Wednesday, January 20, 2021

Post # 1021 Bengali Amarchitra Katha 149

                                                                       ডাউনলোড করুন
 
 
 
ভারতের নিজস্ব শিল্পকীর্তিগুলির মধ্যে যেমন আমরা জেনেছি অজন্তা-ইলোরা গুহার কথা, তেমনি আজ থেকে প্রায় ১৬০০ বছর আগের আরেক অতুলনীয় শিল্পকীর্তি এলিফ্যান্টা দ্বীপের এলিফ্যান্টা গুহাসমূহ, মূলতঃ হিন্দু দেবতা শিবকে কেন্দ্র করে। ইউনেস্কো এই গুহাকেও হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষনা করেছে। আজকের মুম্বাই শহরের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে প্রায় ২.৪ কিলোমিটার লম্বা ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৯০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই দ্বীপ, যার অপর নাম ‘ঘরাপুরী’ বা “The City Of Caves”।
এই দ্বীপে গুহাগুলির সামনে ছিল বিশাল এক হাতীর খোদাই করা মূর্তি, এই মূর্তি দেখে পর্তুগীজ-রা এই দ্বীপের নামকরণ করে এলিফ্যান্টা। যদিও এই গুহাগুলি ঠিক কবে তৈরী করা হয়েছিল সে নিয়ে বেশ কিছু মতামত আছে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনকালে সরাসরি না হলেও আবছা ভাবে এই গুহার উল্লেখ পাওয়া যায়। মোটামুটি চতুর্থ শতাব্দী থেকে ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীর মধ্যেই (450-750 A.D) এই গুহাগুলি তৈরী হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মত হল এই গুহার তৈরী করেছিলেন বাদামী সাম্রাজ্যের অধিপতি চালুক্য বংশের যোদ্ধা সম্রাট দ্বিতীয় পুলকেশী। পরবর্তীকালে এই গুহা বিস্তৃত করেছিলেন কোঙ্কণের মৌর্যগণ, ত্রিকূট সাম্রাজ্যের অধিপতি, শিলাহারা, রাষ্ট্রকূট বংশ, কল্যাণী চালুক্য, দেবগিরির যাদব রাজারা, গুজরাটের শাহী বংশ, সঙ্গে এরপরে মারাঠা গণ, পর্তুগীজ এবং কিছুটা ব্রিটিশ গণ।
এলিফ্যান্টা দেখতে যাওয়ার আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারীতে এলিফ্যান্টা ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল দেখতে যেতে পারেন। এই গুহা দেখতে হলে চলে আসুন গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার সামনে, সেখানেই পাবেন এলিফ্যান্টা যাওয়ার ফেরী টিকিট। মোটরলঞ্চ সার্ভিস রয়েছে এখানে। সকাল ৯টা ২টো পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর পাবেন এই ফেরী সার্ভিস। একই ভাবে ফিরতি ফেরী সার্ভিস বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫:৩০ পর্যন্ত পাবেন এলিফ্যান্টা দ্বীপ থেকে। এই গুহা বন্ধ থাকে প্রতি সোমবার। এলিফ্যান্টা দ্বীপের ফেরীঘাট থেকে হেঁটে অথবা টয়ট্রেনে চেপে চলে আসতে পারেন গুহায় ঢোকার টিকিট কাউন্টারের সামনে।
এবার আসুন আমরা একঝলকে দেখে আসি এলিফ্যান্টা গুহার অভ্যন্তর।
কেভ ১- বা মেন কেভঃ সবথেকে ভালো শিল্পকীর্তি দেখতে পাবেন এই গুহাতে। এই গুহাতে হল-এ দেখতে পাবেন এই সব খোদাই করা মূর্তি ১) রাবণানুগ্রহ (রাবণের কৈলাস পর্বত উৎখাত করার প্রচেষ্টা এবং সেই অপরাধে শিবের মার্জ্জনা ২) কৈলাস পর্বতে স্থিত শিব-পার্বতী ৩) বিখ্যাত অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তি (শিব এবং শক্তি একই অঙ্গে) ৪) সদাশিব ত্রিমূর্তি ৫) গঙ্গাধারা বা ভগীরথের গঙ্গা আনয়ণ ৬) শিব-পার্বতীর বিবাহ ৭) শিবের অন্ধকাসুর বধ ৮) বিখ্যাত নটরাজ মূর্তি ৯) যোগীশ্বর বা যোগসাধনায় রত শিবমূর্তি
হল-এর পূর্বদিকে দেখবেন ১০) কার্তিকেয় মূর্তি ১১) মাতৃকা মূর্তি বা কার্তিকেয়র ৬ জন কৃত্তিকা পালিকা মাতা। ১২) গনেশ মূর্তি ও ১৩) দ্বারপাল মূর্তি ।
এবার পায়ে পায়ে চলে আসুন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বদিকের ক্যানন হিল-এ। এখানে পাবেন কেভ-২ থেকে কেভ ৫। কেভ ২ একটা সময় প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ১৯৭০ সালে এই গুহাকে আবার পূনরুদ্ধার করা হয়েছে। বাকী কেভ ৩ থেকে কেভ ৫ অনেকটাই প্রায় শেষ হয়ে গেছে, তাও এখানে দেখতে পারেন গুহার ভিতরগুলি, তার বারান্দা, কারুকার্যময় থাম ইত্যাদী।
কেভ ৬-৭ স্তূপ পাহাড় বা Stupa Hill এ অবস্থিত। এখানে কিছু বৌদ্ধ স্তূপ দেখতে পাবেন।
এছাড়া অনেক শিল্পকীর্তি আজ নষ্ট হয়ে গেছে, যেমন মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির কেবল সামান্য মহিষমূর্তির অংশটা দেখতে পাবেন, এছাড়াও দেবী দূর্গার একটা পা নেই, কোমরের সামান্য একটু অবশিষ্ঠ আছে। সামান্য কয়েকটা বিষ্ণু মূর্তিও দেখতে পাবেন।







 

2 comments: