে তিনটি বিষয়ের প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে একটি জাতক গল্পকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়।
প্রথম
অংশে, গৌতম বুদ্ধ গল্পটি কোথায়, কখন, কাকে বলেছেন, তার নির্দেশনা থাকে।
গল্পের এ ধরনের ভূমিকাকে প্রত্যুৎপন্ন বস্তু বলা হয়। গল্পের দ্বিতীয় অংশে
অতীত জন্ম পটভূমিকা তুলে ধরে বুদ্ধ জাতকটি তার অনুসারীদের বলে থাকেন। এটি
গল্পের মূল আখ্যান। গল্পের এ অংশকে বলা হয় অতীত বস্তু বা মূল
বিষয়বস্তু। গল্পের শেষ অংশে অতীত জীবনের সাথে বর্তমান জীবনের যোগসূত্র
স্থাপন করা হয়। এ অংশকে বলা হয় সমাধান তত্ত্ব।
গল্পে জাতকের যেসব নাম পাওয়া যায়
জাতকের গল্পগুলো বুদ্ধদেব তার পূর্বের জন্মগুলোতে
কখনও মানুষ, কখনও বা পশু, আবার কখনও পাখি হয়ে জন্মেছেন। পূর্বজন্মের এসব
কাহিনী নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে জাতক। প্রচলিত গল্পগুলোতে আর যেসব চরিত্র পাওয়া
যায়, তাদের মধ্যে অগস্ত্য, অপুত্রক, অধিসহ্য, শ্রেষ্ঠী, আয়ো, ভদ্রবর্ণীয়,
ব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ, বুদ্ধবোধি, চন্দ্রসূর্য, দশরথ, গঙ্গাপাল, হংস, হস্তী,
কাক, কপি, ক্ষান্তি, কাল্মষ পিন্ডি, কুম্ভ, কুশ, কিন্নর, মহাবোধি, মহাকপি,
মহিষ, মৈত্রীবল, মৎস্যমৃগ, মধ্যদেবীয়, পদ্মাবতী, রুরু, শত্রু, শারভ, শশ,
শতপত্র, শিবি, সুভাস, সুপারগ, সূতসোম, শ্যাম, উন্মাদয়ন্তী, বানর
উল্লেখযোগ্য।
নীতিবোধের অনুপ্রেরণা থেকে রচিত হয়েছে জাতক কাহিনী
জাতকের
কাহিনীগুলো মানুষের মধ্যে মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতা, সৌহার্দ্যের মতো
সম্পর্কগুলো গড়ে তুলেতে যেমন উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি দয়াবান, সৎ ,আদর্শবান ও
নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে ওঠার মতো নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। পরমতসহিষ্ণু ও
পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়।
সাহিত্য
হিসাবেও জাতকের গল্পগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর গল্পের গঠন এবং
উপস্থাপনের ভঙ্গিমার কারণে সব বয়সী পাঠকদের কাছে জাতকের কাহিনীগুলো অবশ্যই
সুখপাঠ্য।
শোনা যাক একটি জাতক কাহিনী
জাতকের বিভিন্ন কাহিনী
পুনর্জন্মের সূত্রে গ্রথিত, যে পুনর্জন্মের পরিসমাপ্তি ঘটেছে বুদ্ধদেবের
নির্বাণলাভের মাধ্যমে। পুনর্জন্ম কেন, তা ব্যাখ্যা করা যায় বুদ্ধদেবের
নিজের জীবন ও লক্ষ্য দিয়ে। জাতকের প্রতিটি কাহিনীতেই পাপ-পুণ্য,
ধর্ম-অধর্মের কথা বলা হয়েছে। সেই সারমেয় বা কুকুরের গল্পটা ধরা যাক। এই
গল্পটাও জাতকের আর পাঁচটা গল্পের মতোই নীতিকাহিনী।
কুকুরটি ছিল
গৃহহীন। পথেঘাটেই ছিল তার বাস। জাতকের এই কাহিনী থেকে জানা যায়, একবার
বুদ্ধদেবের এরকম জন্ম হয়েছিল। কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ছিল কুকুরটির। এই চরিত্রগুণেই সে একদিন রাস্তার সব কুকুরদের নেতা হয়ে যায়।
কোনো একটি ঘটনার জন্য রাজার বিষনজর পড়েছিল রাস্তার কুকুরগুলোর ওপর। আর
তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব কুকুরদের দলনেতা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল।
রাজার
রথের জন্য যে ঘোড়ার সাজ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে খোলা
আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছিল। রাতভর বৃষ্টিতে সাজ একেবারে ভিজে নষ্ট হয়ে
গিয়েছিল। সাজের চামড়ার অংশটুকু হয়ে গিয়েছিল নরম আর সুসিদ্ধ। এক ঝাঁক শিকারি
কুকুর ছিল রাজার। চামড়ার সাজ টুকরো-টুকরো করে সেই শিকারি কুকুরের দল
ভোজনপর্ব সেরেছিল।
খবর গেল রাজার কাছে। কিন্তু প্রাসাদের ভৃত্যরা
জানালো, রাস্তার কুকুরগুলো পয়ঃপ্রণালী দিয়ে প্রাঙ্গণে ঢুকে চামড়ার সাজ
খেয়েছে। রাজা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, আদেশ দিলেন, শহরের সমস্ত কুকুরকে নিধন
করতে হবে। ভীতসন্ত্রস্ত ক্ষুদ্ধ কুকুরের দল ছুটে এলো সেই গৃহহীন কুকুরের
কাছে। সেই কুকুর তার বিক্ষুব্ধ অনুগামীদের শান্ত করলো এবং প্রাসাদের পথে
রওনা হলো।
সবসময় সত্যের ওপর ভরসা রাখার সহজ পথটি অনুসরণ করতো
কুকুরটি। আর সেই সত্যের জোরেই সে পৌঁছে গেল রাজার কাছে। পথে কোনো নিপীড়নের
শিকার হতে হলো না তাকে। রাজাকে বুঝিয়ে বললো সে। কুকুরটি রাজাকে তার নিজের
শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর পরামর্শ দিল। রাজা সেইমতো আদেশ দিলেন।
রাজার শিকারি কুকুরদের ঘাস আর ঘোল খাওয়ানোর সাথে-সাথে বমি করলো কুকুরের
দল। বেরিয়ে এলো চামড়ার সব টুকরো।
কুকুরটি প্রমাণ করলো, তার অনুগামীরা
একেবারেই নির্দোষ। ভবঘুরে কুকুরটির জ্ঞানবুদ্ধির পরিচয় পেয়ে রাজা তারই
খাবার থেকে কুকুরটিকে নিয়মিত ভাগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। কোনো প্রাণীকেই
কখনও হত্যা করা হবে না, কুকুরটির এই অনুরোধ রাজা মঞ্জুর করলেন। এই কাহিনীর
প্রধান চরিত্রটি যে স্বয়ং বুদ্ধদেব, তা আগেই বলা হয়েছে। আর রাজা হলেন তারই
প্রধান শিষ্য আনন্দ।
(১)
গৌতম বুদ্ধের সময়কাল আনুমানিক ৫৬৩ – ৪৮৩
খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। কিন্তু বৌদ্ধ কাহিনীর মতে, তিনি এর
আগেও বহু বার মানুষ অথবা জীবজন্তুর রূপে পৃথিবীতে
জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং প্রত্যেকবারই পরম জ্ঞান
অর্থাৎ বোধি লাভ করে বোধিসত্ত্ব হয়েছেন। সেই অতীত
বুদ্ধ’দের জীবনের থেকে নেওয়া শিক্ষামূলক কাহিনী-
সংগ্রহ, যেগুলো জাতিস্মর বলে গৌতম বুদ্ধ এই জীবনে
শিষ্যদের শুনিয়েছেন, তার সংকলন হল জাতক ।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের ১০০ বছর পরে, ৩৭০ খ্রী.পূ.র
আশপাশে বৈশালীতে দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে
প্রধান বৌদ্ধগ্রন্থগুলি (এবং সম্ভবত জাতকও) আলোচনা
ও সম্পাদনার মাধ্যমে বর্তমান রূপ নিয়েছিল। অতএব
বোঝা যাচ্ছে যে জাতক-কাহিনীগুলি অতি প্রাচীন
কালেই লিপিবদ্ধ হয়ে পড়ে – বুদ্ধের বলা মূল কাহিনীর
সঙ্গে পরবর্তী সময়ে কিছু যোগ-বিয়োগ হয়ে থাকলেও
তা খুব বেশিদিন পরে নয়। অবশ্য কোন জাতকগুলি
প্রাচীনতম, বুদ্ধেরই বলা, আর কোনগুলি পরবর্তী
সংযোজন, তা বলা কঠিন।
সমসাময়িক অনেক লোকগাথা, বেদ-উপনিষদ, এমনকি
মহাভারত-রামায়ণের গল্প থেকেও উপাদান নিয়ে
সেগুলিকে শিক্ষামূলক রূপ দিয়ে এই জাতকগুলি লেখা।
আবার জাতকের কাহিনী থেকে নিয়ে পরে লেখা
হয়েছে পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশ ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্যেও
এই আখ্যান ছড়িয়ে পড়েছিল – ঈশপের গল্প, রাজা
সলোমনের গল্প, আরব্য রজনীর গল্প, বাইবেলের গল্পেও।
(২)
জাতকের প্রাচীনত্বের কথা এই বিষয়ে নিশ্চিত হবার
জন্য দরকারি, যে এই কাহিনী বাস্তবিকই বুদ্ধের সময়ের
এবং তার কয়েক শতাব্দী আগে-পরের সমাজচিত্র এবং
মানসিকতা তুলে ধরে। যাঁরা নীতিনির্দেশক, তাঁদের
ধ্যানধারণারও একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এ থেকে। তা
চলুন, জাতকের দর্পণে দেখি, আজ থেকে দু-আড়াই হাজার
বছর আগে, যীশু বা মহম্মদেরও পূর্বে, ভারতে মহিলাদের
কেমন সম্মান করা হত।
সপ্তম অংশ অর্থাৎ স্ত্রীবর্গে ৬১ থেকে ৭০ এই দশখানা
জাতক আছে। এর মধ্যে কেবল প্রথম সাতটিরই মূল
উপজীব্য হল রমণী। সেগুলোই এক এক করে দেখি।
প্রথমটি হল অশাতমন্ত্র-জাতক (অশাত = অমঙ্গল)। এর শুরু
হচ্ছে এইভাবে, “শাস্তা জেতবনে জনৈক উৎকন্ঠিত
ভিক্ষুকে … বলিলেন, ‘দেখ, রমণীরা কামপরায়ণা, অসতী,
হেয়া ও নীচমনা। তুমি এইরূপ জঘন্যপ্রকৃতি নারীর জন্য
শিবাজি
ভোঁসলে, যিনি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ নামেই ছিলেন অধিক পরিচিত। বীর যোদ্ধা
হিসেবে খ্যাতিই শুধু নয়, নেতৃত্ব ছিল তাঁর মজ্জাগত। শিবাজি সম্পর্কে কিছু
তথ্য নীচে উল্লেখ করা হল।
ধর্মনিরপেক্ষ শাসক: যে
সেক্যুলারিজমের কথা আজকাল বারবার বলা হয়, শিবাজি মহারাজ প্রকৃত অর্থেই
ছিলেন সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শাসক। মুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ
সম্পর্ক রেখে চলতেন। তাঁর রয়াল আর্মির দেড় লক্ষ সেনার মধ্যে ৬৬ হাজার
ছিলেন মুসলিম। মানুষ হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক:
শিবাজিই প্রথম নৌবাহিনী থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। যে কারণে উপকূল
অঞ্চলে দুর্গ তৈরি করে, আলাদা নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। উদ্দেশ্য ছিল,
মহারাষ্ট্রের কঙ্কনের দিককে রক্ষা করা। অতীতের সাক্ষ্য বহন করে বিজয়দুর্গ,
সিন্ধুদুর্গ-সহ কয়েকটি জায়গায় আজও তাঁর তৈরি সেই দুর্গগুলো রয়ে গিয়েছে।
মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান করতেন: মহিলাদের
হেনস্থা বা তাঁদের ওপর কোনওরকম হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করতেন না। কঠোর হাতে
তা দমনের পক্ষপাতী ছিলেন। অনেকের বিশ্বাস, মা জিজামাতার প্রতি তাঁর অগাধ
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই তিনি মহিলাদের সম্মান করতে শিখেছিলেন। সেনাদের
উদ্দেশে কঠোর নির্দেশ থাকত, একজন কোনও মহিলার ওপরও অত্যাচার করা চলবে না।
কেউ নির্দেশ অমান্য করলে, কঠোর শাস্তি হত।
অবরুদ্ধ পানহালা থেকে যেভাবে পালিয়েছিলেন:
পানহালার দুর্গে শিবাজিকে আটক করে রেখেছিলেন সিদ্দি জৌহরের সেনারা। তাদের
চোখে ধুলো দিতে বারবের শিবা নহভিকে তিনি কাজে লাগান। বারবেরকে দেখতে ছিল
শিবাজির মতোই। এ জন্য দুটো পালকির ব্যবস্থা করেছিলেন। একটা পালকির মধ্যে
ছিলেন বারবের। সিদ্দির সেনারা তাঁকেই ফলো করেন। অন্য পালকিতে চেপে দুর্গ
থেকে পালিয়ে যান শিবাজি।
অনুগত আর্মির স্থপতিও শিবাজি: শিবাজির
আগে তাঁর বাবা সাধারণ নাগরিক ও কৃষকদের নিয়েই যুদ্ধ করেছেন। যারা শুষ্ক
মরশুমে, রাজার জন্য লড়াই করতেন। শিবাজিই প্রথম ডেডিকেটেড আর্মি তৈরি করেন।
তাঁদের এ জন্য সারা বছর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাস গেলে বেতন দেওয়া হত।
আফজল খানের পরাজয়:
আফজল খানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য শিবাজি নিজেই সময় চেয়েছিলেন। আদিল শাহ,
খানের যিনি সেনাপতি, এ জন্য শর্ত আরোপ করেন। শর্ত অনুযায়ী একটি তরোয়াল আর
ফুল ছাড়া সঙ্গে কিছু রাখা যাবে না। সেই মতো আয়োজন হয়। কিন্তু শিবাজির
আশঙ্কা ছিল, তাঁর ওপর হামলা হতে পারে। যে কারণে, পোশাকের নীচে বর্ম
পরেছিলেন। বাঁ-হাতের মধ্যে লুকনো ছিল বাঘনখও। আফজল খানের তরোয়াল তাঁর বিশেষ
কিছু ক্ষতি করতে পারেনি। উলটো দিকে, আফজল খান বিদ্ধ হয়েছিলেন বাঘনখে।
গেরিলা যুদ্ধের প্রবক্তা: শিবাজিকে বলা হত পাহাড়ি ইঁদুর। তাঁর কারণ নিজের ভূমির ভূগোলটা তিনি হাতের তালুর মতো চিনতেন। একই সঙ্গে গেরিলাযুদ্ধের প্রবক্তাও।
আগ্রা থেকে পালানো:
চোখে ধুলো দিয়ে পালানোটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শিবাজি। আগ্রা
থেকেও সে ভাবেই পালিয়েছিলেন শিবাজি। আগ্রায় ঔরঙ্গজেবের দরবারে গৃহবন্দি করে
রাখা হয়েছিল তাঁকে। আফগান সেনাদের সঙ্গে লড়াই ছাড়া সেখান থেকে পালনোর
রাস্তা ছিল না। এরই মধ্যে পরিকল্পনা করে আগ্রার মন্দিরে নিয়মিত মিষ্টি ও ফল
পাঠানোর জন্য অনুমতি আদায় করেন শিবাজি। বড় বড় বাক্স ভরে মিষ্টি যেত।
একদিন তেমনই একটি মিষ্টির বাক্সে ঢুকে, দুর্গ থেকে বেরিয়ে যান।
দয়ালু রাজা:
অত্যন্ত দয়ালু হওয়ায় তাঁকে 'জনতা রাজা' বলে উল্লেখ করা হতো। এমনকী
শত্রুপক্ষ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইলে, তিনি সেই দয়াই দখাতেন।
সর্বোপরি, রাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনেই ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে অনেক বেশি করে
মনে রাখবে। তাঁর নিজের জন্য নয়, ভারতের জন্য লড়াই করতে তাঁর সাম্রাজ্যের
প্রত্যটি মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
শ্রী
রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা কারোরই অজানা নয়।তাঁর সম্বন্ধে মহাত্মা গান্ধী একদা
বলেছিলেন, সত্যিকারের ধর্মাচারন যে কি তা হলো শ্রী রামকৃষ্ণের জীবন ।তাঁর
জীবন আমাদের ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে শেখায় ।
শ্রী
রামকৃষ্ণের বানী ছিল তাঁর জীবনের মতই অনাড়ম্বর । সহজ সরল গল্পের মাধম্যে
অনেক সময় তিনি তাঁর কথা ব্যক্ত করেন । তাঁর গল্পে মানুষের অসঙ্গতি বা
দুর্বলতা দেখে আমাদের মন কৌতুকাবহ হয়ে উঠলেও তিনি কিন্তু আমাদের মনে শেষ
পর্যন্ত মানুষের প্রতিই বিশ্বাস রাখতে অনুপ্রাণিত করেছেন ।