Friday, September 4, 2020

Post # 998 Bengali Amarchitra Katha 067

                                                                     ডাউনলোড করুন
 

 

 

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি (রামায়ণ) মতে লঙ্কার রাক্ষস রাজা বিশ্রবা মুনির ঔরসে কৈকসীর (অন্য নাম নিকষা) গর্ভে রাবণের জন্ম হয় এঁদের মোট চারটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল এই চারটি সন্তানের মধ্যে পুত্র হলো রাবণ, কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ ও কন্যা শূর্পনখা

রাবণের ছিল দশটি মাথা, কুড়িটি বাহু, গাত্রবর্ণ ঘোরতর কালো, উজ্জ্বল চুল ও দাঁত এবং টকটকে লাল ঠোঁট ছিল ইনি ময়দানবের কন্যা মন্দোদরীকে বিবাহ করেন কথিত আছে তাঁর প্রায় এক লক্ষ পুত্র ও সোয়া লক্ষ নাতি ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য পুত্র ছিলেন- মেঘনাদ (ইন্দ্রজিৎ)
 

বিশ্রবার প্রথমা স্ত্রী দেবর্ণিনী'র সন্তান কুবের ছিলেন যক্ষদের রাজা কুবের অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ছিলেন বলে, কৈকসী ঈর্ষান্বিত হয়ে, তাঁর পুত্রদেরকে অনুরূপ ঐশ্বর্য এবং সেই সাথে অমিত তেজ অর্জনের জন্য তপস্যা করতে আদেশ দিলেন এঁরা ব্রহ্মার ঘোরতর উপাসনা শুরু করলে, ব্রহ্মা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, বর প্রার্থনা করতে বললেন রাবণ অমরত্বের বর প্রার্থনা করলে, ব্রহ্মা তাতে অসম্মত হলেন পরে ইনি দেব, দানব, দৈত্য, যক্ষ, রক্ষ ইত্যাদির কাছে অজেয় ও অবধ্য হওয়ার বর প্রার্থনা করলেন মানুষকে ইনি তৃণতুল্য মনে করে এই তালিকায় মানুষ রাখলেন না ব্রহ্মা উক্ত বরই প্রদান করলেন
 

সেই সময় কুবের লঙ্কার রাজা ছিলেন প্রথমে ইনি কুবেরকে লঙ্কা থেকে বিতারিত করে সেখানে রাক্ষস-রাজ্য স্থাপন করলেন এই সময় ইনি কুবেরের পুষ্পক-রথ অধিকার করেন এরপর তিনি দিগ্বিজয়ে বের হয়ে নর্মদা নদীতীরে মহাদেব পূজা আরম্ভ করলেন সেখানে হাজার হাতবিশিষ্ট কার্তবীর্য নামক এক রাজা জলক্রীড়া করছিলেন এর ফলে নদীর জল ঘোলা হতে থাকলে, ক্রুদ্ধ রাবণ তাঁকে আক্রমণ করেন এই যুদ্ধে রাবণ পরাজিত ও বন্দী হন পরে রাবণের স্বর্গস্থ পিতামহ পুলস্ত্যের অনুরোধে কার্তবীর্য তাঁকে মুক্তি দেন
 

এরপর রাবণ কিষ্কিন্ধ্যা'র রাজা বালীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য উপস্থিত হন সেখানে পৌঁছে ইনি জানতে পারলেন যে বালী চার সমুদ্রে সন্ধ্যাবন্দনা করতে গিয়েছেন রাবণ বালীর সন্ধানে দক্ষিণ সমুদ্রে উপস্থিত হলে, বালী অকস্মাৎ তাঁকে মুষ্ঠিতে পুরে আকাশে উঠে গেলেন এবং ক্রমান্বয়ে চার সমুদ্রে সন্ধ্যাবন্দনা শেষ করলেন রাবণ বালীর এরূপ শক্তি দেখে তাঁর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ফিরে আসেন


নারদের প্ররোচনায় ইনি যমরাজের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন পরে ব্রহ্মার অনুরোধে উভয়ে এই যুদ্ধ বন্ধ করেন কৈলাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাবণের রথের গতি রুদ্ধ হয় এই সময় মহাদেবের  অনুচর নন্দী রাবণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এখানে হর-পার্বতী আছেন নন্দীর বানর মুখ দেখে রাবণ অবজ্ঞায় হাস্য করলে, নন্দী অভিশাপ দেন যে, তার মতো বানদের হাতেই রাবণ বংশ ধ্বংস হবে রাবণ এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে কৈলাস উত্তোলন করতে থাকলে, পার্বতী চঞ্চল হয়ে উঠেন তখন মহাদেব পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে রাবণকে চেপে ধরেন রাবণ সে চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রচণ্ড চিৎকার করতে থাকেন পরে মহাদেবের স্তব করে মুক্তি পান এই সময় মহাদেব তাঁকে চন্দ্রহাস নামে একটি দীপ্ত খড়্গ উপহার দেন
 

