ডাউনলোড করুন
সাঁই শব্দটি ফরাসী শব্দ , যার অর্থ সাধু । আবার অনেকে বলেন সাই শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎসারিত। এই শব্দের অর্থ "সাক্ষাৎ ঈশ্বর" বা "দিব্য"। ভারতীয় ভাষাগুলিতে সাম্মানিক "বাবা" কথাটির অর্থ "পিতা", "পিতামহ", "বৃদ্ধ ব্যক্তি" বা "মহাশয়"। অর্থাৎ, সাই বাবা নামের অর্থ "দিব্য পিতা" বা "পিতৃরূপী সন্ত"। আরও একটি মত বলে সাই শব্দটা পারসি
উদ্ভূত। এর অর্থ পবিত্র ব্যক্তি। নিজের জীবৎকালে সাইবাবা কখনও তাঁর আসল নাম, জাতি বা ধর্ম প্রকাশ করেননি।
সাঁই বাবা কোথায় জন্মে ছিলেন, তাঁর আসল নাম কি কারাই বা তাঁর পিতা মাতা তা কারুর জানানেই। শুধু এইটুকু জানা যায় যে তিনি ফকিরের পোষাক পরে একটি পরিত্যক্ত মসজিদ এ থাকতেন ।তাঁর পরম ভক্তদের থেকে তাঁর সম্পর্কে নানা অলৌকিক ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়, সেই কাহিনী গুলি থেকে আসল মানুষটির সম্পর্কে একটি বৃহৎ ধারনা করা যায় ।
১৯ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের মন্দিরনগরী শিরডিতে বন্ধ পালিত হয়েছে। ১৯
শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করা সাইবাবার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে এই
বনধ। সকালে মন্দির খুলে দেওয়া হয়েছিল ভক্তকুলের জন্য, লম্বা লাইনও পড়েছিল
সেখানে। কিন্তু দোকানপাট সবই বন্ধ ছিল, বন্ধ ছিল পরিবহণও।
শিরডির স্থানীয় বাসিন্দারা মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ
করছেন। সরকার পারভানি জেলার পাথরি শহরে সাই বাবার জন্মস্থান হিসেবে উন্নয়ন
প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিরডির বাসিন্দাদের দাবি পাথরিতে সাইবাবার
জন্মগ্রহণের ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। এদিকে পাথরির
বাসিন্দাদের দাবি, সাইবাবা যে তাঁদের শহরেই জন্মেছিলেন তা প্রমাণ করবার
২৯টি নথি রয়েছে তাঁদের কাছে।
বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০১৭ সালে, যখন রাষ্ট্রপতি সে বছরের অক্টোবর
মাসে বলেন, সাইবাবা পাথরিতে জন্মেছিলেন। বিতর্ক মাথা চাড়া দেয় উদ্ধব ঠাকরে
মুখ্যমন্ত্রী হবার পরেই সাইবাবার জন্মস্থল হিসেবে কথিত পাথরিকে ১০০ কোটি
টাকা দেবার কথা ঘোষণা করায়।
সাইবাবার জন্মস্থল নিয়ে নানা বিশ্বাস
সাইবাবা একজন আধ্যাত্মিক গুরু। বিভিন্ন রকম বিশ্বাসের লোকজন তাঁর শরণ
নিয়েছেন। ভারত তো বটেই, বিদেশনিবাসী বহু ভারতীয়ও তাঁর শিষ্য। সাই শব্দটা
পারসি উদ্ভূত। এর অর্থ পবিত্র ব্যক্তি। নিজের জীবৎকালে সাইবাবা কখনও তাঁর
আসল নাম, জাতি বা ধর্ম প্রকাশ করেননি।
লোকসত্তায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে সাইবাবার জন্মস্থান নিয়ে যে বিভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে, সেগুলি হল-
১. পারভানির পাথরি শহরের বাসিন্দাদের মতে তাঁদের শহরেই জন্মেছিলেন
সাইবাবা। সাইবাবার জীবনী শ্রী সাইচরিত-এর অষ্টম সংস্করণে তার উল্লেখ আছে
বলে দাবি করছেন তাঁরা।
২. কেউ কেউ দাবি করেন, সাইবাবার জন্ম তামিলনাড়ুতে। এঁদের বক্তব্য
অনুসারে সাইবাবার মায়ের নাম ছিল বৈষ্ণবদেবী ও বাবার নাম ছিল আবদুল সাত্তার।
পরে তিনি সেখান থেকে শিরডি যান।
শ্রী সাই লীলা ত্রৈমাসিক পত্রের ১৯৫২ অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যায় বলা
হয়েছিল, সাইবাবার বাবার নাম শাঠে শাস্ত্রী ও মায়ের নাম মহালক্ষ্মী। এর
সমর্থনে একটি তামিল গ্রন্থের উল্লেখ করা হয় সেখানে।
৪. গুজরাটি ভাষার পত্রিকা সাই সুধায় দাবি করা হয়েছে সাই বাবা জন্মেছিলেন
জেরুজালেমের জাফা গেটে। সেখানে দাবি করা হয়েচে তাঁর বাবা মা দুজনেই ছিলেন
গুজরাটি ব্রাহ্মণ।
৫. ১৯৫৯ সালে সুমন সুন্দরের লেখা বই সাই লীলায় বলা হয়েছে বাবা পাথরিতে
জন্মগ্রহণ করেন। এই বই অনুসারে তাঁর বাবার নাম গঙ্গাভাউ এবং মায়ের নাম
দেবগিরি আম্মা। পাথরি শহরের উল্লেখ এ বইয়ে করা হলেও সেখানে বলা হয়েছে এ
পাথরি হায়দরাবাদ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।
হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ভক্তরাই তাকে সন্ত আখ্যা দিয়েছিলেন।
হিন্দু ভক্তেরা তাকে দত্তাত্রেয়ের অবতার মনে করতেন। অনেক ভক্তের মতে, তিনি ছিলেন সদ্গুরু, সুফি পির বা কুতুব। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়লেও, ভারতেই তিনি সর্বাধিক শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন।
সাই বাবার প্রকৃত নাম জানা যায় না শিরডিতে আগমনের পর তাকে "সাই"
নাম দেওয়া হয়। তার জন্ম বা জন্মস্থান সংক্রান্ত কোনো তথ্যও জানা যায় না।
সাই বাবা তার পূর্বাশ্রমের কথা জানিয়ে যাননি। সাই শব্দটি সংস্কৃত
ভাষা থেকে উৎসারিত। এই শব্দের অর্থ "সাক্ষাৎ ঈশ্বর" বা "দিব্য"। ভারতীয়
ভাষাগুলিতে সাম্মানিক "বাবা" কথাটির অর্থ "পিতা", "পিতামহ", "বৃদ্ধ
ব্যক্তি" বা "মহাশয়"। অর্থাৎ, সাই বাবা নামের অর্থ "দিব্য পিতা" বা
"পিতৃরূপী সন্ত"।
তার পিতামাতা, জন্মের বৃত্তান্ত এবং ষোলো বছর বয়সের পূর্বের কথা
জানা যায় না। তাই তার পূর্বাশ্রম সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনা করা হয়ে
থাকে।
সাই বাবা পার্থিব বস্তুর প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। তার একমাত্র চিন্তা
ছিল আত্ম-উপলব্ধি। তিনি সন্ত হিসেবে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
বিশ্বের নানা অংশের মানুষ তার পূজা করেন। তিনি ভালবাসা, ক্ষমা, পরস্পরকে
সহায়তা, দান, সন্তুষ্টি, আন্তরিক শান্তি ও ঈশ্বর ও গুরুর প্রতি ভক্তির
শিক্ষা দিতেন। সাই বাবার শিক্ষার উপাদান সংগৃহীত হয়েছিল হিন্দু ও ইসলাম উভয় ধর্ম থেকেই। যে মসজিদে তিনি বাস করতেন, তার একটি হিন্দু নামও দিয়েছিলেন। এই নামটি হল "দ্বারকাময়ী"। তিনি হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মেরই অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। উভয় সম্প্রদায়ের ভাষা ও ব্যক্তিত্বদের উদাহরণ দিয়ে উপদেশ দান করতেন। শিরিডির একটি হিন্দু মন্দিরে তাকে সমাহিত করা হয়। তার বিখ্যাত উক্তি "সবকা মালিক এক" ("একই ঈশ্বর সকলকে শাসন করেন")। কথাটি ইসলাম ও সুফিবাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি সর্বদা "আল্লাহ্ মালিক" ("ঈশ্বরই রাজা") কথাটি উচ্চারণ করতেন।