স্বর্গে গিয়ে ইনি দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে ইন্দ্র-সহ সকলকে পরাজিত করেন রাবণের শ্রেষ্ঠ-পুত্র মেঘনাদ কপট যুদ্ধে ইন্দ্রকে পরাজিত ও বন্দী করে লঙ্কায় নিয়ে আসেন। এই কারণে মেঘনাদ ইন্দ্রজিৎ নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। পরে ব্রহ্মার অনুরোধে ইনি ইন্দ্রকে মুক্তি দেন
 

এরপর রাবণ ধীরে ধীরে অত্যন্ত অত্যাচারী রাজায় পরিণত হলেন ইনি দেব, দানব ও ঋষি কন্যাদের হরণ করতে থাকেন একবার ইনি বৃহস্পতির পুত্র মহর্ষি কুশধ্বজের কন্যা বেদবতীকে হরণ করতে উদ্যত হলে, ইনি অগ্নিতে আত্মাহুতি দেন আত্মাহুতিকালে ইনি রাবণকে জানান যে, পরে ইনি কোনো ধার্মিক পুরুষের অযোনিজ কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করবেন এবং রাবণ বধের কারণ হবেন উল্লেখ্য, এই কন্যাই পরে সীতারূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন
 

রাবণ মরুত্তের যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে, যজ্ঞস্থল ধ্বংস করেন। এরপর তিনি সুরথ, গাধি, গয় ও পুরূরবা প্রভৃতি রাজাদের পরাজিত করেন অযোধ্যার রাজা অনরণ্য তাঁর সাথে যুদ্ধে নিহত হন মৃত্যুকালে অনরণ্য অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, রাবণ তাঁর বংশজাত সন্তান দ্বারা নিহত হবেন
 

স্বর্গ-অপ্সরা রম্ভা নলকূবরের কাছে অভিসারে যাওয়ার সময়, রাবণ তাঁকে ধর্ষণ করেন ফলে নলকুবের তাঁকে অভিশাপ দেন যে, কোনো নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে রাবণের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হবে
 

রাবণ সমুদ্রে প্রবেশ করে, প্রথমে নাগদের পরাজিত করেন, পরে নিবাতকবচ নামক দৈত্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন রাম এবং নিবাতকবচ উভয়ই ব্রহ্মার বরে অজেয় ছিলেন সে কারণে ব্রহ্মার মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধ নিবারিত হয় পরে রাবণ এঁর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন পরে ইনি  নিবাতকবচের কাছ থেকে বহুবিধ মায়াবিদ্যা অর্জন করেন

এরপর তিনি জলদেবতা বরুণের পুত্রদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং তাঁদের পরাজিত করেন
এরপর ইনি অশ্মনগরে চারশত কালকেয়
 দানবের সাথে যুদ্ধ করে তাঁদেরকে পরাজিত করেন এই যুদ্ধে রাবণের বোন শূর্পণখার স্বামী বিদ্যুৎজিহ্ব নিহত হন রাবণ তাঁর এই বিধবা বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে দণ্ডকারণ্যে বাসবাস করার জন্য প্রেরণ করেন এই সময় রাম পিতৃসত্য রক্ষার্থে সীতা লক্ষ্মণসহ পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন শূর্পণখা রাম ও লক্ষণের কাছে তাঁর প্রণয়ের কথা ব্যক্ত করলে, লক্ষ্মণ এঁর নাক ও কান কেটে দেন। এরপর শূর্পণখার অধীনস্থ খর দূষণ নামক সেনাপতিদ্বয়কে রামের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলে তাঁরা সসৈন্যে নিহত হন ক্ষুব্ধ শূর্পণখা লঙ্কায় গিয়ে সমুদয় বিষয় রাবণকে জানালেন এবং সীতা-হরণের জন্য রাবণকে উত্তেজিত করে তুললেন
 

রাবণ পঞ্চবটীতে পৌঁছে তাড়কা রাক্ষসীর পুত্র মারীচের সাহায্যে সীতা-হরণের পরিকল্পনা নেন মারীচ স্বর্ণমৃগের রূপ ধরে সীতার সম্মুখে বিচরণ করতে থাকলে, সীতা রামের কাছে উক্ত হরিণ ধরে দেবার জন্য অনুরোধ করলে, প্রথমে রা উক্ত হরিণ ধরতে যান এরপর মারীচ রামের অনুকরণে কাঁদতে থাকলে, রামের বিপদ হয়েছে মনে করে, সীতা লক্ষণকে অনুসন্ধানে পাঠান এরপর রাবণ ভিক্ষুকের বেশে এসে সীতার কাছে এসে নানাভাবে ঘরের বাইরে আসার জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকেন পরে ইনি সবলে সীতাকে হরণ করে লঙ্কার পথে অগ্রসর হন পথে জটায়ু পক্ষী তাঁকে বাধা দিলে, রাবণ তাঁর পাখা কেটে পথে ফেলে রেখে অগ্রসর হন এরপর বন্দিনী সীতা যাওয়ার পথে তাঁর অলঙ্কারসমূহ ঋষমূকপর্বতে বানরদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করেন লঙ্কায় গিয়ে রাবণ সীতাকে বশ করার বহুচেষ্টা করে অপারগ হলে, ইনি সীতাকে অশোকবনে বন্দিনী করে রাখেন ইনি সীতাকে বশে আনার জন্য বেশ কিছু রাক্ষসী নিয়োগ করেন এবং ঘোষণা দেন যে, দশ মাসের মধ্যে সীতা বশীভূত না হলে, ইনি তাঁকে ভক্ষণ করবেন
 

এদিকে রা-লক্ষণ কুটিরে ফিরে এসে সীতাকে না দেখতে পেয়ে, তাঁর অনুসন্ধানে বের হলেন পথে আহত জটায়ু পাখির মুখে সব শুনে, খুঁজতে খুঁজতে এঁরা ঋষমূকপর্বতে বানরদের কাছ থেকে সীতার অলঙ্কার পান সেখানে কিষিন্ধ্যার অধিপতি সুগ্রীবের সাথে রামের  সখ্যতা স্থাপিত হয় এখান থেকে রা হনুমানকে সীতার সংবাদ আনার জন্য লঙ্কায় পাঠান হনুমান লঙ্কায় পৌঁছে অশোকবন তছনছ করেন এবং লঙ্কা  দগ্ধ করে সীতার সংবাদ রামকে পৌঁছে দেন
 

এরপর রা বানর সৈন্যদের সহায়তায় সমুদ্রের উপর সেঁতু নির্মাণ করে লঙ্কায় উপস্থিত হন এই সময় রাবণের কনিষ্ঠ ভাই বিভীষণ সীতাকে ছেড়ে দিতে পরামর্শ দিলে, রাবণ তাঁর সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিভীষণকে অপমান করেন রা-রাবণের চূড়ান্ত যুদ্ধ আরম্ভের পূর্বে বিভীষণ রামের পক্ষে যোগ দেন যুদ্ধে রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিৎ অসাধারণ বিক্রম প্রদর্শন করেন প্রথমে ইনি রা-লক্ষণকে নাগপাশে বন্দী করেন কিন্তু গরুড়ের সাহায্যে এই বন্ধন থেকে উভয়ই মুক্তি লাভ করেন এরপর রাবণ পক্ষের ধূম্রাক্ষ, বজ্রদংশ, অকল্পন ও প্রহস্ত সেনাপতিরা নিহত হলে, রাবণ কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগিয়ে তোলেন যুদ্ধে কুম্ভকর্ণ নিহত হন এরপর বিভীষণের সাহায্যে লক্ষণ অন্যায়ভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইন্দ্রজিৎকে হত্যা করেন পুত্র-শোকাতুর রাবণ শক্তিশেল দ্বারা লক্ষণকে আঘাত করলে, লক্ষণ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান পরে হনুমান দ্বারা সংগৃহীত বিশল্যকরণী দ্বারা লক্ষ্মণ জীবন ফিরে পান এরপর রা রাবণের বহিনীকে পরাজিত করেন এবং  রাবণকে হত্যা করেন


 সূত্র   http://onushilon.org/

 

 অমর চিত্র কথা  ৬১ পর ৬৭ পোস্ট করতে হোল । ৬২ - ৬৬ বাংলায় আমি দেখিনি। প্রকাশিত হয়েছিল কিনা জানা নেই ।



 









4 comments: